ঢাকায় স্থানীয়ভাবে পাটের নৌকা তৈরির একটি দৃশ্য
এক চকলেট-বাবুর কীর্তি। এই গ্রীষ্মেই তিনি প্রায় সোয়া এক টন চিনি আর চকলেট মিলিয়ে একটা গোটা নৌকা বানিয়ে ফেলেছেন। প্রথম নৌকাটার কপালে খারাবি ছিল। জলে নামতেই সেটা আহ্লাদে আটখানা হয়ে ডুবে মরে। দ্বিতীয়বার বানানো নৌকাটা শুরুতে টালমাটাল করলেও ধকল সামলে নেয়। টানা এক ঘণ্টা পানিতে সগৌরবে ভেসে থেকে ‘চকলেট নাও ২’ উপাধি লাভ করে। চকলেট-বাবু এখন চকলেটের প্রমোদতরী বানানোর ফন্দি আঁটছেন। ছয় থেকে আট টন লোভনীয় চকলেট খরচ করে তিনি এই নৌকা ভাসাবেন ২০১২ সালে।
কুমড়া-তরী
যাঁরা নৌকাবাইচ খুব ভালোবাসেন, এ খবরটা তাঁদের জন্য। জার্মানিতে এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো ‘আন্তর্জাতিক কুমড়া-বাইচ প্রতিযোগিতা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে! কুমড়া দিয়ে বানানো নৌকায় পাল্লা দেওয়ার চল শুরু হয়েছে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে। আমেরিকার মেইনে এটা কোনো বিরল দৃশ্য নয়। পানির মধ্যে হঠাৎ দেখা যায়, দৈত্য সাইজের বিরাট কুমড়া দিয়ে বানানো নৌকা ভাসছে।
বরফ আর ভাঙের নৌকা
বিবিসি সায়েন্সের জনপ্রিয় শো ‘ব্যাং গোজ দ্য থিওরি’ একটা মহৎ পরিকল্পনা করেছে। তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটা পরিকল্পনা পরীক্ষা করে দেখবে। বরফ দিয়ে জাহাজ তৈরির পরীক্ষা। খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে আয়োজন শুরু করল তারা। তিন সপ্তাহ ধরে এক হাজার ৩০০ গ্যালন পানি আর প্রচুর ভাং জমিয়ে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটা নৌকা তৈরি করল। কিন্তু হায় ঈশ্বর! নৌকা ছাড়ার মোটে এক ঘণ্টার মধ্যেই বেরসিক গণেশের মতো সেটা উল্টে গেল। পরীক্ষা শেষে সিদ্ধান্ত টানছেন এই শোয়ের ডিরেক্টর: ‘থিওরি কাজ করেছে, কিন্তু নির্ভরযোগ্য নয়।’ হুম, অন্তত সূর্যালোকে এই নৌকার ওপর ভরসা রাখা চলে না।
বোতল-জাহাজ
এলাহী কারবার! মুখ ফসকে কথাটা বেরিয়ে যেতে বাধ্য। বাতিল হয়ে যাওয়া সাড়ে ১২ হাজার প্লাস্টিকের বোতল জড়ো করে বানানো পেল্লাই এক জাহাজ। এই জলযানের সমুদ্রযাত্রার যে বয়স, তার তুলনায় অন্যান্য অদ্ভুত নৌকাগুলোর বয়স হাঁটুসমান। টানা ১৩০ দিন ধরে পানির ওপর ভাসছে এই বোতল-যান। এই বোট বানানোর পেছনের উদ্দেশ্যটি মহৎ। প্লাস্টিকের বাতিল আবর্জনা জমিয়ে টেক্সাস শহরের সমান সাইজের বিরাট এক ভাসমান আস্তাকুঁড়ের প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এই অভিযান শুরু হয়েছে। এই দুঃসাহসী অভিযান শেষ হয়েছে আট হাজার নটিক্যাল মাইল পথ পাড়ি দেওয়ার পর সিডনি শহরে গিয়ে।
মদের ছিপি পানিতে ভাসে
জন পোলক ছিলেন ওয়াশিংটনের এক সামান্য চাকুরে। জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে তিনি হিজরত করে ক্যাপিটাল হিলে চলে আসেন। এখানে এসেই তাঁর উপলব্ধি হয়, তাঁর জীবনের স্বপ্ন কী হওয়া উচিত, সেটা তিনি বুঝে ফেলেছেন। তাঁকে মদের ছিপি দিয়ে নৌকা বানাতে হবে। তিনি শ্রমের আনন্দে অভিভূত হয়ে জোগাড় করে ফেলেন এক লাখ ৬৫ হাজার ৩২১টি মদের বোতলের ছিপি। এসব কাজে লাগিয়ে তিনি নয়ন ভরে দেখার মতো ২৭ ফুট দীর্ঘ এক নৌকা তৈরি করেন। ২০০২ সালে এই নৌকায় চেপেই তিনি ইউলিসিসের সলিলযাত্রা শুরু করে দেন। ১৭ দিনের এক মহাকাব্যিক অভিযান শেষে তিনি পর্তুগালের দৌর নদীতে নোঙর করেন।
মালাই-লাঠির নৌকা
দেড় কোটি মালাইয়ের বাতিল লাঠি দিয়ে একটি ৫০ ফুট লম্বা জাহাজ বানানো হয়েছে। ২০০৮ সালে এই মালাই নৌকা চালিয়েই নেদারল্যান্ড থেকে লন্ডন পর্যন্ত পৌঁছানো হয়েছে। বিশেষত অত্যন্ত ভাগ্যবান পাঁচ হাজার শিশুর খাওয়া আইসক্রিম থেকে জোগাড় হওয়া লাঠি এই নৌকা তৈরির কাজে ব্যবহূত হয়েছে।
কার্টনের নৌকা
লেক কেলুনে প্রতিবছর একটা জম্পেশ মেলা বসে। টানা ১০ দিনের এই মেলার একটি প্রধান আকর্ষণ হলো ঐতিহ্যবাহী কার্টনের নৌকাবাইচ। স্থানীয় নৌকাওলারা নিজেরাই নকশা করে দুধের কার্টনের নৌকা তৈরি করে এবং বাইচ করে। এই নৌকা বানানোর শর্ত হলো, কাঠের চিকন কাঠামো থাকবে, কিন্তু কার্টন দিয়েই নৌকা ভাসাতে হবে।
সোনালি আঁশের নাও
ছোটবেলায় পড়েছি, পাট বাংলাদেশের সোনালি আঁশ। পাট আমাদের অনেক উপকারে লাগে। তবে সব উপকার আমরা ভেবে বের করতে পারিনি। এ ক্ষেত্রে ফরাসিরা আমাদের মিত্রপক্ষ। তারা বাংলার গৌরব সোনালি আঁশ কাজে লাগিয়ে যে নৌকা বানিয়েছে, একমুখে তার সুখ্যাতি করা অসম্ভব। এই নৌকা ডুবে মরতে অক্ষম এবং পরিবেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে যাত্রা করে এক দীর্ঘ সফর শেষে এই নৌকাযোগে এক ফরাসি পৌঁছে গেছেন প্যারিসে।
মুলসুত্র: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-12-17/news/116325
No comments:
Post a Comment