Wednesday, October 6, 2010

বাংলায় মিসরীয় ডুমুর

বাংলায় মিসরীয় ডুমুর বাংলায় মিসরীয় ডুমুর

‘ডুমুরের ফুল’ না দেখলেও ডুমুর ফল আমরা সবাই দেখেছি। গ্রামের বন-বাদাড়ে দেখেছি। এবার সেই ডুমুর দেখতেই ছুটতে হলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জার্মপ্লাজম সেন্টারের’ জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা সামছুল আলম আমাদের বন-বাদাড়ের ডুমুর নয়, নতুন জাতের সুস্বাদু এক ডুমুরের চাষ শুরু করেছেন।
জুলাই মাসের মাঝামাঝি সেই নতুন ডুমুর দেখতে গেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাগানে। আসলেই তো! ছোট ছোট গাছেই লালচে রঙের ফল ধরেছে। আমাদের চেনা ডুমুরের সঙ্গে এর তো কোনো মিলই নেই। পাতার আকৃতি ও গড়ন দেখে মনেই হলো না যে এগুলো ডুমুর। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাদু এই ডুমুরের আবির্ভাব নতুন হলেও পৃথিবীর নানা দেশে স্বাদু ডুমুর কিন্তু বেশ আগে থেকেই দাপট দেখাচ্ছে।
আমাদের চেনা ডুমুর খাবার হিসেবে অনেক জায়গাতেই পরিচিত। তবে খেতে ততটা সুস্বাদু নয় বলে মানুষের চেয়ে সেগুলো পাখ-পাখালিরই প্রিয়। এত দিন তাই বন-বাদাড়ে জন্মানো ডুমুরের কপালে ঠিক ফলের মর্যাদা জোটেনি। কিন্তু এবার বোধহয় ধারণাটা বদলাতেই হচ্ছে। আবিষ্কৃত হচ্ছে ডুমুরের সুস্বাদু জাত। আবার অনেক পুরোনো স্বাদু ডুমুরেরও খোঁজ মিলছে।
এসব ডুমুর বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে বনেদি ফলের মর্যাদাও পাচ্ছে! বিশেষত ফাইকাস ক্যারিকা (Ficus carica) জাতের ডুমুর এখন মজাদার ফল হিসেবে সারা বিশ্বে খ্যাতি পেয়ে গেছে। ফলের ঝুড়িতেও আম-আপেলের পাশেই এখন তার অবস্থান। শুধু উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় দেশগুলোতেই নয়, আফগানিস্তান থেকে গ্রিস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এসব ডুমুরের দাপট।
ইরান, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ আরব উপত্যকা, ইতালি ও বলকান উপত্যকায় স্বাভাবিকভাবেই জন্মাচ্ছে এসব স্বাদু ডুমুর। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দেও আরব উপত্যকায়ও এ ধরনের স্বাদু ডুমুর চাষ হতো বলে জানা যায়। চাষের প্রাচীনত্বে এটি খেজুরের সঙ্গে তুলনীয়। পরবর্তী সময়ে আমেরিকা আবিষ্কারের পর এগুলো সেখানেও ছড়িয়ে পড়ে। ইদানীং আমেরিকার নিউইয়র্কসহ অন্যান্য অঙ্গরাজ্যেও চোখে পড়ছে এই ফল।
এ রকমই এক জাতের সুস্বাদু ডুমুর এসে গেছে আমাদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাথা ছড়ানো, নাতিদীর্ঘ, পত্রমোচি বৃক্ষ; ছয় থেকে আট মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। পাতা ডালের চারপাশে একান্তরভাবে বিন্যস্ত, তিন থেকে পাঁচ লতিযুক্ত, চওড়া ডিম্বাকৃতি বা প্রায় গোলাকার ১০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা, লতির কিনার ঢেউ-খেলানো, শিরাবিন্যাস করতলাকৃতির, ওপর খসখসে, নিচ রোমশ, বোঁটা পাঁচ সেন্টিমিটার লম্বা। পুষ্পাধার বা গুটি একক, কাক্ষিক, পেয়ারার গড়ন, ছয় সেন্টিমিটার পর্যন্ত চওড়া হতে পারে। কালটিভার বা আবাদিত জাত অনুযায়ী সবুজ-হলুদ, বেগুনি বা কালচে রঙের হতে পারে।
ফল তাজা কিংবা শুকনো উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। তাজা ফল রসাল, মিষ্টি ও অত্যন্ত সুস্বাদু। বোতল বা টিনে সংরক্ষিত ফলও মিষ্টি ও পুষ্টিকর। পাকা ফল দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ফল প্রোটিন, শর্করা, ক্যালসিয়াম ও লোহাসমৃদ্ধ। ভিটামিন ‘এ’ আছে প্রচুর পরিমাণে; ‘সি’ অতি সামান্য। সারা পৃথিবীতে প্রায় আটটি আবাদিত জাত চাষ হতে দেখা যায়।
শুধু খেতে ভালো তা-ই না; এসব ডুমুরের ঔষধি গুণ নিয়েও অনেক প্রশংসা আছে। এই ডুমুর ফল কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়, ফলের প্রলেপ ফোঁড়া ও চর্মরোগ সারায়। পাতা মূত্রবর্ধক এবং কৃমি ও ব্যথা কমায়।
সব মিলিয়ে ডুমুরের ফুল নিয়ে যতই রসিকতা করুন, ডুমুরকে এবার পাত্তা দিতেই হচ্ছে। 
 
 মোকারম হোসেন | তারিখ: ১৫-০১-২০১০

No comments: