Monday, October 11, 2010

সাপের খামারি রহিম (বিচিত্রিতা)

সাপ নিয়ে খেলা করছেন রহিম


কোনো বিষাক্ত সাপের কামড়েই নাকি তাঁর কিছু হয় না। সামান্য মিনিট পাঁচেক বিষের জ্বালা থাকে। তারপর বিষ শরীরের সঙ্গে মিশে গেলে আর জ্বালাপোড়াও থাকে না!
কথাগুলো সত্যি কি মিথ্যে সে বিচারে কাজ নেই। তবে সাপের সঙ্গেই নিত্য বসবাসরত আব্দুর রহিম এমন দাবিই করে থাকেন।
নাটোরের লালপুর উপজেলার চকশোভ মুন্সিপাড়া এলাকার রহিম যে সাপদের বন্ধু এটা তাঁর বাড়িতে গেলেই বোঝা যায়। খুব ছোটবেলা থেকেই সাপ তাঁর নিত্যসঙ্গী।
মো. সেন্টু মিয়ার এই ছেলেটি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেত, তখনো তার সঙ্গে সাপ থাকত। মাঝেমধ্যে জামা-প্যান্টের পকেটে সাপ দেখে বন্ধুবান্ধব ভয় পেত। শিক্ষকেরাও মারধর করতেন।
বাবা-মা সাপের কারণে ভয় পেয়ে ছেলেকে মারধর করতেন। এমনকি সাপ ছাড়ার জন্য তাকে আগুনের সেঁকা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে খাওয়াদাওয়া। কিছুতেই কাজ হয়নি।
বাড়ির পাশে করিমপুর উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে কাজ শুরু করে রহিম। কিন্তু বন্ধু সাপেরা থেকেই গেছে।
কীভাবে সাপুড়ে হলেন, জানতে চাইলে রহিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই চলাফেরা-ওঠাবসা-শোয়া, সব সময় আমার সঙ্গে সাপ থাকত। আমি কখনো সাপকে ভয় পাইনি। কিন্তু বাবা-মা আমার কাছে সাপ দেখে ভয় পেত। আশপাশে কাউকে আসতে দেখলেই সাপ লুকিয়ে ফেলতাম। এই করতে করতে সাপের ওপর কেমন ভালোবাসা জন্মে গেছে।’
রহিম বছরখানেক হলো তাঁর নিজ হাতে ধরা সাপ নিয়ে একটি খামার করেছেন। তাঁর খামারে কেউটে, দারাস, পঙ্খিরাজ, বাসুয়া, সাদাগোমা, পদ্মগোমা, কালকুলিন, মাইছে আলাদ, বিঁষঝুড়ি গোড়াস ও পাহাড়ি আন্ধা অজগরসহ ১৮ প্রজাতির সাপ রয়েছে। খামারে বড় সাপ আছে ৬৭টি। বাচ্চা ১৪৪টি। একজোড়া অজগর সাপ সে চট্টগ্রামের সমুদ্রসৈকতের কেওড়া বন থেকে ধরে এনেছিল। একটি মরে গেছে।
এ বছর তাঁর খামারে পদ্মগোখরা ৪২টি ডিম দিয়েছে। তাঁর ভাষায় কালকুলিন ভীষণ বিষাক্ত সাপ। এই সাপ কামড়ালে কেউ বাঁচে না। তাঁর খামারে সব সাপেরই বিষদাঁত রয়েছে।
রহিমের খামারে সাপগুলোর জন্য রয়েছে সুব্যবস্থা। সুন্দর সুন্দর বিভিন্ন আকৃতির মাটির হাঁড়িতে এবং কাঠের বাক্সে তারা বন্দী থাকে। সাপকে খাওয়ানোর কাজ রহিম নিজ হাতেই করেন। খাবার হিসেবে সপ্তাহে দুই দিন দেওয়া হয় ব্যাঙ, পাখি ও মাছসহ নানা খাদ্য। রহিম বলেন, ‘আমি সাপদের রাতে খাবার দেই। কারণ সাপ অন্ধকারে ভালো খায়। সূর্যের আলোতে এরা খেতে পারে না।’
রহিমের মা রাজিয়া বেগম বললেন, ‘রহিম ছোটবেলা থেকেই একটু অন্য রকম। ছোটবেলায় সে দুধ খেত না। ওকে নিয়ে খুব ভয় পেতাম। স্কুলে ভর্তি করলেও সে ঠিকমতো স্কুলে যেত না, পড়াশুনাও করত না। অথচ পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করত।’
সাপের ব্যাপারেই ছেলেকে নিয়ে অভিযোগ রাজিয়া বেগমের, ‘ছোটবেলা থেকেই রহিমের সাথে সাপ দেখতাম। প্রথম প্রথম ভয় পেলেও ধীরে ধীরে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি।’
এখন রহিম বাড়ির দুই রুমে একটিতে সাপ পোষেন। তাঁর কাছে নানা জাতের সাপ আছে। সাপগুলো ছেড়ে দিলে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। কাউকে কামড়ায় না।
প্রতিটি সাপের আলাদা নাম আছে। রহিম নাম ধরে ডাকলে এরা নাকি কাছে আসে!
সাপের টানে এখন সাপুড়েই হয়ে গেছেন আব্দুর রহিম। 
 
আঞ্জুমান আরা | তারিখ: ২৫-০৯-২০০৯

No comments: