কে আর যত্ন করে সাজিয়ে রাখে যাত্রার বই? আর কেউ না রাখুক, একজন রাখেন। সেই একজন হলেন শশাঙ্ক বিশ্বাস। শখের বশে জমাতে জমাতে আজ প্রায় দুই হাজার যাত্রাপালার মালিক হয়ে গেছেন খুলনার শশাঙ্ক বিশ্বাস।
শহর থেকে দূরে অজপাড়াগাঁয়ে কান্দা মধ্যপাড়া গ্রামে শশাঙ্ক বিশ্বাসের বাড়ি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এই মানুষটি একজন শৌখিন যাত্রা অভিনেতা। ওই যাত্রা অভিনয় করতে গিয়েই শুরু এই সংগ্রহের। ২৫ বছর আগে দুশমনের দুনিয়া নামের একটি যাত্রাপালায় অভিনয় করতে গিয়ে তাঁর পালা সংগ্রহের আগ্রহ জাগে। তখনকার দিনে যাত্রার বই জোগাড় করাটা সহজ ছিল না। কলকাতা থেকে বই আনাতে হতো অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। শশাঙ্ক বিশ্বাসের মাথায় ঢুকল, নিজেই একটা লাইব্রেরি করলে কেমন হয়?
সেই ভাবনা থেকে গড়ে উঠল লাইব্রেরি। শশাঙ্ক বিশ্বাসের লাইব্রেরিতে জমা হলো প্রাচীন পালাকার কৃষ্ণকমল গোস্বামীর (১৮১০—১৮৮৮) স্বপ্নবিলাস, রাইউন্মাদিনী, বিচিত্রবিলাস, কালীয় দমন থেকে শুরু করে চয়েপাগলার পালার দুর্লভ সব পাণ্ডুলিপি।
কিন্তু এসব পালা সংগ্রহশালার ওজন বাড়ালেও এখন আর কাজে তো লাগে না। কাজে লাগে তাঁর সংগৃহীত আধুনিক পালার বইগুলো। আর এ জন্যই শশাঙ্ক বিশ্বাসের বেশি কদর।
আধুনিক পালা সংগ্রহেও শশাঙ্ক বিশ্বাসের জুড়ি মেলা ভার। যাত্রার সংস্কারক ব্রজেন্দ্র কুমার দে (১৯০৭—১৯৭৬) থেকে শুরু করে জালাল উদ্দিন পর্যন্ত—কার বই চাই? সব হাত বাড়ালেই পাবেন এখানে। পূজাপার্বণ, বিশেষ দিবস কিংবা কোনো স্কুল-কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠান যাত্রাপালা নামানোর সিদ্ধান্ত নিলেই ছুটতে হয় শশাঙ্কের সংগ্রহশালায়। তিনিও এতে খুব আমোদ পান। অন্যদের বই ধার দেওয়াটাকে সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষকতা মনে করেন।
এ তো গেল যাত্রার পৃষ্ঠপোষকতা করার গল্প। একই সঙ্গে শশাঙ্ক তৈরি করছেন যাত্রাপ্রেমী কিছু লোক। তাঁর সংগ্রহশালায় তৈরি করেছেন একটি পাঠকক্ষ। যেখানে পাড়ার অথবা দূর গাঁয়ের যে কেউ এসে যাত্রাপালা পাঠ করতে পারেন।
সকাল-সন্ধ্যা দুবার পাঠকক্ষ খুলে দেওয়া হয়। তিনি নিজে এবং মাঝেমধ্যে তাঁর স্ত্রী তৃপ্তি বিশ্বাস পাঠকদের তদারক করেন। আর অন্য কোনো পাঠক না এলেও সমস্যা নেই। একজন নিষ্ঠ পাঠক তো আছেনই। সময় সুযোগ পেলেই পরম কৌতূহলভরে আবারও খুলে বসেন হারিয়ে যাওয়া দিনের কোনো পালা। নিজের সংগ্রহে নিজেই মোহিত হন পাঠক শশাঙ্ক বিশ্বাস।
এমএ মজিদ | তারিখ: ২৩-১০-২০০৯
No comments:
Post a Comment