এক টুকরো মেঘ। পথভুলে এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করছে আকাশে। তার কোনো সঙ্গী নেই। তার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে আছে। সে একা একা ভেসে বেড়ায় আকাশে। দিন যায়, রাত যায়। মেঘের টুকরোটি ভাসতে ভাসতে চলে আসে অনেক দূর। নিচে তাকিয়ে দেখে বিশাল মাঠে একটি গাছ দাঁড়িয়ে আছে। গাছটির আশপাশে আর কোনো গাছ নেই। মেঘটি মনে মনে ভাবল, বোধহয় ওই গাছটি আমার মতোই একা। আমার মতো তারও যদি কোনো কষ্ট থাকে! একা থাকার কষ্ট। আমি যাই না কেন তার কাছে? মেঘটি ধীরে ধীরে চলে এলো গাছটির কাছে। দেখে মনে হলো রোগাপটকা গাছটি অনেক সংগ্রাম করে কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে। একটি পাতাও নেই শাখায়। মেঘটি আরেকটু কাছে আসতেই দুর্বল গাছটি করুণভাবে তাকাল তার দিকে। কিন্তু কিছুই বলল না।
মেঘটি আরও কাছে এলো। মেঘের শীতল ছায়া গিয়ে পড়ল গাছের ওপর। ওমনি গাছটির গতর কেঁপে উঠল। আহ্ কী আরাম_ আপন মনে বলে উঠল গাছটি।
মেঘটি বলে, গাছভাই, এ বিশাল মাঠে আর কাউকে দেখছি না যে! তুমি কি আমার মতোই একা? তোমার শরীর-স্বাস্থ্যের এ অবস্থা কেন?
কী আর বলব ভাই। ভীষণ কষ্টের মধ্যে পড়ে আছি। এই যে বিশাল পতিত ভূমি দেখছ, এখানে আর কোনো গাছ নেই। আমি একদম একা। আমার সঙ্গে কথা বলার কেউ নেই। আমার কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারি না। তুমি কি আমার সঙ্গে থেকে গল্প করবে মেঘভাই? মায়া করে বলল গাছটি।
মেঘটি আনন্দে মুখ বাড়িয়ে বলে, দেখ, তোমার মতো আমারও অনেক কষ্ট। একা একা থাকি। মনের কথা মনের ভেতরে পড়ে আছে; বলতে পারি না কাউকে। আমি তোমার কাছেই থাকব। আমরা অনেক গল্প করব। আনন্দে কেটে যাবে সময়।
গাছটি খুশি হয়ে বলে, আচ্ছা, তাহলে এখন থেকে আমরা দু'জন পরাণের বন্ধু হয়ে গেলাম। কেউ কাউকে কখনো ছেড়ে যাব না। কথা দাও মেঘভাই।
কথা দিলাম_ বলে মেঘটি গাছে এসে বসল। মেঘের ছোঁয়ায় গাছটি তরতাজা হয়ে উঠল। কচি কচি পাতা গজাতে শুরু করল। দেখতে দেখতে সবুজ পাতায় আর ফুলে-ফলে ভরে গেল গাছটি। কী সুন্দর গাছ!
একটা কাঠবিড়ালি কোত্থেকে এসে আনন্দে ছুটোছুটি করতে লাগল গাছের ডালে ডালে, পাতায় পাতায়। পোকামাকড়রা বাসা বাঁধতে লাগল। নানা জাতের পাখি এসে কিচিরমিচির করছে, গান গাইছে, তারা মনের সুখে বাসা তৈরি করে সংসার পাতছে। বনের পশুরা শিকার ধরে খেয়েদেয়ে গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। এসব কারণে গাছটি নিজেকে খুব বড় কিছু মনে করতে লাগল। সে বড়াই করে বলে, এই বিরানভূমিতে আমার আশ্রয়-প্রশ্রয় ছাড়া পশুপাখিরা বেঁচে থাকতে পারবে না কিছুতেই। সে নিজেকে তার কাছে আশ্রয় নেওয়া পশুপাখি, পোকামাকড়দের রাজা ভাবতে শুরু করল।
গাছটি আগের মতো মেঘের সঙ্গে আর গল্প করে না। মেঘের খবরও নেয় না। এমনকি আগ্রহ করে তার সঙ্গে একটি কথাও বলে না। খুব কষ্ট পেল মেঘটা। সে গাছের এক কোণে চুপচাপ বসে থাকে সারাদিন। মেঘ ভাবে, এভাবে আর বসে থেকে লাভ কী? আমি তো সেই আগের মতো একা হয়ে গেলাম। গাছভাই, তুমি যদি আমার সঙ্গে গল্প না কর, তো আমি খুব কষ্ট পাই। আমি এমন কী অন্যায় করেছি যে, তুমি একটি কথাও বলছ না আমার সঙ্গে? কষ্টে আর অভিমানে কেঁদে ফেলল মেঘটি। গাছটি ত্যাজ দেখিয়ে বলে, দেখছ না কত ব্যস্ত আমি। এতটুকু সময় নেই আমার। কত পশু আমার ছায়ায় এসে প্রাণ জুড়ায়, কত পোকামাকড় আর পাখি আমার ফুল-ফল খেয়ে আমার আশ্রয়ে বেঁচে আছে। তাদের সুখ-দুখ আমাকে দেখতে হয়। শাসন করতে হয়। কারণ ওরা আমার প্রজা। কথা বলার সময় নেই আমার। এখন আমি খুবই ব্যস্ত। বরং তুমি অন্য চিন্তা কর গে। মেঘ অবাক হয়ে বলে, অন্য চিন্তা কর গে, মানে? গাছটি বলল, আমি তো তোমাকে মোটেও সময় দিতে পারছি না। বিরাট রাজ্য আমার। সবাইকে নিয়ে আমার ভাবতে হয়। দেখ, এমন কোনো বেকার গাছের সন্ধান পাও কি না যে সারাক্ষণ চুটিয়ে গল্প করতে পারবে তোমার সঙ্গে। মেঘটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, ও, এই কথা? ঠিক আছে, বিদেয় হই তাহলে। গাছ খুশি হয়ে সঙ্গে সঙ্গে বলে, যাও, ভালো থেকো বন্ধু। মন খারাপ করে চলে গেল মেঘ। মেঘটি চলে যাওয়ার পর গাছটি শুশুকিয়ে যেতে লাগল। তার পাতাগুলো ঝরে পড়ে গেছে। গাছের পাতা নেই, ছায়া নেই। ধীরে ধীরে তার কাছ থেকে সরে গেল পশুপাখি, পোকামাকড় সব। ঠিক আগের মতো একা ও দুখী হয়ে গেল গাছটি। এখন আকাশের দিকে চেয়ে থাকে দুখী গাছটি। যদি মেঘবন্ধুর দেখা পাওয়া যায়! একদিন গাছটি দেখে তার ওপর দিয়ে সেই মেঘটি অন্য মেঘের সঙ্গে হাসি-তামাশা করতে করতে উড়ে যাচ্ছে। গাছটি চিৎকার করে 'মেঘবন্ধু মেঘবন্ধ'ু বলে ডাকল, কিন্তু তার দিকে ফিরেও তাকাল না মেঘটি।
মেঘটি আরও কাছে এলো। মেঘের শীতল ছায়া গিয়ে পড়ল গাছের ওপর। ওমনি গাছটির গতর কেঁপে উঠল। আহ্ কী আরাম_ আপন মনে বলে উঠল গাছটি।
মেঘটি বলে, গাছভাই, এ বিশাল মাঠে আর কাউকে দেখছি না যে! তুমি কি আমার মতোই একা? তোমার শরীর-স্বাস্থ্যের এ অবস্থা কেন?
কী আর বলব ভাই। ভীষণ কষ্টের মধ্যে পড়ে আছি। এই যে বিশাল পতিত ভূমি দেখছ, এখানে আর কোনো গাছ নেই। আমি একদম একা। আমার সঙ্গে কথা বলার কেউ নেই। আমার কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারি না। তুমি কি আমার সঙ্গে থেকে গল্প করবে মেঘভাই? মায়া করে বলল গাছটি।
মেঘটি আনন্দে মুখ বাড়িয়ে বলে, দেখ, তোমার মতো আমারও অনেক কষ্ট। একা একা থাকি। মনের কথা মনের ভেতরে পড়ে আছে; বলতে পারি না কাউকে। আমি তোমার কাছেই থাকব। আমরা অনেক গল্প করব। আনন্দে কেটে যাবে সময়।
গাছটি খুশি হয়ে বলে, আচ্ছা, তাহলে এখন থেকে আমরা দু'জন পরাণের বন্ধু হয়ে গেলাম। কেউ কাউকে কখনো ছেড়ে যাব না। কথা দাও মেঘভাই।
কথা দিলাম_ বলে মেঘটি গাছে এসে বসল। মেঘের ছোঁয়ায় গাছটি তরতাজা হয়ে উঠল। কচি কচি পাতা গজাতে শুরু করল। দেখতে দেখতে সবুজ পাতায় আর ফুলে-ফলে ভরে গেল গাছটি। কী সুন্দর গাছ!
একটা কাঠবিড়ালি কোত্থেকে এসে আনন্দে ছুটোছুটি করতে লাগল গাছের ডালে ডালে, পাতায় পাতায়। পোকামাকড়রা বাসা বাঁধতে লাগল। নানা জাতের পাখি এসে কিচিরমিচির করছে, গান গাইছে, তারা মনের সুখে বাসা তৈরি করে সংসার পাতছে। বনের পশুরা শিকার ধরে খেয়েদেয়ে গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। এসব কারণে গাছটি নিজেকে খুব বড় কিছু মনে করতে লাগল। সে বড়াই করে বলে, এই বিরানভূমিতে আমার আশ্রয়-প্রশ্রয় ছাড়া পশুপাখিরা বেঁচে থাকতে পারবে না কিছুতেই। সে নিজেকে তার কাছে আশ্রয় নেওয়া পশুপাখি, পোকামাকড়দের রাজা ভাবতে শুরু করল।
গাছটি আগের মতো মেঘের সঙ্গে আর গল্প করে না। মেঘের খবরও নেয় না। এমনকি আগ্রহ করে তার সঙ্গে একটি কথাও বলে না। খুব কষ্ট পেল মেঘটা। সে গাছের এক কোণে চুপচাপ বসে থাকে সারাদিন। মেঘ ভাবে, এভাবে আর বসে থেকে লাভ কী? আমি তো সেই আগের মতো একা হয়ে গেলাম। গাছভাই, তুমি যদি আমার সঙ্গে গল্প না কর, তো আমি খুব কষ্ট পাই। আমি এমন কী অন্যায় করেছি যে, তুমি একটি কথাও বলছ না আমার সঙ্গে? কষ্টে আর অভিমানে কেঁদে ফেলল মেঘটি। গাছটি ত্যাজ দেখিয়ে বলে, দেখছ না কত ব্যস্ত আমি। এতটুকু সময় নেই আমার। কত পশু আমার ছায়ায় এসে প্রাণ জুড়ায়, কত পোকামাকড় আর পাখি আমার ফুল-ফল খেয়ে আমার আশ্রয়ে বেঁচে আছে। তাদের সুখ-দুখ আমাকে দেখতে হয়। শাসন করতে হয়। কারণ ওরা আমার প্রজা। কথা বলার সময় নেই আমার। এখন আমি খুবই ব্যস্ত। বরং তুমি অন্য চিন্তা কর গে। মেঘ অবাক হয়ে বলে, অন্য চিন্তা কর গে, মানে? গাছটি বলল, আমি তো তোমাকে মোটেও সময় দিতে পারছি না। বিরাট রাজ্য আমার। সবাইকে নিয়ে আমার ভাবতে হয়। দেখ, এমন কোনো বেকার গাছের সন্ধান পাও কি না যে সারাক্ষণ চুটিয়ে গল্প করতে পারবে তোমার সঙ্গে। মেঘটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, ও, এই কথা? ঠিক আছে, বিদেয় হই তাহলে। গাছ খুশি হয়ে সঙ্গে সঙ্গে বলে, যাও, ভালো থেকো বন্ধু। মন খারাপ করে চলে গেল মেঘ। মেঘটি চলে যাওয়ার পর গাছটি শুশুকিয়ে যেতে লাগল। তার পাতাগুলো ঝরে পড়ে গেছে। গাছের পাতা নেই, ছায়া নেই। ধীরে ধীরে তার কাছ থেকে সরে গেল পশুপাখি, পোকামাকড় সব। ঠিক আগের মতো একা ও দুখী হয়ে গেল গাছটি। এখন আকাশের দিকে চেয়ে থাকে দুখী গাছটি। যদি মেঘবন্ধুর দেখা পাওয়া যায়! একদিন গাছটি দেখে তার ওপর দিয়ে সেই মেঘটি অন্য মেঘের সঙ্গে হাসি-তামাশা করতে করতে উড়ে যাচ্ছে। গাছটি চিৎকার করে 'মেঘবন্ধু মেঘবন্ধ'ু বলে ডাকল, কিন্তু তার দিকে ফিরেও তাকাল না মেঘটি।
বিএম বরকতউল্লাহ
মুলসুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন