বর্তমানে মানুষের সামাজিক জীবনযাপন অনেকটাই ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে যাচ্ছে। পারস্পরিক যোগাযোগ, আড্ডা, আলোচনাসহ দৈনন্দিন যোগাযোগের প্রায় সবকিছুতেই এখন ইন্টারনেট ব্যবহূত হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সব সময়ই তরুণেরা এগিয়ে ছিল, কিন্তু সামাজিক জীবনযাপন এবং যোগাযোগের এই নতুন মাধ্যমটি ব্যবহারে সব বয়সের মানুষের মধ্যেই ব্যাপকতা লক্ষ করা যায়।
ইন্টারনেট একটি মুক্ত জায়গা। সবাই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে সহজেই। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট, ব্লগ, অনলাইন ফোরামগুলো পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করার পথটি আরও সহজ করে দিয়েছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই যেহেতু এই সেবাগুলো বিনা মূল্যে পাওয়া যায়, তাই ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেশ দ্রুত বাড়তে থাকে। এভাবেই অনেকে খুঁজে পান পুরোনো দিনের বন্ধুদের, সেই সঙ্গে নতুন নতুন বন্ধু পাওয়ার সুযোগ তো রয়েছেই। সহজ যোগাযোগের কারণে আবার বিপদও ঘটে।
ইন্টারনেটে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা। প্রথমেই সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের কথা বলা যেতে পারে, প্রাসঙ্গিকভাবেই এ ধরনের ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীরা তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে থাকেন। তাই ব্যবহারকারীর বন্ধু তালিকায় নতুন কারা যুক্ত হচ্ছেন, সেই বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যবহারকারীর প্রোফাইলের কোন অংশটি কাদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, সেটিও সঠিকভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। যেমন, স্বাভাবিকভাবেই অনেকে চাইবেন না যে তাঁর পারিবারিক ছবিগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত থাকুক অথবা ব্লগে তাঁর সব প্রকাশনাতেই যে কেউ মন্তব্য করুক। আর এই ওয়েবসাইটের পৃষ্ঠাগুলো বন্ধু তালিকার বাইরে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া থাকবে কি না, সেটি নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত।
ফেসবুক (www.facebook.com), মাইস্পেস (www.mayspace.com), অর্কুট (www.orkut.com)-এর মতো সামাজিক যোগাযোগের সাইটে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রণ করার বিভিন্ন ধরনের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা আছে। যেকোনো ব্যবহারকারী ইচ্ছা অনুযায়ী এগুলো পরিবর্তন করতে পারবেন। যেমন, ফেসবুকে প্রাইভেসি সেটিং Accounts মেনুর Privacy Setting অপশন থেকে অথবা সরাসরি www.facebook.com/settings/?tab=privacy ঠিকানা থেকেও পরিবর্তন করা যাবে। প্রোফাইলে যুক্ত করা প্রতিটি তথ্য কাদের জন্য উন্মুক্ত করা থাকবে, সেটি উল্লেখ করে দেওয়া যাবে। এ ছাড়া এখানে যেকোনো ছবির অ্যালবাম যুক্ত করার সময়ও একইভাবে বলে দেওয়া যাবে, কারা ছবিগুলো দেখতে পারবে। একইভাবে মাইস্পেসে My Accounts-এর Privacy ট্যাব এবং অর্কুট প্রোফাইলের ওপরের settings থেকে এই ধরনের অপশনগুলো পাওয়া যাবে।
একইভাবে ছবি আদান-প্রদানের জন্য ফ্লিকার (www.flickr.com) এবং পিকাসা (www.picasaweb.google.com) বেশ জনপ্রিয়। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সঙ্গে সঙ্গে এখানে আরও একটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, আর সেটি হলো ছবি ব্যবহার করার নীতি। অর্থাৎ, ব্যবহারকারী যে ছবিগুলো প্রকাশ করছেন, সেগুলো অন্য কেউ সরাসরি অথবা আংশিক পরিবর্তন করে ব্যবহার করতে চাইলে অনুমতি দেওয়া হবে কি না, সেটি উল্লেখ করে দেওয়া। একই সঙ্গে যেকোনো ব্যবহারকারী মূল ছবিটি ডাউনলোড করতে পারবে কি না, সেটিও নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। ইন্টারনেটে প্রকাশিত ছবির লাইসেন্স কেমন হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারা যাবে http://creativecommons.org/ about/ licenses ঠিকানা থেকে।
সামাজিক যোগাযোগের প্রোফাইল অথবা ব্লগের লেখা উন্মুক্ত করে দেওয়া থাকলেই যে কেউ যা ইচ্ছা মন্তব্য করতে পারবে না। ছবি প্রকাশের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। ব্যক্তিগতভাবে আঘাত দিয়ে অথবা অশালীন ছবি বা মন্তব্য প্রকাশের মাধ্যমে অপরকে হেয়প্রতিপন্ন করা যাবে না। এ ধরনের প্রায় প্রতিটি ওয়েবসাইটে সাধারণভাবে প্রকাশিত প্রতিটি মন্তব্য এবং ছবির নিচের অংশে ‘রিপোর্ট অথবা অভিযোগ করুন’ নামের একটি লিংক থাকে, যেটি ব্যবহার করে এ ধরনের যেকোনো অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী ওই অভিযুক্ত ব্যবহারকারীকে সাময়িক অথবা স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে দেওয়া হতে পারে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে আইপি ঠিকানা অনুযায়ী ব্লক করা হয়, ফলে পরবর্তী সময়ে কখনোই সেই ব্যবহারকারী সেখানে যুক্ত হতে পারে না।
তথ্য সুত্র: প্রথম আলো। নাসির খান | তারিখ: ২৪-০৯-২০১০
No comments:
Post a Comment