রাজা ইন্দ্র নারায়ন নলডাঙ্গায় অত্যন্ত সুন্দর এ মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। বর্গাকারে নির্মিত এ মন্দিরের প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য বাইরের দিকে ছিল ৩৯ ফুট ৩ ইঞ্চি মাপের। গর্ভ- মন্দিরের উপরে ১টি এবং চারকোণে ৪টি চূড়া ছিল। প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহের নামকরণ করা হয়েছিল 'ইন্দ্রেশ্বরী'। পরে এর নাম রাখা হয় 'সিদ্ধেশ্বরী'। ১৮৬৫ সালের বেশ কিছুকাল আগে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২০-২২ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে কালীগঞ্জ হয়ে নলডাঙ্গা যেতে হবে। এরপর নলডাঙ্গা হতে ভ্যানযোগে অথবা পায়ে হেটে নলডাঙ্গা মন্দিরে পৌছানো যাবে। নলডাঙ্গা হতে মন্দিরের দুরত্ব ১ কিঃ মিঃ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
মিয়ার দালান:
বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার সদর থানায় অবস্থিত একটি পুরানো জমিদার বাড়ী। বড়ীটি স্থানীয় নবগঙ্গা নদীর উত্তর দিকে অবস্থিত। ঝিনাইদহ শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থিত। বর্তনানে বাড়ীটি ভগ্নপ্রায়। প্রাচীন ঐতিহ্য অনুযায়ী ইমারতের প্রধান ফটকে নির্মান সময়ের কিছু কথা কাব্যিক ভাবে খোদাই করা আছে। তাতে লেখা, ‘শ্রী শ্রী রাম, মুরারীদহ গ্রাম ধাম, বিবি আশরাফুন্নেসা নাম, কি কহিব হুরির বাখান। ইন্দ্রের অমরাপুর নবগঙ্গার উত্তর ধার, ৭৫,০০০ টাকায় করিলাম নির্মান। এদেশে কাহার সাধ্য বাধিয়া জলমাঝে কমল সমান। কলিকাতার রাজ চন্দ্র রাজ, ১২২৯ সালে শুরু করি কাজ, ১২৩৬ সালে সমাপ্ত দালান।‘
বঙ্গাব্দ ১২৩৬ সালে নির্মাণ শেষ হওয়া এই ইমারতটি ঠিকঠাক মত রক্ষনাবেক্ষণ করা গেলে সেটা ঝিনাইদহ শহরের একটি উল্লেখযোগ্য বিনোদন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। যত দূর জানা যায় যে জমিদার এই দালানটি নির্মাণ করেন তিনি ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের সময় ভবনটি বিক্রি করে দেন সেলিম চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির কাছে। তাই ভবনটিকে স্থানীয় ভাবে কেউ কেউ সেলিম চৌধুরীর বাড়ীও বলে থাকে।
বলা হয়ে থাকে বাড়ীটি থেকে নবগ্ঙ্গা নদীর নিচ দিয়ে একটি সুড়ঙ্গ ছিল। সুড়ঙ্গের প্রবেশমুখ এখনো চিহ্নত করা যায়। নদীতে যে ভাবে বাধ দিয়ে ইমারতটি নির্মান করা হয়েছিল সেভাবে তৈরী আর কোন পুরানো ইমারত ঝিনাইদহ শহরে দেখা যায় না।
বাড়ীটির স্থানীয় ভাবে ব্যাপক পরিচিতির আর একটি বড় কারণ বাড়ীতে থাকা এনটি বিশেষ খেজুন গাছ। যে গাছটিতে একাধিক মাথা ছিল এবং প্রতিটি মাথা থেকেই রস আহোরণ করা যেতো।
যেভাবে যেতে হবে:ঝিনাইদহ শহর হতে স্থানটির দুরত্ব ০৩ কিঃমিঃ। ঝিনাইদহ শহরের যে কোন স্থান হতে অটোরিকসা / রিকসা যোগে আরাপপুর বাসষ্ট্যান্ড হয়ে মুরারীদহ মিয়ার দালানে যাওয়া যাবে।
আবাসন ব্যবস্থা ঃ আবাসন সুবিধা নাই। তবে ঝিনাইদহ শহরে আবাসিক হোটেল আছে।
কে,পি বসুর বাড়ীঃ
জগদ্বিখ্যাত গণিতবিদ অধ্যাপক কালীপদ বসু ১৯০৭ সালে নিজের জম্মস্থান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামে নবগঙ্গা নদীর তীরে ১ একর জমির উপর ১৭ কক্ষ বিশিষ্ট এক প্রাসাদোপম দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন। বাড়ীটি এখনও বসবাসযোগ্য এবং সুদৃশ্যই বলা যায়।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২১-২২ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে হাটগোপালপুর যেতে হবে। এরপর হাটগোপালপুর হতে ( উত্তরদিকে )ভ্যানযোগে কে,পি বসুর বাড়ী যেতে হবে। হাটগোপালপুর হতে কে,পি বসুর বাড়ীর দুরত্ব ৫ কিঃ মিঃ ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
গোড়ার মসজিদ (গোরাই)
মসজিদটি বারোবাজার ইউনিয়নের বেলাট দৌলতপুর মৌজায় অবস্থিত। ইসলামী ঐতিহ্যের এক অনুপম নিদর্শন গোড়ার (গোরাই) মসজিদ। মসজিদের পূর্বদিকে একটি পুকুর আছে। মসজিদ থেকে পুকুরে যাওয়ার জন্য বাঁধানো ঘাট ছিল। ভাঙ্গা ইটের উপস্থিতি ও স্থানে স্থানে প্রোথিত ইটের চিহ্ন তা প্রমাণ করে। বারান্দাসহ এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি বর্গাকৃতি। এ মসজিদটি অবস্থিত মসজিদগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা ভাল অবস্থায় ছিল। ১৯৮৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক খননের পর দেখা গেছে, গম্বুজের কেন্দ্রস্থল ২ ফুটের মত ভাঙ্গা। বৃত্তাকার ও উপুড় করা পেয়ালার মতো দেখতে গম্বুজটি অত্যন্ত মনোরম। মসজিদের পাশে একটি কবরের সন্ধান পাওয়া যায়। এটি গোরাই নামের এক দরবেশের মাজার বলে অনেকের ধারণা। তাঁর নামানুসারে এ মসজিদকে গোড়ার (গোরাই) মসজিদ বলা হয়। বর্তমানে এ মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়া হয়। মসজিদে ৫ ফুট প্রশস্ত দেয়াল আছে। পুর্বের দিকে ৩টি প্রবেশদ্বার , দু'পাশের দু'টি অপেক্ষাকৃত ছোট। উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে ২ টি বড় ও ২ টি ছোট মোট ৪টি প্রবেশ পথ ছিল। এখন এগুলো জানালা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পশ্চিমের দেয়ালে ৩টি মেহরাব আছে। পশ্চিম দেয়ালে ৭/৮ ফুট লম্বা ২টি এবং উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে ২টি মোট ৪ টি কালো পাথরের স্তম্ভ আছে। মসজিদের দেয়ালে পোড়ামাটির পত্র-পুস্পে শোভিত শিকল, ঘন্টা, ইত্যাদি আরোও অনেক নকশা আছে।
এ মসজিদের বাইরের দেয়াল সম্পূর্ণটাই পোড়ামাটির কারুকার্য দ্বারা চমৎকার ভাবে অলংকৃত। মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যের এক নয়নাভিরাম ও অনন্য উদাহরণ। এটি সম্ভবত হোসেন শাহ বা তার পুত্র নসরত শাহ কর্তৃক নির্মিত। এ মসজিদের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায় গৌড়ের সাত্তম ও খনিয়া দীঘি মসজিদ, দিনাজপুরের সুরা মসজিদ, দেওয়ানগড় মসজিদ, টাঙ্গাইলের আতিয়া মসজিদ ও সিংহদার আওলিয়া মসজিদের।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২৮-৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে বারবাজার যেতে হবে। এরপর বারবাজার হতে ( পশ্চিম দিকে) ভ্যানযোগে গোড়ার মসজিদে যেতে হবে। বারবাজার হতে গোড়ার মসজিদের দুরত্ব ১ কিঃ মিঃ ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
গলাকাটা মসজিদ:
সাদিকপুর মসজিদ থেকে ১৫০ গজ পূর্বে গলাকাটা মসজিদটি বারোবাজার - তাহেরপুর রাস্তার পার্শ্বে অবস্থিত। চারটি ৬ কোণাকৃতি বড় মোটা পিলারের উপর বর্গাকৃতি মূল মসজিদটি দন্ডায়মান এবং প্রত্যেক বাহু ২৫ ফুট লম্বা ও দেয়াল ৫ ফুট চওড়া। এতে ৩টি প্রবেশ দ্বার আছে। মসজিদটির পূর্ব পাশে পাকা প্রাঙ্গন ছিল। ভিতরে পশ্চিমের দেয়ালে ৩টি মেহরাব আছে এতে পোড়ামাটির কারুকাজ, ফুল, লতাপাতা, ঘন্টা, চেইন ইত্যাদির নকশা আছে। কালো পাথরের ৮ ফুট উচ্চতার দু'টি স্তম্ভ ছাদের পিলার হিসেবে আছে। স্তম্ভের সামনে পিছনে ৬টি মাঝারি আকৃতির গম্বুজ আছে। শাহ সুলতান মাহমুদ ইবনে হুসাইনের আমলের ৮০০ হিজরীর আরবি-ফার্সিতে লেখা কয়েকটা পাথর খননের সময় এগুলো এখানে পাওয়া গেছে। মসজিদের সাথে সাদৃশ্য আছে গৌরের ধবীচক ও ঝনঝনিয়া মসজিদ, ঢাকা রামপালে বাবা আদমের মসজিদ, শৈলকুপার শাহী মসজিদ ও বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের। ইসলামী স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে গলাকাটা মসজিদ বাংলাদেশের পুরাকীর্তিকে সমৃদ্ধ করেছে।গলাকাটা মসজিদের পাশে গলাকাটা দীঘি অবস্থিত। খান জাহান আলী (রাঃ) এর সমসাময়িক এ দীঘি বলে প্রবল জনশ্রুতি আছে। এ দীঘিটি চর্তুদিকের পাড়সহ বারো বিঘা জমির উপর অবস্থিত। এ দীঘির দক্ষিণ পাড়েই গলাকাটা মসজিদ। দীঘির পশ্চিম পাড়ে একটি ছোট অনুচ্চ ঢিবি আছে।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২৮-৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে বারবাজার যেতে হবে। এরপর বারবাজার হতে ( পশ্চিম দিকে) ভ্যানযোগেগলাকাটা মসজিদে যেতে হবে। বারবাজার হতে গলাকাটা মসজিদের দুরত্ব ১ কিঃ মিঃ ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
জোড় বাংলা মসজিদঃ
বারোবাজার মৌজায় এ মসজিদটি অবস্থিত। ১৯৯২-৯৩ সালে প্রত্নতত্ব বিভাগ কর্তৃক খননের ফলে আবিস্কৃত হয়েছে এক গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটি। এর পাশে কয়েকটি কবর আছে। ছোট ছোট সুন্দর পাতলা ইটে গাঁথা এ মসজিদটি ১০/১১ ফুট উচুঁ প্লাটফর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত।
মসজিদে প্রবেশের পথটি উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত। এ প্রবেশ পথ থেকে দীঘি পর্যন্ত ইটের তৈরী বিশাল সিঁড়ি নেমে গেছে। বর্গাকৃতি এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি পুনঃ নির্মিত হয়েছে। এখানে নিয়মিত নামাজ আদায় হয়। পশ্চিম দেয়ালে অর্ধবৃত্তাকারে পোড়ামাটির নক্সা ও অলংকরণে ৩টি মেহেরাব আছে। চুন বালির প্লাস্টারের কাজও লক্ষ্য করা যায় । মেহেরাবের দুই পাশেই ছোট পিলার আছে। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি ফুল ও লতাপাতা অংকিত ইটের তৈরী। স্থাপত্য শিল্পের সৌন্দর্য ও কারুকার্যময় এ দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি মুসলিম সভ্যতা ও উৎকর্ষের নিদর্শন।
সম্ভবত ৮০০ হিজরীতে শাহ সুলতান মাহমুদ ইবনে নুসাই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। সাদিকপুর মসজিদ, খান জাহান আলী (রাঃ) মাজার সংলগ্ন মসজিদ, ডুমুরিয়ার সারসনগর মসজিদ, অভয়নগরের শুভারাদা মসজিদ এবং বাগেরহাট বিবি কেরানী মসজিদর নির্মাণ শৈলীর সাথে এ মসজিদের সাদৃশ্য আছে।জোড়বাংলা মসজিদের উত্তরের পুকুরটি অন্ধপুকুর নামে পরিচিত। সুলতান মাহমুদ শাহের শাসনামলে মুসল্লীদের ওজু ও পানীয় জলের প্রয়োজনে সম্ভবত এ পুকুর খনন করা হয়েছিল। মসজিদের উত্তর-পূর্বের প্রবেশ দ্বার থেকে অন্ধপুকুরের তলদেশ পর্যন্ত ইট বাঁধান সিঁড়ির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২৮-৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে বারবাজার যেতে হবে। এরপর বারবাজার হতে ( পশ্চিম দিকে) ভ্যানযোগে জোড়বাংলা মসজিদে যেতে হবে।বারবাজার হতে জোড়বাংলা মসজিদের দুরত্ব ১কিঃমিঃ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
সাতগাছিয়া মসজিদ
বারোবাজার থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে সাতগাছিয়া মৌজায় বিরাট আকারের সাতগাছিয়া-আদিনা মসজিদটি অবস্থিত। আদিনা শব্দের অর্থ শুক্রবার । ১৯৮৩ সালে বিরাট আকারের ঢিবির কিছু অংশ স্থানীয় জনগণ খনন করে। এর কিছু অংশ থেকেই ১৬টি থাম ও পোড়ামাটির নকশাসহ পাঁচটি মেহরাব বিশিষ্ট চমৎকার এ মসজিদের সন্ধান মেলে। ১৯৯৩ সালে পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ও প্রত্নতত্ব বিভাগ খননের মাধ্যমে ৪৮টি স্তম্ভের উপর ৩৫ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি আবিস্কার করে। মসজিদের উপরে কোন গম্বুজ নেই। এ মসজিদ এলাকাটি অনেকটা নির্জন এবং জঙ্গলাকীর্ণ।
বারোবাজার ভগ্নস্তুপ থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো মসজিদ আবিস্কৃত হয়েছে তার মধ্যে আয়তনে এটিই সবচেয়ে বড়। এর প্রবেশ পথ পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণে। মসজিদে মোট ১৭টি প্রবেশ পথ আছে। পশ্চিম দেয়ালে সাতটি মেহরাব আছে। ঘন্টা, চেইন, ফুল, গোলাপ ফুল, বৃক্ষ, পাতা, ফুলের কুঁড়ি প্রভৃতি মেহরাবের সজ্জা হিসেবে অতি চমৎকার ভাবে অঙ্কিত আছে। মেঝেতে ৩টি প্লাটফর্মে বিভাজিত।
বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের সাথে এ মসজিদের ভিতরকার নির্মাণ পরিকল্পনার সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। ষাট গম্বুজ মসজিদের নির্মাণকাল পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দিক। নির্মাণ ও পরিকল্পনায় সাদৃশ্য থাকার কারণে আদিনা মসজিদের নির্মাণ কালও এটাই ধরা হয়। এ মসজিদটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম মসজিদের অন্যতম বলা যায়।
যেভাবে যেতে হবে:ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২৮-৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে বারবাজার যেতে হবে। এরপর বারবাজার হতে ( পশ্চিম দিকে) ভ্যানযোগে সাতগাছিয়া মসজিদে যেতে হবে। বারবাজার হতে এ মসজিদের দুরত্ব ১কিঃ মিঃ ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
জাহাজঘাটা হাসিল বাগ
বারোবাজার হাসিলবাগ গ্রামে ভৈরব নদীর উত্তর পাড়ে একটি পুরানো অট্রালিকার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। জাহাজঘাটা নামে পরিচিত এ অট্রালিকাটিকে মসজিদ বলে অনেকে ধারণা করে। এ গ্রামে অনেক ঢিবিও আছে। এ জায়গাটি হাসিলবাগগড় নামেও পরিচিত।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২৮-৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে বারবাজার যেতে হবে। এরপর বারবাজার হতে হতে( পশ্চিম দিকে) ভ্যানযোগে জাহাজঘাটাহাসিলবাগ যেতে হবে।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
গাজী কালু ও চম্পাবতীর মাজারঃ
মত দ্বৈততা থাকলেও এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, গাজী- কালু ও চম্পাবতীর মাজার বারোবাজারেই অবস্থিত। গাজী- কালু ও চম্পাবতীর পরিচয় নিয়ে আছে নানা কিংবদন্তী। জনশ্রততিতে পাওয়া যায় বিরাট নগরের শাসক দরবেশ শাহ্ সিকান্দারের পুত্র গাজী। কালু সিকান্দারের পোষ্য পুত্র । কালু গাজীকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং সর্বত্র তাকে অনুসরণ করতেন। গাজীর সাথে ছাপাই নগরের সামন্ত রাজা রামচন্দ্র ওরফে মুকুট রাজার মেয়ে চম্পাবতীর দেখা হয়। গাজী ভুলে গেলেন তিনি মুসলমান, চম্পাবতীও ভুলে গেলেন তিনি হিন্দু রাজার মেয়ে। তদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলো। তাদের মিলনের মাঝে দুর্ভেদ্য প্রাচীর হয়ে দাঁড়াল সামাজিক ও ধর্মীয় বাঁধা। রাজা তাঁর সেনাপতিদের হুকুম দিলেন গাজী ও কালুকে শায়েস্তা করতে। ঘোর যুদ্ধে মুকুট রায়ের সেনাপতি দক্ষিণা রায় পরাজিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে গাজীর অনুসারী হয়। গাজী- কালু ও চম্পাবতীর মাজারের সাথে দক্ষিণা রায়ের মাজার আছে। মুকুটরাজা ঝিনাইদহ, কোটচাঁদপুর, বারোবাজারের পূর্ব এলাকা ও বেনাপোল অঞ্চলের সামস্ত রাজা ছিলেন। অন্যত্র তিনি রামচন্দ্র, শ্রীরাম বলে পরিচিত। রাজার চারটি বাড়ি ছিল-ঝিনাইদহের বাড়িবাথান, বারোবাজারের ছাপাইনগর (বর্তমানে বাদুরগাছা), কোটচাঁদপুরের জয়দিয়া বাওড়ের বলরামনগর, বেনাপোলের কাগজপুর-এ।
এ মুকুট রাজা বা রাজা রামচন্দ্র গাজীর অনুসারী বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে চম্পাবতীকে নিয়ে তার প্রধান বাড়ি ঝিনাইদহের বাড়িবাথানে চলে আসেন। গাজীও তাকে অনুসরণ করেন। ঝিনাইদহে গিয়ে গাজী, রাজার সেনাপতি গয়েশ রায়ের প্রমোদ ভবন জালিবল্লা পুকুরের পাড়ে বদমতলীতে ছাউনি ফেলেন। এখানেও গাজীর মাজার দেখতে পাওয়া যায়। এরপর রাজা চলে যান জয়দিয়া বাওড়ের বাড়িতে। এ বাড়ির অবস্থান দেখলে মনে হয়, রাজা অত্যন্ত শৌখিন ছিলেন। জয়দিয়ার বাওড় একসময় ভৈরব নদের অংশ ছিল। বাওড়ের পূর্ব পাড়ে ছিল রাজার বাড়ি। বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে বলুহর বাওড় যা এক সময়ে কপোতাক্ষ নদের অংশ ছিল। দুই বাওড় তথা দুই নদীর মধ্যস্থলে অবস্থিত এই রাজবাড়ীর গুরুত্ব অপরিসীম। দক্ষিণ পাশে বাওড়ের কুল ঘেষে তমাল গাছের নিচে আজও গাজীর দরগা বিদ্যমান। হয়তো প্রেমের টানে গাজী এখানেও ছুটে এসেছিলেন সঙ্গী কালুকে নিয়ে। অবশেষে গাজী অনুসারীদের নিয়ে বহু খন্ড যুদ্ধের পর রাজা রামচন্দ্রের কাছ থেকে চম্পাবতীকে উদ্ধার করে বারোবাজার ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু গাজীর পিতা শাহ্ সিকান্দার বিষয়টা মেনে নেননি। মুকুট রাজা শাহ্ সিকান্দারের প্রতিবেশী। হিন্দু সমাজের অসন্তষ্টির কারণে তিনি গাজীকে বাড়ী উঠতে দেননি। বাধ্য হয়ে গাজী দরবেশ বেশে চম্পাবতীকে নিয়ে বাদাবনে বেরিয়ে পড়লেন। সঙ্গী হলো কালু ও দক্ষিণা রায়। সুন্দরবনের বাদাবন বেশী দূরে ছিল না। নাভারণ, বেনাপোল, সাতক্ষীরা, বনগাঁ বাদাবন অঞ্চল ছিল। অসীম সাহসী গাজী আস্তানা গাড়লেন বাদাবনে। গরীব কাঠুরিয়ারা তার ভক্ত হলো।
গাজীর পরিচয় সম্পর্কে আর একটি ঐতিহাসিক তথ্য প্রচলিত আছে আমরা যে ঘটনার অবতারণা করছি তা ঘটেছে পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে। হোসেন শাহের সময়কালে (১৪৯৩-১৫৩৮) মুকুট রাজার শাসন কাল ছিল খাঁনজাহান আলী পরবর্তীতে সুলতান রোকনউদ্দীনের প্রধান সেনাপতি হিসেবে আসাব ও বাংলার বিভিন্ন অভিযানে তিনি অংশ নেন। সিলেট ও ঝিনাইদহের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর দরগা বা মাজার আছে। গাজী-কালু ও চম্পাবতীর সম্পর্কে নানা ধরণের জনশ্রুতি প্রচলিত আছে।
গাজী- কালু ও চম্পাবতীর মাজারে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষ মানত করে। শ্রীরাম রাজার বেড় দীঘির দক্ষিণ পাশে ৩টি পাশাপাশি কবরের অবস্থান । মাঝখানে বড় কবরটি গাজীর, পশ্চিমেরটি কালুর এবং পূর্বের ছোট কবরটি চম্পাবতীর বলে পরিচিত। মাজার সন্নিহিত দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি প্রাচীন বটগাছ আছে। এই বটগাছের তলদেশে একটি শূণ্যস্থান দেখা যায়। এটিকে অনেকে কূপ কিংবা অন্য কোন কবর বলে মনে করেন। ১৯৯২ সালে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন কবর তিনটি বাঁধাই করে বেষ্টনি প্রাচীর নির্মাণ ও খাদেমদের থাকার জন্য সেমিপাকা টিন শেড তৈরী করেছেন। গাজী কালু চম্পাবতীর সাথে দক্ষিণা রায়ের কবরও এখানে রয়েছে।
যেভাবে যেতে হবে:ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২৮-৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে বারবাজার যেতে হবে। এরপর বারবাজার হতে হতে( পূর্ব দিকে) ভ্যানযোগে গাজীকালু চম্পাবতীর মাজারে যেতে হবে। বারবাজার হতে মাজারের দুরত্ব ১ কিঃ মিঃ ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
বলু দেওয়ানের মাজার
বলু দেওয়ানের জম্মস্থান ও বাড়ী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দক্ষিণ প্রান্তে যাত্রাপুর গ্রামে। পিতা চুটি বিশ্বাস। মাজারের সম্পত্তির রেকর্ড ও সাম্প্রতিক খাদেমদের সময় বিচারে বলু দেওয়ানের আবির্ভাব কাল ১৮ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ বলে ধারণা করা যায়। শিশুকাল থেকে নানা রকম ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন বলু দেওয়ান। তাঁর বাল্য, কৈশোর ও যৌবনের বিচিত্র স্মৃতি জড়িয়ে আছে জম্মস্থান ধোপাদী-যাত্রাপুর ও মাতুলালয় চৌগাছার হাজরাতলার মাটিতে। কথিত আছে, এ দুই জায়গায় তার মাজার আছে। এখানে ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবারে ওরস মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভক্তগণ এ সময়ে মাজারে সমবেত হয়।কালীগঞ্জ উপজেলার বড় ধোপাদী বাজারে এগার বিঘা জমির উপর তার মাজার। এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বলু দেওয়ানের পাঁচজন খাদেম, মান্দারী শাহ, বশির শাহ, আফসার শাহ, ফটিক শাহ ও জলিল শাহ। বলু দেওয়ানের মাজারে মানুষ আপদে-বিপদে, রোগে-শোকে মানত করে। এখানে দু'টি পুকুর ও একটি ফলের বাগান আছে।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৩৩-৩৫ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে বারবাজার যেতে হবে। এরপর বারবাজার হতে ( পশ্চিম দিকে) বেবী /টেম্পুযোগে কোটচাঁদপুর -চৌগাছা সড়ক পথে বলুদেওয়ানের মাজারে যেতে হবে। বারবাজার হতে বলুদেওয়ানের মাজারের দুরত্ব ৫ কিঃ মিঃ।
আবাসন ব্যবস্থা:আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
শৈলকুপার শাহী মসজিদ ও মাজারঃ
কুমার নদের তীরে অবস্থিত শৈলকুপা শাহী মসজিদ দক্ষিণবঙ্গে সুলতানী আমলের স্থাপত্যকীর্তির একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। মসজিদটি দরগাপাড়ায় অবস্থিত। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এ মসজিদের দৈর্ঘ ও প্রস্থ (ভিতরের দিকে) ৩১.৫/২১ ফুট। দেয়ালগুলো প্রায় ৫.৫ ফুট প্রশস্ত। চার কোণে আছে চারটি মিনার। এগুলো গোলাকার এবং বলয়াকারে স্ফীতরেখা (ব্যান্ড) দ্বারা অলংকৃত। মিনারগুলো মসজিদের অনেক উপরে উঠে গেছে। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে দু'টি করে প্রবেশ পথ আছে। পূর্ব দেয়ালের কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথের উভয় পাশে একটি করে সরু মিনার আছে এবং এগুলো কোণের মিনারের চেয়ে কিছু নিচু। মসজিদের কার্নিশ ঈষৎ বাঁধানো; ভিতরে পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মেহরাব। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি আকারে বড়। মসজিদের ভিতরে পাঁচ ফুট উঁচু দুটি স্তম্ভ আছে। এগুলোর উপরে আছে ইটের তৈরি খিলান। এ দুটো স্তম্ভ ও চার পাশের দেয়ালের উপর নির্মিত হয়েছে ছয়টি গম্বুজ। এগুলো আকারে বেশ ছোট। মসজিদটি প্রধানতঃ ইটের তৈরি। এ মসজিদে এত সংস্কার ও সংযোজন হয়েছে যে, এর আদি কাঠামো কি ছিল তা সঠিকভাবে নিরুপণ করা সহজ নয়। কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথ ও কোণের মিনারগুলো সম্ভবতঃ পরবর্তীকালের সংযোজন। তবে এটি যে সুলতানী আমলের মসজিদ তা সহজেই বোঝা যায়। মসজিদের পূর্ব দিকে অনুচ্চ প্রাচীর বেষ্টিত (৪৫/৩০ ফুট ) একঢি মাজার আছে। স্থানীয় লোকদের মতে এটি শাহ্ মোহাম্মদ আরিফ-ই-রব্বানী ওরফে আরব শাহ্র মাজার। এ মাজারের কাছে আরও ছয়জন আউলিয়ার মাজার আছে। মসজিদ বা মাজারে কোন শিলালিপি নেই।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে গাড়াগঞ্জ । এরপর গাড়াগঞ্জ হতে বাসযোগে শৈলকৃপা যেতে হবে। শৈলকুপা বাজারেই শাহী মসজিদ অবস্থিত।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
শৈলকুপা রামগোপাল মন্দিরঃ
বল্লাল সেনের সময় মুন্সী বলরাম দাস শৈলকুপায় রাজ্য স্থাপন করেন। তৎকালে জনৈক সন্ন্যাসীর প্রচেষ্টায় রামগোপাল মন্দির স্থাপিত হয়।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে গাড়াগঞ্জ । এরপর গাড়াগঞ্জ হতে বাসযোগে শৈলকুপা যেতে হবে। শৈলকুপা বাজারেই রামগোপাল মন্দির অবস্থিত।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
মরমী কবি পাঞ্জু শাহ'র মাজার
মরমী কপি পাঞ্জু শাহ'র (১৮৫১-১৯১৪) মাজার হরিশপুর গ্রামে অবস্থিত। মাজারটি একতলা ভবন বিশিষ্ট। ভবনটি উত্তর-দক্ষিণ লম্বা। ভিতরে তিনটি কবর। কবির দু'পাশে দু'স্ত্রী চন্দন নেছা ও পাঁচি নেছার কবর । এ মাজার দর্শনের জন্য দেশ-বিদেশের বহু লোক এখানে আসেন। বছরে ৩বার মরমী কবির স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর অনুসারীগণ সাহিত্য সম্মেলন করে থাকেন।
যেভাবে যেতে হবে ঃ ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৩৮-৪০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে হরিণাকুন্ডু । এরপর হরিণাকুন্ডু হতে বাসযোগে /গ্রামবাংলা আটো ভ্যান / নছিমন যোগে/ভ্যানযোগে সাতব্রিজে যেতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হেটে/ভ্যান যোগে মাজারে যেতে হবে। হরিণাকুন্ডু হতে পাঞ্জু শাহের মাজারের দুরত্ব ৮ কিঃমিঃ।
আবাসন ব্যবস্থা ঃ আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
কামান্না ২৭ শহীদের মাজার
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ শৈলকুপা ইতিহাস হয়ে আছে। ৫ এপ্রিল গাড়াগঞ্জ যুদ্ধ, ৪ আগষ্ট আলফাপুরের যুদ্ধ, ১৩ অক্টোবর আবাইপুরের যুদ্ধ, ২৬ নভেম্বর কামান্নার যুদ্ধ এবং ৮ এপ্রিল, ৬ আগস্ট, ১৭ আগষ্ট ও ১১ নভেম্বর শৈলকুপা থানা আক্রমণের মাঝ দিয়েই শৈলকুপা শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিসেনারা উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা। শৈলকুপায় পাক-হানাদার ও তাদের সহযোগীরা চালিয়েছে নির্বিচারে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট। যার জলন্ত সাক্ষী হয়ে রয়েছে কামান্না ও আবাইপুরের হত্যাযজ্ঞসহ আরো বেশ কিছু নারকীয় ঘটনা। কামান্না যুদ্ধ এসবের সর্বাধিক গুরুত্ববাহী।
১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর ভোর রাতে কামান্না গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞে নিহত হন ২৭ জন বীর মুক্তিসেনা। আর আহত হন অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী। চৌকশ ও সাহসী ৪২ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষন শেষে ভারত থেকে কামান্নার মাধব চন্দ্রের বাড়িতে আশ্রয় নেন। মাগুরার শ্রীপুর, মাগুরা সদর ও শৈলকুপা উপজেলায় এঁদের বাড়ি। শৈলকুপার মালিথিয়া গ্রামের আলমগীর ও শ্রীপুরের আবুবকর ছিল এদের মধ্যে প্রধান।
মুক্তিযোদ্ধাদের এ উপস্থিতির সংবাদ স্থানীয় রাজাকারদের তৎপরতায় দ্রুত চলে যায় ঝিনাইদহ ও মাগুরার আর্মি ক্যাম্পে। হানাদারদরা ঝিনাইদহ ও মাগুরা থেকে ভারী অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রাতের অন্ধকারে পৌছে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খুব কাছাকাছি। দুরে তাদের গাড়িগুলো রেখে পায়ে হেটে এগিয়ে এসে রাতের অন্ধকারে হঠাৎ করেই হানাদাররা মুক্তিসেনাদের আশ্রয়স্থল লক্ষ্য করে মর্টারের ভারী গোলা ছোড়ে। আকস্মিক এ আত্রমণে পথক্লান্ত মুক্তিসেনারা হকচকিয়ে যায়। সামলে নিয়ে শক্ত হাতে তুলে নেয় হাতিয়ার। প্রতিআক্রমণ চালায়। কিন্তু আকর্ষিক আক্রমণে মুক্তিসেনারা তাদের সামনে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। ঘরের মাঝে আটকা পড়ে যায় অনেকে। পাকসেনারা তাঁদেরকে গুলি ছুঁড়ে হত্যা হরে। তারা গ্রামটিকেও তছনছ করে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ফণিভূষণ কুন্ডু ও রঙ্গবিবিকে গুলি করে হত্যা করে। তাদের এলোপাতাড়ি গুলিতে অনেক গ্রামবাসীও আহত হয়। হানাদাররা স্থান ত্যাগ করার পর পরই আশে পাশের গ্রাম থেকে হাজার হাজার লোক এসে জড়ো হয়। ঘরের মেঝেয়, উঠানে, বাড়ির আঙিনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল মুক্তিসেনাদের ক্ষত বিক্ষত নিষ্পাপ দেহ। রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল বাড়িটির সারা আঙিনা। সববগুলো লাশ জড়ো করা হয় এক জায়গায়। কামান্না হাই স্কুলের খেলার মাঠের উত্তর পাশে কুমার নদ ঘেঁষে ৬ জন করে দুটি ও ৫ জন করে তিনটি গণকবরে এ ২৭ বীর শহীদের কবর ঘেঁষে নির্মিত হয়েছে একটি শহীদ মিনার, যার গায়ে লেখা রয়েছে ২৭ শহীদের নামঃ
১।মোমিন ২। কাদের ৩। শহীদুল ৪।ছলেমান ৫। রাজ্জাক ৬। ওয়াহেদ ৭। রিয়াদ ৮। আলমগীর ৯। মতলেব ১০। আলী হোসেন ১১। শরীফুল ১২। আলীমুজ্জামান ১৩। আনিছুর ১৪। তাজুল ১৫। মনিরতজ্জামান ১৬। মমিন ১৭। রাজ্জাক ১৮। কওছার ১৯। ছলেমান ২০। আজিজ ২১। আবকর ২২। সেলিম ২৩। হোসেন ২৪। রাশেদ ২৫। গোলজার ২৬। অধীর ২৭। গৌর।
যেভাবে যেতে হবে ঃ ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৩৫-৩৮ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে গাড়াগঞ্জ । এরপর গাড়াগঞ্জ হতে বাসযোগে শৈলকুপা যেতে হবে। শৈলকুপা হতে বাস/ বেবীযোগে হাটফাজিণপুর যেতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হেটে / ভ্যানযোগে কামান্না শহীদ মাজারে যেতে হবে।
আবাসন ব্যবস্থা ঃ আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
দত্তনগর কৃষি খামারঃ
এখানেএশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বীজ উৎপাদন খামার আছে। জমির পরিমান তিন হাজার একর।
যেভাবে যেতে হবে ঃ ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৪৮-৫০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়কপথে কালীগঞ্জ । এরপর কালীগঞ্জ হতে বাসযোগে জীবণনগর যেতে হবে। সেখান থেকে বাসযোগে দত্ত্বনগর যেতে হবে।
আবাসন ব্যবস্থা ঃ আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
সিরাজ সাঁই এর মাজার, হরিশপুরঃ
মরমী সাধক লালন শাহ্, পাঞ্জুশাহ, সিরাজ সাঁই, বিপ্লবী বাঘা যতীনের মত মহান ব্যক্তিত্বকে ধারণ করে ধন্য হরিণাকুন্ডুর মাটি। এখানে রয়েছে প্রাচীন হিন্দু ও বৌদ্ধ স্থাপনার নিদর্শন। আছে অত্যাচারী ইংরেজদের নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ।
যেভাবে যেতে হবে ঃ ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৩৮-৪০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে হরিণাকুন্ডু । এরপর হরিণাকুন্ডু হতে বাসযোগে /গ্রামবাংলা আটো ভ্যান / নছিমন যোগে / ভ্যানযোগে সাতব্রিজে যেতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হেটে / ভ্যান যোগে মাজারে যেতে হবে। হরিণাকুন্ডু হতে সিরাজ সাঁই এর মাজারের দুরত্ব ৮ কিঃমিঃ।
আবাসন ব্যবস্থা ঃ আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
জোড়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ঃ
বিদ্যালয়টি ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা করেন ইংরেজ নীলকুঠিয়াল উইলিয়াম জেমস শেরিফ। ১৯১৮ সাথে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী স্বীকৃতি দেয়। বিদ্যালয়টির ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা ৭০০ জন। নিজস্ব জমির পরিমাণ ৬৭১ শতক।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৪০-৪২ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে হরিণাকুন্ডু । এরপর হরিণাকুন্ডু হতে বাসযোগে /গ্রামবাংলা আটো ভ্যান / নছিমন যোগে/ভ্যানযোগে জোড়াদহ যেতে হবে। হরিণাকুন্ডু হতে জোড়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুরত্ব ১০ কিঃমিঃ।
আবাসন ব্যবস্থা:আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
ঢোলসমুদ্র দীঘিঃ
ঝিনাইদহে রাজা মুকুট রায় নামে এক প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন। রাজা মুকুট রায়ের অনেক সৈন্য সামন্ত ছিল। কথিত আছে তিনি ১৬ হল্কা হাতি, ২০ হল্কা অশ্ব ও ২,২০০ কোড়দার না নিয়ে বের হতেন না। খাঁন জাহান আলী (রাঃ) এর মত তিনিও জলাশয় প্রতিষ্ঠায় যত্নবান ছিলেন। রাস্তা নির্মাণ ও জলাশয় খনন করতে করতে তিনি অগ্রসর হতেন। ঝিনাইদহে তাঁর এমনি একটি অমর কীর্তি ঐতিহ্যবাহী পাগলা কানাই ইউনিয়নের ঢোল সমুদ্র দীঘি। প্রায় ৫২ বিঘা জমির উপর অবস্থিত এ দীঘি ঝিনাইদহের সর্ববৃহৎ দীঘি। দীঘিটি শতাব্দী পরিক্রমায় পানীয় জলের অফুরন্ত আধার হিসেবে কাজ করেছে এবং একজন পরাক্রমশালী রাজার রাজকীয় স্থাপনা সমূহের একটি স্মৃতি হিসেবে আজও টিকে আছে।
ঝিনাইদহ শহরের পূর্বে বিজয়পুর ছিল রাজা মুকুট রায়ের রাজধানী। বাড়ীবাথানে রাজার প্রকান্ড গোশালা ছিল। বহু সংখ্যক গাভী ছিল বলে লোকে তাকে বৃন্দাবনের নন্দ মহারাজ বলত। বেড়বাড়ীতে রাজার উদ্যান ছিল। রাজার কোড়াদার সৈন্যরা যেখানে বসবাস করত সে স্থানের নাম কোড়াপাড়া হয়েছে। এ সমস্ত স্থান এখনও বর্তমান। রাজা মুকুট রায়ের রাজবাটির কিছুই অবশিষ্ট নেই। তবে ঢোল সমুদ্র দীঘির দক্ষিণে ক্ষয়ে যাওয়া ইটের স্তুপে কোন ঐতিহাসিক নিদর্শন লুক্কায়িত থাকতে পারে বলে পুরাতাত্ত্বিকেরা মনে করেন। ঢোল সমুদ্র দীঘিটি ঝিনাইদহের একটি আকর্ষণীয় বিনোদন স্থান।
ঢোল সমুদ্র দীঘি খননের পেছনে একটি লোকশ্রততি আছে-রাজা মুকুট রায়ের রাজত্বকালে একবার জলকষ্ট দেখা দেয়। বিল, বাওড়, নদী দীঘি- কোথাও জল ছিল না। অনন্যোপায় হয়ে রাজা দীঘি খননের সিদ্ধান্ত নেন। অগণিত লোকের দিন রাত পরিশ্রমে দীঘি গভীর হতে গভীরতর এবং চতুর্দিকে প্রশস্ত হতে লাগল। কিস্তু পুকুরে জল উঠল না। হতাশ রাজা একদিন স্বপ্ন দেখলেন যে, রাণী যদি পুকুরে নেমে পূজা দেন, তবে পুকুরে জল উঠবে। এ কথা জেনে প্রজাহিতৈষী রাণী পূজার নৈবেদ্য নিয়ে পুকুরে নামলেন। রাণী পুকুরের তলদেশে উপস্থি হয়ে ইষ্টদেবতাকে নিবেদন করলেন পূজার অর্ঘ্য। জল ওঠা শুরু হলো। প্রার্থনা পূর্ণ হওয়ায় রাণী উপরে উঠতে শুরু করলেন। সহসা প্রবলবেগে জলরাশি উথ্থিত হল। জল দেখে উদ্বেলিত পাড়ের সহস্র প্রজার উৎসব-আনন্দ আর বাদ্য-বাজনার মধ্যে অলক্ষ্যে রাণী অথৈ জলরাশির গভীরে তলিয়ে গেলেন। গভীর শোকে শোকাভিভূত প্রজাগণ রাজাকে রাজপুরীতে যেয়ে এই দুঃসংবাদ জানালেন। সেই স্মৃতি স্মরণে আজও লোকজন এ দীঘিকে ঢোল সমুদ্র দীঘি বলে জানে।
রাজা মুকুট রায় বাড়ীবাথানের যুদ্ধে নবাবের ও পাঠান সৈন্যের মিলিত শক্তির কাছে পরাজিত হন। নবাব সৈন্যরা রাজা মুকুট রায়কে বন্দী করে রাজধানীতে নিয়ে যায়। রাজার পরিচয় জেনে নবাব তাঁকে মুক্তি দেন। কিন্তু রাজার পরিবারের সদস্যগণ রাজার অনিবার্য পরিণতি, মৃত্যু ভেবে সবাই আত্মহত্যা করেন। তাঁর কন্যার আত্মহত্যার স্থানকে কন্যাদহ দু’রাণীর আত্মহত্যার স্থানকে দুসতীনের, রাজ জ্যোতিষীর আত্মহত্যার স্থানকে দৈবজ্ঞদহ নামে অভিহিত করা হয়েছে, যা আজও এ নামেই পরিচিত।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৩ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ শহরের যে কোন স্থান হতে অটো রিকসা / ভ্যান / রিকসাযোগে পাগলাকানাই মোড় হয়ে ঢোল সমুদ্র দীঘিতে যেতে হবে।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা নেই। তবে ঝিনাইদহ শহরে আবাসিক হোটেল আছে।
মল্লিকপুরের এশিয়ার বৃহত্তম বট গাছঃ
এশিয়ার বৃহত্তম এবং প্রাচীন বটগাছটি কালীগঞ্জ শহর হতে ১০ কিঃমিঃ পূর্বে মালিয়াট ইউনিয়নের বেথুলী মৌজায় অবসিহত। বটগাছটি বর্তমানে ১১ একর জমি জুড়ে বিদ্যমান। সুইতলা-মল্লিকপুরের বটগাছ নামে এটি বিশেষভাবে পরিচিত।
গাছটি দুশো বছরের পুরনো। রাস্তার ধারে ডাল-পাতায় পরিপূর্ণ গাছটি জনবিরল স্থানে পথিকের বিশ্রামের আশ্রয়স্থল। বটগাছটি একের পর এক ঝুরি নামিয়ে বিরাট আকার ধারণ করেছে। এ স্থানটির মালিক ছিলেন রায় গ্রামের জোতদার নগেন সেনের স্ত্রী শৈলবালা সেন। পরবর্তীতে এটা খাস হয়ে যায়। পূর্বে তিথি অনুযায়ী এখানে পাঠা বলি হতো। এ গাছের নিচে একটি স্থায়ী কালীপূজার আসন স্থাপিত হয়েছে। এখনও মানুষ এখানে মানত করে। বিশ্বব্যাপী গাছটির পরিচিতি ঘটে ১৯৮২ সালে বি,বি,সির সংবাদ ভাষ্যের মাধ্যমে গাছটি এ এলাকার আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছে। বহু দেশী-বিদেশী পর্যটক এখানে আসে। তবে বটগাছটির প্রতি নেই কোন সচেতন পরিচর্যা। অযত্ন, অবহেলা ও অত্যাচারে বিলীন হতে চলেছে গাছটি। প্রতিনিয়ত কাটা হচ্ছে এর ডালপালা।
বট গাছটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করেও পর্যটকদের সুবিধার্থে এখানে ১৯৯০ সালে সরকারি অনুদানে নির্মিত হয়েছে একটি রেষ্ট হাউজ। এই ঐতিহ্যকে গুরুত্বসহকারে কাজে লাগালে এ অঞ্চল হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র। এই বিস্তৃত বটগাছের দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাখীর কল-কাকলি মুখরিত শীতল পরিবেশ বিমুগ্ধ চিত্তকে বিস্ময় ও আনন্দে অভিভূত করে।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২৮-৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে কালীগঞ্জ যেতে হবে। এরপর কালীগঞ্জ হতে ( পূর্ব দিকে) টেম্পুযোগে / ভ্যানযোগে মল্লিকপুরে যেতে হবে। কালীগঞ্জ হতে মল্লিকপুরের দুরত্ব ১০ কিঃমিঃ।
সংগ্রহ: বাংলাদেশ প্রতিদিন।
মুল সুত্র: http://www.amaderprotidin.com/index.php?option=com_content&view=article&id=7638:2010-09-10-12-34-41&catid=173:2010-08-01-17-25-04&Itemid=124
1 comment:
মহেশপুরের সুন্দরপুরে একটি জমিদার বাড়ি আছে।
Post a Comment