Wednesday, October 6, 2010

ডাকটিকিটেও বৈষম্য!

ব্রিটিশ-ভারতের ২০টি পৃথক মূল্যমানের ডাকটিকিটে 'PAKISTAN' শব্দটি পুনর্মুদ্রণ করে ডাকটিকিটের সূচনা হয়েছিল পাকিস্তানে। এরপর ১৯৪৮ সালের ৯ জুলাই পাকিস্তান ডাক বিভাগ নিজস্ব ডিজাইনে ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
তখন ডাকটিকিটের মুদ্রণ, সরবরাহ ও ডাকসংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড ছিল পশ্চিম পাকিস্তানকেন্দ্রিক। বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার পূর্ব পাকিস্তান সে সময়ে ডাকটিকিটেও উপেক্ষিত ছিল। পাকিস্তানের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত মোট ৩০১টি ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়। তার মধ্যে ২০৭টি ডাকটিকিটেই উপজীব্য ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি বিষয়। পক্ষান্তরে মাত্র ৩০টি ডাকটিকিটে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান উপজীব্য হয়েছে!
পাকিস্তানি ডাকটিকিটে পূর্ব পাকিস্তানের অস্তিত্ব প্রথম টের পাওয়া যায় ১৮ থেকে ২০ নম্বর ডাকটিকিটে। এর আগ পর্যন্ত দেশটির কোনো ডাকটিকিটে পূর্ব পাকিস্তানি কোনো বিষয়ই আনা হয়নি। স্বাধীনতা-পূর্ব ডাকটিকিটে বৈষম্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে ১৯৫৫ সালে মানচিত্রের ওপর প্রকাশিত তিনটি ডাকটিকিটের মাধ্যমে।
দেড় আনা, দুই আনা ও ১২ আনা মূল্যের সবুজ, বাদামি ও লাল রঙের এই তিনটি ডাকটিকিটে পাকিস্তানের মানচিত্র হিসেবে কেবল পশ্চিম পাকিস্তানকে দেখানো হয়। তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে এর পরের বছর পাকিস্তান ডাক বিভাগ আরও তিনটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্রকে উপজীব্য করে। তখন থেকেই ডাকটিকিটে বাংলা হরফের ব্যবহার শুরু হয়। তাতে অবশ্য বৈষম্য খুব একটা ঘোচেনি। প্রতিটি ডাকটিকিটেই ছিল উর্দু বর্ণমালার আধিক্য। সাধারণত কেবল ‘পাকিস্তান’ শব্দটি বাংলায় লেখা হতো।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল থেকে শুরু করে আইয়ুব খানের মতো পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিত্ব নিয়ে ডাকটিকিট করেছে পাকিস্তান ডাক বিভাগ। এর পাশে পূর্ব পাকিস্তান থেকে একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে ডাকটিকিটে ঠাঁই পেয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম।
ছকটিতে নির্বাচিত কিছু বিষয়ে প্রকাশিত ডাকটিকিটে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে বৈষম্যের ব্যাপারটি পরিষ্কার বোঝা যায়। 
 
নিজাম বিশ্বাস | তারিখ: ২৫-১২-২০০৯

No comments: