Monday, January 10, 2011

আলপনা কথন



আলপনা, এক ধরনের লোকশিল্প এবং মানুষের সহজাত অভিব্যক্তি বলা যায়। এতে সমাজের অতীত অভিজ্ঞতা যেমন প্রকাশ পায়, তেমনি একই সঙ্গে ফুটে ওঠে বর্তমানের অস্তিত্ব। প্রধানত মহিলারাই এ লোকশিল্পটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তারা একই সঙ্গে বহু পুরনো ঐতিহ্য যেমন ধরে রেখেছে, তেমনি নতুন আঙ্গিক ও বর্ণের সংযোজনেও এ শিল্প হয়েছে সপ্রতিভ। প্রকৃতির রূপ বদলের সঙ্গে তারা যেমন পরিচিত, তেমনি তাদের সৃজনশীলতাও ঋতুচক্রকে দেয় পৃথক মাত্রা। বাংলার মহিলারা বেশ কয়েকটি ব্রত পালন করেন। এ ব্রত পালনে কাদামাটির প্রকৃতি ও আলপনা একটি প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হিসেবে চলে আসে। পূর্বসূরিদের কাছ থেকে শেখা নকশায় তারা অলঙ্কৃত করে তোলে তাদের গৃহ, রাঙায় ঘরের দেয়াল। প্রচলিত রীতির সঙ্গে প্রায় প্রত্যেকেই স্বীয় মনের মাধুরী মিশিয়ে সৃষ্টি করে কল্পনার আপন ভুবন। সাধারণ চালের গুঁড়ার পিটালির মধ্যে ছোট এক টুকরা কাপড় চুবিয়ে নিয়ে এ নকশা করা হতো। সম্ভবত সাদা চালের গুঁড়া ছিটিয়ে অথবা ছড়ানো চালের গুঁড়ার আস্তরণের উপরে দাগ কেটে আলপনা করা হতো। আলপনা শব্দটির উৎপত্তি সম্ভবত সংস্কৃত 'আলিমপনা' থেকে। এর অর্থ প্লাস্টার করা অথবা প্রলেপ দেওয়া। কোনো কোনো পণ্ডিতের মতে, আলপনা শব্দটি সম্ভবত এসেছে 'আলিদোনা' থেকে। এর অর্থ আইল অথবা বাঁধ দেওয়া। প্রাচীন কোনো শিল্পবিষয়ক গ্রন্থে আলপনার উল্লেখ পাওয়া যায় না, যদিও কোথাও কোথাও রঙ্গবলীর উল্লেখ পাওয়া যায়। রঙ্গবলী দ্বারা রং করা লতানো নকশা বোঝায়। এ শিল্পের বর্ণনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, রঙ্গবলী ছিল এক ধরনের আলপনা। আলপনা শিল্পের কাল নিরূপণ করা কঠিন। অনেক পণ্ডিতই ব্রত ও পূজার সঙ্গে সম্পর্কিত আলপনাকে প্রাক-আর্য সময়কালের উৎপত্তি বলে চিহ্নিত করেন। কোনো কোনো পণ্ডিত মনে করেন যে, আমরা আলপনার উত্তরাধিকার লাভ করেছি অস্ট্রিক জাতির কাছ থেকে। যারা আর্যদের আগমনের অনেক আগ থেকেই এ দেশে বাস করত। তাদের মতে, ধর্মীয় আচার সংবলিত ও ঐতিহ্যগত লোকশিল্পসমূহ, প্রকৃতপক্ষে কৃষি যুগে শস্যের প্রচুর উৎপাদন ও অপদেবতা বিতাড়নের নিমিত্তে উদ্ভূত। সে সময় নকশার মূল উপাদান ছিল চালের গুঁড়া, পানিতে গোলানো চালের মণ্ড, শুকনো পাতা গুঁড়ো করে তৈরি রংয়ের গুঁড়া, কাঠকয়লা, পোড়ামাটি ইত্যাদি। সাধারণত মেঝের উপরই আলপনা করা হতো। স্মরণাতীতকাল থেকেই বাংলার মহিলারা ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদির উদ্দেশ্যেই এ নকশার অনুশীলন করে আসছেন। বিভিন্ন প্রজন্মের চিত্রকরদের সুবিধার্থে আলপনার উপস্থাপনা ব্যাপকভাবে যুগের প্রচলিত রীতিতে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তারপরও আলপনা তার ঐতিহ্যগত বেশিষ্ট্য প্রকাশ করতে সক্ষম। আলপনার স্বাতন্ত্র্য ও একই রূপ এঁকে দিয়েছে একটি সূক্ষ্ম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। গোলাকৃতির আলপনা দেবীর পূজায়, বিশেষ করে লক্ষ্মীপূজায় পবিত্র বেদি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আলপনায় ব্যবহৃত মোটিভগুলো হলো_ সূর্য, ধান গাছ, পেঁচা, মই, লাঙল, লক্ষ্মীর পা, মাছ, পান, পদ্ম, শক্সখলতা, সিঁদুরকৌটা ইত্যাদি। বাংলার আলপনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিমূর্ত, আলঙ্কারিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। বর্তমান যুগে মুসলমানরাও বিয়ে ও অন্যান্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আলপনা অঙ্কন করে থাকেন। একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মিনার সংলগ্ন সড়কগুলোতে এবং নববর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা এবং অন্যান্য স্থানে প্রচুর আলপনা তৈরি করা হয়। এটি সত্য যে, বাংলাদেশে আলপনা একটি অসাম্প্রদায়িক চরিত্র হিসেবে বিবেচিত।

শামীম রহমান রিজভী 
Ref: http://www.bangladesh-pratidin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=09-01-2011&type=gold&data=Cricket&pub_no=253&cat_id=3&menu_id=16&news_type_id=1&index=1

ইংরেজি শব্দের উৎস সন্ধান


সব ভাষার মিলনকেন্দ্র বলতে সাধারণত ইংরেজি ভাষাই বুঝি। কেননা ইংরেজি ভাষা নিজের প্রয়োজনে প্রায় সব ভাষা থেকে কিছু না কিছু শব্দ গ্রহণ করেছে। সাম্রাজ্যবাদী ভাষা হিসেবে ইংরেজির বদনাম থাকলেও ইংরেজি শব্দের প্রকাশ ক্ষমতা অন্য ভাষার চেয়ে অনেক বেশি। তাই আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবেও ইংরেজি ভাষার পরিচয় ব্যাপক।

ইংরেজি ভাষার সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। অনেক শব্দের অর্থ আমরা সহজেই বলতে পারি কিন্তু এসব শব্দের উৎসটা কোথায় এ প্রশ্ন করলে অনেকে যে চুপ করে থাকবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। অথচ এসব শব্দের মূলে গিয়ে দেখা যায় বিস্ময়কর সব কাহিনী। এ লেখাটির মাধ্যমে আমরা খুবই পরিচিত কিছু ইংরেজি শব্দের উৎস খুঁজব। ফলে শব্দগুলো আমাদের কাছে একেবারে আপনজনের মতো হয়ে উঠবে।

School : এই শব্দের মূল অর্থটা জানলে আজকের যুগের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনাই বন্ধ করে দিতে চাইবে।

School শব্দটা এসেছে গ্রিক থেকে। যার অর্থ ছিল 'অবসরযাপন'। তখন এই শব্দটা দিয়ে এমন এক সময়কে বুঝানো হতো, যখন সৈন্যদের আর যুদ্ধে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কৃষক মুক্তি পেত কৃষি কাজ থেকে। ব্যবসায়ীর ব্যবসা বন্ধ, অর্থাৎ পুরোপুরি অবসরযাপন। ওই সময় স্কুলে গেলেও পড়াশোনার কোনো ঝামেলা ছিল না। বই সঙ্গে নিলেও সেটা না খুললেও চলত। এসব স্কুলে যাওয়ার সুযোগ মিলত ধনীর ছেলে-মেয়েদের। তারা ওইসময় গল্প-গুজবের মধ্য দিয়ে অনেক কিছু শিখে ফেলত। পরবর্তী সময়ে তারা ভালো চাকরি পেত।

এটা দেখে অনেক মা-বাবাই চাইলেন তাদের ছেলেমেয়েরাও স্কুলে যাক। সময়ের পরিক্রমায় School হয়ে উঠল জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দু, যা এক সময় ছড়িয়ে পড়ে সারা পৃথিবীতে। তবে যতদূর জানা গেছে, তখনকার সময়ের স্কুলে অবসর পাওয়া যেত মাত্র এক ঘণ্টা!

Salary : এক দৃশ্য কল্পনা করুন তো, মাসের প্রথম পাঁচ বা দশ তারিখে আপনার বস বেতন হিসেবে আপনাকে এক প্যাকেট লবণ দিলেন। কেমন লাগবে তখন আপনার? মাথা গরম হওয়ার মতো অবস্থা। শুধু আপনি নয়, সবারই এমনটা হওয়ার কথা। অথচ রোমান যুগে রোমান সৈন্যদের বেতন হিসেবে দেওয়া হতো লবণ। আর এই লবণ পেয়ে তাদের আনন্দ দেখে কে। লবণের ইংরেজি Salt থেকে পরবর্তী সময়ে Salary শব্দটি এসেছে। শুধু বেতন হিসেবে আমাদের আর লবণ দেওয়া হয় না, এই পার্থক্যটুকুই কেবল রয়ে গেছে।

Shampoo : এ শব্দটি এসেছে হিন্দি ভাষা থেকে। যার অর্থ হচ্ছে to press or massage। ইংরেজরা ভারতবর্ষে আসার পর এ শব্দটি তাদের খুব পছন্দ হয়। ফলে শব্দটি এখন ইংরেজি শব্দ ভাণ্ডারের অন্যতম।

Cosmetic : এ শব্দটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় মেয়েদের রূপসজ্জার হরেকরকম সামগ্রীর কথা। Cosmetic শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ Cosmos থেকে। আর Cosmos-এর মানে যে কী, তা পরখ করার জন্য অভিধানটি একবার খুলেই দেখুন না, আপনার বিস্ময়ের সীমা থাকবে না।

Bank : এ শব্দটি এসেছে ইতালিয়ান ভাষা থেকে। তবে তখন শব্দটির মানে ছিল বর্তমানে প্রচলিত অর্থ থেকে ভিন্ন। তখন Bank মানে বুঝানো হতো 'moneychanger' এর টেবিলকে। মধ্যযুগীয় ইতালির প্রত্যেক শহরে প্রচলিত ছিল আলাদা আলাদা মুদ্রা। যেমন মিলান থেকে একজন মানুষ ফ্লোরেন্সে এলে তাকে প্রথমে ফ্লোরেন্সের মুদ্রা কিনতে হতো।

আর moneychanger-এর কাছে নানা শহরের মুদ্রা পাওয়া যেত। পৃথিবীর টাকা-কড়ির ইতিহাসে moneychanger এবং তার টেবিলটার গুরুত্ব ছিল অনেক। কারণ পরবর্তী সময়ে এরা সুদে টাকা ধার দিত। অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেদের টাকা বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করত। আধুনিক যুগের Bank শব্দের পূর্ব নাম হলো moneychanger-এর টেবিল, কথাটি অবিশ্বাস্য হলেও একেবারেই সত্য।

আমিন রহমান নবাব 
Ref: http://www.bangladesh-pratidin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=09-01-2011&type=gold&data=Tax&pub_no=253&cat_id=3&menu_id=16&news_type_id=1&index=6

বিপ্লবী বিনোদ বিহারী (শতবর্ষী এক তরুণের গল্প)

বয়সের সেঞ্চুরি পার করে বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী আজ ১০১ বছরে পদার্পণ করলেন। বর্ণাঢ্য ও গৌরবময় জীবনের অধিকারী এই বিপ্লবী এখনও একজন করিৎকর্মা পুরুষ। জীবনের একেকটি অতীত অধ্যায় বেশ প্রাঞ্জল ও বলিষ্ঠভাবে ধরা দেয় তার স্মৃতিতে। এখনো নিজেকে ভাবেন শতবর্ষী তরুণ। তার কথায় এবং চলনে-বলনেও তা পরিষ্কার লক্ষণীয়। প্রতিটি মুহূর্ত কাটে কর্মমুখরতায়। প্রতিনিয়ত ভাবেন দেশের জন্য। এ দেশকে নিয়ে বিনোদ বিহারী চৌধুরী অনেক স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখেন এদেশের তরুণ সমাজকে নিয়ে। তিনি সভা-সমাবেশে প্রায়ই বলেন- 'তরুণরাই একদিন বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখাবে। অপার সম্ভাবনার এদেশ থেকে দূর করবে সব জীর্ণ ও কূপমণ্ডূকতা।'

বিনোদ বিহারীর জন্ম ১৯১১ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর উত্তর ভূর্ষি গ্রামে। পিতা কামিনী কুমার চৌধুরী ছিলেন তৎকালীন একজন খ্যাতনামা আইনজীবী। মা বামা চৌধুরী ছিলেন গৃহিণী। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি দেশমাতৃকাকে ব্রিটিশের কবল থেকে মুক্ত করার শপথ নিয়ে বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তরে যোগ দেন। ২৯ বছর বয়সে তিনি পুলিশ অস্ত্রাগার দখল ও জালালাবাদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯২৯ সালে রায় বাহাদুর বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৩৪ সালে প্রথম বিভাগে আইএ, ১৯৩৬ সালে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাস করেন। ১৯৩৯ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ ও বিএল পাস করেন। ১৯৩০ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত হুলিয়া মাথায় নিয়ে অজ্ঞাতবাসে কাটান। পরবর্র্তী পাঁচ বছর দেউলি ডিটেনশন ক্যাম্পসহ চট্টগ্রাম, কলকাতা ও বহরমপুর জেলে কাটাতে হয়। এরপর গৃহবন্দী ছিলেন এক বছর। ১৯৩৯ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন এবং চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেস কমিটির সহ-সম্পাদক পদে আসীন হন। পরের বছর বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস নির্বাহী কমিটির সদস্য হন তিনি। ১৯৪১ সাল থেকে টানা পাঁচ বছর হিজলি, ঢাকা, চট্টগ্রাম জেল এবং খোকশা বন্দীশিবিরে বন্দী জীবন কাটান। ১৯৪৬ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত দ্বিখণ্ডিত হলেও তিনি প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে যাননি। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেস নির্বাচনে কংগ্রেস দলীয় প্রার্র্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৫৮ সালে কংগ্রেস নেতা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নেতৃত্বে পৃথক নির্বাচনের বিপরীতে যুক্ত নির্বাচনের আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তিনি।

১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করলে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেন। পেশাগত জীবনে তিনি ১৯৩৯-৪০ সালে জাতীয় দৈনিকে সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৪০ সালে তিনি চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৭-৫৪ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার পরিচালিত আইন রিটি বোর্ডের চট্টগ্রাম জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৫ সালে 'মাস্টারদা সূর্যসেন', ১৯৯৭ সালে 'দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন' বিষয়ক বক্তৃতা তার উল্লেখযোগ্য স্মারক বক্তৃতা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় সংহতি পরিষদ, চট্টগ্রাম পরিষদ, ঢাকার দৈনিক ভোরের কাগজ ও দৈনিক জনকণ্ঠ, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় পূজা পরিষদ ও শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী পরিষদসহ স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক প্রতিষ্ঠান এই বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা প্রদান করেছে। ১৯৯০ সালে তার জীবনীভিত্তিক সাক্ষাৎকার প্রচার করে ব্রিটিশ ব্রট কাস্টিং করপোরেশন বিবিসি। ইতোমধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে ভূষিত করেছে স্বাধীনতা পুরস্কারে। গত বছর তার শতবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত হয়েছে স্মারক গ্রন্থ 'আমাদের সন্তু'।

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম।
সুত্র: http://www.bangladesh-pratidin.com/?view=details&type=gold&data=Income&pub_no=254&cat_id=3&menu_id=16&news_type_id=1&index=1

Sunday, January 9, 2011

২০১০, ২০০৯ ও ২০০৮ সালে বাংলাদেশের ব্যাংক গুলোর লাভের তুলনামুলনক চিত্র

                                           ( কোটি টাকা প্রকাশ)  
ব্যাংকের নাম       ২০১০      ২০০৯     ২০০৮
জনতা ব্যাংক          ১১৫০       ৮০০        ৭০০
ইসলামী ব্যাংক        ১১৪৩       ৮৫০       ৮৩২
অগ্রণী ব্যাংক          ১০৭৭           -        ৬৩২
ন্যাশনাল ব্যাংক       ১০২৫        ৩৫০       ৩৫০
সোনালী ব্যাংক        ১০০০        ৮০০       ৬৩৬
এবি ব্যাংক            ১০০০        ৫০০        ৪৬৫
প্রাইম ব্যাংক            ৭৭০        ৫৮০       ৪৩০
সাউথইস্ট ব্যাংক       ৬৫০        ৪৬৫       ৩০০
এক্সিম ব্যাংক           ৬০৭        ৩২০       ২৬৭
পূবালী ব্যাংক           ৫৯০        ৪২৭       ৩৬৫
ইউসিবিএল              ৫১২        ৩৪০       ২৬০
ব্র্যাক ব্যাংক             ৪৯০        ৪০০       ৩০০
ব্যাংক এশিয়া            ৪৫৫        ৩০০       ১৯৫
ডাচ্-বাংলা              ৪৫০        ২৬০       ২১৮
আইএফআইসি ব্যাংক    ৪১৯        ২০০       ১৭৮
এনসিসিবিএল            ৪১০        ৩১৪      ২৩৬
সিটি ব্যাংক              ৪০০        ২৩০       ১৭০
ইস্টার্ন ব্যাংক            ৪০০        ৩১৫       ২০০
শাহজালাল ব্যাংক       ৩৮৮       ২১০       ২০৭
ঢাকা ব্যাংক             ৩৭০         ২৭০      ২৫৪
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক         ৩১০        ১৮১      ১৫৫
উত্তরা ব্যাংক            ৩০২         ২৫০      ২১৫
মার্কেন্টাইল ব্যাংক       ৩০০          -       ১৯৩
আল-আরাফাহ্ ব্যাংক   ৩০০        ১৮১     ১৫৮
ওয়ান ব্যাংক            ৩০০          -        ১১০
প্রিমিয়ার ব্যাংক         ২৭৫         ১৬০     ১৪৫
দি ট্রাস্ট ব্যাংক          ২৬৫        ১৬০     ১৩৫
যমুনা ব্যাংক            ২৫৩        ১৯৮      ১০৯
রূপালী ব্যাংক            ২৫০         ২০০     ১০১
মিউচ্যু. ট্রাস্ট ব্যাংক     ২৫০          -       ১২২
বেসিক ব্যাংক            ২০৭         ১৬২     ১৭৫
এসআইবিএল             ১৭৫         ১৩০     ১০০
ফার্স্ট সিকিউ. ব্যাংক    ১২১           ৭৬      ২৫
কমার্স ব্যাংক              ৩৪            -      ১৮
আইসিবি ইসলামী ব্যা     -৯            -        -

Monday, January 3, 2011

বিভিন্ন ভাষায় নববর্ষের শুভেচ্ছা


বাংলায় 'শুভ নববর্ষ' কিংবা ইংরেজিতে 'হ্যাপি নিউ ইয়ার' বলে নতুন বছরকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। একইভাবে বিশ্বের অন্যান্য ভাষাতেও শুভেচ্ছা বিনিময়ে রয়েছে ভিন্নতা। চলুন দেখে নেওয়া যাক আরও কিছু ভাষায় নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তা।

হিন্দি : নায়া সাল মোবারক হো

চাইনিজ : চু সেন তান

আরবি : কুল আম আনতুম সালিমুন

উর্দু : খোশ আমদেদ নয়া সাল

পর্তুগিজ : ফেলিজ আনো নিউভো

ফ্রেঞ্চ : বন্নে আনি্ন

জার্মান : প্রোসিট নেউজার

রাশিয়ান : এস নোভিম গুদুম

স্প্যানিশ : ফেলিজ আনো নিউভো
ভিয়েতনামিজ : চুং চুক তান জুয়ান

টার্কিশ : ইয়েনি ইয়েলিনিজ কুটলু ওলসান

জাপানিজ : আকেমাশিতে ওমেডেতু গোজাইমাসু

সুইডিশ : গট নিট আর

ডাচ : গুল্লুকিগ নাইয়ো যার

ইতালিয়ান : বুয়োন কাপোডান্নো

নববর্ষের সাতকাহন

নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস স্বভাবতই বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডারের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যখন বর্ষপঞ্জি ছিল না তখন এ দিনটি নির্ধারণ করা হতো ফসল বপন, ফসল তোলা বা ধর্মীয় উৎসব পালনের কালকে কেন্দ্র করে। এর অনেক পরে মানুষ সুনির্দিষ্টভাবে আবিষ্কার করেছে দিন-মাস-বছরের হিসাব-নিকাশ, তৈরি করেছে বছরপঞ্জি। সে অনুসারেই বছর পরিক্রমা চলছে। বছরান্তে ফিরে আসছে বর্ষবরণ দিবস।

বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডারের উদ্ভব হয়েছে খ্রিস্টজন্মের অনেক আগে। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ অব্দ পর্যন্ত রোমান রাজারা সিংহাসনে বসতেন ১৫ মার্চ অর্থাৎ তখনকার প্রচলিত বছরের প্রথম দিন। এ দিনটিকে বলা হতো ক্যালেন্ডস। এদিকে নতুন চন্দ্রোদয়ের প্রথম দিনকেও বলা হতো ক্যালেন্ডস। একই উচ্চারণ, শুধু ইংরেজি আদ্যাক্ষরের হেরফের। 'সি'-এর বদলে 'কে'। ক্যালেন্ডার শব্দটি এসেছে এই ক্যালেন্ডস শব্দ থেকে। তবে ক্যালেন্ডারের উদ্ভব ও বিকাশে মিসরীয় সভ্যতার অবদান সমধিক উল্লেখযোগ্য। মিসরীয়রাই প্রথম ফসলি মৌসুমের পটভূমিতে গণনার আধুনিক পদ্ধতির প্রচলন করে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নববর্ষ পালনের রীতিনীতি কিন্তু এক নয়। কিছু কিছু মিল থাকলেও নববর্ষের অনুষ্ঠানের সঙ্গে যোগ হয় দেশীয় ঐতিহ্য। নববর্ষের কিছু প্রথা আছে অবাক করা এবং মজার। যেমন থাইল্যান্ডে একজন আরেকজনের গায়ে পানি ছিটিয়ে নববর্ষকে স্বাগত জানায়। স্পেনে রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে ১২টা আঙ্গুর খেয়ে নববর্ষের প্রথম ক্ষণটি উদযাপন করা হয়।

সবই ঐতিহ্যের সুতোয় গাঁথা বিভিন্ন রেওয়াজের সমন্বয়। বর্তমানকালে মিসরে নববর্ষে চাঁদ দেখে নববর্ষ ঘোষণা করেন দেশের ধর্মনেতা বা প্রধান মুফতি। বিশেষ ধরনের খাবারসহ ভোজ উৎসব এবং নতুন কাপড় পরার নিয়ম সেখানে। তারপর ঈদের মতো পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময়। ইরানে প্রাচীনকাল থেকেই নববর্ষে নওরোজ উৎসব পালিত হয়ে আসছে। এদিন কৃষকরা ক্ষেতে বপন করে বিভিন্ন শস্যের বীজ, ঘরদোর সাজায়, নতুন পোশাক পরে।

'হাফত-সিন' নামের বিশেষ খাবার এদিনের সর্বজনীন খাবার, যা সাত রকমের উপকরণে তৈরি করা হয়। আমেরিকান ও জার্মানরা নববর্ষ উপলক্ষে শিশু শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এর প্রচলন হয়েছিল 'চৌদ্দ শতকে'। গ্রিসের রক্ষণশীলরা বছরের শেষ দিনে অপশক্তিকে তাড়ানোর জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে মেতে ওঠে নতুন বছর বরণ করার নানা আয়োজনে। স্কটল্যান্ডে নববর্ষ উৎসব পরিচিত 'হগমানে' নামে। বছরের শুভাগমন স্মরণে কোনো কোনো গ্রামে মানুষ রাস্তায় ঢেলে দেয় ব্যারেল ব্যারেল টার। এদিন 'ফাস্ট ফুটিং' নামে উপহারসামগ্রী দেওয়ার একটি প্রথা চালু রয়েছে সেখানে। সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ায় সেন্ট সিলভেস্টারের পোশাকে সজ্জিত হয়ে নববর্ষকে স্বাগত জানায়, বর্তমানে আমেরিকা-ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের প্রায় সব দেশেই ইংরেজি নববর্ষের আয়োজন খুবই জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপন করা হয়। ৩১ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক ইভ পার্টি বা থার্টি ফার্স্ট নাইট এখন সারা বিশ্বে পরিচিত। নতুন বছরে 'হ্যাপি নিউ ইয়ার' সম্ভাষণ এখন আন্তর্জাতিক সম্ভাষণে পরিণত বলা যায়। আমেরিকায় নববর্ষে স্বজনদের বাড়ি বেড়ানোর ধুম পড়ে। পরদিন আমেরিকানরা জাতীয় খেলা ফুটবল দেখে এবং বাদ্য সহকারে বের করে শোভাযাত্রা। ঘোড়ার গাড়ির পেছনে এগিয়ে চলা এ শোভাযাত্রার নাম 'রোজেস প্যারেড'।

চীন দেশে পূর্ণিমার শুরুর দিন থেকে শুক্লপক্ষের ১৫ দিন উৎসব চলে নববর্ষ উপলক্ষে। পৃথিবীতে একমাত্র চীনারাই নববর্ষ পালন করে প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী। নববর্ষের প্রথম দিনে তারা স্বর্গ ও পৃথিবীর দেবতাকে তুষ্ট করে নানা উপাসনা-উপাচারে, দ্বিতীয় দিন পূর্ব পুরুষের মঙ্গল কামনা করা হয়। 'ওয়েইলু' নামক বিশেষ ভোজনের আয়োজন করা হয় এদিন। পক্ষকালব্যাপী আলাদা আলাদা অনুষ্ঠানের মধ্যে সপ্তম দিনটি পালিত হয় 'শস্য দিবস' নামে।

বহু ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির দেশ ভারতে সম্রাট আকবরের সময় যে নওরোজ উৎসব হতো তা সর্বভারতীয় উৎসবের মর্যাদা পায়নি। অনেকে ভারতীয় বর্ষবরণ উৎসবকে দিওয়ালি উৎসব বলে অভিহিত করেন। দিওয়ালি অর্থ দীপাবলী বা আলোর উৎসব। এটি হয় বিভিন্ন রাজ্য বা সমপ্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী। দিওয়ালি ধর্মীয় উৎসবও বটে। লক্ষ্মীপূজাসহ চলে দেবদেবীর স্মৃতিতর্পণ করার উদ্দেশ্যে ভজন সংগীত, শ্রী কৃষ্ণকীর্তন ইত্যাদি। পাঞ্জাবে নববর্ষ উৎসব পরিচিত বৈশাখী নামে। নববর্ষে পুষ্পসজ্জা প্রায় সর্বভারতীয় রেওয়াজ, দক্ষিণ ভারতের অঞ্চলবিশেষের মজাদার খাবার ও পুষ্প উপহার গুরুত্বপূর্ণ প্রথা। তবে বর্তমানে ইংরেজি নববর্ষ পালন সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান উৎসব হয়ে উঠেছে।

ভিয়েতনামে নববর্ষকে সংক্ষেপে 'টেট' শব্দে অভিহিত করা হয়। ভিয়েতনামীদের বিশ্বাস, ঈশ্বর ঘরে ঘরে বাস করেন। নববর্ষে বেড়াতে যান স্বর্গে। সেখানে বসে মর্ত্যের লোক কি করছে, তা খতিয়ে দেখেন। বলা হয়, কার্প মাছের পিঠে চড়ে ঈশ্বর ভ্রমণেও বের হন। এ বিশ্বাসে অনেকে নদী বা পুকুরে কার্প মাছ ছাড়েন। জাপানে নববর্ষ উদযাপন করা হয় ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে। শুভদিন হিসেবে অন্তত সূর্যাস্ত পর্যন্ত নববর্ষে হাস্যমুখর থাকে জাপানিরা। লোকাচার অনুযায়ী মন্দভাগ্য এড়াতে অনেকে বাড়ির সামনে টানিয়ে রাখে বিশেষভাবে তৈরি রশি। পারসিক অগি্ন উপাসকদের নববর্ষ ৩১ মার্চ। নতুন পোশাক, উত্তম আহার এবং বেড়ানো তাদের উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ।

আর্জেন্টিনায় নববর্ষের আগের দিন রাতে পরিবারের সব সদস্য একত্রে খাবার টেবিলে বসে আহার করে। তার পর বড়রা নাচের অনুষ্ঠানে চলে যায়। ভোর পর্যন্ত চলে এ নাচের অনুষ্ঠান। নববর্ষের প্রথম দিন নদী বা পুকুরে সাঁতার কেটে তারা নববর্ষ উদযাপন করে।

ব্রাজিলের রিওডি জেনিরো সমুদ্র সৈকতে নববর্ষের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানটি হয়। এর অন্যতম আকর্ষণ চোখ ধাঁধানো আতশবাজির প্রদর্শনী। এ দিন অনেক লোকই সাদা পোশাক পরিধান করে। সমুদ্রে সাতটি ডুব দিলে এবং সাতটি ফুল ছুঁড়ে দিয়ে তারা মনে করে বছরটি খুব ভালো কাটবে। এ উৎসবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় দুই মিলিয়ন পর্যটক যোগ দেয়।

কোরিয়ায় নববর্ষ শুরুর সময় কেউ ঘুমায় না। এ সময় ঘুমালে নাকি চোখের ভ্রূ সাদা হয়ে যায়! রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে টিভিতে ৩৩ বার ঘণ্টা বাজানো হয়। কোরিয়ার ৩৩ বীরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এটি করা হয়। কোরিয়ায় প্রায় সবাই সূর্যোদয় দেখে। সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ার সময় একজন আরেকজনকে শুভেচ্ছা জানায়।

মেক্সিকোতেও ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে ১২ বার ঘণ্টা বাজানো হয়। এ সময় প্রতি ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে একটি করে আঙ্গুর খাওয়া হয়। তারা বিশ্বাস করে, এ সময় যা কামনা করা হয়, তাই পূরণ হয়। 


আমিন রহমান নবাব
Ref: http://www.bangladesh-pratidin.com/index.php?view=details&archiev=yes&arch_date=01-01-2011&type=gold&data=Car&pub_no=245&cat_id=3&menu_id=16&news_type_id=1&index=0 

কোল্লাপাথর শহীদ স্মৃতি পর্যটনকেন্দ্র

কুমিল্লার সীমান্তবর্তী উপজেলা ব্রাহ্মণপাড়া। ওই উপজেলার সালদা নদী রেলস্টেশন থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে গেলে চোখে পড়বে টিলাঘেরা একটি সুন্দর সমাধিস্থল। নাম কোল্লাপাথর শহীদ সমাধিস্থল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় এর অবস্থান। এখানে ৫০ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি এটি। সারিবদ্ধভাবে সাজানো মুক্তিযোদ্ধাদের ওই সমাধি দেখতে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় থাকে। সমাধিস্থলের চারপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার উঁচু-নিচু টিলা, নানা প্রজাতির বৃক্ষ, সামাজিক বনায়ন আর সবুজের সমারোহ পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। সমতল ভূমি থেকে বেশ কয়েকটি সিঁড়ি মাড়িয়ে মূল বেদিতে পা রাখার পর হাতের বাঁয়েই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সারিবদ্ধ কবর।
ওই সমাধিস্থলের তত্ত্বাবধায়ক মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল করিম বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এলাকা কসবা। যুদ্ধকালীন এখানে পাকিস্তানি বাহিনী আর এ দেশীয় দোসরদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক লড়াই হয়। ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে এখানে যুদ্ধ সংঘটিত হলে বিপুল লোক হতাহত হয়। প্রাণ হারান অগণিত মুক্তিযোদ্ধা। তখন বিভিন্ন এলাকা থেকে যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের কোল্লাপাথর শহীদ সমাধিস্থলে এনে কবর দেওয়া হতো। আমার বাবা আবদুল মান্নান ৬৫ শতক জায়গা তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধির জন্য দান করেছেন। বাবা, এলাকাবাসী আর আমি মিলে কাঁধে করে ওই মুক্তিযোদ্ধাদের এখানে সমাধিস্থ করতাম। ওই সমাধিস্থলই এখন ভ্রমণপিপাসু মুক্তিযুদ্ধপ্রেমী প্রজন্মের কাছে অহংকার হয়ে উঠেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গভাবে কোল্লাপাথর শহীদস্মৃতি পর্যটনকেন্দ্র হয়নি। কিন্তু পর্যটনের অবয়বে কিছু স্থাপনা তৈরি হয়েছে। ৩৯ বছর ধরে আমিই সেটি রক্ষণাবেক্ষণ করছি। সকাল-বিকেল পরিচর্যা করছি। যাঁরা এখানে আসেন তাঁদের ওই সময়ের কাহিনি শোনাতে হয়। গাইডের ভূমিকা নিতে হয়।’
এখানে যাঁরা ঘুমিয়ে আছেন, সেই ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা হলেন: সিপাহী দশন আলী, জাকির হোসেন, আবদুল জব্বার, হাবিলদার তৈয়ব আলী, নায়েক আবদুস সাত্তার, সিপাহী আব্বাস আলী, ফারুক আহম্মদ, ফখরুল আলম, মোজাহীদ নূরু মিয়া, নায়েক মোজাম্মেল হক, নায়েক সুবেদার আবদুস ছালাম, নোয়াব আলী, সিপাহী মোসলেম মৃধা, প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম, আবদুল অদুদ, সিপাহী আজিম উদ্দিন, মতিউর রহমান, মোশারফ হোসেন, নায়েক সুবেদার মইনুল ইসলাম, সিপাহী নূরুল হক, আবদুল কাইয়ুম, সিপাহী হুমায়ুন কবির, ল্যান্স নায়েক আবদুল খালেক, ল্যান্স নায়েক আজিজুর রহমান, তারু মিয়া, নায়েক সুবেদার বেলায়েত হোসেন, রফিকুল ইসলাম, মোর্শেদ মিয়া, আশুতোষ রঞ্জন দে, তাজুল ইসলাম, শওকত, আবদুস ছালাম, জাহাঙ্গীর, আমির হোসেন, পরেশচন্দ্র মল্লিক, জামাল উদ্দিন, আবদুল আওয়াল, আবেদ আহাম্মদ, সিরাজুল ইসলাম, ফরিদ মিয়া, মতিউর রহমান, শাকিল মিয়া, আবদুর রশিদ, আনসার এলাহী বক্স, সিপাহী শহীদুল হক, সিপাহী আনোয়ার হোসেন, আবদুল বারী এবং অজ্ঞাত তিনজন।
ওই সমাধিস্থলে রয়েছে নায়েক সুবেদার মইনুল ইসলামের কবর। তাঁর নামেই ঢাকা সেনানিবাস এলাকার অতি পরিচিত মইনুল সড়ক নামকরণ করা হয়েছে। এ সমাধিতে ৫০ জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ জনের পরিচয় মিলেছে। অন্য তিনজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর সদ্য প্রয়াত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফুল হাই সাচ্চুর নেতৃত্বে তৎকালীন জেলা প্রশাসন কোল্লাপাথর শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত কবর চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮০ সালে সেখানে একটি কাঠের তৈরি রেস্টহাউস হয়। গত এক দশকে সেখানে স্মৃতিসৌধ, মসজিদ, রেস্টহাউস, সীমানাপ্রাচীর ও পুকুরঘাট বানানো হয়। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ ওই কাজ শেষ করে। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি এম তাজুল ইসলাম একে পর্যটনকেন্দ্রের আদলে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ওই স্থান পরিদর্শন করেন। তাঁদের সম্মতি আর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের অন্যতম সবুজে ঘেরা শহীদস্মৃতি পর্যটনকেন্দ্র হবে এটি। কোল্লাপাথর থেকে খুব কাছেই ভারতীয় সীমান্ত। দুই দেশের ভ্রাতৃত্ববোধের জন্য এ পর্যটনকেন্দ্র মনে করিয়ে দেবে যুদ্ধকালীন সহযোগিতার কথা।
কোল্লাপাথর শহীদস্মৃতি পর্যটনকেন্দ্র বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মো. আজাদ সরকার লিটন। কয়েক বছর ধরে তিনি এর জন্য আন্দোলন করছেন। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকায় গণজাগরণ সৃষ্টির জন্য নানা কর্মসূচি পালন করছেন। সরকারি মহলে আবেদন করেছেন। তিনি বললেন, মুক্তিযুদ্ধের সরকার চাইলেই এটি পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়িত হবে। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক কুণ্ডু গোপীদাস, একই বোর্ডের সাবেক সচিব মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক হাবিবুর রহমান ও কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সফিউল আহমদ বাবুলের মতে, পাঠ্যপুস্তকে কোল্লাপাথরের ইতিহাস তুলে ধরা দরকার। নতুন প্রজন্ম নানাভাবে বিপথগামী হচ্ছে, ওদের ফেরাতে হলে ওই দর্শনীয় স্থানকে আরও ঢেলে সাজাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে তুলতে হবে।
উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা আর এ প্রজন্মের সঙ্গে সেতুবন্ধের জন্য সেখানে পালিত হচ্ছে নানামুখী কর্মসূচি। আগামী বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার দশক। ওই মাহেন্দ্রক্ষণকে সামনে রেখে কোল্লাপাথর পরিপূর্ণভাবে শহীদস্মৃতি পর্যটনকেন্দ্র হবে। বেড়াতে আসা পর্যটকেরা এর দৃষ্টিনন্দন রূপ দেখে মোহিত হবে। এমন আশায় রইলেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। 
 
গাজীউল হক |
Ref: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-12-29/news/119160 

বনসাই শিল্পের গোড়ার কথা

খর্বাকৃতি বৃক্ষের উৎপাদন ও বৃদ্ধির শিল্পই বনসাই শিল্প। বনসাই শিল্পে ব্যবহৃত বৃক্ষগুলো বংশানুক্রমে খর্বাকৃত নয়। শিকড় এবং শাখাগুলো কেটে এবং তার দিয়ে বেঁধে শাখাগুলো একটি নিয়মে আবদ্ধ করার পদ্ধতি দ্বারা গাছগুলো খর্বাকৃতি করা হয়। ১ হাজার বছর আগে চীনে এ শিল্পের উদ্ভব হয়। কিন্তু দ্বাদশ শতাব্দীতে জাপানিরা এ শিল্পপন্থা অনুসরণ করে এবং বনসাই শিল্পে উন্নতি সাধন করে। বস্তুত বনসাই একটি জাপানি ভাষার শব্দ। যার অর্থ হলো 'ট্রের মধ্যে ফলানো'। দ্বাদশ শতাব্দীতে পশ্চিমারা বনসাই শিল্পের প্রশংসা করে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্ব এ শিল্পে পারদর্শী ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বনসাই শিল্প পশ্চিমা বিশ্বে জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং শীঘ্রই পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বনসাই সমিতি গঠিত হয়। বর্তমানে জাপান বিশ্বজুড়ে জাঁকালো বনসাই ব্যবসা পরিচালনা করছে। বস্তুত প্রকৃতি থেকেই বনসাই শিল্পের প্রেরণা আসে। উচ্চ পর্বতমালায় জন্মানো গাছগুলো জন্মলগ্ন থেকেই খর্বাকৃত হয়। নার্সারি থেকে পাত্রে রক্ষিত গাছগুলোকে বাছাই করে এনে সঠিকভাবে কেটে এবং তাদের আকৃতি ও বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শাখাগুলোকে তার দিয়ে বেঁধে বনসাইয়ে রূপ দেওয়া যেতে পারে। প্রতি এক বছর থেকে পাঁচ বছর পরপর বনসাইকে অন্য পাত্রে নতুনভাবে রোপণ করতে হয়। এটি গাছের বিশেষ শ্রেণী এবং শিকড়ের বৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে। পরবর্তী বছরগুলোতে পুনরায় রোপণের সময় ক্রমশ এবং ধারাবাহিকভাবে শিকড়গুলো ছাঁটাই করার ফলে মাটির গোলাটির আকৃতি ছোট হয়। শেষ পর্যন্ত বৃক্ষটি প্রয়োজনমতো ছোট এবং অগভীর পাত্রে রক্ষিত হতে পারে। অন্যান্য গাছের মতো এ গাছেও বারবার পানি ঢালতে হয়। এ গাছে তরল সার ব্যবহার করা হয় এবং গাছের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ডাল কাটা ও শিকড় ছাঁটাই কাজও চালিয়ে যেতে হয়। যে পাত্রে বনসাই লাগানো হয়, বৃদ্ধির জন্য সে পাত্রটি বনসাইয়ের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। বনসাইয়ের পাত্রগুলো সাধারণত মাটির পাত্র হয়। সেগুলো গোলাকৃতি, ডিম্বাকৃতি, সমচতুর্ভুজ, সমকোণী চতুর্ভুজ, অষ্টকোণী বা অসম আকৃতির হতে পারে। তলার দিকে একাধিক পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা থাকে। অতি ক্ষুদ্রাকৃতি বনসাই দুই ইঞ্চি পর্যন্ত উঁচু হয় এবং বড় হতে তিন থেকে পাঁচ বছর লাগে। ছোট বনসাই দুই ইঞ্চি পর্যন্ত উঁচু হয় এবং বাড়তে পাঁচ থেকে দশ বছর সময় লাগে। মাঝারি আকারের বনসাই ৬ থেকে বার ইঞ্চি পর্যন্ত উঁচু হয় এবং তিন বছরের মধ্যে জন্মানো যেতে পারে। এক শতাব্দী বা তার চেয়ে বেশি দিনও বনসাই জীবিত থাকতে পারে এবং পরিবারের একটি বিশেষ সম্পদ হিসেবে পুরুষানুক্রমে হস্তান্তরিত হতে পারে। জাপানে এটি একটি জাঁকালো ব্যবসা। বর্তমানে বনসাই ব্যবসায় জাপান সবচেয়ে লাভবান দেশ। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতেও মাঝারি আকারের বনসাই ব্যবসা বেশ জনপ্রিয়। 
প্রীতম সাহা সুদীপ 
Ref: http://www.bangladesh-pratidin.com/index.php?view=details&type=gold&data=Car&pub_no=247&cat_id=3&menu_id=16&news_type_id=1&index=5

লালমাই পাহাড় চূড়ার চণ্ডীমুড়া



কুমিল্লায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যে কয়েকটি তীর্থস্থান রয়েছে তার মধ্যে চণ্ডীমুড়া ঐতিহ্য অন্যতম। কুমিল্লার আঞ্চলিক ভাষায় অপেক্ষাকৃত ছোট পাহাড়কে মুড়া বলা হয়। পাহাড়ের গায়ে সিমেন্টের সিঁড়ি বেয়ে শীর্ষে উঠে মন্দির দেখার আনন্দই আলাদা। কুমিল্লা শহরের প্রায় ১৩ কিলোমিটার পশ্চিমে কুমিল্লা-চাঁদপুর-বরুড়া সড়কের সংযোগস্থলে দেড়'শ ফুট পাহাড়ের উপরে অবস্থিত চন্ডীমুড়া মন্দির। এটি কুমিল্লার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। চণ্ডীমুড়ায় ২টি মন্দির পাশাপাশি অবস্থিত। দক্ষিণ পাশের মন্দিরটি চণ্ডী মন্দির ও উত্তর পাশের মন্দিরটির শিব মন্দির। মন্দির দুটো সপ্তম শতাব্দীতে নির্মিত। সপ্তম শতাব্দীর খড়গ বংশীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাজা দেবখড়গের রানী প্রভাবতী একটি হিন্দু মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেবী সর্বাণীর মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। রানী প্রভাবতী হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন। চণ্ডীমুড়ার উচ্চতা প্রায় ১৫০ ফুটের উপরে। এর চূড়ায় অবস্থিত এই মন্দির। নিচ থেকে এতে উঠতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮০টি সিঁড়ি আছে। সমুদ্র বেষ্টিত পলল গঠিত চত্বর সমভূমি রূপে উদ্ভাসিত মহাতীর্থ চণ্ডীমুড়া, সপ্তম শতাব্দীতে বৌদ্ধরাজ দেবখড়গের স্ত্রী প্রভাবতী দেবী অমরকীর্তি স্থাপনে বদ্ধপরিকর হয়ে ২টি মন্দির স্থাপন করেন। একটি চণ্ডী মন্দির, অপরটি শিব মন্দির। চণ্ডী মন্দিরে অষ্টভুজা সর্বাণী মহা সরস্বতী, অপরটিতে শিবমূর্তি স্থাপন করেন। অদূরে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এক বিশাল দিঘি খনন করেন। বরুড়া থানার অন্তর্গত গোষণা গ্রামের স্বামী আত্ননন্দ গিরি মহারাজ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে পরিত্যক্ত মন্দিরগুলো পুনঃসংস্কার করেন। বর্তমানে সনাতন ধর্মালম্বী ছাড়াও নানা ধর্মের পর্যটক প্রতিদিনই এই মন্দির পরিদর্শনে আসেন। সরেজমিন দেখা যায়, চণ্ডী মন্দিরের পেছনের দেয়ালে লম্বালম্বিভাবে বেশ বড় ফাটল ধরেছে। মন্দির দুইটিতে নতুন রং করা হলেও ফাটল মেরামতের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখানকার কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রতি বছর তিনবার চণ্ডীমুড়ায় ভক্তবৃন্দের সমাবেশ ঘটে। কার্তিক মাসের কালীপূজার সময় দেওয়ানি উৎসব, পৌষ-মাঘ মাসে গীতা সম্মেলন এবং ফালগুন-চৈত্র মাসে বাসন্তী মহাঅষ্টমী। আশ্রমের লোকজনসহ আগত ভক্তবৃন্দের বিশ্বাস-মা চণ্ডী দেবীর কৃপা থেকে কেউ খালি হাতে ফেরে না। ১৯৫৫-৫৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রত্নতাত্তি্বক বিভাগ লালমাই-ময়নামতিতে জরিপ চালিয়ে কুমিল্লার প্রত্নতাত্তি্বক যে ৫৪টি স্থান সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট করে তার মধ্যে চণ্ডীমুড়া অন্যতম।

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা 
Ref: http://www.bangladesh-pratidin.com/index.php?view=details&type=gold&data=Software&pub_no=247&cat_id=3&menu_id=16&news_type_id=1&index=2

হেলেন কাহিনী (দ্য বিউটি কুইন অব স্পার্টা)

খ্রিস্টপূর্ব ১২১৪ অব্দে জিউস ও লিডার ঘর আলোকিত করে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে ছোট অথচ ফুটফুটে একটি শিশু। বাবা জিউস কন্যাশিশুর কথা শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। মা লিডা বারবার চুমো খেতে থাকে ছোট কন্যাশিশু কপালে।

শিশুটির নাম কি রাখা হবে এ নিয়ে যখন সবাই ব্যস্ত, তখন এক জ্যোতিষী শিশুটির নাম রাখলেন হেলেন! আর বললেন নামের কারণেই মেয়েটি পৃথিবীতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।



প্রাচীনকালে গ্রিক বিভিন্ন রাজ্যে বিভক্ত ছিল_ স্পার্টা, আর্পস ছিল তার অন্যতম। স্পার্টার রাজার নাম ছিল মেনিলাস, আর্পসের রাজার নাম ছিল আগামেনন। মেনিলাস ও আগামেনন সম্পর্কে ছিল আপন ভাই। মেনিলাসের ছিল একাধিক স্ত্রী। একাধিক স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও সে ছিল ভয়ানক নারীলোভী।

অন্যদিকে জিউসের কন্যা হেলেন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হেলেনের রূপ-লাবণ্য আর আকর্ষণীয় চাহনির সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এক সময় স্পার্টার রাজা মেনিলাসের কানেও চলে আসে সেই খবর। হেলেনের জন্য পাগল হয়ে ওঠলেন মেনিলাস। প্রায় ৬০ জন প্রহরী নিয়ে হাজির হয় জিউসের বাড়িতে, রাজার অনুরোধ আর বিনয়ে মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যান জিউস! শুরু হয় নতুন অধ্যায়ের। মেনিলাস বয়সে ৪০ বছরের বড় হলেও জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন হেলেনকে। মেনিলাস হেলেনের জন্য প্রহরী নিযুক্ত করেন প্রায় ৮০ জন, তার গোসল, খাওয়া-দাওয়া, কাপড়-পরিধান এমনকি চুল আঁচড়ানোর জন্যও সেবিকারা থাকত সদাব্যস্ত। হেলেনের মুখের হাসি দেখার জন্য মেনিলাস নানা উপায় অবলম্বন করতেন, কখনো গোলাপ ফুল, কখনো দামি শাড়ি নিয়ে হাজির হতেন হেলেনের সামনে। নানা আয়োজনে হেলেনকে ভালোবাসতে চাইলেও হেলেন মোটেই ভালোবাসতেন না মেনিলাসকে! সব সময় ভিন্ন কিছু পাওয়ার আশায় উদাসীন থাকতেন হেলেন। কালেভদ্রে হাসি ফুটতো হেলেনের মুখে। নিজেকে সব সময় আড়ালে রাখতেই পছন্দ করতেন তিনি। নিজের মনের কথা কখনো কাউকে খুলে বলতেন না।

গ্রিক ও ট্রয় (বর্তমান তুরস্ক) পাশাপাশি দুটি রাষ্ট্র; কিন্তু মধ্যে ছিল এজিয়ান নামক বিখ্যাত সাগর। ১২৩০ সালের দিকে ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিস ও হেক্টর আসে স্পার্টায় ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য। স্পার্টার রাজা মেনিলাস প্যারিস ও হেক্টরকে সাদরে সম্বোধন জানায়। তাদের আগমনে রাজ্যকে লাল-নীল বাতিতে চমৎকারভাবে সাজানো হয়। নৈশভোজের বিপুল সমারোহের পর প্যারিস ও হেক্টরকে সবার সঙ্গেই পরিচয় করিয়ে দেন রাজা মেনিলাস। এক পর্যায়ে হেলেনের সঙ্গে পরিচয় ঘটে রাজপুত্র প্যারিসের। ব্যবসায়িক আলোচনার জন্য স্পার্টায় বিশদিন থাকার প্রয়োজন হয়ে পড়ে প্যাসিস ও হেক্টরের। হেক্টর ও মেনিলাস বেশি ব্যস্ত থাকতেন ব্যবসা-বাণিজ্যের চুক্তি নিয়ে। আর গোপনে সবার চক্ষুর আড়ালে প্যারিস দেখা করতেন হেলেনের সঙ্গে। প্যারিসের চেহারা, গায়ের গড়ন, শরীর কাঠামো সবকিছুই হেলেনকে বিমোহিত করে, প্রথমে রাজি না থাকলেও আস্তে আস্তে প্যারিসের প্রতি প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েন হেলেন। যাই হোক নির্ধারিত সময় শেষে ট্রয়ে ফিরে যাবেন হেক্টর ও প্যারিস। ভোর হলেই তারা রওনা দেবেন ট্রয়ের উদ্দেশে। রাজা মেনিলাসের আপ্যায়নের কোনো কমতি নেই। খাবার-দাবার আর সুন্দরী রমনীদের নাচের দৃশ্য সাজিয়েছে শেষ নৈশভোজ। নর-নারী, প্রহরী ও হেক্টর, রাজা ও ট্রয়ের অতিথিরা যখন আমোদ-প্রমোদ আর নাচ-গান নিয়ে ব্যস্ত তখন প্যারিস গোপনে চুপিসারে যান হেলেনের ঘরে। নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে একে অপরকে, ভালোবাসার মধুর রসসিক্ত হয় উভয়ের মণ, প্রাণ ও দেহ। এজিয়ান সাগরের মাঝপথে এসে প্যারিস হেক্টরকে বলেন, হেলেন তাদের সঙ্গে এসেছেন। প্যারিসের কথা শুনে অবাক হয়ে যান হেক্টর! রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে চটে যায় প্যারিসের ওপর। নাবিকদের বলে জাহাজ স্পার্টার দিকে ঘুরাতে। কিন্তু প্যারিসের অনুরোধে আর ক্রন্দনে হেক্টর নিজের মত পরিবর্তন করেন। এদিকে স্পার্টার রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে প্যারিস হেলেনকে অপহরণ করে ট্রয়ে নিয়ে গেছে। মেনিলাস পাগলের মতো হয়ে সাহায্যের জন্য হাত বাড়ান আপন ভাই আর্পসের রাজা আগামেননের। আগামেনন গ্রিসের সম্মান ফিরিয়ে আনার জন্য গ্রিসের সব রাজাকে অনুরোধ জানান। প্রায় ১ হাজার জাহাজ নিয়ে ট্রয়ের উদ্দেশে রওনা দেয় গ্রিসবাসী। ট্রয়ে হাসি-আনন্দ ভালোবাসার জীবন আর যৌবনের পূর্ণতা পায় সুন্দরী হেলেন। ট্রয়ে বয়ে যায় হেলেনময়। প্রতিদিন শত শত উপহার উপঢৌকন আসতে থাকে হেলেনের ঘরে। প্যারিস নিজের জীবনের স্বার্থকতা আর ভালোবাসার স্পষ্টতা খুঁজে পায় হেলেনের হৃদয়ে। ভালোবাসার অতল সমুদ্রে ভাসতে থাকে প্যারিস আর হেলেন। হঠাৎ রাজ্যময় বিপদ ঘণ্টা বাজতে থাকে। রাজ্যের প্রজারা-বিপদ সংকেতে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। রাজ্য থেকে হেক্টর ও তার বাবা দেখতে পায় হাজার হাজার জাহাজ নিয়ে গ্রিকরা ধেয়ে আসছে ট্রয়ের দিকে। মুহূর্তে কালো মেঘ নেমে আসে হেলেনের চোখে-মুখে। গোপনে রাতে ট্রয় থেকে পালিয়ে যেতে চান হেলেন। কিন্তু ধরা পড়ে হেক্টরের হাতে। হেক্টর তাকে সাহস দেয়। এতে ট্রয়ে থেকে যান হেলেন। জাহাজ থেকে সর্বপ্রথম নামেন গ্রিকবীর একলিস। নেমেই যুদ্ধ শুরু করেন একলিস ও তার সঙ্গীরা। প্রথম যুদ্ধেই ট্রয়নগরীর বন্দর দখল করেন নেয় গ্রিকরা। এভাবে টানা ১০ বছর বন্দর ও রাজ্য অবরোধ করে রাখে গ্রিকরা। বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধে নিহত হয় একলিসের ভাই উইরোরাস, প্যারিসের বড় ভাই ট্রয়বীর হেক্টর ও নাম না জানা উভয়পক্ষের হাজারও যোদ্ধা। যুদ্ধে সহজে জয়লাভ না করতে পেরে গ্রিকরা প্রতারণার আশ্রয় নেয়। তৈরি করে বিশাল আকৃতির ঘোড়া। যার নাম ট্রোজেন হর্স। ঘোড়ার মধ্যে লুকিয়ে রাখে শত শত সৈন্য। উপহার হিসেবে পাঠায় ট্রয় রাজার কাছে। রাজ্যের বাইরে লুকিয়ে থাকে গ্রিকরা কিন্তু এসবই অজানা থাকে ট্রয়বাসীর কাছে।

মহা-আনন্দে আর উৎসাহে ঘোড়াটিকে রাজ্যের ভেতরে নেয় ট্রয়বাসী। কিন্তু বিধি বাম, গভীর রাতে ঘোড়া থেকে বের হয়ে ট্রয়বাসীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায় গ্রিকরা। গ্রিক সৈন্যরা ট্রয় রাজ্যে ধরিয়ে দেয় আগুন। মুহূর্তের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে ট্রয়নগর। আগুনে পুড়ে হাজার হাজার সৈন্য আর নিরীহ নাগরিক মারা যায় কয়েক। একলিস ছুটে যায় হেলেনকে বাঁচানোর আশায়; কিন্তু প্যারিস তীর বিদ্ধ করে মেরে ফেলে একলিসকে। পালিয়ে যায় হেলেন, জয়লাভ করে গ্রিকরা। কিন্তু যে হেলেনের জন্য এত কিছু তাকে মেনিলাস কাছে পেয়েছিল কিনা তা আজও অজানা। 
 মো. রিয়াজুল ইসলাম
Ref: http://www.bangladesh-pratidin.com/index.php?view=details&type=gold&data=Soccer&pub_no=247&cat_id=3&menu_id=16&news_type_id=1&index=0 

১২৫ বছরে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল

 
১৮৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগে তাদের নিজস্ব ভূমিতে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠা। সে সময় নারায়ণগঞ্জে মাদ্রাসা, টোল থাকলেও ইংরেজি তো দূরের কথা, বাংলা শিক্ষারও কোনো স্কুল ছিল না। বলা চলে, এটিই গোটা নারায়ণগঞ্জ জেলায় বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষার প্রথম স্কুল এবং একমাত্র এন্ট্রান্স স্কুল। আর তাই এ স্কুলকে কেন্দ্র করেই প্রায় দীর্ঘ সময় পরিচালিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও জাতীয় কর্মকাণ্ড। মুসলিম লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি, ফরোয়ার্ড ব্লক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্মেলন-জনসভাসহ নানা কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে এই স্কুলের বিস্তৃত প্রাঙ্গণে। শিক্ষা সম্মেলন ও সাহিত্য সম্মেলনও হয়েছে। এখানে এসেছেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহসহ অনেকেই।
১৯২৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রনাথকে সংবর্ধনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। তখন কলকাতা থেকে ঢাকায় যেতে প্রথমেই গোয়ালন্দ হয়ে স্টিমারে নারায়ণগঞ্জে আসতে হতো। গোয়ালন্দ থেকে নারায়ণগঞ্জ জলপথের দূরত্ব ১০০ মাইল। রবীন্দ্রনাথ যতবার ঢাকায় এসেছেন, এই নারায়ণগঞ্জের ওপর দিয়েই গিয়েছেন। ১৯২৬ সালে আগরতলা থেকে চাঁদপুর হয়ে স্টিমারে কবি নারায়ণগঞ্জে আসেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল নয়টা নাগাদ তিনি নারায়ণগঞ্জে এসে পৌঁছান। নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলের ছাত্ররা স্টিমার ঘাটে কবিকে এবং তাঁর দলের সবাইকে অভ্যর্থনা জানায়। শত শত ছাত্র এখান থেকে শোভাযাত্রাসহ কবিকে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলে নিয়ে আসে। তখন স্কুল প্রাঙ্গণে এক সমাবেশে কবিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশে রবীন্দ্র সংবর্ধনায় ভূঁইয়া ইকবাল কবিকে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলে দেওয়া সংবর্ধনায় প্রদানকৃত মানপত্রটি হুবহু তুলে ধরা হয়েছে। এ সংবর্ধনাপত্রে বলা হয়েছিল, ‘বিশ্ববরেণ্য কবিসম্রাট শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের শ্রীশ্রীচরণকমলেষু। দেব, পূর্ব্ববঙ্গের তোরণ-দ্বারে-পুণ্যসলিলা শীতলক্ষ্যার পবিত্র তীরে হে কবি! তোমাকে তোমার প্রত্যাবর্ত্তন-পথে স্বাগতম। অভিনন্দনের সুযোগ পাইয়া আমরা আপনাদিগকে কৃতার্থ মনে করিতেছি।...আমাদের এই বাংলাদেশ দেশে দেশে শুধু অন্নই বিতরণ করে না, দেশকে সুজলা-সুফলা ও শস্যশ্যামলা করিয়াই শুধু নদীর শুভ্র-রজতধারা তাহার গতিপথে অগ্রসর হয় না, তাহার কলপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানের পবিত্র আলোকধারাও লহরে লহরে দিগিদগন্তে ব্যাপ্ত করিয়া দিয়া আপনাকে মহিমান্বিত করিয়াছে, সে লুপ্তধারা ধূর্জ্জটির জটানিষ্যন্দী পবিত্রধারার ন্যায় তুমিই আবার বিশ্বভারতীর শান্তিনিকেতন হইতে প্রবাহিত করিয়া সমস্ত বিশ্ববাসীকে ভারতের বাণী নূতন করিয়া প্রচার করিতেছ। নালন্দা নাই, তক্ষশীলা নাই, বিক্রম শীলা নাই! তাহাতে দুঃখ কি? তোমার বিশ্ব-ভারতী অতীত ও বর্ত্তমানকে জাগ্রত করিয়াছে। আমরা তোমার সেই আদর্শ হূদয়ে গ্রহণ করিয়া লক্ষ্য পথে চলিতে পারি, আমাদিগকে সে আশীর্ব্বাদ কর...।’ তখন অমৃতবাজার পত্রিকায় হাইস্কুলের এই সংবর্ধনা সভার সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে উল্লেখ করা হয় যে ছাত্রদের পক্ষ থেকে কামাখ্যা চরণ সেন কবিকে স্বাগত জানিয়ে এক অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন এবং অভিনন্দনের উত্তরে কবি নিজের ছাত্রজীবনের কথা উল্লেখ করেন। সংবর্ধনার উত্তরে রবীন্দ্রনাথ সেদিন বলেন, ‘লোকে চাকরি পাওয়ার জন্য নিজেকে শিক্ষিত করতে স্কুল-কলেজে পড়তে যায়। কিন্তু বর্তমানে চাকরির দরজা বন্ধ হওয়ায় শিক্ষিত লোকেরা স্বাধীন জীবিকার দিকে ঝুঁকছে। রাজনীতির ক্ষেত্রেও কাজকর্মে এক পরিবর্তন এসেছে। এমন একটি সময় ছিল, যখন লোকে ভাবতেন, বক্তৃতা দিয়েই তাঁরা তাঁদের কাজ উদ্ধার করতে সক্ষম হবেন। তাঁরা পুরাতন অভ্যাসবশত এখনও ঐরূপ কাজ করে বসেন। কিন্তু বর্তমানে যুবসমাজ বাস্তব ও আসল কাজের দিকে তাকায়। বর্তমান আন্দোলনকালে যে উদ্দীপনা এসেছে, তাকে যেন তারা স্থায়ী করে। শান্তিনিকেতনে পূর্ববঙ্গের বহু ছেলে পড়ে। তাদের মধ্যে চরিত্রের দৃঢ়তা, একাগ্রতা ও শ্রদ্ধার ভাব দেখেছি। আমি পূর্ববঙ্গ ভ্রমণ করে দেখলাম, এটা একটা ভাল কর্মী সংগ্রহের স্থান। এখানকার ছেলেদের যে কাজেই লাগানো যাবে, তারা তাদের একাগ্রতা ও নিষ্ঠার দ্বারা কৃতকার্য হবেই। আমি যদি এখনও যুবক থাকতাম, তাহলে এখানে বক্তৃতা না করে হাতে-নাতে কাজে লেগে যেতাম। এখানকার উর্বরা মাটির মতই এখানকার মানুষের উদ্যম-আগ্রহও প্রবল। কিন্তু আজ আমার বয়স এবং স্বাস্থ্য দুই-ই নেই। আমার কর্মক্ষেত্র পশ্চিম বাংলার এক সীমান্তে অবস্থিত। সেখানকার মাটি উর্বরা নয় এবং মানুষও অনেকটা উদাসীন। পূর্ববঙ্গের এ অঞ্চলে উপযুক্ত পরিবেশে লোকে যদি তাদের কাজ আরম্ভ করে, তাহলে তারা অতি সহজেই সফলকাম হবে।...পূর্ববঙ্গে প্রকৃতি যেমন সৌন্দর্যে ও প্রাচুর্যে নিজেকে বিকশিত করেছে, এখানকার লোকদের মধ্যেও দেখেছি তেমন প্রাণ-প্রাচুর্য ও প্রাণের উদারতা। পূর্ববঙ্গের যুবকরা যদি তাদের এ অঞ্চলে গ্রামীণ কাজ আরম্ভ করে, তাহলে তারা নিশ্চয়ই সফলকাম হবে। উপসংহারে আমি ছাত্রদের আশীর্বাদ জানিয়ে বলব, তারা তাদের ত্যাগ ও নিষ্ঠার দ্বারা কাজ করলে শুধু বাংলাকেই নয়, সারা ভারতকেও আসল পথের সন্ধান দেবে।’
নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল ১২৫ বছরের ইতিহাস ধারণ করে চলেছে। এই দীর্ঘ সময়ে শত-সহস্র ছাত্র আলোকবর্তিকা নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছেন দেশে ও দেশের বাইরে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এন্ট্রান্স পরীক্ষার মেধাতালিকায় এ স্কুলের অবস্থান ছিল উল্লেখযোগ্য। আশা করতে দোষ কী, এই স্কুল থেকেই হয়তো একদিন বেরোবে আগামী দিনের কোনো এক কপালকুণ্ডলা। যিনি পথ দেখাবেন গোটা জাতি, সমাজ ও দেশকে। 
রফিউর রাব্বি | 
ref: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-12-30/news/119441

এক অসাধারণ মানুষের কথা

 
অধ্যাপক ড. এ আর মল্লিক আমার কাছে একটি অতি শ্রদ্ধেয় নাম। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের দীর্ঘকাল শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। শিক্ষকতাই ছিল তাঁর আজীবনের সাধনা। ১৯৪৮ সালের মার্চের সূচিত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের নেপথ্যে রাজশাহীতে যে কজন বুদ্ধিজীবী শিক্ষক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অধ্যাপক মল্লিক অন্যতম। ভাষাসৈনিক অ্যাডভোকেট মহসীন প্রামাণিক লিখেছেন, ‘ড. আবুল কাশেম চৌধুরীর কাছে জানতে পারি যে ড. মল্লিক ৪৭ সালের ১৫ আগস্ট পাকিস্তান হাসিলের আনন্দমিছিল শেষে সন্ধ্যার সময় ১০-১২ জন ছাত্রনেতা তাঁর বাড়িতে যান, তখনই তিনি ইতিহাসবিদ হিসেবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, “পাকিস্তান তো তোমরা হাসিল করলে, কত দিন পাকিস্তান টেকে, তাতে আমার সন্দেহ আছে।” যে পণ্ডিত ব্যক্তি পাকিস্তানের জন্মলগ্নেই এই ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন বা করার মতো সাহস রাখেন, তিনি প্রকৃত পণ্ডিত ও সাহসী। আমি এ ব্যাপারে ড. মল্লিকের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম এবং তিনি এ কথা স্বীকার করেন।’ (সূত্র: রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলন: স্মারকপত্র, সম্পাদক অধ্যাপক তসিকুল ইসলাম)।
আমাদের জাতীয় জীবনের মহত্তম ঘটনা রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নির্মাণে বুদ্ধিজীবীসমাজের মধ্যে ড. মল্লিকের নাম অগ্রগণ্য। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলনের (২-২৫ মার্চ ১৯৭১) সঙ্গে তিনি একাত্মতা প্রকাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি দ্বিধাহীনচিত্তে যোগ দেন। এ প্রসঙ্গে ড. মল্লিক তাঁর আত্মজীবনী আমার জীবন কথা ও বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম গ্রন্থে লিখেছেন, ‘নিজ পরিচয়ে নিজ দেশে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করব, নাকি পাকিস্তানিদের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকব—এ প্রশ্নের উত্তর দিতে আমাকে মুহূর্তের জন্য দ্বিধান্বিত হতে হয়নি।’ ১৯৬৬ সালে ড. মল্লিক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এ দায়িত্ব পালনকালেই শুরু হয় আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। নিজ কর্মক্ষেত্রে একজন সেনানায়কের মতো তাঁর নেতৃত্বে শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় উপাচার্যের কার্যালয় হয়ে উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মুক্তিসংগ্রামের সদর দপ্তর। এখানে অধিনায়কত্ব করেছেন উপাচার্য ড. মল্লিক। একপর্যায়ে চট্টগ্রাম শহর পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে চলে গেলে তিনি ভারতে চলে যান। ড. মল্লিকের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের সব পর্যায়ের বুদ্ধিজীবীদের সংগঠন ‘লিবারেশন কাউন্সিল অব ইন্টেলিজেনসিয়া’, যেখানে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাঁর সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান। এ ছাড়া বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি গঠিত হলে ড. মল্লিক সভাপতি আর অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ভারতের সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণের উদ্যোগে এবং গান্ধী শান্তি সংস্থার সহায়তায় আয়োজিত (১৮-২০ সেপ্টেম্বর ’৭১) ওয়ার্ল্ড মিট অন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মুজিবনগর সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার পরিমাণ আরও বাড়ানো এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন। এরপর ভারত থেকে মুজিবনগর সরকারের বিশেষ দূত হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করেন। সেই সময়কালে আমেরিকা ও ইউরোপের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতিসংঘে স্বাধীনতার অনুকূলে অকাট্য যুক্তি এবং পূর্ব বাংলায় সংঘটিত মানববিনাশী ও পৈশাচিক কর্মকাণ্ডের চিত্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরার মধ্য দিয়ে তিনি স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেন।
মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শুরু থেকে ড. মল্লিকের বিশ্বাস ছিল, মুক্তিযুদ্ধ সফল হবেই এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশ স্বাধীন হবে। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তাঁর স্মৃতিচারণায় উল্লেখ করেছেন, ‘১৫ এপ্রিল সকালে ড. মল্লিক, তাঁর বড় জামাই ড. জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ, অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, ড. রশিদুল হক ও ড. মাহমুদ শাহ কোরেশীকে বিদায় জানালাম। আমি স্বভাবত ভাবপ্রবণ নই। কিন্তু যে মুহূর্তে তাঁরা দেশের মাটি থেকে পা তুলতে গেলেন, সেই মুহূর্তে কেঁদে ফেললাম। মল্লিক সাহেব আমার পিঠে হাত রেখে বললেন, “ডোন্ট ইউ ওরি। এ পথেই আমরা একসঙ্গে ফিরে আসব—বিফোর দি ইয়ার ইজ আউট।” কেন এবং কিসের জোরে কথাটা তিনি বলেছিলেন, জানি না। তবে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টায় তিনি এই বিশ্বাস লালন করেছিলেন এবং অন্যদেরও বলেছিলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা স্বাধীন দেশে ফিরে যাব।”’ (সূত্র: আমার একাত্তর, আনিসুজ্জামান)। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বলার মতো। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সফল একজন কূটনীতিবিদ। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু জাতিকে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দেন। মুক্তিযুদ্ধের শত্রুপক্ষ পাকিস্তানি বাহিনী তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে চলে যাওয়ার আগ মুহূর্তে আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙেচুরে দিয়ে যায়, যাতে সমস্যার চাপে এবং অর্থনীতির বিপর্যয়ের ফলে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এর অস্তিত্ব হয় বিপন্ন। বঙ্গবন্ধু সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ড. মল্লিক দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচিকে সফল করার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে তিনি অনেকটা সফল হয়েছিলেন। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড না ঘটলে এবং দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে দারিদ্র্যের বহুমাত্রিক সমস্যা দূর করে দেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যেত। জাতির জনক শেখ মুজিব সপরিবারে শহীদ হওয়ার দীর্ঘদিন পর ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে ড. মল্লিকের প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘যে দলটির ছত্রচ্ছায়ায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে, সেটি আবার ক্ষমতাসীন হয়েছে, আর দুঃখ নেই, এখন শান্তিতে মরতে পারব।’ (সূত্র: আত্মজৈবনিক গ্রন্থ আলো ছায়ায় সাত পুরুষ, অধ্যাপক সৈয়দ মকসুদ আলী)। অধ্যাপক সৈয়দ মকসুদ আলীর ভাষায়, ‘তিনি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণের চেয়ে ভালোবেসেছেন, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসেছেন বলেই স্বদেশকেও ভালোবাসতে পেরেছিলেন।’ বঙ্গবন্ধুও তাঁকে খুবই শ্রদ্ধাপূর্ণ চোখে দেখতেন। ১৯৮৩ সালে সম্পূর্ণ বাঙালি মূলধনে বাংলাদেশি নাগরিকদের মালিকানায় ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হলে ড. মল্লিক প্রতিষ্ঠানটির প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান। আশির দশকে গঠিত শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সন্তানদের হাতে গড়া সংগঠন ‘প্রজন্ম ৭১’-এর প্রতি তিনি অত্যন্ত দুর্বল ছিলেন। এদের বিভিন্ন কার্যক্রমে মুক্তিযোদ্ধা এই বুদ্ধিজীবীর সমর্থন ও সহায়তা ছিল অপরিসীম।
১৯১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্ম আর ১৯৯৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাতে ৭৯ বছরের বর্ণিল জীবনের ইতি টেনে দেহান্তরিত হয়েছেন। অসাধারণ মানুষ ড. মল্লিকের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর অমর স্মৃতির প্রতি নিবেদন করছি বিনম্র শ্রদ্ধা, সম্মান ও গভীর ভালোবাসা। জয়তু ড. এ আর মল্লিক। 
মাকসুদুল হক খান | 
মুলসুত্র: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-12-31/news/119667

Sunday, January 2, 2011

পিগমিরা খাটো কেন?


কঙ্গো উপত্যকা ক্রান্তীয় বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে অবস্থিত। এখানে মধ্যাহ্নে সূর্যরশ্মি প্রায় লম্বভাবে কিরণ দেয়। আর দিন ও রাত্রির পরিমাণও সারা বছর সমান থাকে। উওর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অয়ন বায়ু নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের কাছে মিলিত হয়েছে। ফলে ইন্টার প্রপিক্যাল কনভাজেন্সের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে প্রচণ্ড উত্তাপ। উত্তাপের আধিক্য এবং প্রচুর বাতাসে জলীয়বাষ্প এখানকার অধিবাসীদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। অত্যধিক উষ্ণতা এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় তা উদ্ভিদের পক্ষে অনুকূল। তাই এখানে গভীর অরণ্য সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু মাটি খুবই অনুর্বর। মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবং উত্তাপ খুব বেশি থাকার জন্য এখানকার মাটি দ্রুত ক্ষয় হয় এবং ধৌত প্রক্রিয়ার জন্য মাটির অধিকাংশ খনিজপদার্থ ভূ-অভ্যন্তরে চলে যায়। এখানকার উপজাতিদের খাদ্যে শর্করা এবং শ্বেতসার জাতীয় পদার্থের অভাব খুব বেশি থাকে। তাদের প্রধান খাদ্য ট্যাপিওকা, গাছগাছালির মূল, রাঙা আলু, ওল এবং চিনির দানা ও নিকৃষ্টমানের চাল। বাঁধাকপি, ফুলকপি, বীট, গাজর, শিম প্রভৃতির চাষ হয় না। তাই তাদের খাদ্যে ভিটামিনের বিশেষ করে প্রোটিনের পরিমাণ খুবই কম থাকে। বন থেকে শিকার করা পশুর মাংস ও মাছের পরিমাণও থাকে নামমাত্র_ যা শরীরের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারে। তাই এখানকার অধিবাসীদের খাদ্যে সুষম খাদ্যের যথেষ্ট অভাব দেখা যায়। ফলে অধিবাসীদের শারীরিক বৃদ্ধি ঠিকমতো হতে পারে না। অপুষ্টি রোগ ঘরে ঘরে আশ্রয় নেয়। তাই এখানকার মানুষ খর্বকায়। এদের গড় দৈর্ঘ্য চার ফুটেরও কম। 

ফারহানা মাহমুদ তন্বী 
মুলসুত্র: http://www.bangladesh-pratidin.com/?view=details&type=gold&data=College&pub_no=246&cat_id=3&menu_id=16&news_type_id=1&index=2

বাংলাদেশের পাখিশুমারি


চারপাশে নদী। মাঝেখানে জেগে ওঠা বিশাল চর। নির্জন এই চরে মানুষের কোনো বসতি নেই। তবে বসত করছে নানা প্রজাতির বর্ণিল রংয়ের ছোট-বড় হাজারও পরিযায়ী পাখি। আর এসব পাখি দেখার জন্য প্রতি বছর শীতকালে দলে দলে পাখিপ্রেমিক পর্যটক ছুটে যান উপকূলের চরগুলোতে। কেবল পাখি দেখার জন্যই নয়, তারা তুলে আনেন এসব পাখির সংখ্যা, পাখির জাত-প্রজাতি। আর ক্যামেরাবন্দী করেন এসব পাখির আলোকচিত্র, ভিডিও এবং কণ্ঠস্বর। তারপর মানুষকে জানিয়ে দেন পরিবেশ ও প্রকৃতির অনন্য বন্ধু এসব পাখির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। আর এর মাধ্যমে তারা খুঁজে পান অন্যরকম আনন্দ।

পাখি দেখার এমন আনন্দ পেতেই গত বছরের ৭ জানুয়ারি বিকালে ঢাকা সদরঘাট থেকে একদল পাখিপ্রেমীর সঙ্গে লঞ্চযোগে রওনা দেই উপকূলীয় জেলা ভোলায়। উদ্দেশ্য উপকূলীয় জলচর পাখিশুমারি। দশজনের এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও পাখি নিয়ে গবেষণাকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়েটল্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের জাতীয় সমন্বয়কারী ইনাম আল হক। তার নেতৃত্বেই প্রতি বছর বাংলাদেশে জলচর পাখিশুমারি হয়ে থাকে। ৮ জানুয়ারি সকালে আমরা ভোলার ঘোষেরহাট লঞ্চঘাটে পেঁৗছাই। লঞ্চ থেকে নেমে ভাড়া করা ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকায় রওনা হই চর ফ্যাশনের শাহজালাল চরের দিকে।

মেঘনা নদী দিয়ে নৌকা এগিয়ে চলে। মাঝে-মধ্যে দেখা যায়, ছোট পানচিল নদী থেকে মাছ তুলে নিচ্ছে। চোখে পড়ে জেগে ওঠা ছোট ছোট চর। আর সে চরে বসে আছে নানা রংয়ের নানা প্রজাতির পাখি। আমাদের পাখিপ্রেমীরা দুরবিন দিয়ে এসব পাখি দেখেন, ছবি তোলেন এবং খাতায় লেখেন এর সংখ্যা।

প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর নৌকা আসে শাহজালাল চরে। এই চরের এক পাশে বিশাল কেওড়া বন অন্যপাশে মেঘনা নদী। চরে নেমে বনের পাশেই শুকনো বালুতে আমরা রাতে থাকার জন্য ছোট-বড় চারটি তাঁবু তৈরি করি। তাঁবু তৈরি করতে করতে সন্ধ্যা নেমে আসে। সূর্য ডুব দেয় মেঘনায়। সন্ধ্যায় নদীর তীরে সবাই বসে চা খেতে খেতে পাখির গল্প শোনান ইনাম আল হক।

রাতে নিশিবকের ডাক শুনতে শুনতে ঘুমাই আর সকালে ঘুম ভাঙে বনের পাখির কিচিরমিচিরে। চরে ঘুমানোর এই প্রথম অভিজ্ঞতা। মনে হলো অন্যরকম ভালো লাগার কথা। প্রায় ১৫ বছর আগে এই চরটি জেগে ওঠে। তখন সরকারিভাবে একে বনায়ন করা হয়। সকাল সাতটার আগেই সবাই ঘুম থেকে উঠি। তৈরি হই পাখি দেখতে। নৌকায় রান্না করা গরম খিচুড়ি খেয়ে রওনা দিই পাখির খোঁজে। আমাদের কারও হাতে ক্যামেরা, কারও হাতে দুরবিন বা টেলিস্কোপ। কিংবা কারও হাতে শুমারির কাগজ, কেউ বা করছেন ভিডিও। বিশাল এই চরে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে কিংবা কখনো ছোট নৌকা করে দূরের ছোট্ট চরে গিয়ে আমরা দেখেছি ৪১ প্রজাতির প্রায় ১৪ হাজার পরিযায়ী পাখি। এসব পাখির মধ্যে আছে দেশি কানিবক, গো-বগা, মাঝলা বগা, ধুপনি বক, কালামাথা কান্তেচরা, পাতি চখাচখী, ইউরেশিও সিঁথিহাঁস, পাতি তিলিহাঁস, উত্তুরে লেঞ্জাহাঁস, উত্তুরে খুন্তেহাঁস, পাকড়া উল্টোঠুটি, ছোট নথজিরিয়া, কালালেজ, জৌরালি, নাটা গুলিন্দা, ইউরেশিও গুলিন্দা, ছোট পানচিল, ছোট পানকৌড়ি, ছোট বগা, বড় বগা, পিয়ং হাঁস, গিরিয়া হাঁস, প্রশান্ত সোনাজিরিয়া, মেটে জিরিয়া, পাতি লালপা, পাতি সবুজপা, পাতি বাটান, টেরেক বাটান, জুলফি পানচিল, খয়রামাথা গাঙচিল, কাসপিয়ান পানচিলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

দলনেতা ইনাম আল হক টেলিস্কোপে এসব পাখি সবাইকে দেখান আর সেই সঙ্গে বলেন পাখির নাম, প্রজাতি, আবাসন, খাদ্যসহ বিভিন্ন বর্ণনা। সত্যিই নতুন নতুন পাখি দেখে, তার নাম শুনে খুঁজে পাই অন্যরকম আনন্দ। একটানা সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে পাখি দেখার কাজ। তারপর সন্ধ্যায় ফিরি তাঁবুতে। সারাদিন চরে রোদের মধ্যে কখনো বালুতে, কখনো কাদা মাটিতে কিংবা কখনো শক্ত ঘাসের ওপর দিয়ে হেঁটে আমরা সবাই কিছুটা ক্লান্ত ছিলাম। তারপরও সবার মুখে ছিল নতুন পাখি চেনার আনন্দ। পরদিন সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠে তাঁবু গুছিয়ে আমরা রওনা হই ঘোষেরহাট লঞ্চঘাটের উদ্দেশে। পথে আমরা পাখি দেখি ঢালচর, কলমীরচর ও এর আশপাশের ছোট ছোট চরগুলোতে। পেঁৗছাই বেলা তিনটায়। তারপর উঠি লঞ্চে। লঞ্চ ছাড়ে। পরদিন ভোরে আসি ঢাকায়। এর আগে ২০০৯ সালে আরও একবার গিয়েছিলাম উপকূলীয় এলাকায় জলচর পাখি শুমারি করতে। ১৬ থেকে ২৩ জানুয়ারি এই শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের সঙ্গে ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী ড. রোলান্ড হালদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বাগ বিশেষজ্ঞ ড. মনিরুল খান, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের পাখি পর্যবেক্ষক এম এ মুহিত, সামিউল মোহসেনিন, সায়েম ইউ চৌধুরী ও সীমান্ত দীপু।

ঢাকা সদর ঘাট থেকে ১৫ জানুয়ারি রাত ৮টায় এমভি গ্লো্লরি অব শ্রীনগর-৩ লঞ্চে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। সেবার ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকার প্রায় ২০টি চরে ৪৯ প্রজাতির প্রায় ৬০ হাজার পরিযায়ী পাখি শুমারি করা হয়েছে। এ ছাড়াও ছোটখাটো অন্যান্য চরেও উড়ন্ত অবস্থায় দেখা গেছে আরও প্রায় ৪০ হাজার পাখি।

বাংলাদেশের পাখি শুমারি বিষয়ে ইনাম আল হক বলেন, বিশ্বব্যাপী পাখি নিয়ে গবেষণা করছে 'ওয়েটল্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল' (ডবি্ল্লউআই) সংস্থা। এই সংস্থার এশিয়া অঞ্চলের সংগঠনের নাম 'এশিয়ান ওয়াটার বার্ড সেনসাস' (এডবি্ল্লউসি)। এই সংস্থা প্রতি বছর শীতকালে এশিয়ার দেশগুলোতে একযোগে জলচর পাখিশুমারি করে থাকে। এই সংস্থার বাংলাদেশের জাতীয় সমন্বয়ক বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব। এই ক্লাবের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে প্রায় ২০ বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয়, হাওর-বাঁওড় ও উপকূলীয় এলাকায় আমরা এই পাখিশুমারি করে আসছি। আমাদের শুমারির এই ফলাফল ওয়েটল্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রকাশানায় তুলে ধরে। 

গাজী মুনছুর আজিজ
মুলসুত্র: http://www.bangladesh-pratidin.com/?view=details&type=gold&data=Mobile&pub_no=246&cat_id=3&menu_id=16&news_type_id=1&index=0