মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্তবর্তী লালগোলার পাহাড়পুর আমবাগান ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধা ছিল প্রায় ৭০ জন। সীমান্তের এপার রাজশাহীর গোদাগাড়ীর চাপাল মসজিদে ছিল রাজাকারদের ক্যাম্প। সেখানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অবস্থান করত। টহল জিপ নিয়ে রাত ১০টার দিকে তারা অপারেশনে নামতো। ফলে ভারত থেকে নদীপথে পদ্মা পেরিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে যুদ্ধ পরিচালনা করতেন। ওই যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে মুক্তিযোদ্ধা নূর হামিম রিজভী বলেন, কোনো হতাহত ছাড়াই আমরা কসবা অপারেশনে সফল হই। আজও স্পষ্ট মনে রয়েছে, একদিন ৭ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী আমাকে ডেকে পাঠান। আমি মেজর গিয়াসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তিনি আমাকে কসবা অপারেশন সম্পর্কে বর্ণনা দিয়ে বলেন, হানাদার বাহিনীর টহল জিপকে অ্যাম্বুসে ফেলে খতম করতে পারলে ওরা ভয় পেয়ে যাবে। ওদের নিয়মিত নির্বিঘ্ন চলাচল বন্ধ করতে হবে। তার নির্দেশ পেয়ে আমরা অপারেশন করি। পদ্মাপাড়ের প্রাইমারি স্কুলে আমাদের সাহায্যের জন্য একজন গাইড বসে থাকতেন। ধারে কাছে হানাদার বাহিনী থাকলে তার হাতের হারিকেন উল্টিয়ে নিভিয়ে দিতেন। আমরা সতর্ক হয়ে যেতাম।
সেদিন ছিল ৭ নভেম্বর। রাত ৯টায় কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে পূর্ব-নির্ধারিত কসবা আখ সেন্টারে পজিশন নেন রিজভী। সঙ্গে ২টি এলএমজি, ১টি টু ইঞ্চি মর্টার, ৫টি ফায়ার ও থার্টিসিক্স গ্রেনেড, ১টা এসএমজি, ১০টা এসএলআর ও প্রয়োজনীয় অ্যামুনেশন্স। রাস্তার মোড়ে একটা ঝোঁপ দেখে সেখানে বেঁধে দেয়া হলো সাদা কাপড়। জিপ বা লরির লাইটের আলো সাদা কাপড়ের ওপর পড়লে হানাদার বাহিনীর আগমন নিশ্চিত করা যাবে। কিন্তু নিজেরা হানাদারদের নজরে আসবে না। ফিরে এসে অ্যাম্বুস সম্পর্কে সহযোদ্ধাদের ব্রিফ করেন, ঝটপট লাইন ফরমেশনে অ্যাম্বুস পার্টিকে সাজিয়ে নেন। পূর্ব-পশ্চিম প্রান্তে দু'টি এলএমজি, মাঝে ১০টি এসএলআর, দেড়শ' গজ পেছনে একটি বাবলা গাছের গোড়ায় বসানো হলো টু ইঞ্চি মর্টার। রাত ১১টা দিকে হানাদার বাহিনীর একটি খোলা জিপ আসে। ওপরে বসানো মেশিনগান। সতর্ক দাঁড়িয়ে আছে হানাদার সেনা। জিপ নির্ধারিত স্পটে পেঁৗছলে গর্জে ওঠে নূর হামিম রিজভীর এসএমজি। থেমে থাকেনি সহযোদ্ধাদের হাতিয়ার। গুলিতে পাকিস্তানি বাহিনীর জিপটি মুহূর্তের মধ্যে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। অপারেশন শেষে পাকিস্তান সেনাদের অস্ত্র, বিধ্বস্ত ওয়ারলেস সেট ও মেশিন গানের নল খুলে নেন অপারেশনে অংশ নেয়া সহযোদ্ধারা। অপারেশন শেষে তারা যান নিজেদের ক্যাম্পে। এভাবেই শেষ হয় কসবা অপারেশন। নূর হামিম রিজভী জানান, রাজশাহী কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী থাকা অবস্থায় শুরু হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আমাকে আলোড়িত করে ব্যাপকভাবে। যুদ্ধে অংশ নিতে আমি ট্রেনিংয়ে যাওয়ার মনস্থির করলাম আপনজনদের বারণ সত্ত্বেও; কিন্তু আমার মা বললেন, 'যারা নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন ও গণহত্যা চালাতে কুণ্ঠাবোধ করে না, তাদের শায়েস্তা-বিতাড়িত না করে, অপকর্ম নীরবে সহ্য করতে আমার ছেলে ঘরে বসে থাকতে পারে না।' মায়ের এ কথা ও নির্দেশনাই আমাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে সাহস জুগিয়েছে। তিনি বললেন, ব্যক্তিগতভাবে কিছু পাওয়ার আশায় মুক্তিযুদ্ধ করিনি। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ পেয়েছি, মানচিত্র পেয়েছি। জাতি আমাকে বীরপ্রতীক উপাধি দিয়েছে, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছি, বাংলায় কথা বলতে পারছি। এর চেয়ে বড় পাওয়ার আর কি আছে। তবে আমার এখন একটাই চাওয়া_ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, তাদের শাস্তি।
দুই ছেলে বাঁধন, প্রত্যয় ও স্ত্রী ইলাকে নিয়ে রাজশাহী নগরীর ফুদকীপাড়ার পৈতৃক নিবাসে বসবাস করেন নূর হামিম রিজভী।
শ. ম সাজু, রাজশাহী
সেদিন ছিল ৭ নভেম্বর। রাত ৯টায় কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে পূর্ব-নির্ধারিত কসবা আখ সেন্টারে পজিশন নেন রিজভী। সঙ্গে ২টি এলএমজি, ১টি টু ইঞ্চি মর্টার, ৫টি ফায়ার ও থার্টিসিক্স গ্রেনেড, ১টা এসএমজি, ১০টা এসএলআর ও প্রয়োজনীয় অ্যামুনেশন্স। রাস্তার মোড়ে একটা ঝোঁপ দেখে সেখানে বেঁধে দেয়া হলো সাদা কাপড়। জিপ বা লরির লাইটের আলো সাদা কাপড়ের ওপর পড়লে হানাদার বাহিনীর আগমন নিশ্চিত করা যাবে। কিন্তু নিজেরা হানাদারদের নজরে আসবে না। ফিরে এসে অ্যাম্বুস সম্পর্কে সহযোদ্ধাদের ব্রিফ করেন, ঝটপট লাইন ফরমেশনে অ্যাম্বুস পার্টিকে সাজিয়ে নেন। পূর্ব-পশ্চিম প্রান্তে দু'টি এলএমজি, মাঝে ১০টি এসএলআর, দেড়শ' গজ পেছনে একটি বাবলা গাছের গোড়ায় বসানো হলো টু ইঞ্চি মর্টার। রাত ১১টা দিকে হানাদার বাহিনীর একটি খোলা জিপ আসে। ওপরে বসানো মেশিনগান। সতর্ক দাঁড়িয়ে আছে হানাদার সেনা। জিপ নির্ধারিত স্পটে পেঁৗছলে গর্জে ওঠে নূর হামিম রিজভীর এসএমজি। থেমে থাকেনি সহযোদ্ধাদের হাতিয়ার। গুলিতে পাকিস্তানি বাহিনীর জিপটি মুহূর্তের মধ্যে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। অপারেশন শেষে পাকিস্তান সেনাদের অস্ত্র, বিধ্বস্ত ওয়ারলেস সেট ও মেশিন গানের নল খুলে নেন অপারেশনে অংশ নেয়া সহযোদ্ধারা। অপারেশন শেষে তারা যান নিজেদের ক্যাম্পে। এভাবেই শেষ হয় কসবা অপারেশন। নূর হামিম রিজভী জানান, রাজশাহী কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী থাকা অবস্থায় শুরু হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আমাকে আলোড়িত করে ব্যাপকভাবে। যুদ্ধে অংশ নিতে আমি ট্রেনিংয়ে যাওয়ার মনস্থির করলাম আপনজনদের বারণ সত্ত্বেও; কিন্তু আমার মা বললেন, 'যারা নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন ও গণহত্যা চালাতে কুণ্ঠাবোধ করে না, তাদের শায়েস্তা-বিতাড়িত না করে, অপকর্ম নীরবে সহ্য করতে আমার ছেলে ঘরে বসে থাকতে পারে না।' মায়ের এ কথা ও নির্দেশনাই আমাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে সাহস জুগিয়েছে। তিনি বললেন, ব্যক্তিগতভাবে কিছু পাওয়ার আশায় মুক্তিযুদ্ধ করিনি। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ পেয়েছি, মানচিত্র পেয়েছি। জাতি আমাকে বীরপ্রতীক উপাধি দিয়েছে, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছি, বাংলায় কথা বলতে পারছি। এর চেয়ে বড় পাওয়ার আর কি আছে। তবে আমার এখন একটাই চাওয়া_ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, তাদের শাস্তি।
দুই ছেলে বাঁধন, প্রত্যয় ও স্ত্রী ইলাকে নিয়ে রাজশাহী নগরীর ফুদকীপাড়ার পৈতৃক নিবাসে বসবাস করেন নূর হামিম রিজভী।
শ. ম সাজু, রাজশাহী
মুলসুত্র: http://www.bangladesh-pratidin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=12-12-2010&type=gold&data=Mobile&pub_no=226&cat_id=3&menu_id=16&news_type_id=1&index=5
No comments:
Post a Comment