Tuesday, December 14, 2010

লালপুরের মৃৎশিল্প


প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, পুঁজির অভাব, প্লাস্টিক-এলুমিনিয়াম ও স্টিলের তৈজসপত্রের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে লালপুরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। ফলে মৃৎশিল্পী পরিবারে নেমে এসেছে দুর্দিন।

উপজেলার মাধবপুর, বিলমাড়ীয়া, ওয়ালিয়া, পালিদহ ও গৌরীপুর পালপাড়ায় শতাধিক পরিবার মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত। ১০ বছর আগেও এদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার। উপকরণের অভাব ও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে মৃৎশিল্পীরা পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা। কারখানায় তৈরি কাচ, প্লাস্টিক, স্টিল, মেলামাইন, সিরামিক, টিন, এলুমিনিয়ামের জিনিসপত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না মৃৎশিল্প। কমে যাচ্ছে মাটির তৈরি দ্রব্য সামগ্রীর চাহিদা।

প্রবীণ মৃৎশিল্পীদের মতে, ব্রিটিশ আমল থেকে লালপুরের মৃৎশিল্প ছিল সমৃদ্ধ ও সমাদৃত। এসব এলাকার কুমারদের তৈরি হাঁড়ি, পাতিল, বদনা, কলস, গামলা, ঝাঁজর ও রকমারি পিঠা তৈরির ছাঁচের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি সামগ্রীর কদর ছিল সর্বত্র। এছাড়া কারুকার্যখচিত শো-পিস, পুতুল, খেলনা, দেব-দেবীর মূর্তিসহ বিভিন্ন মৃৎদ্রব্য ছিল মেলা ও প্রদর্শনীর প্রধান আকর্ষণ। মৃৎশিল্পে ব্যবহার্য সামগ্রীর দুষ্প্রাপ্যতা ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাজারমূল্য কুমাররা পাচ্ছে না। মৃৎসামগ্রী তৈরিতে প্রয়োজন হয় উপযুক্ত মাটি, বালি এবং পোড়ানোর জন্য তুষ ও খড়জাতীয় জ্বালানি। আগে এঁটেল মাটি ও বালি বিনামূল্যে সংগ্রহ করা যেত। আর জ্বালানির জন্য খড়, কাঠের গুঁড়া, ধানের তুষ, আখের শুকনা পাতা বিনামূল্যে পাওয়া যেত। এসব অপরিহার্য উৎপাদন সামগ্রী ও কাঁচামাল উচ্চমূল্য দিয়েও এখন পাওয়া যায়। এছাড়া ব্যবহার্য রং ও অন্যান্য সামগ্রীর দামও বেড়েছে। মৃৎশিল্পী পরিবারের পুরুষ-মহিলা ও শিশুরা সারাদিন তৈরি করে মাটির জিনিস। বিশেষভাবে তৈরি চুলার সাহায্যে তা পোড়ানো হয়। মাধবপুর পালপাড়ার অঞ্জলি রানী বলেন, আমরা আজ অসহায় হয়ে পড়েছি। আমাদের বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতে মৌসুম অনুযায়ী কিছু জিনিস তৈরি করে কোনোরকমে দিন কাটাচ্ছি। ঐতিহ্যমণ্ডিত লালপুরের কুটিরশিল্পটির অস্তিত্ব রক্ষা করা প্রয়োজন। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ও সহযোগিতা দরকার। অভিজ্ঞমহল মনে করেন, এখনই পদক্ষেপ না নিলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে লালপুরের মৃৎশিল্প।

আবদুল বারী, লালপুর (নাটোর)
মুলসুত্র: http://www.bangladesh-pratidin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=12-12-2010&type=gold&data=Income&pub_no=226&cat_id=3&menu_id=16&news_type_id=1&index=4

No comments: