Tuesday, October 5, 2010

সুখী এক বেকার

সন্তানসম্ভবা স্ত্রী। ১৪ ছেলেমেয়ে নিয়ে বিশাল সংসার। এর মধ্যে নেই কোনো চাকরি। নিশ্চয়ই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার কথা। বাস্তবে ডন কেইনের অবস্থা একেবারেই উল্টো। সারা দিন স্ত্রী ও সন্তানদের দেখাশোনা করে দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছেন। মাঝখানে এক শুভাকাঙ্ক্ষী যেচে গিয়ে চাকরি দিতে চেয়েছিলেন। ডন কেইন অবশ্য মুচকি হেসে বলেছেন, ‘এই বেশ ভালো আছি। চাকরি আর করছি না বাপু।’
তা চাকরির দরকারটাই বা কী! বেকার অবস্থাতেই সরকারের বিভিন্ন ভাতা মিলিয়ে তাঁর মাসিক আয় ৩৬ হাজার ৮৪৭ পাউন্ড। যেখানে যুক্তরাজ্যের গড় বেতন ২১ হাজার ৩২০ পাউন্ড। চাকরি করলেও কেইন এত টাকা আয় করতে পারতেন কি না সন্দেহ!
ঘটনার সূত্রপাত ২০০৩ সালে। যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে বউ-বাচ্চা নিয়ে ভালোই দিন কাটাচ্ছিলেন। বাগানে মালীর কাজ করতেন। পরম যত্নে গাছের ডালে ফুটিয়ে তুলতেন একের পর এক ফুল। এদিকে ঘরেও আসছে নতুন ফুল। আবারও মা হতে যাচ্ছেন স্ত্রী শেন কেইন। বাচ্চাকাচ্চা আর তাদের মায়ের দেখাশোনা করার জন্য মাসখানেকের ছুটি চাইলেন কেইন। ছুটি না পেয়ে দারুণ দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তিনি। আত্মীয়স্বজন তেমন নেই যে বাসায় থাকবেন। আর বেতন যা পান তাতে বাসায় লোক রাখার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। বাধ্য হয়ে চাকরিটাই ছেড়ে দিলেন। মা হতে যাওয়া স্ত্রীর অযত্ন তো আর করা যায় না। বাচ্চাকাচ্চাদের খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে অসুস্থ স্ত্রীর যত্ন করতে লাগলেন দক্ষ হাতে। সংসারের খরচ নিয়ে খুব একটা ভাবতে হলো না। প্রতি সপ্তাহে ৭০০ পাউন্ডের বেকারভাতা তো ছিলই। সন্তানেরা তাদের স্কুল থেকেও পেতে শুরু করল বেকার বাবার সন্তান হিসেবে পড়ালেখার জন্য সাহায্য। মাস যায়। কেইন দম্পতি হঠাত্ করে উপলব্ধি করলেন, চাকরি করলে যে টাকা পাওয়া যেত, তার থেকে এখন ভাতার পরিমাণ ঢের বেশি। তবে কেন মিছেমিছি কষ্ট করে চাকরি করা। ডন কেইন সিদ্ধান্ত নিলেন, জীবনে আর চাকরি-বাকরি করবেন না। সরকারি ভাতা দিয়েই কাটিয়ে দেবেন বাকি জীবনটা।
মাসে মাসে ৭০০ পাউন্ডের বেকারভাতা তো আছেই। বিদ্যুত্, পানি, ভূমি, আয়কর ইত্যাদি করও দিতে হচ্ছে না। উল্টো মাসে মাসে আবাসন ভাতাও পাচ্ছেন। ১৪ ছেলেমেয়ের আটজনই স্কুলে যাচ্ছে। বেকার বাবার সন্তান হওয়ায় বেতন তো দিতেই হয় না, উল্টো বই-খাতা-কলম কেনার জন্য ভালো অঙ্কের টাকা পাচ্ছেন তাঁরা। দুপুরে স্কুলে সরকার থেকেই দেওয়া হচ্ছে উত্কৃষ্ট খাবার। সবার চিকিত্সার খরচ একদম ফ্রি। সন্তানসম্ভবা হওয়ায় কেইনের স্ত্রীও পাচ্ছেন একটা ভাতা। যাতে ভবিষ্যত্ প্রজন্ম হয় সুস্থ-সবল। মা ও শিশু কেউই অপুষ্টিতে না ভোগে। এত কিছুর পরও প্রতি মাসে প্রায় চার হাজার পাউন্ড পাচ্ছেন চাকরি খোঁজার জন্য। আবেদন করা, সাক্ষাত্কার দিতে যাওয়া—এসবে তো আর কম খরচ হয় না! কেইন অবশ্য চাকরি না খুঁজে সে টাকাটাও দিব্যি সংসারের খরচে লাগিয়ে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে বেকারত্বের সুখ ষোলআনা উপভোগ করছেন ৪১ বছর বয়সী কেইন। বলছিলেন, ‘সরকার বেকারদের জন্য এত সুন্দর ব্যবস্থা করে রেখেছে। আগে জানলে আরও আগেই চাকরি ছেড়ে দিতাম। তবে হ্যাঁ, এত বাচ্চাকাচ্চা না থাকলে ঠিক পোষাতে পারতাম কি না সন্দেহ।’ কেইনের কথা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে? যুক্তরাজ্য সরকারের বেকারভাতায় অতি প্রয়োজনীয় কাজগুলো হলেও, ভালোমতো সংসার চলার কথা নয়। তবে কেইন বেশ ভালোই চলতে পারছেন স্কুলপড়ুয়া আট বাচ্চা আর নিয়মিতই সন্তানসম্ভবা থাকা স্ত্রীর ভাতায়। স্ত্রী শেন কেইন বললেন, ‘আমার মা হতে খুবই ভালো লাগে। এর মধ্যেই ১৪ বাচ্চার মা হয়েছি। ১৫তমটা আসছে। প্রতিটি বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে নতুন কিছু শিখছি। ভবিষ্যতে তাই আরও বাচ্চা নেব। একটা সময় ঘরভর্তি বাচ্চাকাচ্চা থাকবে আমার।’ ১৫ জনেও ঘর ভরছে না। আরও সন্তান চাই কেইন দম্পতির। এ খবরে বেশ চটেছেন সে দেশের আয়করদাতা সংগঠনের সদস্যরা। ‘আমরা এত কষ্ট করে টাকা ইনকাম করে কর দেব, আর সেই টাকা এসব অলস, অকর্মণ্য লোকদের দেওয়া হবে—এটা আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। প্রতিবছর এই পরিবারে নতুন সদস্য আসছে। বাড়ছে ভাতার পরিমাণ। এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না।’ বলছিলেন আয়করদাতা সংগঠনের রিসার্চ ডিরেক্টর ম্যাথু সিনক্লেয়ার। সরকারি নীতির এসব ফুটো বন্ধ করতে প্রয়োজনে মন্ত্রী পর্যন্ত যাবেন তাঁরা। কেইন দম্পতি অবশ্য এসব কথা থোড়াই পরোয়া করেন। তাঁরা এখন ব্যস্ত অনাগত সন্তানকে নিয়ে।
পার্থ সরকার | তারিখ: ২২-০১-২০১০

No comments: