জার্মানির রাজধানী বার্লিনে সম্প্রতি চলছে মানবদেহের প্রদর্শনী। শরীরের অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ থেকে শুরু করে মানবশিশু জন্মের গোটা প্রক্রিয়ার জলজ্যান্ত উদাহরণ দেখতে প্রতিদিন সেখানে ভিড় করছে অনেক মানুষ। বার্লিনের এই মানবদেহের প্রদর্শনীর নাম কর্পারভেল্ট। ডাস অরিজিনাল বা ইংরেজিতে বডি ওয়ার্ল্ডস দি অরিজিনাল এক্সিবিশন। এখানে গেলে প্রথমেই আপনি হয়তো চমকে যেতে পারেন। সামনেই দেখতে পাবেন মানবদেহ আর কঙ্কালের ছড়াছড়ি। আগে থেকে কারও জানা না থাকলে হয়তো বিশ্বাসই করবেন না যে, প্রদর্শনীতে থাকা এসব মানবদেহ একসময় আমার-আপনার মতোই জলজ্যান্ত মানুষ ছিল। দেখলে মনে হবে, চামড়া ছাড়ানো এসব মানুষ আপনার দিকেই তাকিয়ে আছে। শরীরের প্রত্যেকটি পেশিই যেন তাজা লাল রংয়ের।
এই কর্পারভেল্ট প্রদর্শনীতে ঢোকার পর থেকে মানবদেহের অনেক রহস্য খোলাসা হয়ে যায়। আমাদের দেহের ভেতর লুকিয়ে থাকা যন্ত্রগুলো দেখতে কেমন এবং কিভাবে কাজ করে তা চোখের সামনেই প্রায় জ্যান্ত হয়ে ধরা দেয়। প্রদর্শনীর একদিকে মানবদেহের পেশিগুলো কিভাবে কাজ করে তা দেখানো হচ্ছে। এজন্য সংরক্ষিত মানবদেহগুলোকে একেক ভঙ্গিতে দাঁড় করানো হয়েছে। কোনোটি দৌড়াচ্ছে, কোনোটি টেনিস খেলার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে, কোনোটি আবার ঘোড়ায় চড়ছে। মজার বিষয় হচ্ছে সঙ্গে থাকা ঘোড়াটিরও ব্যবচ্ছেদ করে বিশেষভাবে সংরক্ষিত করা হয়েছে।
প্রদর্শনীর অন্যদিকে আবার মানুষের হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, কিডনিসহ সবকিছুই দেখানো হচ্ছে। অবাক হওয়ার মতো বিষয় যে, এসব যন্ত্র একটা মানুষের শরীরে কিভাবে থাকে সেটা দেখানোর জন্য পুরো একটা মানুষকে নানাভাবে ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো একটা মানবদেহকে ঠিক মাঝখান থেকে চেরা হয়েছে, কোনোটাকে আবার ঠিক পেছন থেকে চেরা হয়েছে, কোনোটা আরও বেশি। দেখলে মনে হবে, আপনার সামনে তিন টুকরো হয়ে থাকা একটা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, আর তার ভেতরের সবকিছু আপনি বাইরে থেকেই দেখতে পাচ্ছেন। শুধু মানুষ নয়, অনেক প্রাণীকেও একইভাবে সংরক্ষণ করে এই প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে। এই যে দেহ সংরক্ষণের অত্যাধুনিক পদ্ধতি, তার নাম প্লাস্টিনেশন। ১৯৭৭ সালে জার্মান বিজ্ঞানী গুন্টার ফন হাগেন্স এই প্লাস্টিনেশন আবিষ্কার করেন। ১৯৯৫ সালে সর্বপ্রথম জাপানে মানবদেহ প্রদর্শনী শুরু হয়। মানবদেহের এই প্রদর্শনী নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে গুন্টার ফন হাগেন্স বলেন, 'মনে রাখবেন আমাদের সবাইকে মরতে হবে। এই প্রদর্শনী সেটাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে এখানে থাকা প্লাস্টিনেট হওয়া মানবদেহগুলো আগতদের প্রতি সেই বার্তাই দিচ্ছে যে, তোমার মতো আমিও একসময় ছিলাম এবং আমার মতো তোমাকেও একসময় হতে হবে। এখানে যেসব মানবদেহকে দেখতে পাচ্ছেন, তারা তাদের জীবদ্দশায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের দেহগুলোকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে, যাতে তারা গবেষণা করতে পারে।
এখন পর্যন্ত ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার ৬৫টি শহরে এ ধরনের মানবদেহের প্রদর্শনী হয়েছে। এ প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে তার শরীর সম্পর্কে সচেতন করা, যেমনটি বললেন গুন্টার ফন হাগেন্স। প্রথম হচ্ছে দর্শনার্থীদের তাদের শরীর সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দেওয়া। আমরা একটি কৃত্রিম জগতে বাস করি। একজন সাধারণ মানুষ লক্ষ্য করে না যে সেও প্রকৃতিরই একটি অংশ। দ্বিতীয়ত, অ্যানাটমি বিষয়টিকে স্পষ্টভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরা।'
গুন্টার ফন হাগেন্সের এই মানবদেহ সংরক্ষণ পদ্ধতি ও তার প্রদর্শনী নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে তা একটি বড় অবদান রেখে চলেছে। জার্মানির হাইডেলবার্গে অবস্থিত ইনস্টিটিউট ফর প্লাস্টিনেশনে প্রতিবছর অনেক মানুষ তাদের দেহ দান করেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সাড়ে ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের দেহ দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর মধ্যে কেবল জার্মানির সাড়ে দশ হাজার মানুষ তাদের দেহ দান করবেন। মৃত্যুর পর এসব মানুষের দেহ প্লাস্টিনেশনের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হবে আর ব্যবহৃত হবে গবেষণার কাজে।
(ডয়চে ভেলে অবলম্বনে) * নাজমুল হক
এই কর্পারভেল্ট প্রদর্শনীতে ঢোকার পর থেকে মানবদেহের অনেক রহস্য খোলাসা হয়ে যায়। আমাদের দেহের ভেতর লুকিয়ে থাকা যন্ত্রগুলো দেখতে কেমন এবং কিভাবে কাজ করে তা চোখের সামনেই প্রায় জ্যান্ত হয়ে ধরা দেয়। প্রদর্শনীর একদিকে মানবদেহের পেশিগুলো কিভাবে কাজ করে তা দেখানো হচ্ছে। এজন্য সংরক্ষিত মানবদেহগুলোকে একেক ভঙ্গিতে দাঁড় করানো হয়েছে। কোনোটি দৌড়াচ্ছে, কোনোটি টেনিস খেলার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে, কোনোটি আবার ঘোড়ায় চড়ছে। মজার বিষয় হচ্ছে সঙ্গে থাকা ঘোড়াটিরও ব্যবচ্ছেদ করে বিশেষভাবে সংরক্ষিত করা হয়েছে।
প্রদর্শনীর অন্যদিকে আবার মানুষের হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, কিডনিসহ সবকিছুই দেখানো হচ্ছে। অবাক হওয়ার মতো বিষয় যে, এসব যন্ত্র একটা মানুষের শরীরে কিভাবে থাকে সেটা দেখানোর জন্য পুরো একটা মানুষকে নানাভাবে ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো একটা মানবদেহকে ঠিক মাঝখান থেকে চেরা হয়েছে, কোনোটাকে আবার ঠিক পেছন থেকে চেরা হয়েছে, কোনোটা আরও বেশি। দেখলে মনে হবে, আপনার সামনে তিন টুকরো হয়ে থাকা একটা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, আর তার ভেতরের সবকিছু আপনি বাইরে থেকেই দেখতে পাচ্ছেন। শুধু মানুষ নয়, অনেক প্রাণীকেও একইভাবে সংরক্ষণ করে এই প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে। এই যে দেহ সংরক্ষণের অত্যাধুনিক পদ্ধতি, তার নাম প্লাস্টিনেশন। ১৯৭৭ সালে জার্মান বিজ্ঞানী গুন্টার ফন হাগেন্স এই প্লাস্টিনেশন আবিষ্কার করেন। ১৯৯৫ সালে সর্বপ্রথম জাপানে মানবদেহ প্রদর্শনী শুরু হয়। মানবদেহের এই প্রদর্শনী নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে গুন্টার ফন হাগেন্স বলেন, 'মনে রাখবেন আমাদের সবাইকে মরতে হবে। এই প্রদর্শনী সেটাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে এখানে থাকা প্লাস্টিনেট হওয়া মানবদেহগুলো আগতদের প্রতি সেই বার্তাই দিচ্ছে যে, তোমার মতো আমিও একসময় ছিলাম এবং আমার মতো তোমাকেও একসময় হতে হবে। এখানে যেসব মানবদেহকে দেখতে পাচ্ছেন, তারা তাদের জীবদ্দশায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের দেহগুলোকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে, যাতে তারা গবেষণা করতে পারে।
এখন পর্যন্ত ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার ৬৫টি শহরে এ ধরনের মানবদেহের প্রদর্শনী হয়েছে। এ প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে তার শরীর সম্পর্কে সচেতন করা, যেমনটি বললেন গুন্টার ফন হাগেন্স। প্রথম হচ্ছে দর্শনার্থীদের তাদের শরীর সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দেওয়া। আমরা একটি কৃত্রিম জগতে বাস করি। একজন সাধারণ মানুষ লক্ষ্য করে না যে সেও প্রকৃতিরই একটি অংশ। দ্বিতীয়ত, অ্যানাটমি বিষয়টিকে স্পষ্টভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরা।'
গুন্টার ফন হাগেন্সের এই মানবদেহ সংরক্ষণ পদ্ধতি ও তার প্রদর্শনী নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে তা একটি বড় অবদান রেখে চলেছে। জার্মানির হাইডেলবার্গে অবস্থিত ইনস্টিটিউট ফর প্লাস্টিনেশনে প্রতিবছর অনেক মানুষ তাদের দেহ দান করেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সাড়ে ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের দেহ দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর মধ্যে কেবল জার্মানির সাড়ে দশ হাজার মানুষ তাদের দেহ দান করবেন। মৃত্যুর পর এসব মানুষের দেহ প্লাস্টিনেশনের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হবে আর ব্যবহৃত হবে গবেষণার কাজে।
(ডয়চে ভেলে অবলম্বনে) * নাজমুল হক
মুলসুত্র: http://www.bangladesh-pratidin.com/?view=details&type=gold&data=Entertainment&pub_no=476&cat_id=3&menu_id=16&news_type_id=1&index=1
No comments:
Post a Comment