২১ ডিসেম্বর ২০১০ [৭ পৌষ ১৪১৭ বঙ্গাব্দ] মরমী কবি দেওয়ান হাছন রাজার জন্মদিন। ১২৬১ বাংলা সনের (১৮৫৪ খ্রি.) এই তারিখে সুনামগঞ্জের লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পৈতৃক বাড়ি সিলেট জেলার বিশ্বনাথের রামপাশায়। পিতা জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী, মাতা মোসাম্মৎ হুরমত জাহান বেগম। হাছন রাজা ছিলেন জমিদার বংশের সন্তান। তার পূর্বপুরুষ ছিল হিন্দু রাজবংশের উত্তরাধিকারী। সিলেটের রামপাশা ও ভাটি অঞ্চল নামে খ্যাত সুনামগঞ্জের লক্ষ্মণশ্রী বিস্তৃত ছিল তাদের রাজত্বকাল। কিন্তু হাছন রাজা রাজবংশে জন্মগ্রহণ করেও সম্পূর্ণ বিপরীত ছিলেন চলনে-বলনে। রাজকীয় আড়ম্বরে চলাফেরা ছিল তার খুবই অপছন্দনীয় বিষয়। তিনি প্রাচীন ঋষিদের মতো শব্দ নিয়ে খেলা করতেন। সে কারণে তাকে 'রাজর্ষি' বলা হতো। ঋষিদের শব্দব্রহ্ম ছিল মূলত ঈশ্বর ও অতীন্দ্রিয় জগৎ নিয়ে তেমনিইভাবে হাছন রাজাও সেরকম ভাবনায় থাকতেন। হাছন রাজার ভাবনা ছিল মূলত মানুষ, জীবন ও জগৎ নিয়ে। তার গান বা কবিতার ছত্রে ছত্রে এ দর্শনই ফুটে উঠে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই দর্শনকে উপলব্ধি করে আন্তর্জাতিক পরিসরে বিভিন্ন বক্তৃতায় হাছন রাজার কথা তুলে ধরতেন। হাছন রাজার দর্শন সুফিবাদ প্রভাবিত ছিল। তিনি যখন বলেন, 'মম আঁখি হইতে পয়দা হইলো আসমান জমিন।' সেটা স্মরণ করিয়ে দেয় সুফি দার্শনিকের 'আইনাল হক'কে।
কথিত আছে, তিনি চিশতিয়া তরিকার এক আধ্যাত্মিক গুরুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যকে প্রেম-ধর্মের বন্যায় ভাসিয়ে নিয়েছিলেন। হাছন রাজার প্রেমসত্তার অনুভূতি ছিল প্রবল। এছাড়া তিনি আকৃষ্ট ছিলেন বাংলার বাউল ধারায়। নিজেই নিজের গানে বলেছেন, 'বাউলা কে বানাইল রে,
হাছন রাজারে বাউলা কে বানাইল রে...।'
হাছন রাজা বাউলদের মতো জীবনযাপন করেননি। তিনি সংসারী ছিলেন। বৈষয়িক জ্ঞানও যে তার খুব কম ছিল, তাও বলা যাবে না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঠিকই বাউলসত্তাকে লালন করতেন। সহজ-সরল অনাড়ম্বর চলাফেরায় বাউলদের নৈকট্য অনুভব করতেন। সামন্তবাদী পারিবারিক কাঠামোয় বাউলদের জীবনপদ্ধতি অনুসরণ করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। হাছন রাজার দৌহিত্র দার্শনিক জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ বলেন, বাউল-ভাবনা থাকলেও হাছন রাজা বাউল ছিলেন না। বাউল দর্শন যে তাকে প্রভাবিত করেছিল, সেটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। একবার এক অতিথি হাছন রাজাকে ঘর কোথায় জিজ্ঞাসা করলে তিনি কবরস্থান দেখিয়ে বলেন, এটাই আমার ঘর। তিনি এলাকার বাইরে সফরে থাকা অবস্থায় তার ইংরেজ কর্মচারী পাকাঘর বানানোর চেষ্টা চালায়। ফিরে এসে এটা দেখে তিনি তৎক্ষণাৎ ভেঙে ফেলার হুকুম দেন এবং ইংরেজ কর্মচারিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। এগুলো পর্যালোচনা করলে হাছন রাজার পাকা ঘরে নিরাসক্তির কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। হাছন রাজার জীবনদর্শন আলোচনা করলে একই সঙ্গে একজন রাজা এবং একজন ঋষিকে খুঁজে পাওয়া যায়। হাছন রাজা ২২ অগ্রহায়ণ ১৩২৯ বাংলায় (১৯২২ সাল) মৃত্যুবরণ করেন।
কথিত আছে, তিনি চিশতিয়া তরিকার এক আধ্যাত্মিক গুরুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যকে প্রেম-ধর্মের বন্যায় ভাসিয়ে নিয়েছিলেন। হাছন রাজার প্রেমসত্তার অনুভূতি ছিল প্রবল। এছাড়া তিনি আকৃষ্ট ছিলেন বাংলার বাউল ধারায়। নিজেই নিজের গানে বলেছেন, 'বাউলা কে বানাইল রে,
হাছন রাজারে বাউলা কে বানাইল রে...।'
হাছন রাজা বাউলদের মতো জীবনযাপন করেননি। তিনি সংসারী ছিলেন। বৈষয়িক জ্ঞানও যে তার খুব কম ছিল, তাও বলা যাবে না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঠিকই বাউলসত্তাকে লালন করতেন। সহজ-সরল অনাড়ম্বর চলাফেরায় বাউলদের নৈকট্য অনুভব করতেন। সামন্তবাদী পারিবারিক কাঠামোয় বাউলদের জীবনপদ্ধতি অনুসরণ করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। হাছন রাজার দৌহিত্র দার্শনিক জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ বলেন, বাউল-ভাবনা থাকলেও হাছন রাজা বাউল ছিলেন না। বাউল দর্শন যে তাকে প্রভাবিত করেছিল, সেটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। একবার এক অতিথি হাছন রাজাকে ঘর কোথায় জিজ্ঞাসা করলে তিনি কবরস্থান দেখিয়ে বলেন, এটাই আমার ঘর। তিনি এলাকার বাইরে সফরে থাকা অবস্থায় তার ইংরেজ কর্মচারী পাকাঘর বানানোর চেষ্টা চালায়। ফিরে এসে এটা দেখে তিনি তৎক্ষণাৎ ভেঙে ফেলার হুকুম দেন এবং ইংরেজ কর্মচারিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। এগুলো পর্যালোচনা করলে হাছন রাজার পাকা ঘরে নিরাসক্তির কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। হাছন রাজার জীবনদর্শন আলোচনা করলে একই সঙ্গে একজন রাজা এবং একজন ঋষিকে খুঁজে পাওয়া যায়। হাছন রাজা ২২ অগ্রহায়ণ ১৩২৯ বাংলায় (১৯২২ সাল) মৃত্যুবরণ করেন।
শাহ্ মো. আখলাকুর রহমান
মুলসুত্র: http://www.bangladesh-pratidin.com/?view=details&type=gold&data=Download&pub_no=234&cat_id=3&menu_id=16&news_type_id=1&index=0
No comments:
Post a Comment