Tuesday, October 19, 2010

ছাদে সুফলা বাগান

মালিবাগের লায়লা আহমেদের বাড়ির ছাদে বাগানের পাশাপাশি জলাশয়ও আছে।

বাড়িটার ঠিকানা, ২৭০ মালিবাগ। বেশ বড় বাড়িটা বাইরে থেকে দেখলে তেমন আহামরি মনে হয় না। কিন্তু ছাদে উঠতেই চমকে যেতে হয়। চারপাশে শুধু গাছ আর বনসাই। থোকা থোকা ফল ধরে আছে কোনো কোনোটায়। সাজানো-গোছানো দারুণ এক বাগানের মাঝখানে দুটো জলাশয়ও আছে! তার একটায় ভাসছে গুঁড়ি গুঁড়ি কচুরিপানা। বাড়ির মালিক লায়লা আহমেদ বললেন, ‘পুকুরে মাছও আছে, কই মাছ।’
ছয়তলার ছাদের ওপর এই দারুণ বাগানটা স্রেফ শখের বসেই করেছেন তিনি। চার সন্তানের এই মা সংসার সামলাতে ব্যস্ত থাকেন সারাক্ষণ। তবু ঠিকই বাগান করার সময়টুকু বের করে নিয়েছেন তিনি। জানা গেল, প্রায় ছয় বছরের কষ্টের ফসল এই বাগান। বললেন, ‘গাছের জন্য আমার ভীষণ টান। সেই ছোটবেলা থেকেই বাগান করি। প্রথমে অবশ্য এত বড় ছাদ পাইনি। তখন বারান্দায় গাছ লাগাতাম। তারপর পাঁচ বছর আগে এই ছাদটা তৈরি হলো। তখন থেকে একটা একটা করে গাছ গুছিয়ে বাগানটা বানিয়েছি।’
একই ব্যাপার ঘটেছে মিরপুর ২ নম্বর সেক্টরের মামুনুর রশীদের ক্ষেত্রে। ১৯৯০ সাল থেকে ছাদে বাগান করছেন তিনি। শুরু করেছিলেন গোলাপ ফুল দিয়ে, তারপর চলে এলেন ফলের জগতে। দুষ্প্রাপ্য গাছ আর ভালো জাতের চারা দিয়ে সাজিয়েছেন তাঁর ছাদ। সেখান থেকে এবারের বৃক্ষমেলায় চারা নিয়ে হাজিরও হয়েছিলেন তিনি। প্রায় ৮০ হাজার টাকার চারাগাছ বিক্রি করেছেন মামুনুর রশীদ। এর মধ্যে শুধু মিসরীয় মিষ্টি ডুমুরের চারাই বিক্রি করেছিলেন ২১ হাজার টাকার।
মাদারটেক উত্তরপাড়ার এহতেশামুল মল্লিক তাঁর ছাদে বাগান করেছেন সেই ২০০০ সালে। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৫০টি ফলের গাছ আছে তাঁর বাগানে। তিনি বললেন, ‘আমার দেখাদেখি পাড়া-প্রতিবেশীরাও এখন উৎসাহী হয়ে উঠেছেন ছাদে বাগান করতে। ছয়-সাতজন ইতিমধ্যে করেও ফেলেছেন।’
শহর ঘুরলে এ রকম উৎসাহী মানুষ মিলবে অনেক, যাঁরা বাড়ির প্রস্তরকঠিন, অনুর্বর ছাদটাকে রীতিমতো সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাগানে পরিণত করেছেন। আর এই মানুষদের এক করে ঢাকা শহরের অনাবাদি বাড়ির ছাদকে সবুজ বাগানে পাল্টে দেওয়ার জন্য কোমর বেঁধে নেমেছে একটি সংগঠন—বাংলাদেশ গ্রিন রুফ মুভমেন্ট। তাদের মত, এই শহরে দিন দিন দালানকোঠা বাড়ছে। কমছে জমি, কমছে সবুজ। ফলে শহরের পরিবেশের বারোটা বেজে যাচ্ছে আক্ষরিক অর্থেই। এ থেকে পরিত্রাণের উপায়, ছাদকে গাছের বাগানে পরিণত করা। আর এ রকম চিন্তা-ভাবনা থেকেই বাংলাদেশ গ্রিন রুফ মুভমেন্টের জন্ম। এই আন্দোলনের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁরা নিজেদের পরিচয় দেন নগরকৃষক হিসেবে। শুধু তা-ই নয়, বিষয়টা তাঁরা যে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন, সেটা বোঝা গেল সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বাসার ছাদে ঘুরতে গিয়ে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ গোলাম হায়দারের বাড়ির ছাদ তো পুরোপুরি গাছে ভরে গেছে। কত বিচিত্র গাছ যে রয়েছে তাঁর বাগানে। গাছে গাছে আম, পেয়ারা, আনার, জাম্বুরা, কমলা ঝুলে আছে। তিনি বললেন, ‘এই বাগান এখন আমার জন্য দারুণ এক নেশা। সারা দিন বাসার বাইরে যা-ই হোক, ছাদের বাগানে এলেই মনে হয় সব শান্তি। মনটা ভালো হয়ে যায়।’
গোলাম হায়দার জানালেন, ছাদে বাগান করলে যে কেবল পরিবেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা যাবে তা-ই নয়, অর্থনীতিতেও বেশ বড় ধরনের ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। আর এই কথাগুলো নগরবাসীর কানে পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্বটাই কাঁধে তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশ গ্রিন রুফ মুভমেন্টের সদস্যরা। চাইলে আপনিও যোগ দিতে পারেন তাঁদের সঙ্গে, সে আপনার ছাদ থাকুক আর না থাকুক। আর ছাদে বাগান করতে চাইলে তো কথাই নেই। গাছের সবচেয়ে ভালো চারার খোঁজ থেকে শুরু করে উপকরণ, সার, কীটনাশক, বই-পুস্তকসহ যেকোনো পরামর্শ পাওয়া যাবে বাংলাদেশ গ্রিন রুফ মুভমেন্টের কাছ থেকে। 
 সুত্র: প্রথম আলো। কাওছার শাকিল | তারিখ: ২৬-০৯-২০১০

No comments: