সোনা [স্বর্ণ] নামক ধাতুটির প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরন্তন। মানুষের ব্যবহার্য ধাতুর মধ্যে স্বর্ণ সবার উপরে। কিন্তু কেন সোনার এত আদর? এর ঔজ্জ্বল্য, দ্যুতি কিংবা চমৎকার রং? না শুধু তাই নয়_ সোনা এমন এক ধাতু যার কোনো ক্ষয় নেই। লোহায় মরিচা ধরে, তামা বা পিতলে তাম্রমল জমা হয়। কিন্তু সোনা রাসায়নিকভাবে একবারে নিষ্ক্রিয়। তাই অন্যান্য অপদ্রব্যের সঙ্গে মিশে থাকলেও সোনার ঔজ্জ্বল্য কখনই নষ্ট হয় না। যেনতেন অ্যাসিডেও সোনাকে গলানো যায় না। সোনা গলানোর জন্য চাই অ্যাকোয়া রেজিয়া। সোনা সবচেয়ে সহনীয় (গধষষবধনষব) ধাতু। অতি ক্ষুদ্র স্বর্ণখণ্ডকেও পিটিয়ে ধাতু পাত তৈরি করা যায়। এক আউন্স সোনা পিটিয়ে দীর্ঘ তার তৈরি করা সম্ভব। স্বর্ণের এই গুণের জন্য অলঙ্কারের উপাদান হিসেবে এর জুড়ি নেই। শুধু কি অলঙ্কার, মুদ্রার উপকরণ হিসেবে সোনা আজও অদ্বিতীয়। একসময় তো ছিল স্বর্ণমুদ্রার যুগ। আজও কাগুজে মুদ্রা যা দেখছি তা এক ধরনের ঋণপত্র, পর্যাপ্ত সোনার মজুদ রেখেই তবে সরকারকে সে মূল্যমানের নোট বাজারে ছাড়তে হয়। তাই সোনার প্রতি মানুষের আকর্ষণ দুর্নিবার।
যুগে যুগে সোনার প্রতি লোভে পড়েছে রাজা-রানীসহ নয়, সাধারণ মানুষ। সোনার খোঁজে মানুষ হানা দিয়েছে নতুন নতুন ভূখণ্ডে। এক সময় ইউরোপের অভিযাত্রীরা কল্পনার স্বর্ণনগরী এল ডোরেডোর সন্ধানে চষে বেড়িয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার অরণ্য পর্বত। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকে ইউরোপ-আমেরিকায় বেশ ক'বার স্বর্ণাভিযান সংঘটিত হয়েছে। একজন দু'জন নয়, বিপুলসংখ্যক মানুষ যখন সোনার খোঁজে বেরিয়ে পড়েন তখন সেটা হুলুস্থূল কাণ্ডই বটে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এরকম গোল্ডরাশ দেখা গিয়েছে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায়। সাধারণত সোনার খনির আশপাশে নদীর তলদেশে দু'এক টুকরা সোনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। এটা পাথুরে গুহা থেকে ঝরনাধারার বয়ে আনা সোনা। এ ধরনের সোনাকে বলা হয় প্লেসার গোল্ড। দু'একজন লোক হয়তো এভাবে সোনার খোঁজ পেল। তারপর লোক মুখে রটে যায় সোনার কথা। এক সময় পুরো লোকালয় ভেঙে পড়ে সোনার সন্ধানে। আসলে চটজলদি ধনী হতে কে না চায়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে আমেরিকায় বেশ ক'বার গোল্ডরাশের ঘটনা ঘটেছে। ১৮৪০, ৫০, ৬০, ও '৮০-এর দশকে ঘটে যাওয়া গোল্ডরাশ আজও মানুষকে ভাবাবেগে আপ্লুত করে। তবে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে ১৮৪৮ সালের গোল্ডরাশের ঘটনা। ১৮৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে জেমস মার্শাল নামের এক ছুতার তার বন্ধু জন সাটারকে নিয়ে নতুন একটি করাত কল খুলবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। মাটি খোঁড়ার সময় তারা কিছু সোনার সন্ধান পান সাক্রামেন্টো নদীর তীরে। জন সাটার অন্য শ্রমিকদের ঘটনাটি গোপন রাখার জন্য কঠোর নির্দেশ দেন। কিন্তু যে করেই হোক সোনার ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়। আশপাশ থেকে মানুষ ছুটে আসতে থাকে সোনার সন্ধানে। স্যামুয়েল ব্রানান নামে সানফ্রান্সিসকোর এক বণিক জানতে পারেন ঘটনাটা। কারণ সাটারের বাড়ির কাছে তার একটি দোকান ছিল। তিনি সানফ্রান্সিসকো শহরে এসে সোনার খবর প্রকাশ করে দেন। কয়েক মাসের মধ্যে সানফ্রান্সিসকো ভুতুড়ে শহরে পরিণত হলো। শহরে পুরুষ মানুষ আর কেউ থাকল না। দলে দলে লোক হাজির হলো সাক্রামেন্টো নদীর তীরে। উদ্দেশ্য একটাই সোনা চাই, সোনা। ১৮৪৮ সালের গ্রীষ্মে পুরো পশ্চিম উপকূলে সোনার খবর রটে গেল, মেক্সিকো সীমান্ত থেকে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত। সেখান থেকে লোক আসতে শুরু করল। এদিকে মিসিসিপি নদী পার হয়ে পূর্ব উপকূলে খবর পেঁৗছতে সময় লাগল না। পত্রিকার লোকজনও কম জান না। তারাও খবর ছেপে দিল সেসব মানুষের যারা সোনা পেয়ে এক রাতের মধ্যে বড় লোক হয়ে গেছে। এদিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জেমস পোক এক বাণীতে স্বীকার করলেন-ক্যালিফোর্নিয়ায় সোনার খনি রয়েছে। সে বছর শীতের মধ্যেই জমে উঠল সোনার মেলা। উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম সবদিক থেকেই সোনার জোগান স্বাভাবিকভাবে কমে আসছিল। অন্যদিকে পেশাদার খনি মালিকরা আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে অল্প সময়ে অধিক সোনা উত্তোলন করছিল। ফলে সোনার দাম কমে গেল। শৌখিন স্বর্ণশিকারিরা একসময় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ল। অনেকেই আশানুরূপ সোনা না পেয়ে ফিরে গেল দেশে। এভাবে আস্তে আস্তে সোনার হুজুগ মিলিয়ে গেল। স্বর্ণাভিযানের ফল সবার জন্য সমান হয়নি। কেউ সোনা পেয়ে ধনকুবের হয়েছে। কেউ আবার স্বর্ণশিকারিদের সঙ্গে ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ যা পেয়েছে তা খুবই সামান্য। কেউ একেবারে রিক্ত হস্তে বাড়ি ফিরেছে, কারও কারও বাড়ি ফেরার সৌভাগ্য হয়নি, পথেই মারা পড়েছে।
এতকিছুর পরও গোল্ডরাশের আরও ঘটনা ঘটেছে। ১৮৫৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এরকম সোনার হুজুগ শুরু হয় যা ভিক্টোরিয়া গোল্ডেনরাশ নামে পরিচিত। এছাড়াও আমেরিকার পূর্ব প্রান্তে ও মধ্য আমেরিকার কলোরাডোতে বেশ ক'বার স্বর্ণাভিযান সংঘটিত হয়েছে। গোল্ডরাশের ঘটনাগুলোকে হয়তো হুজুগ কিংবা গণউন্মাদনা বলে আখ্যায়িত করা যায়, কিন্তু এর মধ্যেই ঘটে গেছে এক নীরব বিপ্লব। বহুলোকের আগমন ও যাতায়াতের ফলে তৈরি হয়েছে নতুন নতুন জনপদ, রাস্তাঘাট। ফ্যাশনের একটি ছোট্ট আবিষ্কার গোল্ডরাশের সঙ্গে জড়িত। আজকের তরুণদের অন্যতম জনপ্রিয় পরিধেয় জিন্স। প্রথম জিন্সটি যিনি তৈরি করেন তিনি হচ্ছেন লেডিস্ট্রাউস, সোনার সন্ধানে এই জার্মান ভদ্রলোকটিও ক্যালিফোর্নিয়ায় এসেছিলেন। বারবার প্যান্ট ছিঁড়ে যাওয়ায় তিনি দর্জিকে বললেন, তাঁবুর কাপড় দিয়েই প্যান্ট বানিয়ে দিতে। খানিকটা ইতস্তত করে দর্জি তাতেই রাজি হলেন। তবে বোতামের বদলে নাট-বল্টু দিয়েই হলো প্যান্ট। তার এই প্যান্ট বর্তমানে জিন্সের আকৃতি পেয়েছে। লেডিস্ট্রাউস স্বপ্নেও ভাবেননি তার প্রয়োজনের পোশাক এতটা জনপ্রিয়তা পাবে। লিভাইস ব্যান্ড আজও বাজারে সচল। প্রতিটি লিভাইস জিন্সের লোগোতে লেখা থাকে '১৮৫০ সাল থেকে' (ঝরহপব-১৮৫০), সময়টা গোল্ডরাশের। সত্যি বহু ঘটনা-দুর্ঘটনার জন্ম দেওয়া গোল্ডরাশের ইতিহাসের এক আশ্চর্য সময়।
যুগে যুগে সোনার প্রতি লোভে পড়েছে রাজা-রানীসহ নয়, সাধারণ মানুষ। সোনার খোঁজে মানুষ হানা দিয়েছে নতুন নতুন ভূখণ্ডে। এক সময় ইউরোপের অভিযাত্রীরা কল্পনার স্বর্ণনগরী এল ডোরেডোর সন্ধানে চষে বেড়িয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার অরণ্য পর্বত। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকে ইউরোপ-আমেরিকায় বেশ ক'বার স্বর্ণাভিযান সংঘটিত হয়েছে। একজন দু'জন নয়, বিপুলসংখ্যক মানুষ যখন সোনার খোঁজে বেরিয়ে পড়েন তখন সেটা হুলুস্থূল কাণ্ডই বটে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এরকম গোল্ডরাশ দেখা গিয়েছে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায়। সাধারণত সোনার খনির আশপাশে নদীর তলদেশে দু'এক টুকরা সোনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। এটা পাথুরে গুহা থেকে ঝরনাধারার বয়ে আনা সোনা। এ ধরনের সোনাকে বলা হয় প্লেসার গোল্ড। দু'একজন লোক হয়তো এভাবে সোনার খোঁজ পেল। তারপর লোক মুখে রটে যায় সোনার কথা। এক সময় পুরো লোকালয় ভেঙে পড়ে সোনার সন্ধানে। আসলে চটজলদি ধনী হতে কে না চায়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে আমেরিকায় বেশ ক'বার গোল্ডরাশের ঘটনা ঘটেছে। ১৮৪০, ৫০, ৬০, ও '৮০-এর দশকে ঘটে যাওয়া গোল্ডরাশ আজও মানুষকে ভাবাবেগে আপ্লুত করে। তবে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে ১৮৪৮ সালের গোল্ডরাশের ঘটনা। ১৮৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে জেমস মার্শাল নামের এক ছুতার তার বন্ধু জন সাটারকে নিয়ে নতুন একটি করাত কল খুলবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। মাটি খোঁড়ার সময় তারা কিছু সোনার সন্ধান পান সাক্রামেন্টো নদীর তীরে। জন সাটার অন্য শ্রমিকদের ঘটনাটি গোপন রাখার জন্য কঠোর নির্দেশ দেন। কিন্তু যে করেই হোক সোনার ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়। আশপাশ থেকে মানুষ ছুটে আসতে থাকে সোনার সন্ধানে। স্যামুয়েল ব্রানান নামে সানফ্রান্সিসকোর এক বণিক জানতে পারেন ঘটনাটা। কারণ সাটারের বাড়ির কাছে তার একটি দোকান ছিল। তিনি সানফ্রান্সিসকো শহরে এসে সোনার খবর প্রকাশ করে দেন। কয়েক মাসের মধ্যে সানফ্রান্সিসকো ভুতুড়ে শহরে পরিণত হলো। শহরে পুরুষ মানুষ আর কেউ থাকল না। দলে দলে লোক হাজির হলো সাক্রামেন্টো নদীর তীরে। উদ্দেশ্য একটাই সোনা চাই, সোনা। ১৮৪৮ সালের গ্রীষ্মে পুরো পশ্চিম উপকূলে সোনার খবর রটে গেল, মেক্সিকো সীমান্ত থেকে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত। সেখান থেকে লোক আসতে শুরু করল। এদিকে মিসিসিপি নদী পার হয়ে পূর্ব উপকূলে খবর পেঁৗছতে সময় লাগল না। পত্রিকার লোকজনও কম জান না। তারাও খবর ছেপে দিল সেসব মানুষের যারা সোনা পেয়ে এক রাতের মধ্যে বড় লোক হয়ে গেছে। এদিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জেমস পোক এক বাণীতে স্বীকার করলেন-ক্যালিফোর্নিয়ায় সোনার খনি রয়েছে। সে বছর শীতের মধ্যেই জমে উঠল সোনার মেলা। উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম সবদিক থেকেই সোনার জোগান স্বাভাবিকভাবে কমে আসছিল। অন্যদিকে পেশাদার খনি মালিকরা আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে অল্প সময়ে অধিক সোনা উত্তোলন করছিল। ফলে সোনার দাম কমে গেল। শৌখিন স্বর্ণশিকারিরা একসময় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ল। অনেকেই আশানুরূপ সোনা না পেয়ে ফিরে গেল দেশে। এভাবে আস্তে আস্তে সোনার হুজুগ মিলিয়ে গেল। স্বর্ণাভিযানের ফল সবার জন্য সমান হয়নি। কেউ সোনা পেয়ে ধনকুবের হয়েছে। কেউ আবার স্বর্ণশিকারিদের সঙ্গে ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ যা পেয়েছে তা খুবই সামান্য। কেউ একেবারে রিক্ত হস্তে বাড়ি ফিরেছে, কারও কারও বাড়ি ফেরার সৌভাগ্য হয়নি, পথেই মারা পড়েছে।
এতকিছুর পরও গোল্ডরাশের আরও ঘটনা ঘটেছে। ১৮৫৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এরকম সোনার হুজুগ শুরু হয় যা ভিক্টোরিয়া গোল্ডেনরাশ নামে পরিচিত। এছাড়াও আমেরিকার পূর্ব প্রান্তে ও মধ্য আমেরিকার কলোরাডোতে বেশ ক'বার স্বর্ণাভিযান সংঘটিত হয়েছে। গোল্ডরাশের ঘটনাগুলোকে হয়তো হুজুগ কিংবা গণউন্মাদনা বলে আখ্যায়িত করা যায়, কিন্তু এর মধ্যেই ঘটে গেছে এক নীরব বিপ্লব। বহুলোকের আগমন ও যাতায়াতের ফলে তৈরি হয়েছে নতুন নতুন জনপদ, রাস্তাঘাট। ফ্যাশনের একটি ছোট্ট আবিষ্কার গোল্ডরাশের সঙ্গে জড়িত। আজকের তরুণদের অন্যতম জনপ্রিয় পরিধেয় জিন্স। প্রথম জিন্সটি যিনি তৈরি করেন তিনি হচ্ছেন লেডিস্ট্রাউস, সোনার সন্ধানে এই জার্মান ভদ্রলোকটিও ক্যালিফোর্নিয়ায় এসেছিলেন। বারবার প্যান্ট ছিঁড়ে যাওয়ায় তিনি দর্জিকে বললেন, তাঁবুর কাপড় দিয়েই প্যান্ট বানিয়ে দিতে। খানিকটা ইতস্তত করে দর্জি তাতেই রাজি হলেন। তবে বোতামের বদলে নাট-বল্টু দিয়েই হলো প্যান্ট। তার এই প্যান্ট বর্তমানে জিন্সের আকৃতি পেয়েছে। লেডিস্ট্রাউস স্বপ্নেও ভাবেননি তার প্রয়োজনের পোশাক এতটা জনপ্রিয়তা পাবে। লিভাইস ব্যান্ড আজও বাজারে সচল। প্রতিটি লিভাইস জিন্সের লোগোতে লেখা থাকে '১৮৫০ সাল থেকে' (ঝরহপব-১৮৫০), সময়টা গোল্ডরাশের। সত্যি বহু ঘটনা-দুর্ঘটনার জন্ম দেওয়া গোল্ডরাশের ইতিহাসের এক আশ্চর্য সময়।
মুল সুত্র: http://www.bangladesh-pratidin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=08-12-2010&type=gold&data=Career&pub_no=222&cat_id=3&menu_id=16&news_type_id=1&index=0
No comments:
Post a Comment