Monday, October 4, 2010

 বয়স মাত্র ১৩০!

একসময় মানুষ নাকি হেসেখেলে এক-দেড় শ বছর বেঁচে যেত। সেই দিন আর নেই। ৬০, ৭০ কিংবা বড়জোর ৮০ বছরেই শেষ হয়ে যায় এখন বেশির ভাগ মানুষের ইহকাল।
এই স্বল্প আয়ুর যুগে কেউ যদি বয়সের দিক দিয়ে শতক পূরণ করেন, তাঁকে নিয়ে কিছুটা মাতামাতি তো হবেই। তখন আবার শুরু হয় বয়স্কতম মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার প্রতিযোগিতা।
এই প্রতিযোগিতায় কিছুদিন আগ পর্যন্ত সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন জাপানের ১১৪ বছর বয়সী কামা চাইনিন। এখনো পর্যন্ত কাগজে-কলমে চাইনিনই বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ। তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৮৯৫ সালের ১০ মে। সেই হিসাবে এ মুহূর্তে বিশ্বের জীবিত মানুষদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি বয়সী মানুষ বলে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত।
কিন্তু চাইনিনের জন্য দুঃসংবাদ আছে। এই খেতাবটি বোধহয় তাঁর দখলে আর থাকছে না। জর্জিয়ায় সন্ধান মিলেছে তাঁর চেয়েও বেশি বয়সী এক মানুষের। বেশি মানে এক-দুই বছরের নয়, চাইনিনের চেয়ে গোনা ১৫ বছরের বড় এক ভদ্রমহিলার সন্ধান দিয়েছে জর্জিয়ার একটি টেলিভিশন।
আনতিসা কুরচাভা নামের এই ভদ্রমহিলার বয়স এখন ১২৯ বছর। ৮ জুলাই তাঁর বয়স হবে ১৩০।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জর্জিয়ার ‘রুস্তাভি-২’ টেলিভিশন প্রচার করে আনতিসা কুরচাভা সম্পর্কে এক প্রতিবেদন। টিভি চ্যানেলটি বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ ও আনতিসা কুরচাভার পরিবারের বরাত দিয়ে দাবি করে, পৃথিবীর জীবিত মানুষদের মধ্যে কুরচাভাই সবচেয়ে বেশি বয়সী মানুষ।
টিভিতে আনতিসা কুরচাভার সোভিয়েত যুগের পাসপোর্ট ও অবসর-ভাতা প্রদান-সংক্রান্ত বই দেখানো হয়। এই দুই দলিলেই দেখা গেছে, তাঁর জন্ম ১৮৮০ সালের ৮ জুলাই। তাঁকে অবসর-ভাতা বই প্রদান করা হয়েছে ১৯৬০ সালে।
আনতিসা কুরচাভা বাস করেন জর্জিয়ার ককেসাস পার্বত্য অঞ্চলের প্রত্যন্ত এক গ্রাম সাচিনোতে। রাজধানী তিবলিসি থেকে প্রায় ১৭০ মাইল দূরের এই গ্রামে তাঁর ছেলে, নাতি-নাতনি ও তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে বাস করছেন কুরচাভা।
পৃথিবীর সবচেয়ে বয়সী মানুষ হিসেবে কুরচাভার স্বীকৃতি মেলার সম্ভাবনায় খুবই আনন্দিত তাঁর পরিবারের লোকজন। নাতনি শোরেনা মহা আনন্দিত হয়ে বলেছেন, ‘আমার দাদির বয়স আসলেই ১৩০ বছর।’
টিভি চ্যানেলে প্রদর্শিত ছবিতে দেখা গেছে, কুরচাভা বিছানায় শুয়ে আছেন। নাতিরা তাঁকে ফুল দিয়ে ও চুমু খেয়ে অভিবাদন জানাচ্ছেন।
তবে বিছানায় শুয়ে থাকার মতো ‘অচল’ নন আনতিসা কুরচাভা। দিব্যি বিভিন্ন খেলা খেলছেন, এমনকি এই বয়সেও ভোদকা পান করছেন। পরিবারের সদস্যদের দাবি, আর দশজন বৃদ্ধ মানুষের চেয়েও বেশ সুস্থ আছেন আনতিসা কুরচাভা।
কুরচাভা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। সে জন্য অনেক অনুসন্ধান, পরীক্ষাপর্ব পার হতে হবে। তবে জর্জিয়ার ‘সিভিল রেজিস্ট্রি এজেন্সি’র প্রধান জর্জি ভাসাদেস সাক্ষ্য দিচ্ছেন কুরচাভার পক্ষেই। তিনি বলেছেন, ‘আশা করছি কুরচাভার বয়স প্রমাণ করতে পারব এবং গিনেস বুকে তাঁর নাম লেখানো সম্ভব হবে।’ একদিকে স্বীকৃতির জন্য চেষ্টা চলছে, অন্যদিকে শুরু হয়ে গেছে প্রচারণা। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক ফেসবুকে কুরচাভার নামে একটি গ্রুপও খোলা হয়েছে। এই গ্রুপে এরই মধ্যে চার শতাধিক সদস্য জুটে গেছে।
গ্রুপটির প্রোফাইলে কুরচাভার নিজস্ব কয়েকটি ছবি এবং তাঁর পাসপোর্ট ও অবসর-ভাতা বইয়ের ছবিও রাখা হয়েছে। শুভাকাঙ্ক্ষীরা ওই গ্রুপে তাঁর প্রশংসা করে নানা স্তুতিবাক্যও লিখছেন। কেউ কেউ কুরচাভার আরও দীর্ঘ জীবন কামনা করেছেন।
সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার চেয়ে এটাও মনে হয় কম পাওয়া নয়!
  সাইফুল সামিন, ওয়েবসাইট অবলম্বনে    | তারিখ: ১৯-০৩-২০১০

No comments: