Wednesday, November 3, 2010

বাহাদুর শাহ পার্কের অজানা কাহিনী

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক বাঙালি জাতির এক দুঃসহ স্মৃতি বহন করে চলেছে। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হওয়ার একশ বছর পর ১৮৫৮ সালে বাহাদুর শাহ পার্কে ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়া ভারতের শাসনভার গ্রহণের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। তখন এ পার্কের নামকরণ করা হয় ভিক্টোরিয়া পার্ক। তবে ১৮৫৭ সালে এই পার্কে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সিপাহী বিদ্রোহে অন্তত ১১ জন সিপাহীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিদ্রোহের সূত্রপাত ছোট একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এ সময় সিপাহীদের মধ্যে এনফিল্ড রাইফেল নামে এক ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করা হয়। এই রাইফেলের কার্তুজ গরু ও শূকরের চামড়া দিয়ে তৈরি হয়েছে বলে গুজব ছাড়িয়ে পড়লে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সমপ্রদায়ের সিপাহীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। কারণ মুসলমানদের কাছে শূকর অপবিত্র হিন্দুদের কাছে গরু নিষিদ্ধ বলে চিহ্নিত। দেশীয় সৈন্যদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ইংরেজরা এভাবে কার্তুজ তৈরি করেছে বলে সিপাহীরা ঐকমত্য পোষণ করে এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। দিলি্লতে আক্রমণ চালিয়ে দিলি্ল দখল করে নেয় এবং বাহাদুর শাহ জাফরকে ভারতবর্ষের একচ্ছত্র নেতা হিসেবে ঘোষণা করে। এদিকে ইংরেজরা বিপুল শক্তি সনি্নবেশিত করে সিপাহীদের নির্মূল ও বন্দী করে একে একে ভারতবর্ষের উল্লেখযোগ্য এলাকা পুনরুদ্ধার করে। পূর্ববঙ্গে সিপাহীদের মূল ঘাঁটি ছিল ঢাকার লালবাগ কেল্লায়। ১৮৫৭ সালের ২৬ নভেম্বর ভোরে ইংরেজ বাহিনী লে. লুইসের নেতৃত্বে অতর্কিত লালবাগ কেল্লা আক্রমণ করে। এর জবাবে সিপাহীরাও পাল্টা আক্রমণ চালায় এবং পরী বিবির মাজারসংলগ্ন স্থানে স্থাপিত কামান থেকে সিপাহীরা গোলা ছুড়তে থাকে, ফলে ইংরেজ সেনাদের ভিতরে প্রবেশ ব্যাহত হয় এরপর ইংরেজ সেনারা প্রাচীর অতিক্রম করে সিপাহীদের ওপর ভয়ানক চার্জ শুরু করে। এ সময় সিপাহীরা প্রাণভয়ে পালাতে শুরু করে। এই যুদ্ধে ৩১ জন সিপাহী নিহত হন। ইংরেজদের পক্ষে নিহত হয় ৫ জন এবং আহত হয় ১৪ জন। তারা ২০ জন সিপাহীকে গ্রেফতার করে। ৩০ নভেম্বর ভিক্টোরিয়া উদ্যানে ৩ জনকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। এর আগে আরও ৮ জনকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। বাকি বন্দীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ভিক্টোরিয়া পার্কে দেশমাতৃকার মুক্তি সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী সিপাহীদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয় এবং উদ্যানটির নামকরণ করা হয়। শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহের নামানুসারে 'বাহাদুর শাহ পার্ক' নামকরণ করা হয়।

মো. রিয়াজুল ইসলাম 
সুত্র: http://www.bangladesh-pratidin.com/index.php?view=details&type=pratidin&pub_no=190&cat_id=3&menu_id=16&news_type_id=1&index=2

No comments: