কোন বয়সের মানুষ নেই সেখানে! অশীতিপর বৃদ্ধ থেকে শুরু করে হাঁটি হাঁটি পা পা করা ছোট্ট শিশুও আছে। তবে জায়গাটা ভীষণ নিস্তব্ধ! কারও মুখে ভাষা নেই। নেই কোনো বিকার। থাকবে কোত্থেকে? সেখানকার ৩৫০ জন মানুষই যে একেকটি মূর্তি! আর তাই প্রাণহীন এই মানুষগুলোকে সমুদ্রের বাসিন্দা, অর্থাৎ জলজ প্রাণীরা থোড়াই কেয়ার করে! তারাও বুঝে গেছে, স্থলের বাসিন্দা এই মানুষগুলো আসলে একেকটা পুতুল মাত্র। তাদের আশপাশে বিচরণ নিরাপদ। তবে তারা এটা জানে কি না, জানা নেই, দিনের পর দিন ওই ভাস্কর্যগুলো ওখানেই থাকবে! কিন্তু কেন?
উত্তর শুনুন ভাস্কর্যগুলোর স্থপতি জেসন ডি কেইরেস টেইলরের কাছেই, ‘কানকুনের এই উপকূলে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে সাত লাখের বেশি মানুষ আসে ঘুরতে। কারণ, এখানকার সমুদ্রের নিচে আছে ইসলা মুজেরেস ন্যাশনাল মেরিন পার্ক। জলের নিচের এই পার্কটি দারুণ জনপ্রিয়। কিন্তু এই জনপ্রিয়তা দিনে দিনে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে এখানকার পরিবেশকে। বিশেষ করে, এখানকার প্রাকৃতিক শৈলপ্রাচীর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। তাই এই অতিরিক্ত ভ্রমণকারীদের হটাতে ভাস্কর্যগুলো বসানো হয়েছে এখানে।’ প্রাথমিক কারণ তো জানা গেল। এবার জেনে নিন শিল্পী টেইলরের বৃত্তান্ত। ৩৬ বছর বয়সী এই মানুষটির বাড়ি যুক্তরাজ্যে। অনেক দিন ধরেই মেতে আছেন ভাস্কর্য নিয়ে। মেক্সিকোর পশ্চিম উপকূলের এই সমস্যা নিয়ে অনেক দিন ধরে মাথা ঘামাচ্ছেন। টেইলরের চিন্তাভাবনার কথা জেনে মেক্সিকোর ‘দ্য মিউজিও সাব-অ্যাকুয়াটিকো ডি আর্তে’ একসময় পাশে এসে দাঁড়ায় তাঁর। এই প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতাতেই চিন্তাকে বাস্তব রূপ দেন টেইল। এই প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে ‘লাইফ কাস্টস’।
শুধু অতিরিক্ত ভ্রমণকারীদের হটানোই যে লাইফ কাস্টস প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য, তা কিন্তু নয়। আশা করা হচ্ছে, বিলুপ্ত হতে চলা প্রবালপ্রাচীর নতুন করে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে ভাস্কর্যগুলো। কানকুনের ইসলা মুজেরেস ন্যাশনাল মেরিন পার্কে সারা বছরই মানুষের ঢল লেগেই থাকে। আর এর ফলে উপকূলে প্রাকৃতিকভাবে যে প্রবালপ্রাচীর গড়ে ওঠে, তা ব্যাহত হয় ভীষণভাবে। যার কারণে সেখানে জলজ প্রাণীর আগমন কমে গিয়েছিল আশঙ্কাজনক হারে। মোট কথা, সমুদ্রের নিচের স্বাভাবিক পরিবেশ মেক্সিকোর পশ্চিম উপকূলে ছিল না বললেই চলে!
টেইলর ভাস্কর্যগুলো তৈরি করেছেন বিশেষ ধরনের সিমেন্ট দিয়ে, যা কিনা সাধারণ সিমেন্টের চেয়ে ১০ গুণ শক্তিশালী এবং প্রশমিত পিএইচ মাত্রার গুণে তা বেশ প্রবালবান্ধব। এতে ভাস্কর্যগুলোতে খুব সহজেই প্রবাল দানা বাঁধতে পারবে এখন। প্রথম দিকে শ দুয়েক ভাস্কর্য স্থাপনের কথা ভেবেছিলেন টেইলর। কিন্তু কয়েক দিন বাদেই বুঝতে পেরেছিলেন সংখ্যাটি দ্বিগুণ করতে হবে। শেষমেশ তা-ই হলো। এ পর্যন্ত ৩৫০টি ভাস্কর্য বসানো হয়ে গেছে, বাকি আরও ৫০। সমুদ্রের নিচে এই ভাস্কর্যগুলোকে ঠিকভাবে দাঁড় করাতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ এক ধরনের শক্ত ফাইবার গ্লাস। আর তা তৈরি হয়েছে ভাস্কর্যে ব্যবহূত উপাদানগুলো দিয়েই। সেগুলো বসানোর জন্য প্রথমে বিশেষ ক্ষমতাধর ড্রিল মেশিন দিয়ে সমুদ্রতল ফুটো করে নেওয়া হয়েছিল। তারপর সাড়া হয়েছে একসঙ্গে জুড়ে দেওয়ার কাজ। সব মিলিয়ে ভাস্কর্যগুলোর ওজন ১২০ টনের বেশি। তবে ভাস্কর্যগুলোর বড় শত্রু সেখানকার আবহাওয়া। হরহামেশাই সেখানে হারিকেন ও ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তাণ্ডব চলে! প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ভাস্কর্যগুলো তা মোকাবিলা করতে পারবে! তবে ডুবুরি বা ডাইভারদের জন্য কোনো রকম নিষেধাজ্ঞা নেই, অবাধে সাঁতার কাটা যাবে।
নিজের সৃষ্টির কথা বলতে গিয়ে ভাস্কর টেইলর বললেন, ‘আমরা চেয়েছি এই প্রকল্পটি হবে রোমাঞ্চকর এবং খুব উঁচু দরের। এই কাজে আসলে মানুষ এবং জলের নিচের এই পরিবেশের মিথস্ক্রিয়া চেয়েছিলাম, যাতে একই ছন্দে সবাই বাঁধা থাকবে।’
টেইলরের আশা হয়তো পূরণ হতে চলেছে। ভাস্কর্যগুলোর আশপাশে এখন বাহারি রঙের মাছ ও জলজ প্রাণী ঘুরঘুর করতে দেখা যাচ্ছে। দানা বাঁধছে প্রবাল!
মাহফুজ রহমান, ওয়েবসাইট অবলম্বনে।| তারিখ: ২৯-১০-২০১০
উত্তর শুনুন ভাস্কর্যগুলোর স্থপতি জেসন ডি কেইরেস টেইলরের কাছেই, ‘কানকুনের এই উপকূলে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে সাত লাখের বেশি মানুষ আসে ঘুরতে। কারণ, এখানকার সমুদ্রের নিচে আছে ইসলা মুজেরেস ন্যাশনাল মেরিন পার্ক। জলের নিচের এই পার্কটি দারুণ জনপ্রিয়। কিন্তু এই জনপ্রিয়তা দিনে দিনে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে এখানকার পরিবেশকে। বিশেষ করে, এখানকার প্রাকৃতিক শৈলপ্রাচীর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। তাই এই অতিরিক্ত ভ্রমণকারীদের হটাতে ভাস্কর্যগুলো বসানো হয়েছে এখানে।’ প্রাথমিক কারণ তো জানা গেল। এবার জেনে নিন শিল্পী টেইলরের বৃত্তান্ত। ৩৬ বছর বয়সী এই মানুষটির বাড়ি যুক্তরাজ্যে। অনেক দিন ধরেই মেতে আছেন ভাস্কর্য নিয়ে। মেক্সিকোর পশ্চিম উপকূলের এই সমস্যা নিয়ে অনেক দিন ধরে মাথা ঘামাচ্ছেন। টেইলরের চিন্তাভাবনার কথা জেনে মেক্সিকোর ‘দ্য মিউজিও সাব-অ্যাকুয়াটিকো ডি আর্তে’ একসময় পাশে এসে দাঁড়ায় তাঁর। এই প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতাতেই চিন্তাকে বাস্তব রূপ দেন টেইল। এই প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে ‘লাইফ কাস্টস’।
শুধু অতিরিক্ত ভ্রমণকারীদের হটানোই যে লাইফ কাস্টস প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য, তা কিন্তু নয়। আশা করা হচ্ছে, বিলুপ্ত হতে চলা প্রবালপ্রাচীর নতুন করে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে ভাস্কর্যগুলো। কানকুনের ইসলা মুজেরেস ন্যাশনাল মেরিন পার্কে সারা বছরই মানুষের ঢল লেগেই থাকে। আর এর ফলে উপকূলে প্রাকৃতিকভাবে যে প্রবালপ্রাচীর গড়ে ওঠে, তা ব্যাহত হয় ভীষণভাবে। যার কারণে সেখানে জলজ প্রাণীর আগমন কমে গিয়েছিল আশঙ্কাজনক হারে। মোট কথা, সমুদ্রের নিচের স্বাভাবিক পরিবেশ মেক্সিকোর পশ্চিম উপকূলে ছিল না বললেই চলে!
টেইলর ভাস্কর্যগুলো তৈরি করেছেন বিশেষ ধরনের সিমেন্ট দিয়ে, যা কিনা সাধারণ সিমেন্টের চেয়ে ১০ গুণ শক্তিশালী এবং প্রশমিত পিএইচ মাত্রার গুণে তা বেশ প্রবালবান্ধব। এতে ভাস্কর্যগুলোতে খুব সহজেই প্রবাল দানা বাঁধতে পারবে এখন। প্রথম দিকে শ দুয়েক ভাস্কর্য স্থাপনের কথা ভেবেছিলেন টেইলর। কিন্তু কয়েক দিন বাদেই বুঝতে পেরেছিলেন সংখ্যাটি দ্বিগুণ করতে হবে। শেষমেশ তা-ই হলো। এ পর্যন্ত ৩৫০টি ভাস্কর্য বসানো হয়ে গেছে, বাকি আরও ৫০। সমুদ্রের নিচে এই ভাস্কর্যগুলোকে ঠিকভাবে দাঁড় করাতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ এক ধরনের শক্ত ফাইবার গ্লাস। আর তা তৈরি হয়েছে ভাস্কর্যে ব্যবহূত উপাদানগুলো দিয়েই। সেগুলো বসানোর জন্য প্রথমে বিশেষ ক্ষমতাধর ড্রিল মেশিন দিয়ে সমুদ্রতল ফুটো করে নেওয়া হয়েছিল। তারপর সাড়া হয়েছে একসঙ্গে জুড়ে দেওয়ার কাজ। সব মিলিয়ে ভাস্কর্যগুলোর ওজন ১২০ টনের বেশি। তবে ভাস্কর্যগুলোর বড় শত্রু সেখানকার আবহাওয়া। হরহামেশাই সেখানে হারিকেন ও ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তাণ্ডব চলে! প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ভাস্কর্যগুলো তা মোকাবিলা করতে পারবে! তবে ডুবুরি বা ডাইভারদের জন্য কোনো রকম নিষেধাজ্ঞা নেই, অবাধে সাঁতার কাটা যাবে।
নিজের সৃষ্টির কথা বলতে গিয়ে ভাস্কর টেইলর বললেন, ‘আমরা চেয়েছি এই প্রকল্পটি হবে রোমাঞ্চকর এবং খুব উঁচু দরের। এই কাজে আসলে মানুষ এবং জলের নিচের এই পরিবেশের মিথস্ক্রিয়া চেয়েছিলাম, যাতে একই ছন্দে সবাই বাঁধা থাকবে।’
টেইলরের আশা হয়তো পূরণ হতে চলেছে। ভাস্কর্যগুলোর আশপাশে এখন বাহারি রঙের মাছ ও জলজ প্রাণী ঘুরঘুর করতে দেখা যাচ্ছে। দানা বাঁধছে প্রবাল!
মাহফুজ রহমান, ওয়েবসাইট অবলম্বনে।| তারিখ: ২৯-১০-২০১০
সুত্র: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-10-29/news/104931
No comments:
Post a Comment