Monday, November 29, 2010

বছরের সেরা আবিষ্কার


প্রতিনিয়ত পৃথিবীতে সৃষ্টি হচ্ছে নতুনের। টমাস আলভা এডিসনের বৈদ্যুতিক বাল্ব কালের বিবর্তনে পেয়েছে নানা আধুনিক রূপ। মার্কনি আর জগদীশচন্দ্র বসুর বেতারযন্ত্রের সূত্র ধরে মানুষ খুলেছে যোগাযোগের অনেক বন্ধ দরজা। সবার অগোচরে চলতি বছর কয়েকটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান সৃষ্টি করেছে নতুন কিছু বিস্ময়ের। এ বছর এমন গাড়ি তৈরি করা হয়েছে, যা চালাতে জ্বালানি তেল কিংবা প্রাকৃতিক গ্যাসের দরকার হবে না। সাধারণ ডিসি বিদ্যুতেই সেই গাড়ির ব্যাটারি চার্জ করে তা চালানো যাবে। আবিষ্কৃত হয়েছে এমন গণপরিবহন, যা কয়েক শ যাত্রী নিয়ে রাস্তায় চলতে পারবে। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, সেই গণপরিবহনের তলদেশ দিয়ে অনায়াসে পূর্ণ গতিতে চলাচল করতে পারবে শত শত গাড়ি। কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, যা আগামী দিনে চিকিৎসাবিজ্ঞানে সৃষ্টি করবে অনন্য বিপ্লব। পানি খরচ না করে যন্ত্রে কাপড় ধোয়ার ব্যাপার কি কেউ কখনো ভেবেছিল, তাও আবিষ্কৃত হয়ে গেছে ২০১০ সালে। আবিস্কার হয়েছে জেটপ্যাক যাদিয়ে একজন লোক অনায়াসে ওঠে যেতে পারবে আকাশে, যেমন দেখা যায় সাইন্স ফিকশন সিনেমাগুলোয়, চালকবিহীন গাড়ি আবিষ্কার করেছে গুগল। পোশাক তৈরি হবে এক পলকে, শুধু শরীরে স্প্রে করতে হবে কাপড়র তৈরি হয়ে যাবে। কৃত্রিম ফুসফুস আবিস্কারের কথাও বলা হচ্ছে— অর্থাৎ সব মিলিয়ে বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে ২০১০ সাল অনন্য মাইলফলকের বছর হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে। বিজ্ঞানের এসব অনন্য আবিষ্কার নিয়ে বিশ্বখ্যাত সাময়িকী টাইম চলতি নভেম্বর মাসে এক প্রচ্ছদ কাহিনি প্রকাশ করেছে। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য সেই প্রচ্ছদ কাহিনি থেকে কিছু নতুন আবিষ্কার বাছাই করে তুলে ধরা হলো।

বৈদ্যুতিক গাড়ি
এই গাড়িতে পেট্রল কিংবা প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালানি হিসেবে ব্যবহূত হয় না। তবে প্রকৃতির খুব গুরুত্বপূর্ণ সূর্যের আলো এই গাড়িটির মূল জ্বালানি। মূলত গাড়ির ওপর রক্ষিত একটি সোলার প্যানেলের মাধ্যমে মূল শক্তি উৎপাদিত হয়।

পানি ছাড়া কাপড় ধোয়ার যন্ত্র
ব্রিটেনের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যানুযায়ী কেবল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরাই নিজেদের পোশাক-পরিচ্ছদ ধোয়ার জন্য এক ট্রিলিয়ন লিটার পানি খরচ করে। একবার ভেবে দেখুন তো, এই এক ট্রিলিয়ন লিটার পানি একটি দেশের মানুষ কেবল কাপড় ধোয়ার কাজে ব্যয় করছে, আর পৃথিবীর নানা প্রান্তে মানুষ প্রতিনিয়ত পানির জন্য হাহাকার করে মরছে। এসব বিষয় চিন্তা করেই যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন এমন ধোলাইযন্ত্র, যা পানির খরচ কমাবে শতকরা ৯০ ভাগ। আগামী বছরের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে এই ধোলাইযন্ত্র বাজারজাত করা হবে।

বিদ্যুৎ চার্জ স্টেশন
আমরা এখন রাস্তার পাশে পেট্রলপাম্প কিংবা গ্যাস স্টেশনে গাড়ি থামিয়ে এর জ্বালানি সংগ্রহ করি। কিন্তু ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গাড়ি চালানোর কথা চিন্তা করেই বিদ্যুৎ চার্জ দেওয়ার স্টেশন উদ্ভাবিত হয়েছে এ বছরই। এটি আর কিছুই নয়, রাস্তার পাশে বিদ্যুতে চলা গাড়ি দাঁড় করিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনি এখান থেকে গাড়ির ব্যাটারি চার্জ করিয়ে নিতে পারবেন। ব্যাপারটি অনেকটা মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়ার মতো। ভবিষ্যতের জ্বালানি-নিরাপত্তার জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গাড়ি চালানোর উদ্যোগ পৃথিবীময় খুব জোরেশোরেই শুরু হয়েছে।

মার্টিনস জেট প্যাক
১৯৬১ সালে তৈরি বেল রকেট বেল্টের নতুন সংস্করণ এই জেট প্যাক, যা মার্টিনস জেট প্যাক নামে পরিচিত। নিউজিল্যান্ডের গ্লেন মার্টিন নামের এক ব্যক্তি আকাশে ওড়ার এই যন্ত্রের আবিষ্কারক। ১৯৬১ সালে বেল রকেট বেল্টের মাধ্যমে আকাশে ওড়ার যে স্বপ্ন স্থাপিত হয়েছিল, ৩০ বছর প্রচেষ্টার পর মার্টিন তাঁর জেট প্যাক দিয়ে তাকে দিয়েছেন বাস্তব রূপ। বেল রকেট বেল্টের সঙ্গে মার্টিনের জেট প্যাকের পার্থক্য হলো, এটি অনেক বেশি বাস্তবানুগ। এই জেট প্যাকে দুটি ব্লোয়ারের মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন করে আকাশে ওড়া যাবে। এতে ব্যবহূত হয়েছে ২০০ হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন। যে ইঞ্জিনের শক্তি একটি হোন্ডা অ্যাকর্ড গাড়ির চেয়েও বেশি। মার্টিনের জেট প্যাকের মাধ্যমে দুই হাজার ৫০০ মিটার পথ আকাশে ভেসে অতিক্রম করা যায়।

যে মশা ম্যালেরিয়া ছড়ায় না
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারাইজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা একধরনের মশা প্রজনন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এই মশা প্রাকৃতিকভাবেই জন্মাবে, কিন্তু তাঁদের বিরক্তিকর কামড়ে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়াবে না। তাঁরা আরও একধরনের মশার জাত উদ্ভাবন করেছেন; যেই জাত আগামী ১০ বছরের মধ্যে প্রকৃতিতে বর্তমান জাতের মশা—যারা ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ইত্যাদি রোগবালাইয়ের জন্য দায়ী, সেগুলো বিলুপ্ত করে দেবে। সেই নতুন জাতের মশা কামড়ালেও রোগজীবাণু ছড়াবে না।
নাইর ইকবাল, সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন

ই-লেগ
প্যারালাইসিসে আক্রান্ত রোগীরা নিজেদের প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তিকে ব্যবহার করেও চলেফিরে বেড়াতে পারেন না। তাঁদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। এই দুঃখজনক ব্যাপারটি লাঘব করতেই প্যারালাইসিস রোগীদের জন্য এ বছর তৈরি করা হয়েছে ই-লেগ। ই-লেগ একধরনের অত্যাধুনিক কৃত্রিম পা, যার মূল যন্ত্রটি সৈনিকদের হ্যাভারসেকের মতো রোগীর পিঠে সংযুক্ত থাকবে। রোগীর দুই পা থাকবে দুটি পা-সদৃশ খোলের মধ্যে। যন্ত্র চালু করলেই রোগী খুব সহজে ও সুন্দরভাবেই স্বাভাবিক মানুষের মতো হেঁটে বেড়াতে পারবে। ২০১৩ সালে বাণিজ্যিকভাবে এটি কিনতে পাওয়া যাবে।

স্ট্র্যাডলিং বাস
মূলত যেসব শহরে রাস্তার পরিমাণ কম কিন্তু যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি; সেই শহরে যানজট ও গণপরিবহন সমস্যার এক যুগান্তকারী সমাধান এটি। ইংরেজি স্ট্র্যাডলিং শব্দের অর্থ পা ফাঁক করে দাঁড়ানো। এর নাম স্ট্র্যাডলিং বাস। কারণ, এর তলা দিয়েই রাস্তার অন্যান্য যানবাহন চলাচল করতে পারে। রাস্তার যে প্রান্ত দিয়েই এই বাস চলাচল করুক না কেন, অন্যান্য যানবাহন চলাচলে এটি কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারবে না। তবে যাত্রী ওঠানো ও নামানোর সুবিধার জন্য এক পাশ দিয়েই মূলত এই বাস চলাচল করবে। এই বাসের আবিষ্কারক হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ চীন। চীনের যানজটবহুল বেইজিং, সাংহাইয়ের মতো শহরগুলোর কথা মাথায় রেখেই মূলত এই বাস উদ্ভাবন করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, ২০১১ সালের কোনো এক সময় এটি বিশ্বের বিভিন্ন জনবহুল শহরে চলতে দেখা যাবে। 
| তারিখ: ২৬-১১-২০১০
সুত্র: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-11-26/news/111072 

No comments: