মানচিত্রের খেলা
মানচিত্রের প্রতি এমনিতে শিশুদের কতটা টান কে জানে! তবে রংপুরের মোখলেছুর রহমানের বাড়িতে গেলে মনে হবে, শহরের সব শিশু বুঝি ভূগোলপ্রেমী হয়ে উঠেছে। আসলে তা-ই। রংপুরের শিশুদের ভূগোলপ্রেমী করে তুলছেন স্থানীয় শিশু একাডেমীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান।
শিশু একাডেমীর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মোখলেছুর রহমান বুঝেছেন, বাচ্চারা ‘জ্ঞান’ দেওয়া ব্যাপারটা পছন্দ করে না। খেলতে খেলতে কিছু শেখাটাই ওদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ কথা ভেবেই বাচ্চাদের জন্য মানচিত্রের এক খেলা আবিষ্কার করেছেন।
খেলাটা এমন অভিনব কিছু নয়। বাংলাদেশের মানচিত্রটাকে দিয়ে ৬৪টা টুকরো বানিয়েছেন। বিভিন্ন রঙের এই টুকরোগুলোকে জোড়া দিয়ে বানিয়ে ফেলা যায় পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র। জাপানে গিয়ে এ রকম জাপানি মানচিত্রের খেলা দেখে আইডিয়াটা মাথায় এসেছে মোখলেছুর রহমানের।
তবে এই আবিষ্কারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, জিনিসটা নিয়ে মোখলেছুর রহমানের কাজ। মানচিত্রটা নিয়ে নিজেই এলাকার বাচ্চাদের ডেকে ডেকে খেলা শেখাতে শুরু করেছেন। প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার স্থানীয় শিশুদের উত্সব লেগে যায়। আর শিশুদের মতোই উচ্ছল হয়ে তাদের সঙ্গে খেলায় মেতে ওঠেন মোখলেছুর রহমান।
হঠাত্ হঠাত্ কোনো বাচ্চার চিত্কার শোনা যায়, ‘আমি খুলনা জেলা খুঁজে পেয়েছি।’ মোখলেছুর রহমানও ‘শাবাশ, শাবাশ’ বলে এগিয়ে যান। আবার একসঙ্গে আওয়াজ দেন, ‘এখন কে কোন জেলা খুঁজে পেয়েছ?’ বাচ্চারা একসঙ্গে চিত্কার করে নিজ নিজ হাতের জেলার নাম বলে দেয়। এর ফাঁকে আবার জেলাগুলো সম্পর্কে কিছু তথ্যও জেনে নেয় তারা।
মানচিত্রের টুকরোগুলো দিয়েই জেলাগুলোর পরিচিতি পেয়ে যাচ্ছে বাচ্চারা। কোন জেলায় খ্যাতনামা কী আছে, দেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা কোনটা, বঙ্গোপসাগর-সুন্দরবন-কক্সবাজারের কোথায়; সব এখন শিশুরে নখদর্পণে!
কেন এ উদ্যোগ, জানতে চাইলে মোখলেছুর রহমান হেসে বলেন, ‘শিশুদের সঙ্গে মিশতে খুব ভালো লাগে। সবাই তো ওদের শেখাতে চায়। আমি খেলতে খেলতে কিছু শেখানোর কথা ভাবলাম। এখন দেখছি ব্যাপারটা ওদের ভালোই লাগছে।’
ভালো যে লাগছে এর প্রমাণ মেলে শহরের কাচারিবাজার এলাকায়। প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুই ঘণ্টা করে এখানকার শিশুনিকেতন স্কুলে বাচ্চাদের সঙ্গে মানচিত্রের খেলায় অংশ নেন মোখলেছুর রহমান। গত বছর পয়লা মে ছয়জন শিশুকে নিয়ে শুরু করেছিলেন তিনি। এই কয় মাস যেতে না যেতে এখন মোখলেছুর রহমানের শিক্ষার্থী-সংখ্যা ৫০ পার হয়ে গেছে।
বলাই বাহুল্য, বাচ্চাদের এই মানচিত্রের খেলা শেখাতে কোনো পারিশ্রমিক নেন না মোখলেছুর রহমান। সে রকম কোনো ইচ্ছেও নেই তাঁর। বরং এখন তাঁর পরিকল্পনা আরও স্কুলে গিয়ে বাচ্চাদের এই খেলা শেখানো। সারা দেশে তো আর নিজে যেতে পারবেন না, তাই প্যাকেটে করে দেশের সব স্কুলের বাচ্চার কাছে খেলার মানচিত্র পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন মোখলেছুর রহমান।
সুত্র: প্রথম আলো। আরিফুল হক | তারিখ: ০৮-০১-২০১০
No comments:
Post a Comment