হাওলিন পেশায় একজন সেবিকা। আর দশজন সেবিকার মতো নিয়ম করে হাসপাতালে যেতেন। কিন্তু বাড়ি ফিরে মুখ কালো করে শূন্য ঘরে ঘুরে বেড়াতে হতো তাঁকে। তাঁর প্রিয়জনেরা সব আক্ষরিক অর্থে যুদ্ধে লিপ্ত। হাওলিনের স্বামী এবং তিন ছেলে আছে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে। স্বামী আর দুই ছেলে আফগানিস্তানে যুদ্ধ করছে। এমনকি ভাইয়ের কাছে বেড়াতে যাবেন, সে উপায়ও নেই। তিনিও সেনাবাহিনীতে। তবু এত দিন একটা সান্ত্বনা ছিল। ছেলে মার্টিন দেশেই ছিল। কিন্তু মামা, বাবা আর ভাইদের পথ ধরে মার্টিনকেও এবার যেতে হলো আফগানিস্তানে।
যুদ্ধে পৃথিবীর কী লাভ-ক্ষতি হচ্ছে, তা হাওলিনের খোঁজ নেওয়ার কথা নয়। তাঁর কাছে এই যুদ্ধ মানে স্বামী ও ভাইয়ের পাশাপাশি এখন ছেলের জীবন নিয়েও শঙ্কা!
আর কত এই শঙ্কা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায়? আর সহ্য করলেন না হাওলিন। এবার আফগানিস্তানে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু আফগানিস্তানে গেলেই তো আর প্রিয়জনদের কাছে থাকা চলবে না। তারা যে ফ্রন্টে যুদ্ধ করছে। হাওলিনও তাই ফ্রন্টে চললেন—যুদ্ধক্ষেত্রে!
কিন্তু হাওলিন সেবিকা হয়ে কীভাবে যুদ্ধে যাবেন। একটা উপায় ছিল। হাওলিন চাকরি করতেন লন্ডনের ফিল্ড হাসপাতালে। এটি আসলে সেনাবাহিনীরই একটি হাসপাতাল। এখানে হাওলিন ছিলেন মেজর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। ফলে এদিক থেকে তাঁর আফগানিস্তান যাওয়ার একটা যুক্তি ছিল। যুক্তিটা তিনি তুলে ধরলেন বড় কর্তাদের সামনে।
কিন্তু যুক্তিতে কি আর সব কাজ সহজে হয়?
তিনি লেগে থাকলেন। নানা জায়গায় দেনদরবার করতে থাকলেন। শেষমেশ কর্তৃপক্ষ রাজি হলো হাওলিনকে আফগানিস্তান পাঠাতে।
হাওলিনের জায়গা হলো ক্যাম্প বোস্টন হাসপাতালে। ছেলে মার্টিনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মাত্র ৫০ মাইল দূরে। যুদ্ধের ময়দানে তিনি হবেন সেবিকা। আহত সৈনিকদের সেবা দেবেন। আর খোঁজ রাখবেন ছেলের। কিন্তু দুশ্চিন্তা মনে হয় কমবে না। হাওলিন বলছেন, ‘সেই চিন্তা ঠিকই করতে হবে, বাড়িতে বসে যেটা করতাম। তবু এত কাছে থাকায় অন্তত সান্ত্বনা পাব, ও একা নয়!’
এই মাসে ইয়র্কে একটা প্রশিক্ষণের জন্য রওনা দিচ্ছেন হাওলিন। এখানে যুদ্ধাস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নিতে হবে তাঁকে। প্রস্তুত হতে হবে ক্ষুব্ধ রণাঙ্গনের জন্য। আর অধীর প্রতীক্ষা চলবে ছেলের কাছে যাওয়ার জন্য।
ওদিকে ছেলেও প্রহর গোনা শুরু করে দিয়েছে। এখন অপেক্ষা ক্ষুব্ধ এক রণাঙ্গনে মা-পুত্রের সাক্ষাতের।
পবন চক্রবর্তী তারিখ: ০৬-১১-২০০৯
No comments:
Post a Comment