চাঁদে নাকি বসত গড়বে মানুষ। মঙ্গল গ্রহে চলছে জরিপ। পৃথিবী জয় করে মানুষ এখন হাতের মুঠোয় পুরতে চাইছে বিশ্বজগত্। কিন্তু এখনো এমন কিছু রহস্য আছে, যেগুলো যুগ যুগ ধরেই অমীমাংসিত। আবার কোনোটার মীমাংসা হয়ে গেলেও কিছু লোক সমাধান মানতে নারাজ। সেই সব রহস্য নিয়ে আমাদের এই বিভাগ।
হাজার হাজার বছর আগের কথা। বড় শান্তিতে, সমৃদ্ধিতে, সুখে দিন কাটছিল দ্বীপটির বাসিন্দাদের। উজ্জ্বল আকাশ, সবুজ প্রকৃতি—সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছিল। কিন্তু হঠাত্ই যেন দ্বীপটিতে ঘনিয়ে এল মহাপ্রলয়!
আকাশের রং বদলে গেল, সমুদ্রের চেহারা হয়ে দাঁড়াল ভয়ঙ্কর। মনে হলো, বিস্ফোরিত হতে চলেছে ভয়ঙ্কর কোনো আগ্নেয়গিরি। তা-ই হলো। মহাপ্রলয় শুরু হয়ে গেল সমুদ্রে। শত শত আণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটল যেন। দানবীয় থাবা নিয়ে দ্বীপের ওপর লাফিয়ে পড়ল শত ফুট উঁচু সমুদ্রের হিংস্র ঢেউ।
হারিয়ে গেল সেই দ্বীপটি। হারিয়ে গেল অভাবনীয় এক সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিশাল এক ভাণ্ডার। আর জন্ম নিল হাজার বছর বয়সী এক পৌরাণিক কল্পনার—আটলান্টিস! আসলেই কি বাস্তবে আটলান্টিস বলে উন্নত কোনো শহর ছিল? আসলেই কি এমন এক মহাপ্রলয়ে হারিয়ে গিয়েছিল অস্বাভাবিকভাবে গড়ে ওঠা এক সভ্যতা!
সত্যি কি না কে জানে। তবে সেই ঐতিহাসিক কাল থেকেই প্রায় সত্যের মতো করে টিকে আছে আটলান্টিসের গল্প। আটলান্টিসের প্রথম ধারণা ও বর্ণনা দেন দর্শনগুরু প্লেটো।
প্লেটোর বর্ণনামতে, বর্তমান জিব্রাল্টার প্রণালীর কাছেই অসম্ভব উন্নত, আধুনিক ও সুশৃঙ্খল এক দ্বীপ ছিল আটলান্টিস। অদ্ভুত সব আবিষ্কার, সুন্দর সমাজব্যবস্থা ও আধুনিক জীবনধারা—সবই ছিল আটলান্টিসবাসীর কাছে। প্লেটোই বর্ণনা দিয়েছেন, প্রায় ১২ হাজার বছর আগে, শেষ বরফ যুগের আগে ভয়াবহ এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে হারিয়ে যায় আটলান্টিস। অনেকে বলে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ভিনগ্রহের বাসিন্দাদের।
প্লেটোর শিষ্য ক্রিটিয়াস গুরুর কাছ থেকে পাওয়া এই গল্প বয়ান করেন সোলানকে। সোলান বিখ্যাত ছিলেন তাঁর সত্যবাদিতার জন্য। এমনকি প্লেটোর অন্যান্য শিষ্য অ্যারিস্টটল, ক্রান্টরদের মধ্যেও আটলান্টিসের এই ধারণা প্রচণ্ড রকম আলোড়ন সৃষ্টি করে।
আলোড়নটা সেই যুগে থেমে গেলেও কথা ছিল না। কিন্তু সেই হারানো সভ্যতার খোঁজ আজ অবধি চলছে। শত শত বছর ধরে দুনিয়াজোড়া বিজ্ঞানী, দার্শনিক আর পণ্ডিতেরা আটলান্টিসের সন্ধানে মাথা খুঁড়ে মরেছেন। পনেরো শতকে মানচিত্র আঁকিয়েরা বিশ্বের মানচিত্রে স্থান দিয়েছিল আটলান্টিসকে। আমেরিকা আবিষ্কারের পর তো অনেকে ধরেই নিয়েছিল, এ-ই হয়তো আটলান্টিসের অংশ।
আর আধুনিক যুগে শুরু হয়েছে একের পর এক ‘আটলান্টিস প্রাপ্তি’র দাবি উত্থাপন! আমেরিকার কংগ্রেসের সদস্য ইগনাটিয়াস ডনেলি অনেক গবেষণা করে ‘প্রমাণ’ করেছেন, আটলান্টিস একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো বিষয় নয়। এর অস্তিত্ব বর্তমান। ১৯১২ সালে ডা. পল সেলিমান ‘কীভাবে আমি হারানো আটলান্টিসকে খুঁজে পেলাম’ নামের একটা প্রবন্ধ লিখে বসেন! সেখানে প্রমাণাদি হিসেবে পল দেখিয়েছিলেন তাঁর দাদার দেওয়া তথ্যাদি ও একখানা ব্রোঞ্জের ফুলদানি। এই ফুলদানি নাকি আটলান্টিসের রাজা ক্রোনোস উপহার দিয়েছিলেন ট্রয়বাসীদের।
পল সেলিমান একা নন। আটলান্টিস নিয়ে এযাবত্ ২০ হাজারেরও বেশি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ লেখা হয়েছে। বলাই বাহুল্য, বেশির ভাগ গবেষক আটলান্টিসের উপস্থিতি নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। এডজার কেইস নামের এক গবেষক বলেন, বর্তমান মেক্সিকো উপসাগর ও জিব্রাল্টার প্রণালীর মধ্যে অবস্থিত ছিল এই দ্বীপটি। ১৯৬৮ সালে ড. ভ্যাল্টেন্টাইন ব্রাহিমী দ্বীপে খুঁজে পাওয়া দেয়ালগুলোকে দাঁড় করান আটলান্টিসের সপক্ষে। এই দেয়াল নাকি আসলে আটলান্টিস শহরের। ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ জা কলিনা জিরার্ডও আটলান্টিসের পক্ষে কিছু প্রমাণ হাজির করেছিলেন।
তবে কি সত্যিই আছে আটলান্টিস? থাকুক আর না থাকুক, এ নিয়ে গল্পের শেষ নেই। জুল ভার্ন থেকে শুরু করে কার্ক মরিস, মারিয়া মন্টেজ, ফে স্পেন, মাইকেল জে ফক্স ও ওয়াল্ট ডিজনি আটলান্টিস নিয়ে কাহিনী শুনিয়েছেন। আর অভিযাত্রীরা তো লেগেই আছেন সমুদ্রতলে!
আটলান্টিসের খোঁজে নেমে পড়তে চান? নামুন না। আটলান্টিসের খোঁজ পেলে হয়তো হারানো শহরের সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যেতে পারেন বিশাল এক রত্নভাণ্ডারও!
শিখ্তী সানী
হাজার হাজার বছর আগের কথা। বড় শান্তিতে, সমৃদ্ধিতে, সুখে দিন কাটছিল দ্বীপটির বাসিন্দাদের। উজ্জ্বল আকাশ, সবুজ প্রকৃতি—সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছিল। কিন্তু হঠাত্ই যেন দ্বীপটিতে ঘনিয়ে এল মহাপ্রলয়!
আকাশের রং বদলে গেল, সমুদ্রের চেহারা হয়ে দাঁড়াল ভয়ঙ্কর। মনে হলো, বিস্ফোরিত হতে চলেছে ভয়ঙ্কর কোনো আগ্নেয়গিরি। তা-ই হলো। মহাপ্রলয় শুরু হয়ে গেল সমুদ্রে। শত শত আণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটল যেন। দানবীয় থাবা নিয়ে দ্বীপের ওপর লাফিয়ে পড়ল শত ফুট উঁচু সমুদ্রের হিংস্র ঢেউ।
হারিয়ে গেল সেই দ্বীপটি। হারিয়ে গেল অভাবনীয় এক সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিশাল এক ভাণ্ডার। আর জন্ম নিল হাজার বছর বয়সী এক পৌরাণিক কল্পনার—আটলান্টিস! আসলেই কি বাস্তবে আটলান্টিস বলে উন্নত কোনো শহর ছিল? আসলেই কি এমন এক মহাপ্রলয়ে হারিয়ে গিয়েছিল অস্বাভাবিকভাবে গড়ে ওঠা এক সভ্যতা!
সত্যি কি না কে জানে। তবে সেই ঐতিহাসিক কাল থেকেই প্রায় সত্যের মতো করে টিকে আছে আটলান্টিসের গল্প। আটলান্টিসের প্রথম ধারণা ও বর্ণনা দেন দর্শনগুরু প্লেটো।
প্লেটোর বর্ণনামতে, বর্তমান জিব্রাল্টার প্রণালীর কাছেই অসম্ভব উন্নত, আধুনিক ও সুশৃঙ্খল এক দ্বীপ ছিল আটলান্টিস। অদ্ভুত সব আবিষ্কার, সুন্দর সমাজব্যবস্থা ও আধুনিক জীবনধারা—সবই ছিল আটলান্টিসবাসীর কাছে। প্লেটোই বর্ণনা দিয়েছেন, প্রায় ১২ হাজার বছর আগে, শেষ বরফ যুগের আগে ভয়াবহ এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে হারিয়ে যায় আটলান্টিস। অনেকে বলে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ভিনগ্রহের বাসিন্দাদের।
প্লেটোর শিষ্য ক্রিটিয়াস গুরুর কাছ থেকে পাওয়া এই গল্প বয়ান করেন সোলানকে। সোলান বিখ্যাত ছিলেন তাঁর সত্যবাদিতার জন্য। এমনকি প্লেটোর অন্যান্য শিষ্য অ্যারিস্টটল, ক্রান্টরদের মধ্যেও আটলান্টিসের এই ধারণা প্রচণ্ড রকম আলোড়ন সৃষ্টি করে।
আলোড়নটা সেই যুগে থেমে গেলেও কথা ছিল না। কিন্তু সেই হারানো সভ্যতার খোঁজ আজ অবধি চলছে। শত শত বছর ধরে দুনিয়াজোড়া বিজ্ঞানী, দার্শনিক আর পণ্ডিতেরা আটলান্টিসের সন্ধানে মাথা খুঁড়ে মরেছেন। পনেরো শতকে মানচিত্র আঁকিয়েরা বিশ্বের মানচিত্রে স্থান দিয়েছিল আটলান্টিসকে। আমেরিকা আবিষ্কারের পর তো অনেকে ধরেই নিয়েছিল, এ-ই হয়তো আটলান্টিসের অংশ।
আর আধুনিক যুগে শুরু হয়েছে একের পর এক ‘আটলান্টিস প্রাপ্তি’র দাবি উত্থাপন! আমেরিকার কংগ্রেসের সদস্য ইগনাটিয়াস ডনেলি অনেক গবেষণা করে ‘প্রমাণ’ করেছেন, আটলান্টিস একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো বিষয় নয়। এর অস্তিত্ব বর্তমান। ১৯১২ সালে ডা. পল সেলিমান ‘কীভাবে আমি হারানো আটলান্টিসকে খুঁজে পেলাম’ নামের একটা প্রবন্ধ লিখে বসেন! সেখানে প্রমাণাদি হিসেবে পল দেখিয়েছিলেন তাঁর দাদার দেওয়া তথ্যাদি ও একখানা ব্রোঞ্জের ফুলদানি। এই ফুলদানি নাকি আটলান্টিসের রাজা ক্রোনোস উপহার দিয়েছিলেন ট্রয়বাসীদের।
পল সেলিমান একা নন। আটলান্টিস নিয়ে এযাবত্ ২০ হাজারেরও বেশি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ লেখা হয়েছে। বলাই বাহুল্য, বেশির ভাগ গবেষক আটলান্টিসের উপস্থিতি নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। এডজার কেইস নামের এক গবেষক বলেন, বর্তমান মেক্সিকো উপসাগর ও জিব্রাল্টার প্রণালীর মধ্যে অবস্থিত ছিল এই দ্বীপটি। ১৯৬৮ সালে ড. ভ্যাল্টেন্টাইন ব্রাহিমী দ্বীপে খুঁজে পাওয়া দেয়ালগুলোকে দাঁড় করান আটলান্টিসের সপক্ষে। এই দেয়াল নাকি আসলে আটলান্টিস শহরের। ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ জা কলিনা জিরার্ডও আটলান্টিসের পক্ষে কিছু প্রমাণ হাজির করেছিলেন।
তবে কি সত্যিই আছে আটলান্টিস? থাকুক আর না থাকুক, এ নিয়ে গল্পের শেষ নেই। জুল ভার্ন থেকে শুরু করে কার্ক মরিস, মারিয়া মন্টেজ, ফে স্পেন, মাইকেল জে ফক্স ও ওয়াল্ট ডিজনি আটলান্টিস নিয়ে কাহিনী শুনিয়েছেন। আর অভিযাত্রীরা তো লেগেই আছেন সমুদ্রতলে!
আটলান্টিসের খোঁজে নেমে পড়তে চান? নামুন না। আটলান্টিসের খোঁজ পেলে হয়তো হারানো শহরের সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যেতে পারেন বিশাল এক রত্নভাণ্ডারও!
শিখ্তী সানী
| তারিখ: ০৬-১১-২০০৯
No comments:
Post a Comment