কুমিল্লার সীমান্তবর্তী উপজেলা ব্রাহ্মণপাড়া। ওই উপজেলার সালদা নদী রেলস্টেশন থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে গেলে চোখে পড়বে টিলাঘেরা একটি সুন্দর সমাধিস্থল। নাম কোল্লাপাথর শহীদ সমাধিস্থল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় এর অবস্থান। এখানে ৫০ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি এটি। সারিবদ্ধভাবে সাজানো মুক্তিযোদ্ধাদের ওই সমাধি দেখতে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় থাকে। সমাধিস্থলের চারপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার উঁচু-নিচু টিলা, নানা প্রজাতির বৃক্ষ, সামাজিক বনায়ন আর সবুজের সমারোহ পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। সমতল ভূমি থেকে বেশ কয়েকটি সিঁড়ি মাড়িয়ে মূল বেদিতে পা রাখার পর হাতের বাঁয়েই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সারিবদ্ধ কবর।
ওই সমাধিস্থলের তত্ত্বাবধায়ক মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল করিম বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এলাকা কসবা। যুদ্ধকালীন এখানে পাকিস্তানি বাহিনী আর এ দেশীয় দোসরদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক লড়াই হয়। ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে এখানে যুদ্ধ সংঘটিত হলে বিপুল লোক হতাহত হয়। প্রাণ হারান অগণিত মুক্তিযোদ্ধা। তখন বিভিন্ন এলাকা থেকে যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের কোল্লাপাথর শহীদ সমাধিস্থলে এনে কবর দেওয়া হতো। আমার বাবা আবদুল মান্নান ৬৫ শতক জায়গা তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধির জন্য দান করেছেন। বাবা, এলাকাবাসী আর আমি মিলে কাঁধে করে ওই মুক্তিযোদ্ধাদের এখানে সমাধিস্থ করতাম। ওই সমাধিস্থলই এখন ভ্রমণপিপাসু মুক্তিযুদ্ধপ্রেমী প্রজন্মের কাছে অহংকার হয়ে উঠেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গভাবে কোল্লাপাথর শহীদস্মৃতি পর্যটনকেন্দ্র হয়নি। কিন্তু পর্যটনের অবয়বে কিছু স্থাপনা তৈরি হয়েছে। ৩৯ বছর ধরে আমিই সেটি রক্ষণাবেক্ষণ করছি। সকাল-বিকেল পরিচর্যা করছি। যাঁরা এখানে আসেন তাঁদের ওই সময়ের কাহিনি শোনাতে হয়। গাইডের ভূমিকা নিতে হয়।’
এখানে যাঁরা ঘুমিয়ে আছেন, সেই ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা হলেন: সিপাহী দশন আলী, জাকির হোসেন, আবদুল জব্বার, হাবিলদার তৈয়ব আলী, নায়েক আবদুস সাত্তার, সিপাহী আব্বাস আলী, ফারুক আহম্মদ, ফখরুল আলম, মোজাহীদ নূরু মিয়া, নায়েক মোজাম্মেল হক, নায়েক সুবেদার আবদুস ছালাম, নোয়াব আলী, সিপাহী মোসলেম মৃধা, প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম, আবদুল অদুদ, সিপাহী আজিম উদ্দিন, মতিউর রহমান, মোশারফ হোসেন, নায়েক সুবেদার মইনুল ইসলাম, সিপাহী নূরুল হক, আবদুল কাইয়ুম, সিপাহী হুমায়ুন কবির, ল্যান্স নায়েক আবদুল খালেক, ল্যান্স নায়েক আজিজুর রহমান, তারু মিয়া, নায়েক সুবেদার বেলায়েত হোসেন, রফিকুল ইসলাম, মোর্শেদ মিয়া, আশুতোষ রঞ্জন দে, তাজুল ইসলাম, শওকত, আবদুস ছালাম, জাহাঙ্গীর, আমির হোসেন, পরেশচন্দ্র মল্লিক, জামাল উদ্দিন, আবদুল আওয়াল, আবেদ আহাম্মদ, সিরাজুল ইসলাম, ফরিদ মিয়া, মতিউর রহমান, শাকিল মিয়া, আবদুর রশিদ, আনসার এলাহী বক্স, সিপাহী শহীদুল হক, সিপাহী আনোয়ার হোসেন, আবদুল বারী এবং অজ্ঞাত তিনজন।
ওই সমাধিস্থলে রয়েছে নায়েক সুবেদার মইনুল ইসলামের কবর। তাঁর নামেই ঢাকা সেনানিবাস এলাকার অতি পরিচিত মইনুল সড়ক নামকরণ করা হয়েছে। এ সমাধিতে ৫০ জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ জনের পরিচয় মিলেছে। অন্য তিনজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর সদ্য প্রয়াত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফুল হাই সাচ্চুর নেতৃত্বে তৎকালীন জেলা প্রশাসন কোল্লাপাথর শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত কবর চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮০ সালে সেখানে একটি কাঠের তৈরি রেস্টহাউস হয়। গত এক দশকে সেখানে স্মৃতিসৌধ, মসজিদ, রেস্টহাউস, সীমানাপ্রাচীর ও পুকুরঘাট বানানো হয়। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ ওই কাজ শেষ করে। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি এম তাজুল ইসলাম একে পর্যটনকেন্দ্রের আদলে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ওই স্থান পরিদর্শন করেন। তাঁদের সম্মতি আর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের অন্যতম সবুজে ঘেরা শহীদস্মৃতি পর্যটনকেন্দ্র হবে এটি। কোল্লাপাথর থেকে খুব কাছেই ভারতীয় সীমান্ত। দুই দেশের ভ্রাতৃত্ববোধের জন্য এ পর্যটনকেন্দ্র মনে করিয়ে দেবে যুদ্ধকালীন সহযোগিতার কথা।
কোল্লাপাথর শহীদস্মৃতি পর্যটনকেন্দ্র বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মো. আজাদ সরকার লিটন। কয়েক বছর ধরে তিনি এর জন্য আন্দোলন করছেন। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকায় গণজাগরণ সৃষ্টির জন্য নানা কর্মসূচি পালন করছেন। সরকারি মহলে আবেদন করেছেন। তিনি বললেন, মুক্তিযুদ্ধের সরকার চাইলেই এটি পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়িত হবে। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক কুণ্ডু গোপীদাস, একই বোর্ডের সাবেক সচিব মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক হাবিবুর রহমান ও কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সফিউল আহমদ বাবুলের মতে, পাঠ্যপুস্তকে কোল্লাপাথরের ইতিহাস তুলে ধরা দরকার। নতুন প্রজন্ম নানাভাবে বিপথগামী হচ্ছে, ওদের ফেরাতে হলে ওই দর্শনীয় স্থানকে আরও ঢেলে সাজাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে তুলতে হবে।
উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা আর এ প্রজন্মের সঙ্গে সেতুবন্ধের জন্য সেখানে পালিত হচ্ছে নানামুখী কর্মসূচি। আগামী বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার দশক। ওই মাহেন্দ্রক্ষণকে সামনে রেখে কোল্লাপাথর পরিপূর্ণভাবে শহীদস্মৃতি পর্যটনকেন্দ্র হবে। বেড়াতে আসা পর্যটকেরা এর দৃষ্টিনন্দন রূপ দেখে মোহিত হবে। এমন আশায় রইলেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।
ওই সমাধিস্থলের তত্ত্বাবধায়ক মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল করিম বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এলাকা কসবা। যুদ্ধকালীন এখানে পাকিস্তানি বাহিনী আর এ দেশীয় দোসরদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক লড়াই হয়। ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে এখানে যুদ্ধ সংঘটিত হলে বিপুল লোক হতাহত হয়। প্রাণ হারান অগণিত মুক্তিযোদ্ধা। তখন বিভিন্ন এলাকা থেকে যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের কোল্লাপাথর শহীদ সমাধিস্থলে এনে কবর দেওয়া হতো। আমার বাবা আবদুল মান্নান ৬৫ শতক জায়গা তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধির জন্য দান করেছেন। বাবা, এলাকাবাসী আর আমি মিলে কাঁধে করে ওই মুক্তিযোদ্ধাদের এখানে সমাধিস্থ করতাম। ওই সমাধিস্থলই এখন ভ্রমণপিপাসু মুক্তিযুদ্ধপ্রেমী প্রজন্মের কাছে অহংকার হয়ে উঠেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গভাবে কোল্লাপাথর শহীদস্মৃতি পর্যটনকেন্দ্র হয়নি। কিন্তু পর্যটনের অবয়বে কিছু স্থাপনা তৈরি হয়েছে। ৩৯ বছর ধরে আমিই সেটি রক্ষণাবেক্ষণ করছি। সকাল-বিকেল পরিচর্যা করছি। যাঁরা এখানে আসেন তাঁদের ওই সময়ের কাহিনি শোনাতে হয়। গাইডের ভূমিকা নিতে হয়।’
এখানে যাঁরা ঘুমিয়ে আছেন, সেই ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা হলেন: সিপাহী দশন আলী, জাকির হোসেন, আবদুল জব্বার, হাবিলদার তৈয়ব আলী, নায়েক আবদুস সাত্তার, সিপাহী আব্বাস আলী, ফারুক আহম্মদ, ফখরুল আলম, মোজাহীদ নূরু মিয়া, নায়েক মোজাম্মেল হক, নায়েক সুবেদার আবদুস ছালাম, নোয়াব আলী, সিপাহী মোসলেম মৃধা, প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম, আবদুল অদুদ, সিপাহী আজিম উদ্দিন, মতিউর রহমান, মোশারফ হোসেন, নায়েক সুবেদার মইনুল ইসলাম, সিপাহী নূরুল হক, আবদুল কাইয়ুম, সিপাহী হুমায়ুন কবির, ল্যান্স নায়েক আবদুল খালেক, ল্যান্স নায়েক আজিজুর রহমান, তারু মিয়া, নায়েক সুবেদার বেলায়েত হোসেন, রফিকুল ইসলাম, মোর্শেদ মিয়া, আশুতোষ রঞ্জন দে, তাজুল ইসলাম, শওকত, আবদুস ছালাম, জাহাঙ্গীর, আমির হোসেন, পরেশচন্দ্র মল্লিক, জামাল উদ্দিন, আবদুল আওয়াল, আবেদ আহাম্মদ, সিরাজুল ইসলাম, ফরিদ মিয়া, মতিউর রহমান, শাকিল মিয়া, আবদুর রশিদ, আনসার এলাহী বক্স, সিপাহী শহীদুল হক, সিপাহী আনোয়ার হোসেন, আবদুল বারী এবং অজ্ঞাত তিনজন।
ওই সমাধিস্থলে রয়েছে নায়েক সুবেদার মইনুল ইসলামের কবর। তাঁর নামেই ঢাকা সেনানিবাস এলাকার অতি পরিচিত মইনুল সড়ক নামকরণ করা হয়েছে। এ সমাধিতে ৫০ জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ জনের পরিচয় মিলেছে। অন্য তিনজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর সদ্য প্রয়াত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফুল হাই সাচ্চুর নেতৃত্বে তৎকালীন জেলা প্রশাসন কোল্লাপাথর শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত কবর চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮০ সালে সেখানে একটি কাঠের তৈরি রেস্টহাউস হয়। গত এক দশকে সেখানে স্মৃতিসৌধ, মসজিদ, রেস্টহাউস, সীমানাপ্রাচীর ও পুকুরঘাট বানানো হয়। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ ওই কাজ শেষ করে। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি এম তাজুল ইসলাম একে পর্যটনকেন্দ্রের আদলে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ওই স্থান পরিদর্শন করেন। তাঁদের সম্মতি আর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের অন্যতম সবুজে ঘেরা শহীদস্মৃতি পর্যটনকেন্দ্র হবে এটি। কোল্লাপাথর থেকে খুব কাছেই ভারতীয় সীমান্ত। দুই দেশের ভ্রাতৃত্ববোধের জন্য এ পর্যটনকেন্দ্র মনে করিয়ে দেবে যুদ্ধকালীন সহযোগিতার কথা।
কোল্লাপাথর শহীদস্মৃতি পর্যটনকেন্দ্র বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মো. আজাদ সরকার লিটন। কয়েক বছর ধরে তিনি এর জন্য আন্দোলন করছেন। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকায় গণজাগরণ সৃষ্টির জন্য নানা কর্মসূচি পালন করছেন। সরকারি মহলে আবেদন করেছেন। তিনি বললেন, মুক্তিযুদ্ধের সরকার চাইলেই এটি পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়িত হবে। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক কুণ্ডু গোপীদাস, একই বোর্ডের সাবেক সচিব মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক হাবিবুর রহমান ও কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সফিউল আহমদ বাবুলের মতে, পাঠ্যপুস্তকে কোল্লাপাথরের ইতিহাস তুলে ধরা দরকার। নতুন প্রজন্ম নানাভাবে বিপথগামী হচ্ছে, ওদের ফেরাতে হলে ওই দর্শনীয় স্থানকে আরও ঢেলে সাজাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে তুলতে হবে।
উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা আর এ প্রজন্মের সঙ্গে সেতুবন্ধের জন্য সেখানে পালিত হচ্ছে নানামুখী কর্মসূচি। আগামী বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার দশক। ওই মাহেন্দ্রক্ষণকে সামনে রেখে কোল্লাপাথর পরিপূর্ণভাবে শহীদস্মৃতি পর্যটনকেন্দ্র হবে। বেড়াতে আসা পর্যটকেরা এর দৃষ্টিনন্দন রূপ দেখে মোহিত হবে। এমন আশায় রইলেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।
গাজীউল হক |
Ref: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-12-29/news/119160
No comments:
Post a Comment