লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশন, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জঃ
বাংলার বার ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈশা খাঁর শাসনামলে বর্তমানে সোনারগাঁ উপজেলা বাংলার রাজধানী ছিল। প্রাচীনকাল থেকে এ উপজেলাটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে এখানে একটি লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশন আছে এবং এটি লোকশিল্প জাদুঘর হিসেবে ব্যাপক পরিচিত।
হাজীগঞ্জ দূর্গ, কিল্লারপুল, নারায়ণগঞ্জঃ
হাজীগঞ্জ দূর্গটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় হাজীগঞ্জের কিল্লারপুল নামক স্থানে অবস্থিত। এটি বাংলার বার ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈশা খাঁর কেল্লা হিসেবে পরিচিত। এটি একটি ঐতিহাসিক দূর্গ।
কদম রসুল দরগাহ, বন্দর, নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলায় নবীগঞ্জ নামক স্থানে সুউচ্চ কদম রসুল দরগাহ অবস্থিত। উক্ত দরগাহে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কদম মোবারক এর চিহ্ন সম্বলিত একটি পাথর আছে এবং এর জন্যই দরগাহ এর নামকরণ হয়েছে কদমরসুল দরগাহ।
পাঁচ পীরের দরগাহ, মোগড়াপাড়া, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার মোগড়াপাড়া নামক স্থানে এই দরগাহ অবস্থিত।
ইপিজেড আদমজী, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী নামক স্থানে আদমজী ইপিজেড অবস্থিত। এখানে পৃথিবীর বিখ্যাত জুটমিল আদমজী জুটমিল অবস্থিত ছিল এবং জুটমিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার স্থলে আদমজী ইপিজেড গড়ে উঠেছে।
মেরিন একাডেমী, সোনাকান্দা, বন্দর, নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার সোনাকান্দা নামক স্থানে মেরিন একাডেমী অবস্থিত। এখানে নৌবাহিনীর মেরিন শীপ সম্পর্কিত বিভিন্ন কোর্স করা হয় এবং প্রতি বৎসর বিভিন্ন শিক্ষার্থী বিভিন্ন ট্রেড কোর্সে উর্ত্তীন হয়ে থাকে।
লাঙ্গলবন্দ, হিন্দু তীর্থ স্থান, বন্দর, নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহাসিক মহাতীর্থ স্থান হিসেবে পরিচিত। প্রতিবৎসর এখানে মহাতীর্থ অষ্টমী পূণ্যস্নান উৎসব উদ্যাপন হয়ে থাকে।
সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ এর মাজার, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জঃ
সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ এর মাজার নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলায় অবস্থিত। এখানে সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ এর মাজার রয়েছে।
সোনাকান্দা দূর্গ, বন্দর, নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার সোনাকান্দা নামক স্থানে ঐতিহাসিক সোনাকান্দা দূর্গ অবস্থিত। সোনাকান্দা দূর্গটি বাংলার বার ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈশা খাঁ তৎকালীন সময়ে ব্যবহার করতেন।
সালেহ বাবার মাজার, বন্দর, নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার সালেহ নগর এলাকায় অবস্থিত। হাজী বাবা সালেহ ইয়ামীনী (রাঃ) মৃত্যুকালীন সময় পর্যন্ত এখানে ইসলাম প্রচার করেন এবং উক্ত স্থানেই মারা যান। কথিত আছে সে সময়ে সালেহ বাবা (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করে গেলে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক মুনাফা হতো।
মেরী এন্ডারসন, ভাসমান রেস্তোরা, পাগলা, নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার পাগলা নামক স্থানে মেরী এন্ডারসন অবস্থিত। এটি মনোরম পরিবেশে একটি ভাসমান রেস্তোরা। এখানে বহু দর্শনার্থী প্রতিদিন ঘুরতে আসে এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্রের সুট্যিং স্পট হিসেবে এটি পরিচিত।
বিবি মরিয়ম এর মাজার, কিল্লারপুল, নারায়ণগঞ্জঃ
বিবি মরিয়ম এর মাজার নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার কিল্লারপুল নামক স্থানে অবস্থিত। এই মাজারটি বহু পুরাতন মাজার হিসেবে পরিচিত।
রাসেলপার্ক, মুড়াপাড়া, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া নামক স্থানে রাসেলপার্ক অবস্থিত। এখানে প্রতিনিয়ত অনেক র্শনার্থীরা তাদের চিত্ত-বিনোদনের জন্য ঘুরতে আসেন।
জিন্দাপার্ক, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় জিন্দাপার্ক অবস্থিত। এখানে প্রতিনিয়ত অনেক দর্শনার্থীরা তাদের চিত্ত-বিনোদনের জন্য ঘুরতে আসেন।
সংগ্রহ: http://www.amaderprotidin.com/index.php?option=com_content&view=article&id=7637:2010-09-10-12-09-04&catid=173:2010-08-01-17-25-04&Itemid=124
Welcome to Global Village (All over the world be a Global Village)
Thursday, October 28, 2010
ঝিনাইদহের দর্শনীয় স্থানসমুহ
রাজা ইন্দ্র নারায়ন নলডাঙ্গায় অত্যন্ত সুন্দর এ মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। বর্গাকারে নির্মিত এ মন্দিরের প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য বাইরের দিকে ছিল ৩৯ ফুট ৩ ইঞ্চি মাপের। গর্ভ- মন্দিরের উপরে ১টি এবং চারকোণে ৪টি চূড়া ছিল। প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহের নামকরণ করা হয়েছিল 'ইন্দ্রেশ্বরী'। পরে এর নাম রাখা হয় 'সিদ্ধেশ্বরী'। ১৮৬৫ সালের বেশ কিছুকাল আগে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২০-২২ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে কালীগঞ্জ হয়ে নলডাঙ্গা যেতে হবে। এরপর নলডাঙ্গা হতে ভ্যানযোগে অথবা পায়ে হেটে নলডাঙ্গা মন্দিরে পৌছানো যাবে। নলডাঙ্গা হতে মন্দিরের দুরত্ব ১ কিঃ মিঃ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
মিয়ার দালান:
বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার সদর থানায় অবস্থিত একটি পুরানো জমিদার বাড়ী। বড়ীটি স্থানীয় নবগঙ্গা নদীর উত্তর দিকে অবস্থিত। ঝিনাইদহ শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থিত। বর্তনানে বাড়ীটি ভগ্নপ্রায়। প্রাচীন ঐতিহ্য অনুযায়ী ইমারতের প্রধান ফটকে নির্মান সময়ের কিছু কথা কাব্যিক ভাবে খোদাই করা আছে। তাতে লেখা, ‘শ্রী শ্রী রাম, মুরারীদহ গ্রাম ধাম, বিবি আশরাফুন্নেসা নাম, কি কহিব হুরির বাখান। ইন্দ্রের অমরাপুর নবগঙ্গার উত্তর ধার, ৭৫,০০০ টাকায় করিলাম নির্মান। এদেশে কাহার সাধ্য বাধিয়া জলমাঝে কমল সমান। কলিকাতার রাজ চন্দ্র রাজ, ১২২৯ সালে শুরু করি কাজ, ১২৩৬ সালে সমাপ্ত দালান।‘
বঙ্গাব্দ ১২৩৬ সালে নির্মাণ শেষ হওয়া এই ইমারতটি ঠিকঠাক মত রক্ষনাবেক্ষণ করা গেলে সেটা ঝিনাইদহ শহরের একটি উল্লেখযোগ্য বিনোদন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। যত দূর জানা যায় যে জমিদার এই দালানটি নির্মাণ করেন তিনি ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের সময় ভবনটি বিক্রি করে দেন সেলিম চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির কাছে। তাই ভবনটিকে স্থানীয় ভাবে কেউ কেউ সেলিম চৌধুরীর বাড়ীও বলে থাকে।
বলা হয়ে থাকে বাড়ীটি থেকে নবগ্ঙ্গা নদীর নিচ দিয়ে একটি সুড়ঙ্গ ছিল। সুড়ঙ্গের প্রবেশমুখ এখনো চিহ্নত করা যায়। নদীতে যে ভাবে বাধ দিয়ে ইমারতটি নির্মান করা হয়েছিল সেভাবে তৈরী আর কোন পুরানো ইমারত ঝিনাইদহ শহরে দেখা যায় না।
বাড়ীটির স্থানীয় ভাবে ব্যাপক পরিচিতির আর একটি বড় কারণ বাড়ীতে থাকা এনটি বিশেষ খেজুন গাছ। যে গাছটিতে একাধিক মাথা ছিল এবং প্রতিটি মাথা থেকেই রস আহোরণ করা যেতো।
যেভাবে যেতে হবে:ঝিনাইদহ শহর হতে স্থানটির দুরত্ব ০৩ কিঃমিঃ। ঝিনাইদহ শহরের যে কোন স্থান হতে অটোরিকসা / রিকসা যোগে আরাপপুর বাসষ্ট্যান্ড হয়ে মুরারীদহ মিয়ার দালানে যাওয়া যাবে।
আবাসন ব্যবস্থা ঃ আবাসন সুবিধা নাই। তবে ঝিনাইদহ শহরে আবাসিক হোটেল আছে।
কে,পি বসুর বাড়ীঃ
জগদ্বিখ্যাত গণিতবিদ অধ্যাপক কালীপদ বসু ১৯০৭ সালে নিজের জম্মস্থান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামে নবগঙ্গা নদীর তীরে ১ একর জমির উপর ১৭ কক্ষ বিশিষ্ট এক প্রাসাদোপম দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন। বাড়ীটি এখনও বসবাসযোগ্য এবং সুদৃশ্যই বলা যায়।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২১-২২ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে হাটগোপালপুর যেতে হবে। এরপর হাটগোপালপুর হতে ( উত্তরদিকে )ভ্যানযোগে কে,পি বসুর বাড়ী যেতে হবে। হাটগোপালপুর হতে কে,পি বসুর বাড়ীর দুরত্ব ৫ কিঃ মিঃ ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
গোড়ার মসজিদ (গোরাই)
মসজিদটি বারোবাজার ইউনিয়নের বেলাট দৌলতপুর মৌজায় অবস্থিত। ইসলামী ঐতিহ্যের এক অনুপম নিদর্শন গোড়ার (গোরাই) মসজিদ। মসজিদের পূর্বদিকে একটি পুকুর আছে। মসজিদ থেকে পুকুরে যাওয়ার জন্য বাঁধানো ঘাট ছিল। ভাঙ্গা ইটের উপস্থিতি ও স্থানে স্থানে প্রোথিত ইটের চিহ্ন তা প্রমাণ করে। বারান্দাসহ এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি বর্গাকৃতি। এ মসজিদটি অবস্থিত মসজিদগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা ভাল অবস্থায় ছিল। ১৯৮৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক খননের পর দেখা গেছে, গম্বুজের কেন্দ্রস্থল ২ ফুটের মত ভাঙ্গা। বৃত্তাকার ও উপুড় করা পেয়ালার মতো দেখতে গম্বুজটি অত্যন্ত মনোরম। মসজিদের পাশে একটি কবরের সন্ধান পাওয়া যায়। এটি গোরাই নামের এক দরবেশের মাজার বলে অনেকের ধারণা। তাঁর নামানুসারে এ মসজিদকে গোড়ার (গোরাই) মসজিদ বলা হয়। বর্তমানে এ মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়া হয়। মসজিদে ৫ ফুট প্রশস্ত দেয়াল আছে। পুর্বের দিকে ৩টি প্রবেশদ্বার , দু'পাশের দু'টি অপেক্ষাকৃত ছোট। উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে ২ টি বড় ও ২ টি ছোট মোট ৪টি প্রবেশ পথ ছিল। এখন এগুলো জানালা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পশ্চিমের দেয়ালে ৩টি মেহরাব আছে। পশ্চিম দেয়ালে ৭/৮ ফুট লম্বা ২টি এবং উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে ২টি মোট ৪ টি কালো পাথরের স্তম্ভ আছে। মসজিদের দেয়ালে পোড়ামাটির পত্র-পুস্পে শোভিত শিকল, ঘন্টা, ইত্যাদি আরোও অনেক নকশা আছে।
এ মসজিদের বাইরের দেয়াল সম্পূর্ণটাই পোড়ামাটির কারুকার্য দ্বারা চমৎকার ভাবে অলংকৃত। মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যের এক নয়নাভিরাম ও অনন্য উদাহরণ। এটি সম্ভবত হোসেন শাহ বা তার পুত্র নসরত শাহ কর্তৃক নির্মিত। এ মসজিদের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায় গৌড়ের সাত্তম ও খনিয়া দীঘি মসজিদ, দিনাজপুরের সুরা মসজিদ, দেওয়ানগড় মসজিদ, টাঙ্গাইলের আতিয়া মসজিদ ও সিংহদার আওলিয়া মসজিদের।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২৮-৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে বারবাজার যেতে হবে। এরপর বারবাজার হতে ( পশ্চিম দিকে) ভ্যানযোগে গোড়ার মসজিদে যেতে হবে। বারবাজার হতে গোড়ার মসজিদের দুরত্ব ১ কিঃ মিঃ ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
গলাকাটা মসজিদ:
সাদিকপুর মসজিদ থেকে ১৫০ গজ পূর্বে গলাকাটা মসজিদটি বারোবাজার - তাহেরপুর রাস্তার পার্শ্বে অবস্থিত। চারটি ৬ কোণাকৃতি বড় মোটা পিলারের উপর বর্গাকৃতি মূল মসজিদটি দন্ডায়মান এবং প্রত্যেক বাহু ২৫ ফুট লম্বা ও দেয়াল ৫ ফুট চওড়া। এতে ৩টি প্রবেশ দ্বার আছে। মসজিদটির পূর্ব পাশে পাকা প্রাঙ্গন ছিল। ভিতরে পশ্চিমের দেয়ালে ৩টি মেহরাব আছে এতে পোড়ামাটির কারুকাজ, ফুল, লতাপাতা, ঘন্টা, চেইন ইত্যাদির নকশা আছে। কালো পাথরের ৮ ফুট উচ্চতার দু'টি স্তম্ভ ছাদের পিলার হিসেবে আছে। স্তম্ভের সামনে পিছনে ৬টি মাঝারি আকৃতির গম্বুজ আছে। শাহ সুলতান মাহমুদ ইবনে হুসাইনের আমলের ৮০০ হিজরীর আরবি-ফার্সিতে লেখা কয়েকটা পাথর খননের সময় এগুলো এখানে পাওয়া গেছে। মসজিদের সাথে সাদৃশ্য আছে গৌরের ধবীচক ও ঝনঝনিয়া মসজিদ, ঢাকা রামপালে বাবা আদমের মসজিদ, শৈলকুপার শাহী মসজিদ ও বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের। ইসলামী স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে গলাকাটা মসজিদ বাংলাদেশের পুরাকীর্তিকে সমৃদ্ধ করেছে।গলাকাটা মসজিদের পাশে গলাকাটা দীঘি অবস্থিত। খান জাহান আলী (রাঃ) এর সমসাময়িক এ দীঘি বলে প্রবল জনশ্রুতি আছে। এ দীঘিটি চর্তুদিকের পাড়সহ বারো বিঘা জমির উপর অবস্থিত। এ দীঘির দক্ষিণ পাড়েই গলাকাটা মসজিদ। দীঘির পশ্চিম পাড়ে একটি ছোট অনুচ্চ ঢিবি আছে।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২৮-৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে বারবাজার যেতে হবে। এরপর বারবাজার হতে ( পশ্চিম দিকে) ভ্যানযোগেগলাকাটা মসজিদে যেতে হবে। বারবাজার হতে গলাকাটা মসজিদের দুরত্ব ১ কিঃ মিঃ ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
জোড় বাংলা মসজিদঃ
বারোবাজার মৌজায় এ মসজিদটি অবস্থিত। ১৯৯২-৯৩ সালে প্রত্নতত্ব বিভাগ কর্তৃক খননের ফলে আবিস্কৃত হয়েছে এক গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটি। এর পাশে কয়েকটি কবর আছে। ছোট ছোট সুন্দর পাতলা ইটে গাঁথা এ মসজিদটি ১০/১১ ফুট উচুঁ প্লাটফর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত।
মসজিদে প্রবেশের পথটি উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত। এ প্রবেশ পথ থেকে দীঘি পর্যন্ত ইটের তৈরী বিশাল সিঁড়ি নেমে গেছে। বর্গাকৃতি এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি পুনঃ নির্মিত হয়েছে। এখানে নিয়মিত নামাজ আদায় হয়। পশ্চিম দেয়ালে অর্ধবৃত্তাকারে পোড়ামাটির নক্সা ও অলংকরণে ৩টি মেহেরাব আছে। চুন বালির প্লাস্টারের কাজও লক্ষ্য করা যায় । মেহেরাবের দুই পাশেই ছোট পিলার আছে। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি ফুল ও লতাপাতা অংকিত ইটের তৈরী। স্থাপত্য শিল্পের সৌন্দর্য ও কারুকার্যময় এ দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি মুসলিম সভ্যতা ও উৎকর্ষের নিদর্শন।
সম্ভবত ৮০০ হিজরীতে শাহ সুলতান মাহমুদ ইবনে নুসাই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। সাদিকপুর মসজিদ, খান জাহান আলী (রাঃ) মাজার সংলগ্ন মসজিদ, ডুমুরিয়ার সারসনগর মসজিদ, অভয়নগরের শুভারাদা মসজিদ এবং বাগেরহাট বিবি কেরানী মসজিদর নির্মাণ শৈলীর সাথে এ মসজিদের সাদৃশ্য আছে।জোড়বাংলা মসজিদের উত্তরের পুকুরটি অন্ধপুকুর নামে পরিচিত। সুলতান মাহমুদ শাহের শাসনামলে মুসল্লীদের ওজু ও পানীয় জলের প্রয়োজনে সম্ভবত এ পুকুর খনন করা হয়েছিল। মসজিদের উত্তর-পূর্বের প্রবেশ দ্বার থেকে অন্ধপুকুরের তলদেশ পর্যন্ত ইট বাঁধান সিঁড়ির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২৮-৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে বারবাজার যেতে হবে। এরপর বারবাজার হতে ( পশ্চিম দিকে) ভ্যানযোগে জোড়বাংলা মসজিদে যেতে হবে।বারবাজার হতে জোড়বাংলা মসজিদের দুরত্ব ১কিঃমিঃ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
সাতগাছিয়া মসজিদ
বারোবাজার থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে সাতগাছিয়া মৌজায় বিরাট আকারের সাতগাছিয়া-আদিনা মসজিদটি অবস্থিত। আদিনা শব্দের অর্থ শুক্রবার । ১৯৮৩ সালে বিরাট আকারের ঢিবির কিছু অংশ স্থানীয় জনগণ খনন করে। এর কিছু অংশ থেকেই ১৬টি থাম ও পোড়ামাটির নকশাসহ পাঁচটি মেহরাব বিশিষ্ট চমৎকার এ মসজিদের সন্ধান মেলে। ১৯৯৩ সালে পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ও প্রত্নতত্ব বিভাগ খননের মাধ্যমে ৪৮টি স্তম্ভের উপর ৩৫ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি আবিস্কার করে। মসজিদের উপরে কোন গম্বুজ নেই। এ মসজিদ এলাকাটি অনেকটা নির্জন এবং জঙ্গলাকীর্ণ।
বারোবাজার ভগ্নস্তুপ থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো মসজিদ আবিস্কৃত হয়েছে তার মধ্যে আয়তনে এটিই সবচেয়ে বড়। এর প্রবেশ পথ পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণে। মসজিদে মোট ১৭টি প্রবেশ পথ আছে। পশ্চিম দেয়ালে সাতটি মেহরাব আছে। ঘন্টা, চেইন, ফুল, গোলাপ ফুল, বৃক্ষ, পাতা, ফুলের কুঁড়ি প্রভৃতি মেহরাবের সজ্জা হিসেবে অতি চমৎকার ভাবে অঙ্কিত আছে। মেঝেতে ৩টি প্লাটফর্মে বিভাজিত।
বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের সাথে এ মসজিদের ভিতরকার নির্মাণ পরিকল্পনার সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। ষাট গম্বুজ মসজিদের নির্মাণকাল পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দিক। নির্মাণ ও পরিকল্পনায় সাদৃশ্য থাকার কারণে আদিনা মসজিদের নির্মাণ কালও এটাই ধরা হয়। এ মসজিদটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম মসজিদের অন্যতম বলা যায়।
যেভাবে যেতে হবে:ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২৮-৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে বারবাজার যেতে হবে। এরপর বারবাজার হতে ( পশ্চিম দিকে) ভ্যানযোগে সাতগাছিয়া মসজিদে যেতে হবে। বারবাজার হতে এ মসজিদের দুরত্ব ১কিঃ মিঃ ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
জাহাজঘাটা হাসিল বাগ
বারোবাজার হাসিলবাগ গ্রামে ভৈরব নদীর উত্তর পাড়ে একটি পুরানো অট্রালিকার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। জাহাজঘাটা নামে পরিচিত এ অট্রালিকাটিকে মসজিদ বলে অনেকে ধারণা করে। এ গ্রামে অনেক ঢিবিও আছে। এ জায়গাটি হাসিলবাগগড় নামেও পরিচিত।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২৮-৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে বারবাজার যেতে হবে। এরপর বারবাজার হতে হতে( পশ্চিম দিকে) ভ্যানযোগে জাহাজঘাটাহাসিলবাগ যেতে হবে।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
গাজী কালু ও চম্পাবতীর মাজারঃ
মত দ্বৈততা থাকলেও এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, গাজী- কালু ও চম্পাবতীর মাজার বারোবাজারেই অবস্থিত। গাজী- কালু ও চম্পাবতীর পরিচয় নিয়ে আছে নানা কিংবদন্তী। জনশ্রততিতে পাওয়া যায় বিরাট নগরের শাসক দরবেশ শাহ্ সিকান্দারের পুত্র গাজী। কালু সিকান্দারের পোষ্য পুত্র । কালু গাজীকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং সর্বত্র তাকে অনুসরণ করতেন। গাজীর সাথে ছাপাই নগরের সামন্ত রাজা রামচন্দ্র ওরফে মুকুট রাজার মেয়ে চম্পাবতীর দেখা হয়। গাজী ভুলে গেলেন তিনি মুসলমান, চম্পাবতীও ভুলে গেলেন তিনি হিন্দু রাজার মেয়ে। তদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলো। তাদের মিলনের মাঝে দুর্ভেদ্য প্রাচীর হয়ে দাঁড়াল সামাজিক ও ধর্মীয় বাঁধা। রাজা তাঁর সেনাপতিদের হুকুম দিলেন গাজী ও কালুকে শায়েস্তা করতে। ঘোর যুদ্ধে মুকুট রায়ের সেনাপতি দক্ষিণা রায় পরাজিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে গাজীর অনুসারী হয়। গাজী- কালু ও চম্পাবতীর মাজারের সাথে দক্ষিণা রায়ের মাজার আছে। মুকুটরাজা ঝিনাইদহ, কোটচাঁদপুর, বারোবাজারের পূর্ব এলাকা ও বেনাপোল অঞ্চলের সামস্ত রাজা ছিলেন। অন্যত্র তিনি রামচন্দ্র, শ্রীরাম বলে পরিচিত। রাজার চারটি বাড়ি ছিল-ঝিনাইদহের বাড়িবাথান, বারোবাজারের ছাপাইনগর (বর্তমানে বাদুরগাছা), কোটচাঁদপুরের জয়দিয়া বাওড়ের বলরামনগর, বেনাপোলের কাগজপুর-এ।
এ মুকুট রাজা বা রাজা রামচন্দ্র গাজীর অনুসারী বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে চম্পাবতীকে নিয়ে তার প্রধান বাড়ি ঝিনাইদহের বাড়িবাথানে চলে আসেন। গাজীও তাকে অনুসরণ করেন। ঝিনাইদহে গিয়ে গাজী, রাজার সেনাপতি গয়েশ রায়ের প্রমোদ ভবন জালিবল্লা পুকুরের পাড়ে বদমতলীতে ছাউনি ফেলেন। এখানেও গাজীর মাজার দেখতে পাওয়া যায়। এরপর রাজা চলে যান জয়দিয়া বাওড়ের বাড়িতে। এ বাড়ির অবস্থান দেখলে মনে হয়, রাজা অত্যন্ত শৌখিন ছিলেন। জয়দিয়ার বাওড় একসময় ভৈরব নদের অংশ ছিল। বাওড়ের পূর্ব পাড়ে ছিল রাজার বাড়ি। বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে বলুহর বাওড় যা এক সময়ে কপোতাক্ষ নদের অংশ ছিল। দুই বাওড় তথা দুই নদীর মধ্যস্থলে অবস্থিত এই রাজবাড়ীর গুরুত্ব অপরিসীম। দক্ষিণ পাশে বাওড়ের কুল ঘেষে তমাল গাছের নিচে আজও গাজীর দরগা বিদ্যমান। হয়তো প্রেমের টানে গাজী এখানেও ছুটে এসেছিলেন সঙ্গী কালুকে নিয়ে। অবশেষে গাজী অনুসারীদের নিয়ে বহু খন্ড যুদ্ধের পর রাজা রামচন্দ্রের কাছ থেকে চম্পাবতীকে উদ্ধার করে বারোবাজার ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু গাজীর পিতা শাহ্ সিকান্দার বিষয়টা মেনে নেননি। মুকুট রাজা শাহ্ সিকান্দারের প্রতিবেশী। হিন্দু সমাজের অসন্তষ্টির কারণে তিনি গাজীকে বাড়ী উঠতে দেননি। বাধ্য হয়ে গাজী দরবেশ বেশে চম্পাবতীকে নিয়ে বাদাবনে বেরিয়ে পড়লেন। সঙ্গী হলো কালু ও দক্ষিণা রায়। সুন্দরবনের বাদাবন বেশী দূরে ছিল না। নাভারণ, বেনাপোল, সাতক্ষীরা, বনগাঁ বাদাবন অঞ্চল ছিল। অসীম সাহসী গাজী আস্তানা গাড়লেন বাদাবনে। গরীব কাঠুরিয়ারা তার ভক্ত হলো।
গাজীর পরিচয় সম্পর্কে আর একটি ঐতিহাসিক তথ্য প্রচলিত আছে আমরা যে ঘটনার অবতারণা করছি তা ঘটেছে পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে। হোসেন শাহের সময়কালে (১৪৯৩-১৫৩৮) মুকুট রাজার শাসন কাল ছিল খাঁনজাহান আলী পরবর্তীতে সুলতান রোকনউদ্দীনের প্রধান সেনাপতি হিসেবে আসাব ও বাংলার বিভিন্ন অভিযানে তিনি অংশ নেন। সিলেট ও ঝিনাইদহের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর দরগা বা মাজার আছে। গাজী-কালু ও চম্পাবতীর সম্পর্কে নানা ধরণের জনশ্রুতি প্রচলিত আছে।
গাজী- কালু ও চম্পাবতীর মাজারে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষ মানত করে। শ্রীরাম রাজার বেড় দীঘির দক্ষিণ পাশে ৩টি পাশাপাশি কবরের অবস্থান । মাঝখানে বড় কবরটি গাজীর, পশ্চিমেরটি কালুর এবং পূর্বের ছোট কবরটি চম্পাবতীর বলে পরিচিত। মাজার সন্নিহিত দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি প্রাচীন বটগাছ আছে। এই বটগাছের তলদেশে একটি শূণ্যস্থান দেখা যায়। এটিকে অনেকে কূপ কিংবা অন্য কোন কবর বলে মনে করেন। ১৯৯২ সালে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন কবর তিনটি বাঁধাই করে বেষ্টনি প্রাচীর নির্মাণ ও খাদেমদের থাকার জন্য সেমিপাকা টিন শেড তৈরী করেছেন। গাজী কালু চম্পাবতীর সাথে দক্ষিণা রায়ের কবরও এখানে রয়েছে।
যেভাবে যেতে হবে:ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২৮-৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে বারবাজার যেতে হবে। এরপর বারবাজার হতে হতে( পূর্ব দিকে) ভ্যানযোগে গাজীকালু চম্পাবতীর মাজারে যেতে হবে। বারবাজার হতে মাজারের দুরত্ব ১ কিঃ মিঃ ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
বলু দেওয়ানের মাজার
বলু দেওয়ানের জম্মস্থান ও বাড়ী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দক্ষিণ প্রান্তে যাত্রাপুর গ্রামে। পিতা চুটি বিশ্বাস। মাজারের সম্পত্তির রেকর্ড ও সাম্প্রতিক খাদেমদের সময় বিচারে বলু দেওয়ানের আবির্ভাব কাল ১৮ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ বলে ধারণা করা যায়। শিশুকাল থেকে নানা রকম ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন বলু দেওয়ান। তাঁর বাল্য, কৈশোর ও যৌবনের বিচিত্র স্মৃতি জড়িয়ে আছে জম্মস্থান ধোপাদী-যাত্রাপুর ও মাতুলালয় চৌগাছার হাজরাতলার মাটিতে। কথিত আছে, এ দুই জায়গায় তার মাজার আছে। এখানে ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবারে ওরস মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভক্তগণ এ সময়ে মাজারে সমবেত হয়।কালীগঞ্জ উপজেলার বড় ধোপাদী বাজারে এগার বিঘা জমির উপর তার মাজার। এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বলু দেওয়ানের পাঁচজন খাদেম, মান্দারী শাহ, বশির শাহ, আফসার শাহ, ফটিক শাহ ও জলিল শাহ। বলু দেওয়ানের মাজারে মানুষ আপদে-বিপদে, রোগে-শোকে মানত করে। এখানে দু'টি পুকুর ও একটি ফলের বাগান আছে।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৩৩-৩৫ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে বারবাজার যেতে হবে। এরপর বারবাজার হতে ( পশ্চিম দিকে) বেবী /টেম্পুযোগে কোটচাঁদপুর -চৌগাছা সড়ক পথে বলুদেওয়ানের মাজারে যেতে হবে। বারবাজার হতে বলুদেওয়ানের মাজারের দুরত্ব ৫ কিঃ মিঃ।
আবাসন ব্যবস্থা:আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
শৈলকুপার শাহী মসজিদ ও মাজারঃ
কুমার নদের তীরে অবস্থিত শৈলকুপা শাহী মসজিদ দক্ষিণবঙ্গে সুলতানী আমলের স্থাপত্যকীর্তির একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। মসজিদটি দরগাপাড়ায় অবস্থিত। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এ মসজিদের দৈর্ঘ ও প্রস্থ (ভিতরের দিকে) ৩১.৫/২১ ফুট। দেয়ালগুলো প্রায় ৫.৫ ফুট প্রশস্ত। চার কোণে আছে চারটি মিনার। এগুলো গোলাকার এবং বলয়াকারে স্ফীতরেখা (ব্যান্ড) দ্বারা অলংকৃত। মিনারগুলো মসজিদের অনেক উপরে উঠে গেছে। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে দু'টি করে প্রবেশ পথ আছে। পূর্ব দেয়ালের কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথের উভয় পাশে একটি করে সরু মিনার আছে এবং এগুলো কোণের মিনারের চেয়ে কিছু নিচু। মসজিদের কার্নিশ ঈষৎ বাঁধানো; ভিতরে পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মেহরাব। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি আকারে বড়। মসজিদের ভিতরে পাঁচ ফুট উঁচু দুটি স্তম্ভ আছে। এগুলোর উপরে আছে ইটের তৈরি খিলান। এ দুটো স্তম্ভ ও চার পাশের দেয়ালের উপর নির্মিত হয়েছে ছয়টি গম্বুজ। এগুলো আকারে বেশ ছোট। মসজিদটি প্রধানতঃ ইটের তৈরি। এ মসজিদে এত সংস্কার ও সংযোজন হয়েছে যে, এর আদি কাঠামো কি ছিল তা সঠিকভাবে নিরুপণ করা সহজ নয়। কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথ ও কোণের মিনারগুলো সম্ভবতঃ পরবর্তীকালের সংযোজন। তবে এটি যে সুলতানী আমলের মসজিদ তা সহজেই বোঝা যায়। মসজিদের পূর্ব দিকে অনুচ্চ প্রাচীর বেষ্টিত (৪৫/৩০ ফুট ) একঢি মাজার আছে। স্থানীয় লোকদের মতে এটি শাহ্ মোহাম্মদ আরিফ-ই-রব্বানী ওরফে আরব শাহ্র মাজার। এ মাজারের কাছে আরও ছয়জন আউলিয়ার মাজার আছে। মসজিদ বা মাজারে কোন শিলালিপি নেই।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে গাড়াগঞ্জ । এরপর গাড়াগঞ্জ হতে বাসযোগে শৈলকৃপা যেতে হবে। শৈলকুপা বাজারেই শাহী মসজিদ অবস্থিত।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
শৈলকুপা রামগোপাল মন্দিরঃ
বল্লাল সেনের সময় মুন্সী বলরাম দাস শৈলকুপায় রাজ্য স্থাপন করেন। তৎকালে জনৈক সন্ন্যাসীর প্রচেষ্টায় রামগোপাল মন্দির স্থাপিত হয়।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে গাড়াগঞ্জ । এরপর গাড়াগঞ্জ হতে বাসযোগে শৈলকুপা যেতে হবে। শৈলকুপা বাজারেই রামগোপাল মন্দির অবস্থিত।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
মরমী কবি পাঞ্জু শাহ'র মাজার
মরমী কপি পাঞ্জু শাহ'র (১৮৫১-১৯১৪) মাজার হরিশপুর গ্রামে অবস্থিত। মাজারটি একতলা ভবন বিশিষ্ট। ভবনটি উত্তর-দক্ষিণ লম্বা। ভিতরে তিনটি কবর। কবির দু'পাশে দু'স্ত্রী চন্দন নেছা ও পাঁচি নেছার কবর । এ মাজার দর্শনের জন্য দেশ-বিদেশের বহু লোক এখানে আসেন। বছরে ৩বার মরমী কবির স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর অনুসারীগণ সাহিত্য সম্মেলন করে থাকেন।
যেভাবে যেতে হবে ঃ ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৩৮-৪০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে হরিণাকুন্ডু । এরপর হরিণাকুন্ডু হতে বাসযোগে /গ্রামবাংলা আটো ভ্যান / নছিমন যোগে/ভ্যানযোগে সাতব্রিজে যেতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হেটে/ভ্যান যোগে মাজারে যেতে হবে। হরিণাকুন্ডু হতে পাঞ্জু শাহের মাজারের দুরত্ব ৮ কিঃমিঃ।
আবাসন ব্যবস্থা ঃ আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
কামান্না ২৭ শহীদের মাজার
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ শৈলকুপা ইতিহাস হয়ে আছে। ৫ এপ্রিল গাড়াগঞ্জ যুদ্ধ, ৪ আগষ্ট আলফাপুরের যুদ্ধ, ১৩ অক্টোবর আবাইপুরের যুদ্ধ, ২৬ নভেম্বর কামান্নার যুদ্ধ এবং ৮ এপ্রিল, ৬ আগস্ট, ১৭ আগষ্ট ও ১১ নভেম্বর শৈলকুপা থানা আক্রমণের মাঝ দিয়েই শৈলকুপা শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিসেনারা উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা। শৈলকুপায় পাক-হানাদার ও তাদের সহযোগীরা চালিয়েছে নির্বিচারে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট। যার জলন্ত সাক্ষী হয়ে রয়েছে কামান্না ও আবাইপুরের হত্যাযজ্ঞসহ আরো বেশ কিছু নারকীয় ঘটনা। কামান্না যুদ্ধ এসবের সর্বাধিক গুরুত্ববাহী।
১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর ভোর রাতে কামান্না গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞে নিহত হন ২৭ জন বীর মুক্তিসেনা। আর আহত হন অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী। চৌকশ ও সাহসী ৪২ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষন শেষে ভারত থেকে কামান্নার মাধব চন্দ্রের বাড়িতে আশ্রয় নেন। মাগুরার শ্রীপুর, মাগুরা সদর ও শৈলকুপা উপজেলায় এঁদের বাড়ি। শৈলকুপার মালিথিয়া গ্রামের আলমগীর ও শ্রীপুরের আবুবকর ছিল এদের মধ্যে প্রধান।
মুক্তিযোদ্ধাদের এ উপস্থিতির সংবাদ স্থানীয় রাজাকারদের তৎপরতায় দ্রুত চলে যায় ঝিনাইদহ ও মাগুরার আর্মি ক্যাম্পে। হানাদারদরা ঝিনাইদহ ও মাগুরা থেকে ভারী অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রাতের অন্ধকারে পৌছে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খুব কাছাকাছি। দুরে তাদের গাড়িগুলো রেখে পায়ে হেটে এগিয়ে এসে রাতের অন্ধকারে হঠাৎ করেই হানাদাররা মুক্তিসেনাদের আশ্রয়স্থল লক্ষ্য করে মর্টারের ভারী গোলা ছোড়ে। আকস্মিক এ আত্রমণে পথক্লান্ত মুক্তিসেনারা হকচকিয়ে যায়। সামলে নিয়ে শক্ত হাতে তুলে নেয় হাতিয়ার। প্রতিআক্রমণ চালায়। কিন্তু আকর্ষিক আক্রমণে মুক্তিসেনারা তাদের সামনে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। ঘরের মাঝে আটকা পড়ে যায় অনেকে। পাকসেনারা তাঁদেরকে গুলি ছুঁড়ে হত্যা হরে। তারা গ্রামটিকেও তছনছ করে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ফণিভূষণ কুন্ডু ও রঙ্গবিবিকে গুলি করে হত্যা করে। তাদের এলোপাতাড়ি গুলিতে অনেক গ্রামবাসীও আহত হয়। হানাদাররা স্থান ত্যাগ করার পর পরই আশে পাশের গ্রাম থেকে হাজার হাজার লোক এসে জড়ো হয়। ঘরের মেঝেয়, উঠানে, বাড়ির আঙিনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল মুক্তিসেনাদের ক্ষত বিক্ষত নিষ্পাপ দেহ। রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল বাড়িটির সারা আঙিনা। সববগুলো লাশ জড়ো করা হয় এক জায়গায়। কামান্না হাই স্কুলের খেলার মাঠের উত্তর পাশে কুমার নদ ঘেঁষে ৬ জন করে দুটি ও ৫ জন করে তিনটি গণকবরে এ ২৭ বীর শহীদের কবর ঘেঁষে নির্মিত হয়েছে একটি শহীদ মিনার, যার গায়ে লেখা রয়েছে ২৭ শহীদের নামঃ
১।মোমিন ২। কাদের ৩। শহীদুল ৪।ছলেমান ৫। রাজ্জাক ৬। ওয়াহেদ ৭। রিয়াদ ৮। আলমগীর ৯। মতলেব ১০। আলী হোসেন ১১। শরীফুল ১২। আলীমুজ্জামান ১৩। আনিছুর ১৪। তাজুল ১৫। মনিরতজ্জামান ১৬। মমিন ১৭। রাজ্জাক ১৮। কওছার ১৯। ছলেমান ২০। আজিজ ২১। আবকর ২২। সেলিম ২৩। হোসেন ২৪। রাশেদ ২৫। গোলজার ২৬। অধীর ২৭। গৌর।
যেভাবে যেতে হবে ঃ ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৩৫-৩৮ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে গাড়াগঞ্জ । এরপর গাড়াগঞ্জ হতে বাসযোগে শৈলকুপা যেতে হবে। শৈলকুপা হতে বাস/ বেবীযোগে হাটফাজিণপুর যেতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হেটে / ভ্যানযোগে কামান্না শহীদ মাজারে যেতে হবে।
আবাসন ব্যবস্থা ঃ আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
দত্তনগর কৃষি খামারঃ
এখানেএশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বীজ উৎপাদন খামার আছে। জমির পরিমান তিন হাজার একর।
যেভাবে যেতে হবে ঃ ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৪৮-৫০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়কপথে কালীগঞ্জ । এরপর কালীগঞ্জ হতে বাসযোগে জীবণনগর যেতে হবে। সেখান থেকে বাসযোগে দত্ত্বনগর যেতে হবে।
আবাসন ব্যবস্থা ঃ আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
সিরাজ সাঁই এর মাজার, হরিশপুরঃ
মরমী সাধক লালন শাহ্, পাঞ্জুশাহ, সিরাজ সাঁই, বিপ্লবী বাঘা যতীনের মত মহান ব্যক্তিত্বকে ধারণ করে ধন্য হরিণাকুন্ডুর মাটি। এখানে রয়েছে প্রাচীন হিন্দু ও বৌদ্ধ স্থাপনার নিদর্শন। আছে অত্যাচারী ইংরেজদের নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ।
যেভাবে যেতে হবে ঃ ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৩৮-৪০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে হরিণাকুন্ডু । এরপর হরিণাকুন্ডু হতে বাসযোগে /গ্রামবাংলা আটো ভ্যান / নছিমন যোগে / ভ্যানযোগে সাতব্রিজে যেতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হেটে / ভ্যান যোগে মাজারে যেতে হবে। হরিণাকুন্ডু হতে সিরাজ সাঁই এর মাজারের দুরত্ব ৮ কিঃমিঃ।
আবাসন ব্যবস্থা ঃ আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
জোড়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ঃ
বিদ্যালয়টি ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা করেন ইংরেজ নীলকুঠিয়াল উইলিয়াম জেমস শেরিফ। ১৯১৮ সাথে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী স্বীকৃতি দেয়। বিদ্যালয়টির ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা ৭০০ জন। নিজস্ব জমির পরিমাণ ৬৭১ শতক।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৪০-৪২ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে হরিণাকুন্ডু । এরপর হরিণাকুন্ডু হতে বাসযোগে /গ্রামবাংলা আটো ভ্যান / নছিমন যোগে/ভ্যানযোগে জোড়াদহ যেতে হবে। হরিণাকুন্ডু হতে জোড়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুরত্ব ১০ কিঃমিঃ।
আবাসন ব্যবস্থা:আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।
ঢোলসমুদ্র দীঘিঃ
ঝিনাইদহে রাজা মুকুট রায় নামে এক প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন। রাজা মুকুট রায়ের অনেক সৈন্য সামন্ত ছিল। কথিত আছে তিনি ১৬ হল্কা হাতি, ২০ হল্কা অশ্ব ও ২,২০০ কোড়দার না নিয়ে বের হতেন না। খাঁন জাহান আলী (রাঃ) এর মত তিনিও জলাশয় প্রতিষ্ঠায় যত্নবান ছিলেন। রাস্তা নির্মাণ ও জলাশয় খনন করতে করতে তিনি অগ্রসর হতেন। ঝিনাইদহে তাঁর এমনি একটি অমর কীর্তি ঐতিহ্যবাহী পাগলা কানাই ইউনিয়নের ঢোল সমুদ্র দীঘি। প্রায় ৫২ বিঘা জমির উপর অবস্থিত এ দীঘি ঝিনাইদহের সর্ববৃহৎ দীঘি। দীঘিটি শতাব্দী পরিক্রমায় পানীয় জলের অফুরন্ত আধার হিসেবে কাজ করেছে এবং একজন পরাক্রমশালী রাজার রাজকীয় স্থাপনা সমূহের একটি স্মৃতি হিসেবে আজও টিকে আছে।
ঝিনাইদহ শহরের পূর্বে বিজয়পুর ছিল রাজা মুকুট রায়ের রাজধানী। বাড়ীবাথানে রাজার প্রকান্ড গোশালা ছিল। বহু সংখ্যক গাভী ছিল বলে লোকে তাকে বৃন্দাবনের নন্দ মহারাজ বলত। বেড়বাড়ীতে রাজার উদ্যান ছিল। রাজার কোড়াদার সৈন্যরা যেখানে বসবাস করত সে স্থানের নাম কোড়াপাড়া হয়েছে। এ সমস্ত স্থান এখনও বর্তমান। রাজা মুকুট রায়ের রাজবাটির কিছুই অবশিষ্ট নেই। তবে ঢোল সমুদ্র দীঘির দক্ষিণে ক্ষয়ে যাওয়া ইটের স্তুপে কোন ঐতিহাসিক নিদর্শন লুক্কায়িত থাকতে পারে বলে পুরাতাত্ত্বিকেরা মনে করেন। ঢোল সমুদ্র দীঘিটি ঝিনাইদহের একটি আকর্ষণীয় বিনোদন স্থান।
ঢোল সমুদ্র দীঘি খননের পেছনে একটি লোকশ্রততি আছে-রাজা মুকুট রায়ের রাজত্বকালে একবার জলকষ্ট দেখা দেয়। বিল, বাওড়, নদী দীঘি- কোথাও জল ছিল না। অনন্যোপায় হয়ে রাজা দীঘি খননের সিদ্ধান্ত নেন। অগণিত লোকের দিন রাত পরিশ্রমে দীঘি গভীর হতে গভীরতর এবং চতুর্দিকে প্রশস্ত হতে লাগল। কিস্তু পুকুরে জল উঠল না। হতাশ রাজা একদিন স্বপ্ন দেখলেন যে, রাণী যদি পুকুরে নেমে পূজা দেন, তবে পুকুরে জল উঠবে। এ কথা জেনে প্রজাহিতৈষী রাণী পূজার নৈবেদ্য নিয়ে পুকুরে নামলেন। রাণী পুকুরের তলদেশে উপস্থি হয়ে ইষ্টদেবতাকে নিবেদন করলেন পূজার অর্ঘ্য। জল ওঠা শুরু হলো। প্রার্থনা পূর্ণ হওয়ায় রাণী উপরে উঠতে শুরু করলেন। সহসা প্রবলবেগে জলরাশি উথ্থিত হল। জল দেখে উদ্বেলিত পাড়ের সহস্র প্রজার উৎসব-আনন্দ আর বাদ্য-বাজনার মধ্যে অলক্ষ্যে রাণী অথৈ জলরাশির গভীরে তলিয়ে গেলেন। গভীর শোকে শোকাভিভূত প্রজাগণ রাজাকে রাজপুরীতে যেয়ে এই দুঃসংবাদ জানালেন। সেই স্মৃতি স্মরণে আজও লোকজন এ দীঘিকে ঢোল সমুদ্র দীঘি বলে জানে।
রাজা মুকুট রায় বাড়ীবাথানের যুদ্ধে নবাবের ও পাঠান সৈন্যের মিলিত শক্তির কাছে পরাজিত হন। নবাব সৈন্যরা রাজা মুকুট রায়কে বন্দী করে রাজধানীতে নিয়ে যায়। রাজার পরিচয় জেনে নবাব তাঁকে মুক্তি দেন। কিন্তু রাজার পরিবারের সদস্যগণ রাজার অনিবার্য পরিণতি, মৃত্যু ভেবে সবাই আত্মহত্যা করেন। তাঁর কন্যার আত্মহত্যার স্থানকে কন্যাদহ দু’রাণীর আত্মহত্যার স্থানকে দুসতীনের, রাজ জ্যোতিষীর আত্মহত্যার স্থানকে দৈবজ্ঞদহ নামে অভিহিত করা হয়েছে, যা আজও এ নামেই পরিচিত।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৩ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ শহরের যে কোন স্থান হতে অটো রিকসা / ভ্যান / রিকসাযোগে পাগলাকানাই মোড় হয়ে ঢোল সমুদ্র দীঘিতে যেতে হবে।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা নেই। তবে ঝিনাইদহ শহরে আবাসিক হোটেল আছে।
মল্লিকপুরের এশিয়ার বৃহত্তম বট গাছঃ
এশিয়ার বৃহত্তম এবং প্রাচীন বটগাছটি কালীগঞ্জ শহর হতে ১০ কিঃমিঃ পূর্বে মালিয়াট ইউনিয়নের বেথুলী মৌজায় অবসিহত। বটগাছটি বর্তমানে ১১ একর জমি জুড়ে বিদ্যমান। সুইতলা-মল্লিকপুরের বটগাছ নামে এটি বিশেষভাবে পরিচিত।
গাছটি দুশো বছরের পুরনো। রাস্তার ধারে ডাল-পাতায় পরিপূর্ণ গাছটি জনবিরল স্থানে পথিকের বিশ্রামের আশ্রয়স্থল। বটগাছটি একের পর এক ঝুরি নামিয়ে বিরাট আকার ধারণ করেছে। এ স্থানটির মালিক ছিলেন রায় গ্রামের জোতদার নগেন সেনের স্ত্রী শৈলবালা সেন। পরবর্তীতে এটা খাস হয়ে যায়। পূর্বে তিথি অনুযায়ী এখানে পাঠা বলি হতো। এ গাছের নিচে একটি স্থায়ী কালীপূজার আসন স্থাপিত হয়েছে। এখনও মানুষ এখানে মানত করে। বিশ্বব্যাপী গাছটির পরিচিতি ঘটে ১৯৮২ সালে বি,বি,সির সংবাদ ভাষ্যের মাধ্যমে গাছটি এ এলাকার আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছে। বহু দেশী-বিদেশী পর্যটক এখানে আসে। তবে বটগাছটির প্রতি নেই কোন সচেতন পরিচর্যা। অযত্ন, অবহেলা ও অত্যাচারে বিলীন হতে চলেছে গাছটি। প্রতিনিয়ত কাটা হচ্ছে এর ডালপালা।
বট গাছটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করেও পর্যটকদের সুবিধার্থে এখানে ১৯৯০ সালে সরকারি অনুদানে নির্মিত হয়েছে একটি রেষ্ট হাউজ। এই ঐতিহ্যকে গুরুত্বসহকারে কাজে লাগালে এ অঞ্চল হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র। এই বিস্তৃত বটগাছের দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাখীর কল-কাকলি মুখরিত শীতল পরিবেশ বিমুগ্ধ চিত্তকে বিস্ময় ও আনন্দে অভিভূত করে।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২৮-৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে কালীগঞ্জ যেতে হবে। এরপর কালীগঞ্জ হতে ( পূর্ব দিকে) টেম্পুযোগে / ভ্যানযোগে মল্লিকপুরে যেতে হবে। কালীগঞ্জ হতে মল্লিকপুরের দুরত্ব ১০ কিঃমিঃ।
সংগ্রহ: বাংলাদেশ প্রতিদিন।
মুল সুত্র: http://www.amaderprotidin.com/index.php?option=com_content&view=article&id=7638:2010-09-10-12-34-41&catid=173:2010-08-01-17-25-04&Itemid=124
Tuesday, October 26, 2010
সুখমন আর দুখমন
মামুনুর রশিদ | তারিখ: ২৬-১০-২০১০
দুপুর ছুঁইছুঁই। প্রখর রোদ। রোদ যেন দুষ্টুমি করেই চোখেমুখে পড়ছিল তাঁদের। রোদ থেকে নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন তাঁরা, যেন পেরে উঠছেন না। ঘেমে চলেছেন অবিরাম। শাড়ির আঁচল দিয়ে কয়েকবার ঘাম মুছে নিলেন। আবার ঘোমটা টেনে নিলেন গ্রাম্য বধূর মতো। রাজশাহীর বাগমারার চানপাড়া ভবানীগঞ্জ সেতুর পাশে ফুটপাতে পাশাপাশি বসে আছেন তাঁরা।
দুজনের পাশেই রয়েছে বাঁশের লাঠি। একটু দূর থেকে লক্ষ করছিলাম তাঁদের। চেহারায়ও অদ্ভুত মিল। বয়স আন্দাজ ৪২ অথবা ৪৫। উচ্চতায় অনেক ছোট। এ কারণেই চোখ আটকে গেল সেদিকে। তাঁদের সম্পর্কে জানার কৌতূহল হলো।
বিনয়ের সঙ্গে জিজ্ঞেস করি, আপনাদের নাম কী?
এমন প্রশ্ন করতে দুজনেই হেসে ফেললেন। একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি শুরু করলেন। কে আগে জবাব দেবেন, এ নিয়ে যেন দ্বিধা। কোনোকিছুর ইঙ্গিত পাওয়ার আগেই খুব জোরেই একজন বললেন, ‘সুখমন।’ অপরজনের দিকে তাকাতেই তিনি একটু আস্তে বললেন, ‘দুখমন।’
সুখ আর দুঃখ যে তাঁদের জীবনের সঙ্গে গাঁথা রয়েছে তা তাঁদের সুরেই বোঝা গেল। এও বোঝা গেল, সুখ কত শক্তিশালী আর দুঃখ কত দুর্বল। তাঁদের কথার জোরই এর প্রমাণ। তবে, একটি তাঁদের জীবনের সঙ্গী হলেও অপরটির নাগাল পাননি তাঁরা। এই নামের মাঝেই সুখ, তা ভেবেই হয়তো সুখমন নিজের নামটা একটু জোরেই বলেছিলেন। মা-বাবা সে রকম ভেবেই হয়তো তাঁদের নাম রেখেছিলেন। হয়তো তাঁদের প্রত্যাশা ছিল, সুখমনের জীবনে সুখ আসবেই। তবে তা আর হয়নি। দুজনই যেন দুখমন হয়ে বেঁচে আছেন। একটি নামের সার্থকতা না পেলেও অপর নামের ঠিকই পেয়েছেন।
রাজশাহীর বাগমারার কাঁঠালবাড়ী গ্রামে তাঁদের বাড়ি। জানা গেল তাঁদের বেঁচে থাকার সংগ্রামের গল্প। সুখমন আর দুখমন হয়ে ওঠার গল্পও শোনালেন তাঁরা। তাঁদের সম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখে কোনোকিছু রাখঢাক না করে নিজেরাই বলতে লাগলেন। তাঁরা সম্পর্কে বোন। তবে সুখমন ঘণ্টা খানেকের বড় দুখমনের চেয়ে। তাঁরা দুজনেই একসঙ্গে জন্মেছেন। তাঁদের পরে আরও চার বোন, তবে তাঁরা তাঁদের মতো প্রতিবন্ধী নয়। ছয় বোনের মধ্যে তাঁরাই বড়। বাবা হারুন অর রশিদ আর মা তছিয়া বেওয়া মারা গেছেন অনেক আগেই। মা-বাবা মারা যাওয়ার পর প্রতিবন্ধী হয়েও ছোট বোনদের দায়িত্ব নিতে হয় তাঁদের। বড় হিসেবে অভিভাবকের দায় তো তাঁদের ঘাড়েই আসে। চেষ্টা করেছেন সে দায়িত্ব পালন করতে। এখনো পালন করে চলেছেন সে দায়িত্ব। উচ্চতায় খাটো হওয়ার কারণে নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয় তাঁদের। তার পরও সুখমন আর দুখমন নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছেন অনেকবার। তবে পারেননি অভাব, অনটন আর প্রতিবন্ধিতার কারণে। এটিই যেন তাঁদের জন্য অভিশাপ। একসময় বাড়িতে বসেই নকশিকাঁথা সেলাই করে বিক্রি করতেন সুখমন আর দুখমন। শুয়ে-বসে নিজেদের সুবিধামতো এ কাজ করতেন তাঁরা। এলাকার লোকজন তাঁদের কাছ থেকে সেগুলো কিনে নিয়ে যেতেন। এতে তাঁদের দু-চার পয়সা রোজগারও হতো। এভাবে ভালোই চলছিল তাঁদের। তবে সমস্যার কারণে বেশি দিন পারেননি এ পেশায় থাকতে। বেশিক্ষণ বসে থাকতে সমস্যা হয়, ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। পুরো শরীর ব্যথা হয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে এ কাজ ছেড়ে দিতে হয় তাঁদের। অন্য কিছু খোঁজার চেষ্টা করেন দুজনেই। ভাবলেন, ঘরসংসার করলে হয়তো এ যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণ পাবেন।
ঘরসংসার করার আগ্রহও রয়েছে তাঁদের। অন্যদের মতো সংসার যসাজিয়ে নেবেন। সন্তান লালন-পালন করবেন—কত স্বপ্ন তাঁদের। এ স্বপ্ন ও ভাবনা থেকে আজ থেকে ১৬ বছর আগে সংসারও শুরু করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু বেশি দিন টেকেনি তাঁদের সংসার। সব স্বপ্ন যেন ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। দুখমনের বিয়ে হয়েছিল একই উপজেলার হামিরকুৎসা গ্রামের একজনের সঙ্গে। আর ফরিদপুরের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সুখমনের। কিছুদিন সংসার করার পর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তাঁদের। প্রতিবন্ধিতার অপবাদে ভেঙে যায় সংসার। আর কোনো এক রাতে সুখমনকে রেখে চলে যান ফরিদপুরের প্রতারক স্বামী। আর সন্ধান পাওয়া যায়নি তাঁর। অনেক খুঁঁজেছেন, ভেবেছিলেন ফিরে আসবেন। এখনো আশা ছাড়েননি, তবে হতাশ সুখমন। সংসারের স্বপ্ন যেন স্বপ্নই থেকে গেছে তাঁদের। সে থেকেই তাঁরা আবারও একা।
নিজেদের উপার্জনে চলার অদম্য ইচ্ছা রয়েছে। টাকাপয়সা পেলে হয়তো কিছু একটা করতে পারবেন। শক্তি-সামর্থ্য কোনোটাই নেই তাঁদের। ইচ্ছা না থাকলেও জীবিকার তাগিদে মাঝেমধ্যে মানুষের সহযোগিতা নিতে হয় বেঁচে থাকার জন্য। তাঁরা চান না এ রকম সহযোগিতা নিতে। এ জন্য খুব খারাপ লাগে। অনাহার-অর্ধাহারেও থাকতে হয় সুখমন- দুখমনকে।
তাঁরা বেশিক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে পারেন না। কিছু দূর গিয়েই উল্টে পড়তে হয় রাস্তার মধ্যে। এ জন্য দুই বোন বাঁশের লাঠি বানিয়েছেন এক জোড়া করে। লাঠির ওপর ভর করে কোনোরকমে চলাচল করেন। কয়েক মিনিট হাঁটার পরই বিশ্রাম নিতে হয়। জিরিয়ে নিয়ে আবার লাঠিতে ভর দিয়ে ঠুকঠুক করে হেঁটে চলেন। নিজেদের স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন, আশা-প্রত্যাশা আর বঞ্চনার কথা শুনিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। কথার ফাঁকে ফাঁকে বারবার ঘোমটা টেনে ঢেকে দিচ্ছিলেন মুখমণ্ডল। ছবি তোলার প্রস্তাব দিতেই দুজনেই লাঠি হাতে করে লাফিয়ে উঠলেন। ঘোমটা টেনে কাছাকাছি এলেন সুখমন আর দুখমন।
দুজনের পাশেই রয়েছে বাঁশের লাঠি। একটু দূর থেকে লক্ষ করছিলাম তাঁদের। চেহারায়ও অদ্ভুত মিল। বয়স আন্দাজ ৪২ অথবা ৪৫। উচ্চতায় অনেক ছোট। এ কারণেই চোখ আটকে গেল সেদিকে। তাঁদের সম্পর্কে জানার কৌতূহল হলো।
বিনয়ের সঙ্গে জিজ্ঞেস করি, আপনাদের নাম কী?
এমন প্রশ্ন করতে দুজনেই হেসে ফেললেন। একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি শুরু করলেন। কে আগে জবাব দেবেন, এ নিয়ে যেন দ্বিধা। কোনোকিছুর ইঙ্গিত পাওয়ার আগেই খুব জোরেই একজন বললেন, ‘সুখমন।’ অপরজনের দিকে তাকাতেই তিনি একটু আস্তে বললেন, ‘দুখমন।’
সুখ আর দুঃখ যে তাঁদের জীবনের সঙ্গে গাঁথা রয়েছে তা তাঁদের সুরেই বোঝা গেল। এও বোঝা গেল, সুখ কত শক্তিশালী আর দুঃখ কত দুর্বল। তাঁদের কথার জোরই এর প্রমাণ। তবে, একটি তাঁদের জীবনের সঙ্গী হলেও অপরটির নাগাল পাননি তাঁরা। এই নামের মাঝেই সুখ, তা ভেবেই হয়তো সুখমন নিজের নামটা একটু জোরেই বলেছিলেন। মা-বাবা সে রকম ভেবেই হয়তো তাঁদের নাম রেখেছিলেন। হয়তো তাঁদের প্রত্যাশা ছিল, সুখমনের জীবনে সুখ আসবেই। তবে তা আর হয়নি। দুজনই যেন দুখমন হয়ে বেঁচে আছেন। একটি নামের সার্থকতা না পেলেও অপর নামের ঠিকই পেয়েছেন।
রাজশাহীর বাগমারার কাঁঠালবাড়ী গ্রামে তাঁদের বাড়ি। জানা গেল তাঁদের বেঁচে থাকার সংগ্রামের গল্প। সুখমন আর দুখমন হয়ে ওঠার গল্পও শোনালেন তাঁরা। তাঁদের সম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখে কোনোকিছু রাখঢাক না করে নিজেরাই বলতে লাগলেন। তাঁরা সম্পর্কে বোন। তবে সুখমন ঘণ্টা খানেকের বড় দুখমনের চেয়ে। তাঁরা দুজনেই একসঙ্গে জন্মেছেন। তাঁদের পরে আরও চার বোন, তবে তাঁরা তাঁদের মতো প্রতিবন্ধী নয়। ছয় বোনের মধ্যে তাঁরাই বড়। বাবা হারুন অর রশিদ আর মা তছিয়া বেওয়া মারা গেছেন অনেক আগেই। মা-বাবা মারা যাওয়ার পর প্রতিবন্ধী হয়েও ছোট বোনদের দায়িত্ব নিতে হয় তাঁদের। বড় হিসেবে অভিভাবকের দায় তো তাঁদের ঘাড়েই আসে। চেষ্টা করেছেন সে দায়িত্ব পালন করতে। এখনো পালন করে চলেছেন সে দায়িত্ব। উচ্চতায় খাটো হওয়ার কারণে নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয় তাঁদের। তার পরও সুখমন আর দুখমন নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছেন অনেকবার। তবে পারেননি অভাব, অনটন আর প্রতিবন্ধিতার কারণে। এটিই যেন তাঁদের জন্য অভিশাপ। একসময় বাড়িতে বসেই নকশিকাঁথা সেলাই করে বিক্রি করতেন সুখমন আর দুখমন। শুয়ে-বসে নিজেদের সুবিধামতো এ কাজ করতেন তাঁরা। এলাকার লোকজন তাঁদের কাছ থেকে সেগুলো কিনে নিয়ে যেতেন। এতে তাঁদের দু-চার পয়সা রোজগারও হতো। এভাবে ভালোই চলছিল তাঁদের। তবে সমস্যার কারণে বেশি দিন পারেননি এ পেশায় থাকতে। বেশিক্ষণ বসে থাকতে সমস্যা হয়, ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। পুরো শরীর ব্যথা হয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে এ কাজ ছেড়ে দিতে হয় তাঁদের। অন্য কিছু খোঁজার চেষ্টা করেন দুজনেই। ভাবলেন, ঘরসংসার করলে হয়তো এ যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণ পাবেন।
ঘরসংসার করার আগ্রহও রয়েছে তাঁদের। অন্যদের মতো সংসার যসাজিয়ে নেবেন। সন্তান লালন-পালন করবেন—কত স্বপ্ন তাঁদের। এ স্বপ্ন ও ভাবনা থেকে আজ থেকে ১৬ বছর আগে সংসারও শুরু করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু বেশি দিন টেকেনি তাঁদের সংসার। সব স্বপ্ন যেন ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। দুখমনের বিয়ে হয়েছিল একই উপজেলার হামিরকুৎসা গ্রামের একজনের সঙ্গে। আর ফরিদপুরের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সুখমনের। কিছুদিন সংসার করার পর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তাঁদের। প্রতিবন্ধিতার অপবাদে ভেঙে যায় সংসার। আর কোনো এক রাতে সুখমনকে রেখে চলে যান ফরিদপুরের প্রতারক স্বামী। আর সন্ধান পাওয়া যায়নি তাঁর। অনেক খুঁঁজেছেন, ভেবেছিলেন ফিরে আসবেন। এখনো আশা ছাড়েননি, তবে হতাশ সুখমন। সংসারের স্বপ্ন যেন স্বপ্নই থেকে গেছে তাঁদের। সে থেকেই তাঁরা আবারও একা।
নিজেদের উপার্জনে চলার অদম্য ইচ্ছা রয়েছে। টাকাপয়সা পেলে হয়তো কিছু একটা করতে পারবেন। শক্তি-সামর্থ্য কোনোটাই নেই তাঁদের। ইচ্ছা না থাকলেও জীবিকার তাগিদে মাঝেমধ্যে মানুষের সহযোগিতা নিতে হয় বেঁচে থাকার জন্য। তাঁরা চান না এ রকম সহযোগিতা নিতে। এ জন্য খুব খারাপ লাগে। অনাহার-অর্ধাহারেও থাকতে হয় সুখমন- দুখমনকে।
তাঁরা বেশিক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে পারেন না। কিছু দূর গিয়েই উল্টে পড়তে হয় রাস্তার মধ্যে। এ জন্য দুই বোন বাঁশের লাঠি বানিয়েছেন এক জোড়া করে। লাঠির ওপর ভর করে কোনোরকমে চলাচল করেন। কয়েক মিনিট হাঁটার পরই বিশ্রাম নিতে হয়। জিরিয়ে নিয়ে আবার লাঠিতে ভর দিয়ে ঠুকঠুক করে হেঁটে চলেন। নিজেদের স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন, আশা-প্রত্যাশা আর বঞ্চনার কথা শুনিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। কথার ফাঁকে ফাঁকে বারবার ঘোমটা টেনে ঢেকে দিচ্ছিলেন মুখমণ্ডল। ছবি তোলার প্রস্তাব দিতেই দুজনেই লাঠি হাতে করে লাফিয়ে উঠলেন। ঘোমটা টেনে কাছাকাছি এলেন সুখমন আর দুখমন।
সুত্র: প্রথম আলো।
ভূমিকম্প সম্পার্কিত
১২০২ সালের ২০ মে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। এ ভূমিকম্পে প্রায় ১০ লাখ লোক মারা যায়। কেবল মিসরের কায়রোয় এক লাখ ১০ হাজার লোক মারা যায়। চীনের সাংহাইতে ১৫৫৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি যে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়, তাতে প্রায় আট লাখ ২০ হাজার লোক মারা যায়।
১৭৩৭ সালের ১১ অক্টোবর ভারতের কলকাতায় যে ভূমিকম্প হয়, তাতে প্রায় তিন লাখ লোক মারা যায়।
চীনের কানসু প্রদেশে ১৯২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভূমিকম্প ও ভূমিধসের ঘটনায় এক লাখ ৮০ হাজার লোক মারা যায়। কাশ্মীরে ২০০৫ সালের ৮ অক্টোবরের ভূমিকম্পে ৮৭ হাজার ৩৫০ জন মারা যায়।
দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী ভূমিকম্প
অধিকাংশ সময় ভূমিকম্প এক কিংবা দুই মিনিট স্থায়ী হয়। কিন্তু ১৯৬৪ সালের ২৭ মার্চ আলাস্কায় যে ভূমিকম্প হয় তা পাঁচ মিনিট স্থায়ী ছিল এবং রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৬। তবে এ ভূমিকম্পে ১৩১ জন লোক মারা যায় কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
শক্তিশালী ভূমিকম্প
বসতি এলাকায় সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয় ১২ জুন, ১৮৯৭ সালে ভারতের আসামে। এ ভূমিকম্পে প্রায় এক হাজার ৫০০ লোক মারা যায়।
কলম্বিয়ায় ৩১ জানুয়ারি ১৯০৬ সালে ৮ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। উপকূল থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে সমুদ্র-গভীরে হওয়ায় মাত্র এক হাজার লোকের মৃত্যু ঘটে।
মিনহুন নাহার
সূত্র: ওয়ান্ডার ফ্যাক্টস
১৭৩৭ সালের ১১ অক্টোবর ভারতের কলকাতায় যে ভূমিকম্প হয়, তাতে প্রায় তিন লাখ লোক মারা যায়।
চীনের কানসু প্রদেশে ১৯২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভূমিকম্প ও ভূমিধসের ঘটনায় এক লাখ ৮০ হাজার লোক মারা যায়। কাশ্মীরে ২০০৫ সালের ৮ অক্টোবরের ভূমিকম্পে ৮৭ হাজার ৩৫০ জন মারা যায়।
দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী ভূমিকম্প
অধিকাংশ সময় ভূমিকম্প এক কিংবা দুই মিনিট স্থায়ী হয়। কিন্তু ১৯৬৪ সালের ২৭ মার্চ আলাস্কায় যে ভূমিকম্প হয় তা পাঁচ মিনিট স্থায়ী ছিল এবং রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৬। তবে এ ভূমিকম্পে ১৩১ জন লোক মারা যায় কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
শক্তিশালী ভূমিকম্প
বসতি এলাকায় সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয় ১২ জুন, ১৮৯৭ সালে ভারতের আসামে। এ ভূমিকম্পে প্রায় এক হাজার ৫০০ লোক মারা যায়।
কলম্বিয়ায় ৩১ জানুয়ারি ১৯০৬ সালে ৮ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। উপকূল থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে সমুদ্র-গভীরে হওয়ায় মাত্র এক হাজার লোকের মৃত্যু ঘটে।
মিনহুন নাহার
সূত্র: ওয়ান্ডার ফ্যাক্টস
| তারিখ: ২২-১০-২০১০
পৌরাণিক কাহিনির প্রাণী
ড্রাগন: ড্রাগন বিভিন্ন দেশের পৌরাণিক কাহিনিতে পাওয়া যায়। চীন দেশে সম্রাটের প্রতীক হলো ড্রাগন। ড্রাগনের দেহ সাপের মতো লম্বাটে ও আঁশভর্তি এবং বড় ডানা আছে। আর এদের নিঃশ্বাসের সঙ্গে আগুন বের হয়। লোককথায় আছে, ড্রাগনেরা গুহার গুপ্তধন পাহারা দিয়ে থাকে।
সেনতোর: সেনতোর হচ্ছে অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক ঘোড়া। এদের দেহ ঘোড়ার মতো, কিন্তু মানুষের মতো মাথা ও হাত আছে। গ্রিক পৌরাণিক কাহিনিতে এদের বর্ণনায় পাওয়া যায়, গ্রিসের উত্তরাংশের থেসালি থেকে এরা এসেছে। ধারণা করা হয়, সেখানকার মানুষের অশ্বচালনার নৈপুণ্য ও দক্ষতার জন্য সেনতোরের কাহিনির প্রচলন ঘটেছে।
পরি: বহু দেশের গল্পকাহিনিতে পরির বর্ণনা পাওয়া যায়। পরিরা দেখতে সন্দর, মিষ্টি এবং মধুর স্বভাবের হয়ে থাকে। মধ্যযুগীয় লোকেরা বিশ্বাস করত, পরিরা বাচ্চাদের চুরি করে নিয়ে যায় এবং তার পরিবর্তে কদাকার শিশু রেখে যায়।
ইউনিকর্ন: ইউনিকর্নের দেহ ঘোড়ার মতো, লেজ সিংহের মতো, ছাগলের মতো দাড়ি, হরিনের মতো পা। আর পাকানো একটি শিং কপাল থেকে বের হয়। মধ্যযুগীয় গল্পে ইউনিকর্ন খুব জনপ্রিয় ছিল। এরা হিংস্র ছিল। শিঙের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ ও বিষ নিষ্ক্রিয় করতে পারত ।
ভ্যাম্পায়ার: ভ্যাম্পায়ারের মৃত্যু নেই; আর বেঁচে থাকার জন্য একে রক্ত পান করতে হয়। ভ্যাম্পায়ার সম্পর্কে গল্প প্রচলিত আছে, যদি কাঠের টুকরা এর হূৎপিণ্ডে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে ভ্যাম্পায়ারের মৃত্যু ঘটে। ইউরোপের কিছু মানুষ বিশ্বাস করে, রসুন, ক্রুশচিহ্ন, পবিত্র বাইবেল ইত্যাদির মাধ্যমে ভ্যাম্পায়ার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ট্রল: স্ক্যান্ডেনেভীয় রূপকথার ট্রলরা দেখতে কিম্ভূতকিমাকার এবং বামন আকৃতির। এরা ঘুমন্ত শিশুকে চুরি করে নিয়ে যায় এবং পরিবর্তন করে বামন আকৃতির শিশু রেখে যায়। এরা চোখে কম দেখে এবং কেবল রাতে জেগে ওঠে, কারণ সূর্যের আলোতে ট্রলরা পাথর হয়ে যায়।
সূত্র: বুক অব ফ্যাক্টস
সেনতোর: সেনতোর হচ্ছে অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক ঘোড়া। এদের দেহ ঘোড়ার মতো, কিন্তু মানুষের মতো মাথা ও হাত আছে। গ্রিক পৌরাণিক কাহিনিতে এদের বর্ণনায় পাওয়া যায়, গ্রিসের উত্তরাংশের থেসালি থেকে এরা এসেছে। ধারণা করা হয়, সেখানকার মানুষের অশ্বচালনার নৈপুণ্য ও দক্ষতার জন্য সেনতোরের কাহিনির প্রচলন ঘটেছে।
পরি: বহু দেশের গল্পকাহিনিতে পরির বর্ণনা পাওয়া যায়। পরিরা দেখতে সন্দর, মিষ্টি এবং মধুর স্বভাবের হয়ে থাকে। মধ্যযুগীয় লোকেরা বিশ্বাস করত, পরিরা বাচ্চাদের চুরি করে নিয়ে যায় এবং তার পরিবর্তে কদাকার শিশু রেখে যায়।
ইউনিকর্ন: ইউনিকর্নের দেহ ঘোড়ার মতো, লেজ সিংহের মতো, ছাগলের মতো দাড়ি, হরিনের মতো পা। আর পাকানো একটি শিং কপাল থেকে বের হয়। মধ্যযুগীয় গল্পে ইউনিকর্ন খুব জনপ্রিয় ছিল। এরা হিংস্র ছিল। শিঙের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ ও বিষ নিষ্ক্রিয় করতে পারত ।
ভ্যাম্পায়ার: ভ্যাম্পায়ারের মৃত্যু নেই; আর বেঁচে থাকার জন্য একে রক্ত পান করতে হয়। ভ্যাম্পায়ার সম্পর্কে গল্প প্রচলিত আছে, যদি কাঠের টুকরা এর হূৎপিণ্ডে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে ভ্যাম্পায়ারের মৃত্যু ঘটে। ইউরোপের কিছু মানুষ বিশ্বাস করে, রসুন, ক্রুশচিহ্ন, পবিত্র বাইবেল ইত্যাদির মাধ্যমে ভ্যাম্পায়ার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ট্রল: স্ক্যান্ডেনেভীয় রূপকথার ট্রলরা দেখতে কিম্ভূতকিমাকার এবং বামন আকৃতির। এরা ঘুমন্ত শিশুকে চুরি করে নিয়ে যায় এবং পরিবর্তন করে বামন আকৃতির শিশু রেখে যায়। এরা চোখে কম দেখে এবং কেবল রাতে জেগে ওঠে, কারণ সূর্যের আলোতে ট্রলরা পাথর হয়ে যায়।
সূত্র: বুক অব ফ্যাক্টস
| তারিখ: ২২-১০-২০১০
সাগরতলে উড়োজাহাজ
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ডুবে যাওয়া জাহাজ খুঁজতে গিয়ে সন্ধান মিলল এক যুদ্ধবিমানের
সাগরের তলদেশে কোনোকিছুতে নোঙর আটকালেই আজাদের চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। গত ২৫ জুলাই এ রকমই একটি ঘটনা ঘটে বন্দরের বহির্নোঙরে, সি অ্যাংকরেজ এলাকায়। হঠাৎ কোনোকিছুতে নোঙর আটকে গিয়ে তীব্র টান অনুভব করেন আজাদ। বোটের ইঞ্জিন বন্ধ করে ডুবুরি রহমানকে নামিয়ে দেন। আর আনা হয় বার্জ ও উদ্ধারের যন্ত্রপাতি। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আজাদ নিজেও নেমে পড়েন সাগরে। সাগরের নিচে ডুবে থাকা জাহাজের কাদামাটি সরানো হয়। এরপর মোটা তারের সাহায্যে শুরু হয় উত্তোলন-পর্ব। কিন্তু জাহাজ নয়, সাগরের তলদেশ থেকে উঠে আসছে উড়োজাহাজ—উড়োজাহাজের টায়ার, আগ্নেয়াস্ত্র, গুলির বাক্স...।
প্রায় এক মাস ধরে চলা উদ্ধারকাজ শেষ না হতেই আজাদের বাহিনীকে একদিন অতর্কিতে ঘিরে ফেলে জলদস্যুরা। দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় সশস্ত্র দস্যুদল ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে বাঁশখালী উপকূলের দিকে জিম্মি করে নিয়ে যায় আজাদের প্রতিষ্ঠান হিরামণি স্যালভেজের দুই কর্মী ইয়ার মোহাম্মদ ও বাদল হাওলাদারকে। নিজের দুই কর্মীকে বাঁচাতে আজাদ বাধ্য হন মুক্তিপণ দিতে। জলদস্যুদের ভয়ে বন্ধ হয়ে যায় উদ্ধারকাজ। এ পর্যন্ত উদ্ধারকৃত বিমানের বিভিন্ন অংশ, গোলাবারুদ এখন পড়ে আছে কর্ণফুলী নদীর ১৫ নম্বর ঘাটের অদূরে বিজয়নগর এলাকায়।
বন্দরের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন নাজমুল আলম ধারণা করছেন, এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কোনো উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ।
ঘটনা জানার পর বিমানবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার করা উড়োজাহাজের অংশগুলো দেখে গেছেন। তাঁরাও মনে করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া কোনো বিমান ছিল এটি।
বহির্নোঙরের সি অ্যাংকরেজ এলাকায় সাগরতলায় ডুবে থাকা জাহাজ, লোহালক্কড় উদ্ধারের অনুমতি বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে নেওয়া ছিল আজাদের প্রতিষ্ঠানের নামে। উদ্ধার করা লোহালক্কড় বিক্রি থেকেই মূল আয় আজাদের। কিন্তু এ যাত্রায় আজাদ এখন পর্যন্ত খরচই তুলতে পারেননি; উদ্ধারকাজ শুরু না হলে সেই সম্ভাবনাও নেই।
তবে আজাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা পাশাপাশি আরেকটি উদ্ধারকাজ করছেন; অ্যাভলুস নামের একটি জাহাজ তোলার চেষ্টা করছেন সাগরের তলা থেকে। ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা মাইন দিয়ে ধ্বংস করেছিলেন এই গ্রিক জাহাজটি। বন্দরের ডলফিন জেটির অদূরে ডুবে থাকা জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টা করে যাচ্ছেন আবুল কালাম আজাদের ডুবুরি দল। চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার বুক অব ইনফরমেশন-১৯৭৩-এর তথ্যমতে, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা ছোট-বড় ২১টি জাহাজের ক্ষতি করেছিলেন। এই ২১টি জাহাজের একটি এই অ্যাভলুস।
তবে একটানা কাজ করা যাচ্ছে না। জেটিতে জাহাজ না থাকলে উদ্ধারকাজ চলে, আর নয়তো বন্ধ। জেটিতে জাহাজের ভিড় না থাকলে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে অ্যাভলুস জাহাজটি পুরোপুরি উদ্ধার করা সম্ভব হবে মনে করছেন আজাদ।
বন্দর চ্যানেল ও বহির্নোঙরে জাহাজ চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে এমনিতেই অপসারণ করতে হয় ডুবে থাকা জাহাজ। নানা কারণে প্রতিবছর গড়ে চার থেকে ছয়টি জাহাজ দুর্ঘটনায় পড়ে বন্দর এলাকায় ডুবে যায়। কোনো কোনো সময় ডুবে থাকা জাহাজে ধাক্কা লেগেও দুর্ঘটনা ঘটে। আজাদের প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত ছোট-বড় ১৬টি জাহাজ কর্ণফুলী নদী ও সমুদ্র থেকে উদ্ধার করেছে। এগুলোর মধ্যে এমভি কারই সেনতোসা, এমভি ওশেন ওয়েভ, এমভি শাহ বদর-১, এমভি রামগতি, এমভি স্টার আল তাইর, এমভি সাগর, এমভি মমিন, এমভি মেয়জিন, এমভি বাংলার কিরণ, এমভি মেঘনা, এমভি পেসিফিক-৩, এমভি সুমি-৩, এমভি লিতা উল্লেখ্যযোগ্য।
উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন নাজমুল আলম মনে করেন, ‘আজাদের প্রতিষ্ঠান কৃতিত্বের সঙ্গে বন্দর এলাকায় ডুবে যাওয়া জাহাজ অপসারণের কাজ করছে। শর্ত সাপেক্ষে এসব জাহাজ উদ্ধারের অনুমতি দিই আমরা।’
আজাদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদ্ধারকাজ হচ্ছে, চাক্তাই খালের মুখে আড়াআড়িভাবে ডুবে থাকা বিদেশি এক জাহাজের উদ্ধার অভিযান। এই জাহাজের কারণে চট্টগ্রাম নগর থেকে আসা পানির স্রোত কর্ণফুলী নদীতে পড়তে বাধাপ্রাপ্ত হতো। আজাদ বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দায়িত্ব পেয়ে জাহাজটি অপসারণের কাজ শুরু করেন। আজাদ বলেন, ‘জাহাজটি অপসারণের পুরো খরচ আমার ওঠেনি। তবে জাহাজটি সরানোর ফলে নগরের পানির স্রোত এখন আর বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে না।’
সমুদ্রের তলদেশে কাজ করতে গিয়ে আজাদকে বিপদেও পড়তে হয়েছে অনেকবার। উত্তাল সাগরের সঙ্গে যুদ্ধ তো আছেই, আছে জলদস্যুদের খপ্পরে পড়ার আতঙ্ক। এর বাইরে ছোটখাটো দুর্ঘটনায়ও পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন সময়। একবার সাগরের নিচে বড় এক মাছের গুঁতোয় প্রায় জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা হয়েছিল আজাদের। সঙ্গীরা টের পেয়ে তাঁকে টেনে তোলেন বার্জে।
বরগুনার পায়রা নদীতে মাছ ধরে কেটেছে আবুল কালাম আজাদের ছোটবেলা। নদীর এপার থেকে ওপারে সাঁতার কাটতেই তার ছিল যত আনন্দ। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে পড়ালেখা করা হয়নি। মাত্র ২০ বছর বয়সেই ১৯৮৪ সালের দিকে চলে আসেন চট্টগ্রামে। সীতাকুণ্ডের এক জাহাজভাঙা ইয়ার্ডে হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই ইয়ার্ডে ভাঙার জন্য আনা একটি স্ক্র্যাপ জাহাজ একবার তীরের কাছে ডুবে গেলে জরুরি ভিত্তিতে দরকার হয়ে পড়ে ডুবুরির। আজাদ সাহস করে অক্সিজেন-মাস্ক পরে নেমে যান পানির নিচে। এভাবেই হেলপার থেকে আজাদ একদিন বনে গেলেন ডুবুরি। পাঁচ বছর পর চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার স্যালভেজ প্রতিষ্ঠানের ডুবুরি হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার পর থেকেই দক্ষ ডুবুরি হিসেবে আজাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
প্রতিবছর চট্টগ্রাম এলাকায় দুর্ঘটনায় ডুবছে জাহাজ। কিন্তু এসব জাহাজ উদ্ধারের জন্য এখনো পর্যাপ্তসংখ্যক প্রতিষ্ঠান নেই। সেই সমস্যা থেকেই সমাধান এল তাঁর মাথায়, নিজে যদি একটা প্রতিষ্ঠান গড়তে পারেন তাহলে উদ্ধারকাজের জন্য কারও মুখের দিকে চেয়ে থাকতে হবে না। জমানো টাকায় আজাদ গড়ে তুললেন হিরামণি স্যালভেজ। ১৫ বছর আগের ঘটনা এটা।
নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ার পর আজাদ প্রথম যে সমস্যায় পড়লেন তা হলো দক্ষ ডুবুরির অভাব। খুঁজে খুঁজে তিনি সাহসী কিছু লোক জড়ো করে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। এখন তাঁর ডুবুরি বাহিনীর সুনাম চারদিকে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জন ডুবুরিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন নিজে। তাঁর তিন ভাইও এই পেশায় জড়িত।
চট্টগ্রামের এমন কোনো স্যালভেজ প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে আজাদের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া ডুবুরি কাজ করছেন না। বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নপত্র দেখে আজাদের প্রশিক্ষিত তিনজন ডবুরিকে দুবাইভিত্তিক একটি স্যালভেজ কোম্পানি নিয়োগ দিয়েছে। আরও সাতজন ডুবুরির বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তাঁদেরই একজন ইউসুফ, ‘হেই আমাগো বড় ওস্তাদ।’ তিনি বলেন, ‘হেলপার থেকে তাঁর প্রশিক্ষণে আমি ডুবুরি হয়েছি। ওস্তাদ এখন আমাদের বিদেশে কাজ করার সুযোগ করে দিচ্ছেন।’ ইউসুফ আশা করছেন, এক মাসের মধ্যে দেশের বাইরে কোথাও কাজ জুটে যাবে তাঁর।
সাগরের তলদেশ থেকে ঘুমিয়ে থাকা জাহাজের ঘুম ভাঙানোই এখন তাঁর নেশা। এই নেশার টানেই প্রায় ৪৭ বছর বয়সেও তিনি চষে বেড়াচ্ছেন উত্তাল সাগর।
সুত্র: প্রথম আলো। মাসুদ মিলাদ | তারিখ: ২২-১০-২০১০
Wednesday, October 20, 2010
ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা
বর্তমানে মানুষের সামাজিক জীবনযাপন অনেকটাই ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে যাচ্ছে। পারস্পরিক যোগাযোগ, আড্ডা, আলোচনাসহ দৈনন্দিন যোগাযোগের প্রায় সবকিছুতেই এখন ইন্টারনেট ব্যবহূত হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সব সময়ই তরুণেরা এগিয়ে ছিল, কিন্তু সামাজিক জীবনযাপন এবং যোগাযোগের এই নতুন মাধ্যমটি ব্যবহারে সব বয়সের মানুষের মধ্যেই ব্যাপকতা লক্ষ করা যায়।
ইন্টারনেট একটি মুক্ত জায়গা। সবাই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে সহজেই। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট, ব্লগ, অনলাইন ফোরামগুলো পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করার পথটি আরও সহজ করে দিয়েছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই যেহেতু এই সেবাগুলো বিনা মূল্যে পাওয়া যায়, তাই ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেশ দ্রুত বাড়তে থাকে। এভাবেই অনেকে খুঁজে পান পুরোনো দিনের বন্ধুদের, সেই সঙ্গে নতুন নতুন বন্ধু পাওয়ার সুযোগ তো রয়েছেই। সহজ যোগাযোগের কারণে আবার বিপদও ঘটে।
ইন্টারনেটে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা। প্রথমেই সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের কথা বলা যেতে পারে, প্রাসঙ্গিকভাবেই এ ধরনের ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীরা তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে থাকেন। তাই ব্যবহারকারীর বন্ধু তালিকায় নতুন কারা যুক্ত হচ্ছেন, সেই বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যবহারকারীর প্রোফাইলের কোন অংশটি কাদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, সেটিও সঠিকভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। যেমন, স্বাভাবিকভাবেই অনেকে চাইবেন না যে তাঁর পারিবারিক ছবিগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত থাকুক অথবা ব্লগে তাঁর সব প্রকাশনাতেই যে কেউ মন্তব্য করুক। আর এই ওয়েবসাইটের পৃষ্ঠাগুলো বন্ধু তালিকার বাইরে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া থাকবে কি না, সেটি নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত।
ফেসবুক (www.facebook.com), মাইস্পেস (www.mayspace.com), অর্কুট (www.orkut.com)-এর মতো সামাজিক যোগাযোগের সাইটে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রণ করার বিভিন্ন ধরনের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা আছে। যেকোনো ব্যবহারকারী ইচ্ছা অনুযায়ী এগুলো পরিবর্তন করতে পারবেন। যেমন, ফেসবুকে প্রাইভেসি সেটিং Accounts মেনুর Privacy Setting অপশন থেকে অথবা সরাসরি www.facebook.com/settings/?tab=privacy ঠিকানা থেকেও পরিবর্তন করা যাবে। প্রোফাইলে যুক্ত করা প্রতিটি তথ্য কাদের জন্য উন্মুক্ত করা থাকবে, সেটি উল্লেখ করে দেওয়া যাবে। এ ছাড়া এখানে যেকোনো ছবির অ্যালবাম যুক্ত করার সময়ও একইভাবে বলে দেওয়া যাবে, কারা ছবিগুলো দেখতে পারবে। একইভাবে মাইস্পেসে My Accounts-এর Privacy ট্যাব এবং অর্কুট প্রোফাইলের ওপরের settings থেকে এই ধরনের অপশনগুলো পাওয়া যাবে।
একইভাবে ছবি আদান-প্রদানের জন্য ফ্লিকার (www.flickr.com) এবং পিকাসা (www.picasaweb.google.com) বেশ জনপ্রিয়। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সঙ্গে সঙ্গে এখানে আরও একটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, আর সেটি হলো ছবি ব্যবহার করার নীতি। অর্থাৎ, ব্যবহারকারী যে ছবিগুলো প্রকাশ করছেন, সেগুলো অন্য কেউ সরাসরি অথবা আংশিক পরিবর্তন করে ব্যবহার করতে চাইলে অনুমতি দেওয়া হবে কি না, সেটি উল্লেখ করে দেওয়া। একই সঙ্গে যেকোনো ব্যবহারকারী মূল ছবিটি ডাউনলোড করতে পারবে কি না, সেটিও নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। ইন্টারনেটে প্রকাশিত ছবির লাইসেন্স কেমন হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারা যাবে http://creativecommons.org/ about/ licenses ঠিকানা থেকে।
সামাজিক যোগাযোগের প্রোফাইল অথবা ব্লগের লেখা উন্মুক্ত করে দেওয়া থাকলেই যে কেউ যা ইচ্ছা মন্তব্য করতে পারবে না। ছবি প্রকাশের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। ব্যক্তিগতভাবে আঘাত দিয়ে অথবা অশালীন ছবি বা মন্তব্য প্রকাশের মাধ্যমে অপরকে হেয়প্রতিপন্ন করা যাবে না। এ ধরনের প্রায় প্রতিটি ওয়েবসাইটে সাধারণভাবে প্রকাশিত প্রতিটি মন্তব্য এবং ছবির নিচের অংশে ‘রিপোর্ট অথবা অভিযোগ করুন’ নামের একটি লিংক থাকে, যেটি ব্যবহার করে এ ধরনের যেকোনো অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী ওই অভিযুক্ত ব্যবহারকারীকে সাময়িক অথবা স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে দেওয়া হতে পারে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে আইপি ঠিকানা অনুযায়ী ব্লক করা হয়, ফলে পরবর্তী সময়ে কখনোই সেই ব্যবহারকারী সেখানে যুক্ত হতে পারে না।
তথ্য সুত্র: প্রথম আলো। নাসির খান | তারিখ: ২৪-০৯-২০১০
ইন্টারনেট একটি মুক্ত জায়গা। সবাই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে সহজেই। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট, ব্লগ, অনলাইন ফোরামগুলো পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করার পথটি আরও সহজ করে দিয়েছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই যেহেতু এই সেবাগুলো বিনা মূল্যে পাওয়া যায়, তাই ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেশ দ্রুত বাড়তে থাকে। এভাবেই অনেকে খুঁজে পান পুরোনো দিনের বন্ধুদের, সেই সঙ্গে নতুন নতুন বন্ধু পাওয়ার সুযোগ তো রয়েছেই। সহজ যোগাযোগের কারণে আবার বিপদও ঘটে।
ইন্টারনেটে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা। প্রথমেই সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের কথা বলা যেতে পারে, প্রাসঙ্গিকভাবেই এ ধরনের ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীরা তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে থাকেন। তাই ব্যবহারকারীর বন্ধু তালিকায় নতুন কারা যুক্ত হচ্ছেন, সেই বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যবহারকারীর প্রোফাইলের কোন অংশটি কাদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, সেটিও সঠিকভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। যেমন, স্বাভাবিকভাবেই অনেকে চাইবেন না যে তাঁর পারিবারিক ছবিগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত থাকুক অথবা ব্লগে তাঁর সব প্রকাশনাতেই যে কেউ মন্তব্য করুক। আর এই ওয়েবসাইটের পৃষ্ঠাগুলো বন্ধু তালিকার বাইরে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া থাকবে কি না, সেটি নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত।
ফেসবুক (www.facebook.com), মাইস্পেস (www.mayspace.com), অর্কুট (www.orkut.com)-এর মতো সামাজিক যোগাযোগের সাইটে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রণ করার বিভিন্ন ধরনের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা আছে। যেকোনো ব্যবহারকারী ইচ্ছা অনুযায়ী এগুলো পরিবর্তন করতে পারবেন। যেমন, ফেসবুকে প্রাইভেসি সেটিং Accounts মেনুর Privacy Setting অপশন থেকে অথবা সরাসরি www.facebook.com/settings/?tab=privacy ঠিকানা থেকেও পরিবর্তন করা যাবে। প্রোফাইলে যুক্ত করা প্রতিটি তথ্য কাদের জন্য উন্মুক্ত করা থাকবে, সেটি উল্লেখ করে দেওয়া যাবে। এ ছাড়া এখানে যেকোনো ছবির অ্যালবাম যুক্ত করার সময়ও একইভাবে বলে দেওয়া যাবে, কারা ছবিগুলো দেখতে পারবে। একইভাবে মাইস্পেসে My Accounts-এর Privacy ট্যাব এবং অর্কুট প্রোফাইলের ওপরের settings থেকে এই ধরনের অপশনগুলো পাওয়া যাবে।
একইভাবে ছবি আদান-প্রদানের জন্য ফ্লিকার (www.flickr.com) এবং পিকাসা (www.picasaweb.google.com) বেশ জনপ্রিয়। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সঙ্গে সঙ্গে এখানে আরও একটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, আর সেটি হলো ছবি ব্যবহার করার নীতি। অর্থাৎ, ব্যবহারকারী যে ছবিগুলো প্রকাশ করছেন, সেগুলো অন্য কেউ সরাসরি অথবা আংশিক পরিবর্তন করে ব্যবহার করতে চাইলে অনুমতি দেওয়া হবে কি না, সেটি উল্লেখ করে দেওয়া। একই সঙ্গে যেকোনো ব্যবহারকারী মূল ছবিটি ডাউনলোড করতে পারবে কি না, সেটিও নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। ইন্টারনেটে প্রকাশিত ছবির লাইসেন্স কেমন হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারা যাবে http://creativecommons.org/ about/ licenses ঠিকানা থেকে।
সামাজিক যোগাযোগের প্রোফাইল অথবা ব্লগের লেখা উন্মুক্ত করে দেওয়া থাকলেই যে কেউ যা ইচ্ছা মন্তব্য করতে পারবে না। ছবি প্রকাশের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। ব্যক্তিগতভাবে আঘাত দিয়ে অথবা অশালীন ছবি বা মন্তব্য প্রকাশের মাধ্যমে অপরকে হেয়প্রতিপন্ন করা যাবে না। এ ধরনের প্রায় প্রতিটি ওয়েবসাইটে সাধারণভাবে প্রকাশিত প্রতিটি মন্তব্য এবং ছবির নিচের অংশে ‘রিপোর্ট অথবা অভিযোগ করুন’ নামের একটি লিংক থাকে, যেটি ব্যবহার করে এ ধরনের যেকোনো অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী ওই অভিযুক্ত ব্যবহারকারীকে সাময়িক অথবা স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে দেওয়া হতে পারে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে আইপি ঠিকানা অনুযায়ী ব্লক করা হয়, ফলে পরবর্তী সময়ে কখনোই সেই ব্যবহারকারী সেখানে যুক্ত হতে পারে না।
তথ্য সুত্র: প্রথম আলো। নাসির খান | তারিখ: ২৪-০৯-২০১০
অদ্ভুত বিকিকিনি
অনলাইনে কেনাকাটার নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইবে’। ৩০টি দেশের লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন এর মাধ্যমে জিনিসপত্র কেনাবেচা করে। অনেকে দেয় অদ্ভুত সব বিজ্ঞাপন, বেচতে চায় বিচিত্র সব জিনিস। এমনই একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
শেষতক নসিবে এই ছিল—বলে কপাল চাপড়ানোর দিন বুঝি ফুরাল। কপালই কপাল খুলে দেবে এবার। এক মার্কিন নাগরিক তাঁর কপালখানা ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। মাসের ৩০ দিন কপালে বিজ্ঞাপন সেঁটে ঘুরে বেড়াতে আপত্তি নেই তাঁর। আইডিয়াটা সঙ্গে সঙ্গে লুফে নিয়েছেন চকচকে টাক মাথার লোকজনও। কারণ আর কিছুই নয়। তাঁদের কাছে বিজ্ঞাপনের জন্য আরও বেশি জায়গা খালি আছে।
পপতারকা ব্রিটনি স্পিয়ার্সের চিবিয়ে ফেলা চুইংগাম ১৪ হাজার ডলারে কিনতে চেয়েছেন এক ব্যক্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের মানচিত্রের আদলে একটি কর্নফ্লেক (ভুট্টার দানা দিয়ে তৈরি খাবার) বানানো হয়েছিল। এক ক্রেতা সেটি এক হাজার ৩৫০ ডলারে কিনে নেন।
১৮ বছরের এক তরুণী অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাঁর কুমারিত্ব বেচার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
কিডনি বেচা-কেনার কথা আমরা হরহামেশাই শুনি। কিন্তু নিলামে তোলেন কজন? যুক্তরাষ্ট্রের এক লোক এ কাজটিই করেছেন। তবে কিডনি নয়। তিনি নিলামে তুলেছিলেন তাঁর যকৃত। দামও উঠেছিল চড়া। ৫৭ লাখ ডলার পর্যন্ত দাম হাঁকানোর পর ইবে কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞাপনটি তাঁদের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেয়।
ভূত-বন্দী একটি কাচের পাত্র বিক্রির কথা শুনে অনেকে হামলে পড়েছিল সেটি কিনতে। দাম উঠেছিল ৫০ হাজার ৯২২ ডলার।
এবার আর শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নয়। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত এক ব্রিটিশ নাগরিক তাঁর গোটা জীবনটাই বেচে দিতে চেয়েছেন, যেখানে তাঁর বাড়ি-গাড়ি, চাকরি এমনকি বন্ধুবান্ধবও থাকবে। সে জন্য তিনি নিলাম ডাকের আয়োজন করেছেন। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বিরহকাতর ওই স্বামীর গোটা জীবন ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির দাম উঠেছিল দুই লাখ ৯২ হাজার ডলার।
আবুল হাসনাত
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট | তারিখ: ২৪-০৯-২০১০
শেষতক নসিবে এই ছিল—বলে কপাল চাপড়ানোর দিন বুঝি ফুরাল। কপালই কপাল খুলে দেবে এবার। এক মার্কিন নাগরিক তাঁর কপালখানা ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। মাসের ৩০ দিন কপালে বিজ্ঞাপন সেঁটে ঘুরে বেড়াতে আপত্তি নেই তাঁর। আইডিয়াটা সঙ্গে সঙ্গে লুফে নিয়েছেন চকচকে টাক মাথার লোকজনও। কারণ আর কিছুই নয়। তাঁদের কাছে বিজ্ঞাপনের জন্য আরও বেশি জায়গা খালি আছে।
পপতারকা ব্রিটনি স্পিয়ার্সের চিবিয়ে ফেলা চুইংগাম ১৪ হাজার ডলারে কিনতে চেয়েছেন এক ব্যক্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের মানচিত্রের আদলে একটি কর্নফ্লেক (ভুট্টার দানা দিয়ে তৈরি খাবার) বানানো হয়েছিল। এক ক্রেতা সেটি এক হাজার ৩৫০ ডলারে কিনে নেন।
১৮ বছরের এক তরুণী অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাঁর কুমারিত্ব বেচার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
কিডনি বেচা-কেনার কথা আমরা হরহামেশাই শুনি। কিন্তু নিলামে তোলেন কজন? যুক্তরাষ্ট্রের এক লোক এ কাজটিই করেছেন। তবে কিডনি নয়। তিনি নিলামে তুলেছিলেন তাঁর যকৃত। দামও উঠেছিল চড়া। ৫৭ লাখ ডলার পর্যন্ত দাম হাঁকানোর পর ইবে কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞাপনটি তাঁদের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেয়।
ভূত-বন্দী একটি কাচের পাত্র বিক্রির কথা শুনে অনেকে হামলে পড়েছিল সেটি কিনতে। দাম উঠেছিল ৫০ হাজার ৯২২ ডলার।
এবার আর শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নয়। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত এক ব্রিটিশ নাগরিক তাঁর গোটা জীবনটাই বেচে দিতে চেয়েছেন, যেখানে তাঁর বাড়ি-গাড়ি, চাকরি এমনকি বন্ধুবান্ধবও থাকবে। সে জন্য তিনি নিলাম ডাকের আয়োজন করেছেন। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বিরহকাতর ওই স্বামীর গোটা জীবন ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির দাম উঠেছিল দুই লাখ ৯২ হাজার ডলার।
আবুল হাসনাত
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট | তারিখ: ২৪-০৯-২০১০
বাড়ির ছাদে বাগান করতে চাইলে...
ছাদে বাগান করতে যাঁরা আগ্রহী, তাঁদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ গ্রিন রুফ মুভমেন্ট। আপনার ছাদটা যদি নির্মাণাধীন হয়, তাহলে বাগানের বিষয়টি আপনার স্থপতি বা প্রকৌশলীকে জানিয়ে দিন। তাঁর পরামর্শ ও নির্দেশ নিয়ে ছাদটি তৈরি করুন।
যদি আপনার ছাদটি ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে আপনাকে ঠিক করতে হবে, চারা টবে বা ড্রামে লাগাবেন, নাকি মাটির বেড তৈরি করে তাতে চারা রোপণ করবেন। যদি টবে চারা লাগান, তাহলে আপনাকে মাঝেমধ্যে টবগুলো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরাতে হবে, যাতে করে টবের নিচের জায়গা ভেজা না থাকে। আর যদি ড্রাম কিংবা মাটির বেড তৈরি করেন, তাহলে নিচে ইট দিয়ে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, ড্রাম বা মাটির বেড যেন ছাদ স্পর্শ না করে।
বাগানে প্রথম দিকে সবজি লাগানোই ভালো। সবজির গাছ সহজে মরে না, হাতে নগদে ফল মেলে বলে উৎসাহ বাড়ে। বেশির ভাগ ফলই ছাদে ফলানো সম্ভব। তবে সে জন্য সেসব ফল চাষের নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।
নিয়মিত বাগানের যত্ন নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, গাছে যেন নিয়মিত পানি দেওয়া হয়। বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। এর বাইরেও কোনো জিজ্ঞাসা কিংবা পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন: বাংলাদেশ গ্রিন রুফ মুভমেন্ট, ৩৪৯, পশ্চিম রামপুরা, পলাশবাগ রোড। ফোন: ০১৭১১৪৩৪৬৪৭।
যদি আপনার ছাদটি ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে আপনাকে ঠিক করতে হবে, চারা টবে বা ড্রামে লাগাবেন, নাকি মাটির বেড তৈরি করে তাতে চারা রোপণ করবেন। যদি টবে চারা লাগান, তাহলে আপনাকে মাঝেমধ্যে টবগুলো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরাতে হবে, যাতে করে টবের নিচের জায়গা ভেজা না থাকে। আর যদি ড্রাম কিংবা মাটির বেড তৈরি করেন, তাহলে নিচে ইট দিয়ে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, ড্রাম বা মাটির বেড যেন ছাদ স্পর্শ না করে।
বাগানে প্রথম দিকে সবজি লাগানোই ভালো। সবজির গাছ সহজে মরে না, হাতে নগদে ফল মেলে বলে উৎসাহ বাড়ে। বেশির ভাগ ফলই ছাদে ফলানো সম্ভব। তবে সে জন্য সেসব ফল চাষের নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।
নিয়মিত বাগানের যত্ন নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, গাছে যেন নিয়মিত পানি দেওয়া হয়। বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। এর বাইরেও কোনো জিজ্ঞাসা কিংবা পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন: বাংলাদেশ গ্রিন রুফ মুভমেন্ট, ৩৪৯, পশ্চিম রামপুরা, পলাশবাগ রোড। ফোন: ০১৭১১৪৩৪৬৪৭।
| তারিখ: ২৬-০৯-২০১০
Tuesday, October 19, 2010
ছাদে সুফলা বাগান
মালিবাগের লায়লা আহমেদের বাড়ির ছাদে বাগানের পাশাপাশি জলাশয়ও আছে।
ছয়তলার ছাদের ওপর এই দারুণ বাগানটা স্রেফ শখের বসেই করেছেন তিনি। চার সন্তানের এই মা সংসার সামলাতে ব্যস্ত থাকেন সারাক্ষণ। তবু ঠিকই বাগান করার সময়টুকু বের করে নিয়েছেন তিনি। জানা গেল, প্রায় ছয় বছরের কষ্টের ফসল এই বাগান। বললেন, ‘গাছের জন্য আমার ভীষণ টান। সেই ছোটবেলা থেকেই বাগান করি। প্রথমে অবশ্য এত বড় ছাদ পাইনি। তখন বারান্দায় গাছ লাগাতাম। তারপর পাঁচ বছর আগে এই ছাদটা তৈরি হলো। তখন থেকে একটা একটা করে গাছ গুছিয়ে বাগানটা বানিয়েছি।’
একই ব্যাপার ঘটেছে মিরপুর ২ নম্বর সেক্টরের মামুনুর রশীদের ক্ষেত্রে। ১৯৯০ সাল থেকে ছাদে বাগান করছেন তিনি। শুরু করেছিলেন গোলাপ ফুল দিয়ে, তারপর চলে এলেন ফলের জগতে। দুষ্প্রাপ্য গাছ আর ভালো জাতের চারা দিয়ে সাজিয়েছেন তাঁর ছাদ। সেখান থেকে এবারের বৃক্ষমেলায় চারা নিয়ে হাজিরও হয়েছিলেন তিনি। প্রায় ৮০ হাজার টাকার চারাগাছ বিক্রি করেছেন মামুনুর রশীদ। এর মধ্যে শুধু মিসরীয় মিষ্টি ডুমুরের চারাই বিক্রি করেছিলেন ২১ হাজার টাকার।
মাদারটেক উত্তরপাড়ার এহতেশামুল মল্লিক তাঁর ছাদে বাগান করেছেন সেই ২০০০ সালে। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৫০টি ফলের গাছ আছে তাঁর বাগানে। তিনি বললেন, ‘আমার দেখাদেখি পাড়া-প্রতিবেশীরাও এখন উৎসাহী হয়ে উঠেছেন ছাদে বাগান করতে। ছয়-সাতজন ইতিমধ্যে করেও ফেলেছেন।’
শহর ঘুরলে এ রকম উৎসাহী মানুষ মিলবে অনেক, যাঁরা বাড়ির প্রস্তরকঠিন, অনুর্বর ছাদটাকে রীতিমতো সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাগানে পরিণত করেছেন। আর এই মানুষদের এক করে ঢাকা শহরের অনাবাদি বাড়ির ছাদকে সবুজ বাগানে পাল্টে দেওয়ার জন্য কোমর বেঁধে নেমেছে একটি সংগঠন—বাংলাদেশ গ্রিন রুফ মুভমেন্ট। তাদের মত, এই শহরে দিন দিন দালানকোঠা বাড়ছে। কমছে জমি, কমছে সবুজ। ফলে শহরের পরিবেশের বারোটা বেজে যাচ্ছে আক্ষরিক অর্থেই। এ থেকে পরিত্রাণের উপায়, ছাদকে গাছের বাগানে পরিণত করা। আর এ রকম চিন্তা-ভাবনা থেকেই বাংলাদেশ গ্রিন রুফ মুভমেন্টের জন্ম। এই আন্দোলনের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁরা নিজেদের পরিচয় দেন নগরকৃষক হিসেবে। শুধু তা-ই নয়, বিষয়টা তাঁরা যে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন, সেটা বোঝা গেল সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বাসার ছাদে ঘুরতে গিয়ে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ গোলাম হায়দারের বাড়ির ছাদ তো পুরোপুরি গাছে ভরে গেছে। কত বিচিত্র গাছ যে রয়েছে তাঁর বাগানে। গাছে গাছে আম, পেয়ারা, আনার, জাম্বুরা, কমলা ঝুলে আছে। তিনি বললেন, ‘এই বাগান এখন আমার জন্য দারুণ এক নেশা। সারা দিন বাসার বাইরে যা-ই হোক, ছাদের বাগানে এলেই মনে হয় সব শান্তি। মনটা ভালো হয়ে যায়।’
গোলাম হায়দার জানালেন, ছাদে বাগান করলে যে কেবল পরিবেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা যাবে তা-ই নয়, অর্থনীতিতেও বেশ বড় ধরনের ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। আর এই কথাগুলো নগরবাসীর কানে পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্বটাই কাঁধে তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশ গ্রিন রুফ মুভমেন্টের সদস্যরা। চাইলে আপনিও যোগ দিতে পারেন তাঁদের সঙ্গে, সে আপনার ছাদ থাকুক আর না থাকুক। আর ছাদে বাগান করতে চাইলে তো কথাই নেই। গাছের সবচেয়ে ভালো চারার খোঁজ থেকে শুরু করে উপকরণ, সার, কীটনাশক, বই-পুস্তকসহ যেকোনো পরামর্শ পাওয়া যাবে বাংলাদেশ গ্রিন রুফ মুভমেন্টের কাছ থেকে।
সুত্র: প্রথম আলো। কাওছার শাকিল | তারিখ: ২৬-০৯-২০১০
মাটি ও মানুষের নেতা
অজস্র মৃত্যুরে লঙ্ঘিয়ে টান টান ধনুকের ছিলার মতো কোনো এক দীপ্র মুহূর্তের জরায়ু ছিঁড়ে কনস্টান্টিনোপলের মৃত্তিকায় জন্ম নিয়েছিল রেনেসাঁ আন্দোলন। কালের কালিন্দী বেয়ে তার উদ্দাম ঊর্মিমালা এসে আঘাত করেছিল নিস্তরঙ্গ বাঙালির জীবন-উপকূলে। সেই কল্লোলে যাঁরা ঘুম থেকে জেগে উঠেছিলেন নতুন সম্ভাবনার সূর্য বুকের মধ্যে বপন করে, স্বাধীনতার সোনালি উষ্ণতা চোখের হূদে জন্ম দিয়ে, তাঁদেরই একজন শহীদ ময়েজউদ্দিন। তাঁর সেই ’৮৪-এর ২৭ সেপ্টেম্বরের আত্মাহুতির মাধ্যমে যে রেনেসাঁ-প্রসারিত চেতনা গড়ে উঠেছিল, এরই ধারাবাহিকতায় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে উঠেছিল। তিনি ছিলেন মাটি ও মানুষের নেতা। সেদিন সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল ডেকেছিল তিন বিরোধী রাজনৈতিক জোট। কালীগঞ্জে হরতালে পিকেটিংয়ে দায়িত্বে ছিলেন ময়েজউদ্দিন। এ সময় স্বৈরাচারী সরকারের ভাড়াটে খুনিরা তাঁকে হত্যা করে। ময়েজউদ্দিনসহ অসংখ্য শহীদের রক্তের পথ ধরে নব্বইয়ে পতন ঘটে স্বৈরতন্ত্রের।
১৯৩০ সালের ১৭ মার্চ গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়হরা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে শহীদ ময়েজউদ্দিনের জন্ম। প্রথমে নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরে রাজা রাজেন্দ্রনারায়ণ উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৪৮ সালে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। প্রবেশিকা পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৫০ সালে প্রথম বিভাগে আইএ পাস করেন। এরপর ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ (অনার্স) সম্মান ও ১৯৫৫ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৬ সালে সিএসএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি অর্জন করেন তিনি।
মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন প্রথিতযশা আইনজীবী, রাজনীতিক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজসেবক ছিলেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন দিয়েই তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি শাসকগোষ্ঠীর ১৪৪ ধারা ভাঙতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন ভাষাশহীদেরা। তখন রাজপথে অকুতোভয় সৈনিক হিসেবে যাঁরা এগিয়ে এসেছিলেন, শহীদ ময়েজউদ্দিন তাঁদেরই একজন। তখনই তিনি বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আসেন। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৬৮ সালে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে আইয়ুব-মোনেম চক্র বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত করে। তখন শহীদ ময়েজউদ্দিন দেশব্যাপী সাংগঠনিক তৎপরতা চালান, ছয় দফার পক্ষে প্রচারে নামেন। ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা করার জন্য গঠিত ‘মুজিব তহবিল’-এর আহ্বায়কও নির্বাচিত হন তিনি। সেই তহবিলের অর্থ দিয়েই আগরতলা মামলার অভিযুক্তদের আইনি সহায়তাদানের কাজ পরিচালিত হয়।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানায় নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন ময়েজউদ্দিন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর। ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক আহমেদ আহূত সংসদ সদস্যদের সভায় সর্বপ্রথম তীব্র প্রতিবাদ করেন শহীদ ময়েজউদ্দিন। মোশতাক সরকারের প্রতি তাঁর প্রতিবাদী ভূমিকায় আওয়ামী লীগের অন্যান্য সাংসদও উৎসাহিত হয়েছিলেন।
শহীদ ময়েজউদ্দিন উল্লেখযোগ্য সময় ধরে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি ঢাকা মহানগর এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। এই উত্তাল দিনগুলোতে শহীদ ময়েজউদ্দিন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেন এবং এ ক্ষেত্রে বেগম মুজিবের অবদান জাতির কাছে অবিস্মরণীয় থাকবে।
১৯৭৭ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। একাধারে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি এফপিএবির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আইপিপিএফ ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যান প্যারেনহুড ফেডারেশনসহ আইওআরের সদস্য ছিলেন। রেক্সোর সভাপতি হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই একই সময়ে সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
এ ছাড়া শহীদ ময়েজউদ্দিন বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। সমাজসেবক হিসেবে পৃথিবীর বহু দেশে সভা-সেমিনার ও সম্মেলনে যোগদান করেছেন তিনি।
শহীদ ময়েজউদ্দিনের পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে মেহের আফরোজ চুমকী কালীগঞ্জের বর্তমান সাংসদ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য।
সুত্র: প্রথম আলো। আমজাদ খান | তারিখ: ২৭-০৯-২০১০
১৯৩০ সালের ১৭ মার্চ গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়হরা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে শহীদ ময়েজউদ্দিনের জন্ম। প্রথমে নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরে রাজা রাজেন্দ্রনারায়ণ উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৪৮ সালে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। প্রবেশিকা পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৫০ সালে প্রথম বিভাগে আইএ পাস করেন। এরপর ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ (অনার্স) সম্মান ও ১৯৫৫ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৬ সালে সিএসএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি অর্জন করেন তিনি।
মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন প্রথিতযশা আইনজীবী, রাজনীতিক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজসেবক ছিলেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন দিয়েই তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি শাসকগোষ্ঠীর ১৪৪ ধারা ভাঙতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন ভাষাশহীদেরা। তখন রাজপথে অকুতোভয় সৈনিক হিসেবে যাঁরা এগিয়ে এসেছিলেন, শহীদ ময়েজউদ্দিন তাঁদেরই একজন। তখনই তিনি বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আসেন। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৬৮ সালে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে আইয়ুব-মোনেম চক্র বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত করে। তখন শহীদ ময়েজউদ্দিন দেশব্যাপী সাংগঠনিক তৎপরতা চালান, ছয় দফার পক্ষে প্রচারে নামেন। ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা করার জন্য গঠিত ‘মুজিব তহবিল’-এর আহ্বায়কও নির্বাচিত হন তিনি। সেই তহবিলের অর্থ দিয়েই আগরতলা মামলার অভিযুক্তদের আইনি সহায়তাদানের কাজ পরিচালিত হয়।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানায় নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন ময়েজউদ্দিন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর। ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক আহমেদ আহূত সংসদ সদস্যদের সভায় সর্বপ্রথম তীব্র প্রতিবাদ করেন শহীদ ময়েজউদ্দিন। মোশতাক সরকারের প্রতি তাঁর প্রতিবাদী ভূমিকায় আওয়ামী লীগের অন্যান্য সাংসদও উৎসাহিত হয়েছিলেন।
শহীদ ময়েজউদ্দিন উল্লেখযোগ্য সময় ধরে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি ঢাকা মহানগর এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। এই উত্তাল দিনগুলোতে শহীদ ময়েজউদ্দিন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেন এবং এ ক্ষেত্রে বেগম মুজিবের অবদান জাতির কাছে অবিস্মরণীয় থাকবে।
১৯৭৭ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। একাধারে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি এফপিএবির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আইপিপিএফ ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যান প্যারেনহুড ফেডারেশনসহ আইওআরের সদস্য ছিলেন। রেক্সোর সভাপতি হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই একই সময়ে সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
এ ছাড়া শহীদ ময়েজউদ্দিন বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। সমাজসেবক হিসেবে পৃথিবীর বহু দেশে সভা-সেমিনার ও সম্মেলনে যোগদান করেছেন তিনি।
শহীদ ময়েজউদ্দিনের পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে মেহের আফরোজ চুমকী কালীগঞ্জের বর্তমান সাংসদ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য।
সুত্র: প্রথম আলো। আমজাদ খান | তারিখ: ২৭-০৯-২০১০
পাখা ঝাপটে উড়ল বিমান
স্নোবার্ড
এবার দা ভিঞ্চির সেই নকশার ওপর ভিত্তি করে হেলিকপ্টার ধরনের বিমান তৈরি করে আকাশে ওড়ালেন টড রিচার্ট। তিনি কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির ছাত্র।
‘স্নোবার্ড’ নামের বিমানটি অন্টারিওর টটেনহ্যামের গ্রেট লেকস গ্লাইডিং ক্লাবে ওড়ানো হয়। ১৯ দশমিক ৩ সেকেন্ড আকাশে থেকে এটি ১৪৫ মিটার পথ ওড়ে। গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য ছাত্রদের নিয়ে টানা চার বছর কাজ করে বিমানটি তৈরি করেছেন রিচার্ট।
ইঞ্জিনবিহীন বিমান বানিয়ে এর আগেও অনেকে আকাশে ওড়ার চেষ্টা করেছেন। তবে ওই সব বিমান উড্ডয়নের পর আকাশে শুধু যতক্ষণ পারে ভেসে থাকত। টড রিচার্ট ও তাঁর দল দাবি করেছেন, তাঁদের বিমানটি শুধু ভেসে থাকা নয়, শক্তি প্রয়োগ করে উড়ে চলতে পারে।
ইঞ্জিনবিহীন স্নোবার্ড চলে পাখির মতো পাখা ঝাপটে। এ জন্য বিশেষ ধরনের পাখা তৈরি করা হয়েছে। প্যাডেল করে তা নাড়াতে হয়। সহজে যাতে ভাসতে পারে, সে জন্য এর ওজন কম রাখা হয়েছে। কার্বন ফাইবার, হালকা কাঠ ও ফোম দিয়ে তৈরি বিমানটির ওজন ৪৩ কেজি। তবে পাখা দুটি বিশাল। প্রতিটি লম্বায় ৩২ মিটার, যা বোয়িং ৭৩৭ বিমানের প্রায় সমান।
গত গ্রীষ্মে এই বিমান ওড়াতে গিয়ে টড রিচার্টের আট কেজি ওজন কমেছে। তিনি বলেন, যাতায়াতে ব্যবহারের জন্য এ বিমান নয়। এটি তৈরি করা হয়েছে নিজের শরীর এবং মনের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগাতে অন্যকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য।
দা ভিঞ্চির ওই রেখাচিত্রকে অনেকে আধুনিক হেলিকপ্টারের পেছনকার প্রেরণা মনে করেন। বিবিসি।
সুত্র: প্রথম আলো। | তারিখ: ২৭-০৯-২০১০
বাংলাদেশকে নিয়ে আমাদের স্বপ্নের শেষ নেই
নিজের দেশটা বাংলাদেশ, এ কথা বলার সময় গর্বে বুকটা ভরে ওঠে মূলত এই কারণে যে এ এমন এক দেশ, যে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা এবং তার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম, কঠোর-কঠিন সময় ধৈর্যের সঙ্গে পার করার ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিশ্বজনকে মোহিত করে। বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক সংবাদ পেয়ে যে বিদেশিরা এখানে আসতে হলে রীতিমতো সন্ত্রস্তবোধ করেন তাঁরাও একবার বাংলাদেশ ঘুরে গেলে ভাবতে থাকেন কী ভুল ধারণা নিয়েই না তাঁরা এতদিন বসেছিলেন। সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি, অত্যন্ত নিষ্ঠাবান রাজনীতিকেরা এবং সমাজকর্মী, নাগরিক সমাজের সদস্যরা—অবশ্যই যাঁরা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এ দেশের নানা প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন—কীভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন এবং ১৯৭১ সালে সেই অত্যাশ্চর্য চমকপ্রদ ঘটনাটি ঘটালেন। তাই এ দেশ নিয়ে আমাদের তো স্বপ্নের শেষ নেই!
কিন্তু বাস্তবতা বারবার সেই স্বপ্নপূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় দেশের স্থপতি, প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি নিহত হন কিছু দুষ্কৃতী ও দুষ্ট বুদ্ধিসম্পন্ন সেনাসদস্যের হাতে। তিনি একাই তাঁদের আক্রোশ ও আক্রমণের শিকার হননি, তাঁকে হত্যা করা হলো তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও আত্মীয় এবং রাজনৈতিকভাবে নিকটজনসহ। আমরা যারা একুশকে বুকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধ পার হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে নিজের জীবন-সংগ্রামের অঙ্গ হিসেবেই বিশ্বাস করি, তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়াকে মেনে নিতে পারি না। তাই দীর্ঘ সময়ের সামরিক শাসন অথবা গণতন্ত্রের নাম করে সামরিক শাসকদের শাসন, বা যেকোনো অপশাসনের লক্ষণ দেখলে বিচলিত না হয়ে পারি না। সেই উদ্বেগ থেকেই আজকে কলম ধরা।
১৯৭৫ সাল থেকে বাংলাদেশের যে পেছন ফিরে হাঁটা, তার গতিবেগ এমনই ছিল যে সব মানুষের দেশ হওয়ার পথ ছেড়ে সংকীর্ণ হতে হতে মৌলবাদীদের দাপট, সামরিক শক্তির চোখরাঙানি, এমনকি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তির গাড়িতে পতাকা লাগিয়ে বাংলাদেশের মাটির ওপর দিয়ে চলেফিরে বেড়ানোর ধৃষ্টতাও সহ্য করতে হয়েছে। নব্বইয়ে যদিও গণতন্ত্রে ফিরে আসার অভিযাত্রার সূচনা ঘটেছিল, কিন্তু বহু বছরের জঞ্জাল সরিয়ে পরিষ্কার পথের নিশানা নির্ণয় করা সহজসাধ্য ছিল না। গণতান্ত্রিক জীবনের স্বাদ পেতে শুরু অবশ্য জনগণ করেছিল, কিন্তু ১০ বছর অতিক্রান্ত হতে না হতেই রাজনীতির ধরন অদ্ভুত এক রূপ নিল। তত দিনে যাঁরা রাজনীতিকে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার একটা সাধনা বলে বিশ্বাস করতেন তাঁদের অনেকেই ঝরে গেছেন এবং তাঁদের জায়গা দখল করে নিয়েছেন যাঁরা রাজনীতিকে ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করেন। সোজা কথায়, আখের গোছানোর কাজকেই মূলনীতি বলে চিনেছেন তেমন ব্যক্তিরা।
স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এ কথা সব রাজনীতিকের জন্য কোনোমতেই প্রযোজ্য নয় এবং অনেক সম্মানিত ব্যতিক্রম এখনো রাজনীতির হালটুকু ধরে সুস্থতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু দুঃখের বিষয়, তাঁরা ক্রমশই সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছেন। ফলে যাঁরা রাজনীতিকদের এই দুর্বলতা থেকে সুযোগ নিতে পারেন তাঁরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে তাঁদের লভ্যাংশ ঠিকই বুঝে নিচ্ছেন। ফাঁকিতে পড়ছে গণতন্ত্রকামী মানুষ—যাদের রক্তে, ঘামে, শ্রমে তৈরি এই বাংলাদেশ। তার পরও তারা আশা ছাড়েনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল ইঙ্গিত দেয় কী উৎসাহ আর উদ্দীপনায় জনগণ গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছে। তিন দশকেরও বেশি সময়ের মিথ্যা ইতিহাস চর্চা, বাংলাদেশের মূল ভিত্তি থেকে মুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার হীন প্রচেষ্টা, সাম্প্রদায়িকতা আর মৌলবাদের প্রশ্রয়, দুর্নীতিকে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে দেওয়া, সন্ত্রাসকে প্রগতি আর উন্নয়নের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠা দেওয়া—এই সমস্ত প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে বড় হওয়া নতুন প্রজন্ম কী বিপুলভাবে ভোট দিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনার পক্ষে। যে যুদ্ধাপরাধের বিচার না করে সহিংসতাকে এক ধরনের বৈধতা দিয়ে মানুষের জীবনের প্রতিটি স্তরে, প্রতিটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল তার বিচার দাবি করল। সবার সম-অধিকার ও সমান মর্যাদার নীতিকে সমর্থন জানাল। একটা সময়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করা গেল—এ সমস্ত অভিজ্ঞতায় বিরাট আশায় মানুষ বুক বেঁধে বসে ছিল যে সত্যিকার অর্থে এবার বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে এগোবে। জনগণের পক্ষ থেকে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার সদিচ্ছার প্রকাশে কোনো ঘাটতি দেখা যায় না। দেড় বছরের সরকারের জীবনে যেসব ত্রুটিবিচ্যুতি ঘটেছে জনগণ তাকে স্বাভাবিক কিংবা কঠিন-সাধ্য বলে মেনে নিয়ে নিজেদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে দেয়নি শত উসকানি সত্ত্বেও। জনগণের বিভিন্ন অংশ চেষ্টা করেছে যার যার মতো নিজের দায়িত্ব পালন করে যেতে। এর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সরকারের ওপর নজরদারি বজায় রাখা। কেউ অস্বীকার করতে পারে না যে গণতন্ত্রে মূল ভূমিকায় থাকবে জনগণ এবং জনগণের প্রতিনিধি হয়েই সরকার দেশ পরিচালনা করবে এবং মাননীয় সাংসদেরাও জনগণের হয়েই দেশের আইন-কানুন প্রণয়ন করবেন। যে অঙ্গীকারের ভিত্তিতে তাঁরা সংসদের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, সেই অঙ্গীকারগুলো যৌক্তিক সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন। বিচারব্যবস্থা সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। গণতন্ত্র বলতে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে সেটাই তো বুঝি। যাঁরা জনগণের হয়ে দেশ পরিচালনায় নিয়োজিত থাকবেন তাঁরা দেশের সম্পদের সুরক্ষারও পবিত্র দায়িত্ব পালন করবেন। জনগণের অবদানে যে সম্পদ আহরিত হয়, তাদের অজির্ত আয়ের ওপর থেকে যে কর আদায় করা হয় তার সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে মতামত দেওয়া শুধু জনগণের কর্তব্যই নয়, নৈতিক দায়িত্বও বটে। এবং একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জনগণ তা করে থাকে নানা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে। তাই গণতন্ত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, স্বচ্ছ নিয়োগব্যবস্থা, সৎ ও যোগ্য আমলাতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা বাড়িয়ে বলা যায় না। এ সরকার যে তা অনুধাবন করেছে তারও প্রমাণ আমরা পেয়েছি। অনেক ক্ষেত্রেই অর্জনকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। আজকে আমরা সংবিধান সংশোধনের সুযোগ পেয়েছি যার মাধ্যমে অর্বাচীন কিছু পরিবর্তন রদ করে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা সন্নিবেশিত করতে পারব। সামরিক শাসনের ওপর আইনি নিষেধাজ্ঞা এসেছে। একই সঙ্গে অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায় তথ্য অধিকারের সুযোগ। আর তথ্যের অবাধ প্রবাহের জন্য প্রয়োজন স্বাধীন গণমাধ্যম। গণমাধ্যমও এক অর্থে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। সাংসদেরা জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হন পাঁচ বছরের জন্য, আর সংবাদমাধ্যম জনগণের নির্বাচন মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে প্রতিদিন। যে মুহূর্তে একজন নাগরিক তাঁর পকেটের পয়সা দিয়ে একটি পত্রিকা কিনে নেন, কিংবা বোতাম টিপে রেডিও অথবা টেলিভিশনের একটি চ্যানেল বেছে নেন, সেই মুহূর্তেই তিনি সেই পত্রিকা অথবা চ্যানেলের প্রতি তাঁর সমর্থন ব্যক্ত করছেন এবং সেই পত্রিকা অথবা চ্যানেলের মাধ্যমে তাঁর তথ্য পাওয়া এবং নজরদারির দায়িত্বটি পালন করার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশে যেকোনো সংকটে এবং আন্দোলনে গণমাধ্যম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। গণমাধ্যমের কোনো ভুল বা অন্যায় থাকতে পারে না সে কথা কেউ বলবে না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে হয়রানি বা বিব্রত করার জন্যও গণমাধ্যমের ব্যবহার হয়ে থাকে, সেটা চিহ্নিত করা এবং তার প্রতিবাদ করারও নিয়মতান্ত্রিক উপায় আছে এবং তা করাও উচিত। কিন্তু কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি তাঁকে অর্পিত কোনো অবস্থানের সুযোগ গ্রহণ করে এমন কোনো কাজ যদি করেন যা জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক করতে পারে, তার জন্য তাঁকে তো জবাবদিহি করতেই হবে—গণতন্ত্রের সেটাই নিয়ম বলে জানি। সেই বোধ থেকেই সৎ নাগরিক হিসেবে অবশ্যই তার কার্যকারণ জানতে চাওয়ার অধিকার আমাদের রয়েছে। এবং জনগণের কাছে উত্তর দেওয়ার দায়বদ্ধতা থেকে জনগণের প্রতিনিধিরা বাইরে থাকতে পারেন না। কিছু প্রশ্ন তুললেই যদি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবস্থান টলিয়ে দেওয়ার, অথবা গণতন্ত্র বানচাল করার অভিযোগ শুনতে হয়, তাহলে সেই গণতন্ত্রের ভিত্তি সম্পর্কেই সন্দিহান হয়ে উঠতে হয়। আর একটা অভিযোগ তোলা হয় কথায় কথায় যে রাজনীতিকদের হেয় করার জন্য এসব প্রশ্ন তোলা। ওই কাজটি করতে তাঁদের তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন পড়ে বলে তো মনে হয় না! কথায় কথায় এক-এগারোর দায়দায়িত্ব দেশি-বিদেশি নানাজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। ১৫ কোটি মানুষের এই দেশে এক-আধজন ইচ্ছা করলেই কি এক-এগারোর সৃষ্টি করতে পারেন! তাহলে আর আমাদের এত দিনের রাজনৈতিক ঐতিহ্যের মূল্য কোথায়? আর যত্রতত্র যার-তার নামে দোষ চাপাতে গিয়ে একেকটি ভয়ংকর ঘটনার জন্য যাঁরা প্রকৃত দায়ী, তাঁদের কি আড়াল করে ফেলা হচ্ছে না? এভাবেই খন্দকার মোশতাকেরা রাষ্ট্রপতি বনে যান আর শুধু শুধু গ্রেপ্তার হন জজ মিয়া আর পার্থ সাহারা।
আমরা যারা বুকে হাত দিয়ে জাতীয় সংগীত গাই ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’, যারা সেই বায়ান্ন সাল থেকে খালি পায়ে ফুল হাতে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গাইতে গাইতে আজিমপুর ঘুরে শহীদ মিনারে এসে আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি, উনসত্তরের গণ-আন্দোলনে দিন-রাত ভুলে আইয়ুবশাহি-মোনেমশাহির পতনের আন্দোলনে সারা শহর মিছিলে মিছিলে ছেয়ে দিয়েছি, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’—এই ডাক শুনে শূন্য হাতে নিরস্ত্র অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে যখন যেভাবে পেরেছি দেশটাকে গণতন্ত্রের পথে চলতে সাহায্য করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছি—কতিপয় সংসদ সদস্যেদের নির্বাচিত প্রতিনিধির পরিচয় ধরে অগণতান্ত্রিক আচরণে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। কোনো সন্দেহ নেই যে নির্বাচনে জেতার সুযোগ নিয়ে গণতন্ত্রের পোশাকি পরিচয় ধারণ করে বিরোধী দলের ওপর নগ্ন আক্রমণ ও দমন-পীড়ন চালাতে লজ্জিত হয়নি অনেক শক্তিই, একথাও ঠিক দলীয়করণকেই নিরপেক্ষতার পরিবর্তে নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে দেশ পরিচালনায়। মিথ্যা ইতিহাস আর ভ্রান্ত তথ্যকে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে সত্য বলে। ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে সম্পদ আহরণ আর সিন্দবাদের দৈত্যের মতো জনগণের কাঁধে চেপে আর না নামার নীতি গ্রহণ করাকেই রাজনীতি নামে চালিয়ে দেওয়ার কৌশলও গ্রহণ করেছে তারা—কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে তো তারই বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল জনগণ বিপুলভাবে। যারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারার সঙ্গে কোনো দিন যুক্ত ছিল না, মুক্তিযুদ্ধেও এদের অনেকের অংশগ্রহণ ঘটনাচক্রেই সংঘটিত হয়েছে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অভিষিক্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ পাওয়া যায় না বরং তার বিপরীতেই অবস্থান নিয়েছিল, তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা আউড়ে গেলেও তাদের আচরণ ভিন্ন হতে পারে—ক্ষুব্ধ হলেও আমাদের অবাক বা শঙ্কিত হওয়ার কারণ ঘটে না। কিন্তু যারা এই দেশটাতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহ্যের অংশীদার, তাদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে তোয়াক্কা না করার প্রবণতা দেখলে মনে শঙ্কা জাগে বৈকি! তাই এমন আচরণ দেখে যখন পরিবর্তন আনার অঙ্গীকার করা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সচেতন করে দিতে চায় জনগণ, তার প্রতি-উত্তরে কি তাদের অগণতান্ত্রিক আচরণ করা সাজে? কষ্ট হয় যখন দেখি জনগণের সেবা করার সুযোগের আবেদন জানিয়ে জানিয়ে সংসদে পৌঁছে নিজেদের ব্যক্তিগত কিংবা দলগত স্বার্থে দিনের পর দিন সংসদ বর্জন চলে, সাংসদেরা সময়মতো উপস্থিত না হওয়ার কারণে কোরাম হয় না, এমন সব আলোচনা সংসদে চলে যার কোনো অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। যে নির্বাচনের জন্য তাঁরা প্রাণপাত করেন, কখনো কখনো আক্ষরিক অর্থে, সেই নির্বাচনকেই অর্থবহ করার তাগিদ তাঁদের মধ্যে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। সাধারণ জনগণ তো এসব নিয়ে সমালোচনা করবেই। দিনবদলের রাজনীতি তো দেশটাকে দুর্বৃত্তায়নের হাত থেকে রক্ষা করারই অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।
মাননীয় সাংসদদের কাছে তাই অনুরোধ, দোহাই আপনাদের, যে পবিত্র দায়িত্ব নিয়ে একটি অত্যন্ত উঁচু শ্রদ্ধার আসনে আসীন হয়েছেন তার মর্যাদাটা ভুলে যাবেন না—অনুগ্রহ করে দেশটাকে আর দুর্বৃত্তায়নের চাকায় ঘুরপাক খেতে দেবেন না। আমরা যেন ভুলে না যাই এ দেশটি ৩০ লাখ শহীদের রক্তের ঋণে ভিজে আছে। নূর হোসেন, ডাক্তার মিলনেরা প্রাণ দিয়েছেন গণতন্ত্রের জন্য, নিহত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু সপরিবারে, চার জাতীয় নেতাকে কাপুরুষোচিতভাবে হত্যা করা হয়েছে জেলখানার ভেতরে। তাঁদের অপরাধ ছিল তাঁরা গণতন্ত্র চেয়েছিলেন। তাঁদের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে এমন আচরণ মেনে নিতে হবে কেন আমাদের?
সুলতানা কামাল: আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১০
কিন্তু বাস্তবতা বারবার সেই স্বপ্নপূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় দেশের স্থপতি, প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি নিহত হন কিছু দুষ্কৃতী ও দুষ্ট বুদ্ধিসম্পন্ন সেনাসদস্যের হাতে। তিনি একাই তাঁদের আক্রোশ ও আক্রমণের শিকার হননি, তাঁকে হত্যা করা হলো তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও আত্মীয় এবং রাজনৈতিকভাবে নিকটজনসহ। আমরা যারা একুশকে বুকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধ পার হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে নিজের জীবন-সংগ্রামের অঙ্গ হিসেবেই বিশ্বাস করি, তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়াকে মেনে নিতে পারি না। তাই দীর্ঘ সময়ের সামরিক শাসন অথবা গণতন্ত্রের নাম করে সামরিক শাসকদের শাসন, বা যেকোনো অপশাসনের লক্ষণ দেখলে বিচলিত না হয়ে পারি না। সেই উদ্বেগ থেকেই আজকে কলম ধরা।
১৯৭৫ সাল থেকে বাংলাদেশের যে পেছন ফিরে হাঁটা, তার গতিবেগ এমনই ছিল যে সব মানুষের দেশ হওয়ার পথ ছেড়ে সংকীর্ণ হতে হতে মৌলবাদীদের দাপট, সামরিক শক্তির চোখরাঙানি, এমনকি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তির গাড়িতে পতাকা লাগিয়ে বাংলাদেশের মাটির ওপর দিয়ে চলেফিরে বেড়ানোর ধৃষ্টতাও সহ্য করতে হয়েছে। নব্বইয়ে যদিও গণতন্ত্রে ফিরে আসার অভিযাত্রার সূচনা ঘটেছিল, কিন্তু বহু বছরের জঞ্জাল সরিয়ে পরিষ্কার পথের নিশানা নির্ণয় করা সহজসাধ্য ছিল না। গণতান্ত্রিক জীবনের স্বাদ পেতে শুরু অবশ্য জনগণ করেছিল, কিন্তু ১০ বছর অতিক্রান্ত হতে না হতেই রাজনীতির ধরন অদ্ভুত এক রূপ নিল। তত দিনে যাঁরা রাজনীতিকে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার একটা সাধনা বলে বিশ্বাস করতেন তাঁদের অনেকেই ঝরে গেছেন এবং তাঁদের জায়গা দখল করে নিয়েছেন যাঁরা রাজনীতিকে ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করেন। সোজা কথায়, আখের গোছানোর কাজকেই মূলনীতি বলে চিনেছেন তেমন ব্যক্তিরা।
স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এ কথা সব রাজনীতিকের জন্য কোনোমতেই প্রযোজ্য নয় এবং অনেক সম্মানিত ব্যতিক্রম এখনো রাজনীতির হালটুকু ধরে সুস্থতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু দুঃখের বিষয়, তাঁরা ক্রমশই সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছেন। ফলে যাঁরা রাজনীতিকদের এই দুর্বলতা থেকে সুযোগ নিতে পারেন তাঁরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে তাঁদের লভ্যাংশ ঠিকই বুঝে নিচ্ছেন। ফাঁকিতে পড়ছে গণতন্ত্রকামী মানুষ—যাদের রক্তে, ঘামে, শ্রমে তৈরি এই বাংলাদেশ। তার পরও তারা আশা ছাড়েনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল ইঙ্গিত দেয় কী উৎসাহ আর উদ্দীপনায় জনগণ গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছে। তিন দশকেরও বেশি সময়ের মিথ্যা ইতিহাস চর্চা, বাংলাদেশের মূল ভিত্তি থেকে মুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার হীন প্রচেষ্টা, সাম্প্রদায়িকতা আর মৌলবাদের প্রশ্রয়, দুর্নীতিকে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে দেওয়া, সন্ত্রাসকে প্রগতি আর উন্নয়নের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠা দেওয়া—এই সমস্ত প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে বড় হওয়া নতুন প্রজন্ম কী বিপুলভাবে ভোট দিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনার পক্ষে। যে যুদ্ধাপরাধের বিচার না করে সহিংসতাকে এক ধরনের বৈধতা দিয়ে মানুষের জীবনের প্রতিটি স্তরে, প্রতিটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল তার বিচার দাবি করল। সবার সম-অধিকার ও সমান মর্যাদার নীতিকে সমর্থন জানাল। একটা সময়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করা গেল—এ সমস্ত অভিজ্ঞতায় বিরাট আশায় মানুষ বুক বেঁধে বসে ছিল যে সত্যিকার অর্থে এবার বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে এগোবে। জনগণের পক্ষ থেকে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার সদিচ্ছার প্রকাশে কোনো ঘাটতি দেখা যায় না। দেড় বছরের সরকারের জীবনে যেসব ত্রুটিবিচ্যুতি ঘটেছে জনগণ তাকে স্বাভাবিক কিংবা কঠিন-সাধ্য বলে মেনে নিয়ে নিজেদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে দেয়নি শত উসকানি সত্ত্বেও। জনগণের বিভিন্ন অংশ চেষ্টা করেছে যার যার মতো নিজের দায়িত্ব পালন করে যেতে। এর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সরকারের ওপর নজরদারি বজায় রাখা। কেউ অস্বীকার করতে পারে না যে গণতন্ত্রে মূল ভূমিকায় থাকবে জনগণ এবং জনগণের প্রতিনিধি হয়েই সরকার দেশ পরিচালনা করবে এবং মাননীয় সাংসদেরাও জনগণের হয়েই দেশের আইন-কানুন প্রণয়ন করবেন। যে অঙ্গীকারের ভিত্তিতে তাঁরা সংসদের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, সেই অঙ্গীকারগুলো যৌক্তিক সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন। বিচারব্যবস্থা সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। গণতন্ত্র বলতে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে সেটাই তো বুঝি। যাঁরা জনগণের হয়ে দেশ পরিচালনায় নিয়োজিত থাকবেন তাঁরা দেশের সম্পদের সুরক্ষারও পবিত্র দায়িত্ব পালন করবেন। জনগণের অবদানে যে সম্পদ আহরিত হয়, তাদের অজির্ত আয়ের ওপর থেকে যে কর আদায় করা হয় তার সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে মতামত দেওয়া শুধু জনগণের কর্তব্যই নয়, নৈতিক দায়িত্বও বটে। এবং একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জনগণ তা করে থাকে নানা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে। তাই গণতন্ত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, স্বচ্ছ নিয়োগব্যবস্থা, সৎ ও যোগ্য আমলাতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা বাড়িয়ে বলা যায় না। এ সরকার যে তা অনুধাবন করেছে তারও প্রমাণ আমরা পেয়েছি। অনেক ক্ষেত্রেই অর্জনকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। আজকে আমরা সংবিধান সংশোধনের সুযোগ পেয়েছি যার মাধ্যমে অর্বাচীন কিছু পরিবর্তন রদ করে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা সন্নিবেশিত করতে পারব। সামরিক শাসনের ওপর আইনি নিষেধাজ্ঞা এসেছে। একই সঙ্গে অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায় তথ্য অধিকারের সুযোগ। আর তথ্যের অবাধ প্রবাহের জন্য প্রয়োজন স্বাধীন গণমাধ্যম। গণমাধ্যমও এক অর্থে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। সাংসদেরা জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হন পাঁচ বছরের জন্য, আর সংবাদমাধ্যম জনগণের নির্বাচন মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে প্রতিদিন। যে মুহূর্তে একজন নাগরিক তাঁর পকেটের পয়সা দিয়ে একটি পত্রিকা কিনে নেন, কিংবা বোতাম টিপে রেডিও অথবা টেলিভিশনের একটি চ্যানেল বেছে নেন, সেই মুহূর্তেই তিনি সেই পত্রিকা অথবা চ্যানেলের প্রতি তাঁর সমর্থন ব্যক্ত করছেন এবং সেই পত্রিকা অথবা চ্যানেলের মাধ্যমে তাঁর তথ্য পাওয়া এবং নজরদারির দায়িত্বটি পালন করার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশে যেকোনো সংকটে এবং আন্দোলনে গণমাধ্যম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। গণমাধ্যমের কোনো ভুল বা অন্যায় থাকতে পারে না সে কথা কেউ বলবে না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে হয়রানি বা বিব্রত করার জন্যও গণমাধ্যমের ব্যবহার হয়ে থাকে, সেটা চিহ্নিত করা এবং তার প্রতিবাদ করারও নিয়মতান্ত্রিক উপায় আছে এবং তা করাও উচিত। কিন্তু কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি তাঁকে অর্পিত কোনো অবস্থানের সুযোগ গ্রহণ করে এমন কোনো কাজ যদি করেন যা জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক করতে পারে, তার জন্য তাঁকে তো জবাবদিহি করতেই হবে—গণতন্ত্রের সেটাই নিয়ম বলে জানি। সেই বোধ থেকেই সৎ নাগরিক হিসেবে অবশ্যই তার কার্যকারণ জানতে চাওয়ার অধিকার আমাদের রয়েছে। এবং জনগণের কাছে উত্তর দেওয়ার দায়বদ্ধতা থেকে জনগণের প্রতিনিধিরা বাইরে থাকতে পারেন না। কিছু প্রশ্ন তুললেই যদি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবস্থান টলিয়ে দেওয়ার, অথবা গণতন্ত্র বানচাল করার অভিযোগ শুনতে হয়, তাহলে সেই গণতন্ত্রের ভিত্তি সম্পর্কেই সন্দিহান হয়ে উঠতে হয়। আর একটা অভিযোগ তোলা হয় কথায় কথায় যে রাজনীতিকদের হেয় করার জন্য এসব প্রশ্ন তোলা। ওই কাজটি করতে তাঁদের তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন পড়ে বলে তো মনে হয় না! কথায় কথায় এক-এগারোর দায়দায়িত্ব দেশি-বিদেশি নানাজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। ১৫ কোটি মানুষের এই দেশে এক-আধজন ইচ্ছা করলেই কি এক-এগারোর সৃষ্টি করতে পারেন! তাহলে আর আমাদের এত দিনের রাজনৈতিক ঐতিহ্যের মূল্য কোথায়? আর যত্রতত্র যার-তার নামে দোষ চাপাতে গিয়ে একেকটি ভয়ংকর ঘটনার জন্য যাঁরা প্রকৃত দায়ী, তাঁদের কি আড়াল করে ফেলা হচ্ছে না? এভাবেই খন্দকার মোশতাকেরা রাষ্ট্রপতি বনে যান আর শুধু শুধু গ্রেপ্তার হন জজ মিয়া আর পার্থ সাহারা।
আমরা যারা বুকে হাত দিয়ে জাতীয় সংগীত গাই ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’, যারা সেই বায়ান্ন সাল থেকে খালি পায়ে ফুল হাতে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গাইতে গাইতে আজিমপুর ঘুরে শহীদ মিনারে এসে আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি, উনসত্তরের গণ-আন্দোলনে দিন-রাত ভুলে আইয়ুবশাহি-মোনেমশাহির পতনের আন্দোলনে সারা শহর মিছিলে মিছিলে ছেয়ে দিয়েছি, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’—এই ডাক শুনে শূন্য হাতে নিরস্ত্র অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে যখন যেভাবে পেরেছি দেশটাকে গণতন্ত্রের পথে চলতে সাহায্য করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছি—কতিপয় সংসদ সদস্যেদের নির্বাচিত প্রতিনিধির পরিচয় ধরে অগণতান্ত্রিক আচরণে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। কোনো সন্দেহ নেই যে নির্বাচনে জেতার সুযোগ নিয়ে গণতন্ত্রের পোশাকি পরিচয় ধারণ করে বিরোধী দলের ওপর নগ্ন আক্রমণ ও দমন-পীড়ন চালাতে লজ্জিত হয়নি অনেক শক্তিই, একথাও ঠিক দলীয়করণকেই নিরপেক্ষতার পরিবর্তে নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে দেশ পরিচালনায়। মিথ্যা ইতিহাস আর ভ্রান্ত তথ্যকে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে সত্য বলে। ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে সম্পদ আহরণ আর সিন্দবাদের দৈত্যের মতো জনগণের কাঁধে চেপে আর না নামার নীতি গ্রহণ করাকেই রাজনীতি নামে চালিয়ে দেওয়ার কৌশলও গ্রহণ করেছে তারা—কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে তো তারই বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল জনগণ বিপুলভাবে। যারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারার সঙ্গে কোনো দিন যুক্ত ছিল না, মুক্তিযুদ্ধেও এদের অনেকের অংশগ্রহণ ঘটনাচক্রেই সংঘটিত হয়েছে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অভিষিক্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ পাওয়া যায় না বরং তার বিপরীতেই অবস্থান নিয়েছিল, তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা আউড়ে গেলেও তাদের আচরণ ভিন্ন হতে পারে—ক্ষুব্ধ হলেও আমাদের অবাক বা শঙ্কিত হওয়ার কারণ ঘটে না। কিন্তু যারা এই দেশটাতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহ্যের অংশীদার, তাদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে তোয়াক্কা না করার প্রবণতা দেখলে মনে শঙ্কা জাগে বৈকি! তাই এমন আচরণ দেখে যখন পরিবর্তন আনার অঙ্গীকার করা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সচেতন করে দিতে চায় জনগণ, তার প্রতি-উত্তরে কি তাদের অগণতান্ত্রিক আচরণ করা সাজে? কষ্ট হয় যখন দেখি জনগণের সেবা করার সুযোগের আবেদন জানিয়ে জানিয়ে সংসদে পৌঁছে নিজেদের ব্যক্তিগত কিংবা দলগত স্বার্থে দিনের পর দিন সংসদ বর্জন চলে, সাংসদেরা সময়মতো উপস্থিত না হওয়ার কারণে কোরাম হয় না, এমন সব আলোচনা সংসদে চলে যার কোনো অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। যে নির্বাচনের জন্য তাঁরা প্রাণপাত করেন, কখনো কখনো আক্ষরিক অর্থে, সেই নির্বাচনকেই অর্থবহ করার তাগিদ তাঁদের মধ্যে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। সাধারণ জনগণ তো এসব নিয়ে সমালোচনা করবেই। দিনবদলের রাজনীতি তো দেশটাকে দুর্বৃত্তায়নের হাত থেকে রক্ষা করারই অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।
মাননীয় সাংসদদের কাছে তাই অনুরোধ, দোহাই আপনাদের, যে পবিত্র দায়িত্ব নিয়ে একটি অত্যন্ত উঁচু শ্রদ্ধার আসনে আসীন হয়েছেন তার মর্যাদাটা ভুলে যাবেন না—অনুগ্রহ করে দেশটাকে আর দুর্বৃত্তায়নের চাকায় ঘুরপাক খেতে দেবেন না। আমরা যেন ভুলে না যাই এ দেশটি ৩০ লাখ শহীদের রক্তের ঋণে ভিজে আছে। নূর হোসেন, ডাক্তার মিলনেরা প্রাণ দিয়েছেন গণতন্ত্রের জন্য, নিহত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু সপরিবারে, চার জাতীয় নেতাকে কাপুরুষোচিতভাবে হত্যা করা হয়েছে জেলখানার ভেতরে। তাঁদের অপরাধ ছিল তাঁরা গণতন্ত্র চেয়েছিলেন। তাঁদের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে এমন আচরণ মেনে নিতে হবে কেন আমাদের?
সুলতানা কামাল: আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১০
স্থপতি লুই কান ও সংসদ ভবন
লুই আই কান
১৯২৪ সালে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লুই কান স্নাতক ডিগ্রি নেন। তারপর ঘুরে বেড়ান পৃথিবীর নানা প্রান্তে। কাজ করেন জন মলিটর, জর্জ হুই, অস্কার স্টনোরোভর মতো তৎকালীন নামকরা স্থপতিদের সঙ্গে। প্রথম দিকে লুই কান আন্তর্জাতিক মানের কাজ করলেও তাঁর নিজস্ব কোনো স্টাইল ছিল না। বয়স ৫০ পেরোনোর পর তিনি শুরু করেন সম্পূর্ণ নিজের ধরনের কাজ। জন্ম দেন একের পর এক নামকরা স্থাপত্য, যার শেষের দিকের নিদর্শন আমাদের সংসদ ভবন। যে স্থাপত্য লুই কানকে স্থান দিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। বাংলাদেশের তো বটেই, বিশ্বেরও।
জাতীয় সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৬১ সালে। এটিকে তখন পূর্ব পাকিস্তানের সংসদ ভবন হিসেবে ভাবা হয়েছিল। স্বাধীনতার পর তা পরিণত হয় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনে। ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি শেষ হয় এর নির্মাণকাজ। একই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সংসদের অষ্টম ও শেষ অধিবেশনে হয় এর উদ্বোধন। লুই কান এই বিশ্বসেরা স্থাপত্যের স্থপতি হলেও সর্বপ্রথম এই জাতীয় সংসদ ভবনের নকশা তৈরির দায়িত্ব পেয়েছিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি স্থপতি মাজহারুল ইসলাম। বড় মাপের মানুষের মনও যে বড় হয়, স্থপতি মাজহারুল ইসলাম তা আবারও প্রমাণ করেছেন। তিনি ছিলেন লুই কানের প্রিয় ছাত্রদের একজন। তিনিই লুই কানকে এ দেশে এনেছিলেন এবং সংসদ ভবনের নকশা তৈরির দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন। তাঁর প্রিয় শিক্ষকই পারবেন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছু করতে—এই বিশ্বাস থেকেই জন্ম নিয়েছে জাতীয় সংসদ ভবনের মতো একটি বিশ্বসেরা স্থাপত্য।
সংসদ ভবনের পুরো কমপ্লেক্সের নকশাটিই লুই কানের করা। কমপ্লেক্সের ঠিক মাঝখানে স্থাপিত মূল ভবনটি। এ ছাড়া কমপ্লেক্সজুড়ে আছে লন, লেক ও এমপি হোস্টেল। কমপ্লেক্সটির চারপাশ দিয়ে গেছে চারটি প্রধান সড়ক। মূল ভবনটি তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত—প্রধান প্লাজা, দক্ষিণ প্লাজা ও রাষ্ট্রীয় প্লাজা। লেকটি যাতে নদীমাতৃক বাংলাদেশের পরিচয় বহন করে, সেই দিকটি বিবেচনা করেছেন লুই কান। এটি লুই কানের এমনি এক সৃষ্টি, যা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়। এটি আধুনিক ও কালোতীর্ণ। লুই কান তাঁর এই অমর সৃষ্টিতে প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহার করেছেন বিস্ময়করভাবে। তিনি এই ভবনে বৃত্ত, অর্ধবৃত্ত, বর্গ, ত্রিভুজের কাঠামোগুলো দিয়ে একটি নতুন স্বাধীনতার আদর্শের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে চেয়েছিলেন। তিনি পেরেছেনও। তাঁর হাত ধরেই জন্ম নিয়েছে একটি স্বাধীন দেশের নতুন দিনের আশার আলোকরেখা।
১৯৭৪ সালে পেনসিলভানিয়ার এক রেলস্টেশনে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান লুই কান। তিনি বেঁচে নেই ঠিকই, কিন্তু তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন চিরকাল। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, তত দিন থাকবে জাতীয় সংসদ ভবন। আর সংসদ ভবন ধারণ করে রাখবে তার স্থপতির নাম।
সুত্র: প্রথম আলো। | তারিখ: ২৯-০৯-২০১০। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
বাংলাদেশে স্থাপত্যচর্চা
সামসুল ওয়ারেস
যাঁরা স্থাপত্যবিদ্যা পড়তে চান, তাঁদের বলব, এটি একটি স্বাপ্নিক জায়গা। পরিবেশকে সুন্দর করে গোছানোর একটি মাধ্যম হলো স্থাপত্যবিদ্যা। সভ্যতার বিকাশে স্থাপত্যবিদ্যা একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। স্থাপত্যবিদ্যা হচ্ছে বিজ্ঞান ও কলার সংমিশ্রণ। এটি শুধু কলা নয়, আবার শুধু বিজ্ঞানও নয়। স্থাপত্যকে এক সময় কলার অন্তর্ভুক্ত বলা হলেও কালক্রমে এটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর একটি বিষয় হয়ে উঠেছে।
১৯৬২ সালের কথা। আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ যখন ১৯৬২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমানে বুয়েট) রূপান্তরিত হয়, তখন থেকেই এ দেশে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে স্থাপত্যবিদ্যার যাত্রা শুরু। ইউএস-এইডের আর্থিক সহায়তায় এ বিভাগটি গড়ে ওঠে। শুরুর পাঁচ বছর মার্কিন শিক্ষকদের মাধ্যমেই বিভাগটি পরিচালিত হতো। ১৯৬৩ সালে আমি ছিলাম এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র। সারা পৃথিবীতে যেভাবে স্থাপত্যবিদ্যা পড়ানো হয়, ঠিক সেভাবেই আমাদের এখানেও স্থাপত্যবিদ্যার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়।
স্থাপত্যবিদ্যার বিশ্বমানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ তৈরি হলেও তখন এ দেশে কাজের ক্ষেত্র তেমন বিকাশ লাভ করেনি বললেই চলে। স্বাধীন বাংলাদেশেও অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে। ১৯৭২ থেকে ’৮০ পর্যন্ত সময়টা ছিল স্থাপত্যের জন্য অনেকটা স্থবির সময়। সদ্য স্বাধীন দেশে সেটা অস্বাভাবিকও নয়। সে সময় স্থাপত্য বিষয়ক দু-একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। তেমন কাজ ছিল না। আশির দশকে পেশা হিসেবে স্থাপত্য একটি শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায়। বেসরকারি পর্যায়ে প্রচুর আবাসিক ভবন তৈরি হতে থাকে। সরকারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও নির্মিত হয় সে সময়। স্থপতিরা মেধাবিকাশের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হওয়ার সুযোগ পান।
স্থপতির কাজ ডিজাইন করা—বাংলায় বলা যেতে পারে ‘নকশা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন’। কিন্তু সাধারণ মানুষ স্থাপত্য এবং পুরকৌশলকে (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) এক করে ফেলেন। সেটা সম্পর্কে একটু বলা দরকার। আমরা ছোটবেলায় যেকোনো রোগের চিকিৎসার জন্য এমবিবিএস চিকিৎসকের কাছে যেতাম— চোখের অসুখ হোক আর হার্টের অসুখ হোক। সব চিকিৎসাই করতেন একজন এমবিবিএস চিকিৎসক। এখন কিন্তু সব রোগের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা চিকিৎসক। এখানেও ব্যাপারটা তা-ই। মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক স্থপতিই প্রকৌশলী, কিন্তু সব প্রকৌশলী স্থপতি নন। কর্মক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য। একজন স্থপতি তাঁর স্থাপত্যের নকশা এবং নকশাসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় দেখে থাকেন। আর সেই স্থাপত্যের কাঠামোগত ব্যাপারগুলোরই বাস্তবায়নে সার্বিক দায়িত্বে থাকেন একজন সিভিল বা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার। (দেশের বাইরে এখন ‘সিভিল ইঞ্জিনিয়ার’ না বলে ‘স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার’ বলা হচ্ছে।) স্থপতি হচ্ছেন স্রষ্টা। তিনি সৃজনশীল মানুষ। তিনি পুরো প্রকল্পের রূপকার।
বাংলাদেশ বেশি মানুষের দেশ। মানুষ থাকলেই তো ঘরবাড়ি লাগবে। বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক সক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে। বাসস্থান নির্মাণের সুন্দর পরিকল্পনার জন্য স্থপতিদের চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। আমাদের দেশের মতো ঘন জনবসতিপূর্ণ দেশে স্থপতিদের কর্মক্ষেত্র দিন দিন প্রসারিত হবে, তা বলা বাহুল্য।
১৯৬২ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এ দেশে প্রায় ১০ হাজার স্থপতি বেরিয়েছেন। কিন্তু সবাই হয়তো পেশাজীবনে জড়িত নেই। এখনো দেশে প্রচুর স্থপতির চাহিদা রয়েছে। নতুনেরা যতই আসবে এ বিষয়ে পড়তে, স্থাপত্যের নতুন নতুন ধারণা ততই বিকশিত হবে।
বাংলাদেশে স্থাপত্যবিদ্যার ক্রমপ্রসার ঘটেই চলেছে। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও স্থাপত্য বিষয়ে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বুয়েট কিংবা অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও চালু হয়েছে বেশ কিছু মানসম্মত স্থাপত্য অনুষদ।
যাঁদের প্রকৌশলীর মন আছে, আবার আঁকাআঁকিরও শখ আছে, তাঁদের বলব স্থাপত্যবিদ্যায় পড়তে আসতে। শুধু আঁকতে চাইলে চারুকলায় পড়া ভালো। আর যাঁর দুটি মাধ্যমেই আগ্রহ আছে, তিনি স্থাপত্যবিদ্যায় ভালো করবেন। স্থাপত্য এমন একটি জায়গা যেখানে নিজের সৃষ্টিশীলতা খুবই ভালোভাবে প্রকাশ করা যায়। ভালো আঁকতে তো পারতেই হবে, তার পরও সবকিছু নিজের মতো করে দেখতে জানতে হবে। যেকোনো কিছুকেই দেখতে হবে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে। তাহলেই সৃষ্টিশীলতার জায়গাটির উন্নতি হবে।
স্থাপত্যবিদ্যার সবখানে বিজ্ঞান ও শিল্পের সমাহার। একজন শিক্ষার্থীকে দুটি ক্ষেত্রেই দক্ষ হতে হয়। এখানে পড়তে এসে যদি কেউ আনন্দ পায়, তাহলে তাকে কেউ থামাতে পারবে না। এখানে পড়তে এটি জীবিকার বাহন হিসেবেও কাজ করবে, আবার মনের তৃপ্তিও মেটাতে পারবে।
সামসুল ওয়ারেস: বিশিষ্ট স্থপতি ও স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষক। তিনি ১৯৭২ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) অধ্যাপনা করেছেন। তাঁকে বাংলাদেশের আবাসিক ভবনের নকশা প্রণয়নের (১৯৮৪-২০০০) ক্ষেত্রে অগ্রণী স্থপতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া তাঁর অন্যতম কাজের মধ্যে রয়েছে: শিশু পার্ক (শাহবাগ), বোটানিক্যাল গার্ডেন (মিরপুর), লাইভস্টক রিসার্স ইনস্টিটিউট (সাভার) প্রভৃতি।
সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত
সামসুল ওয়ারেস | তারিখ: ২৯-০৯-২০১০
লুই আই কানের কিছু বিখ্যাত কাজ
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় আর্ট গ্যালারি—নিউ হ্যাভেন, কানেকটিকাট (১৯৫১—৫৩)
রিচার্ড মেডিকেল রিসার্চ ল্যাবরেটরি— পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ফিলাডেলফিয়া (১৯৫৭—৬৫)
সল্ক ইনস্টিটিউট—লা জোলা, ক্যালিফোর্নিয়া (১৯৫৯—৬৫)
প্রথম ইউনিটারিয়ান চার্চ—রোচেস্টার, নিউইয়র্ক (১৯৫৯—৬৯)
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট— আহমেদাবাদ, ইন্ডিয়া (১৯৬২)
ফিলিপ্স একাডেমি লাইব্রেরি—এক্সিটর, নিউ হ্যাম্পশায়ার (১৯৬৫—৭২)
কিম্বেল আর্ট জাদুঘর—ফোর্ট ওয়ার্থ, টেক্সাস (১৯৬৬—৭২)
ইয়েল সেন্টার ফর ব্রিটিশ আর্ট—ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়, নিউ হ্যাভেন, কানেকটিকাট (১৯৬৯—৭৪)
রিচার্ড মেডিকেল রিসার্চ ল্যাবরেটরি— পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ফিলাডেলফিয়া (১৯৫৭—৬৫)
সল্ক ইনস্টিটিউট—লা জোলা, ক্যালিফোর্নিয়া (১৯৫৯—৬৫)
প্রথম ইউনিটারিয়ান চার্চ—রোচেস্টার, নিউইয়র্ক (১৯৫৯—৬৯)
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট— আহমেদাবাদ, ইন্ডিয়া (১৯৬২)
ফিলিপ্স একাডেমি লাইব্রেরি—এক্সিটর, নিউ হ্যাম্পশায়ার (১৯৬৫—৭২)
কিম্বেল আর্ট জাদুঘর—ফোর্ট ওয়ার্থ, টেক্সাস (১৯৬৬—৭২)
ইয়েল সেন্টার ফর ব্রিটিশ আর্ট—ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়, নিউ হ্যাভেন, কানেকটিকাট (১৯৬৯—৭৪)
সুত্র: প্রথম আলো। | তারিখ: ২৯-০৯-২০১০
বিরল বন্ধুত্ব!
পর্যটকদের কসরত দেখাচ্ছেন চিতো ও তাঁর পোষা কুমির পোচো
কুমিরের যা হিংস্র স্বভাব, তাতে মানুষের সঙ্গে প্রাণিটির বন্ধুত্ব হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু এর ব্যতিক্রম ঘটেছে কিউবার জেলে চিতো ও তাঁর পোষা কুমির পোচোর বেলায়। প্রায় ২০ বছর আগে পোচোকে পোষার জন্য নিয়ে আসেন চিতো। পোচো তখন খুব ছোট, ওজন ছিল মাত্র ১৫০ পাউন্ড। এক খামারির বন্দুকের গুলিতে মরতে বসেছিল কুমিরটি। চিতোর সেবায় বেঁচে ওঠে সে। মনিবের দেওয়া মাছ ও মুরগি খেয়ে খেয়ে পোচো এখন ইয়া বড়। মাথা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত কুমিরটির দৈর্ঘ্য ১৭ ফুট। ওজন প্রায় এক হাজার পাউন্ড।
চিতো ও পোচোর মধ্যে এখন দারুণ বন্ধুত্ব। কয়েক বছর ধরে কুমিরটি নিয়ে পর্যটকদের সামনে বিভিন্ন কসরত দেখান চিতো, যা রোমাঞ্চকর ও তাক লাগানো। এতে পর্যটকেরা যেমন আনন্দ পায়, তেমিন চিতোর জন্য আসে কিছু অর্থ।মেয়ার উইলসন নামে একজন পর্যটক বলেন, ‘আমি বাড়িঘর নির্মাণের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ব্যবসা সূত্রে বিশ্বের অনেক স্থানেই ঘুরেছি। কিন্তু এমন আজব ঘটনা দেখিনি কখনো।’
চিতো বলেন, একসময় পোচোর যে উপকার করেছিলাম, তারই প্রতিদান দিচ্ছে সে। এপি।
সুত্র: দৈনিক প্রথম আলো তারিখ: ২৯-০৯-২০১০
নোবেল পুরস্কারের আদ্যোপান্ত
পাহাড় দেখোনি, এমন কাউকে তো খুঁজেই পাওয়া যাবেনা। পাহাড়ের মাঝের সুড়ঙ্গ হয়তো দেখোনি অনেকেই। কিন্তু শুনেছো নিশ্চয়ই, অনেক দেশেই পাহাড়ের মাঝে আছে সুড়ঙ্গ। আর সেই সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে চলে যায় রেলগাড়ি। পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ তৈরি করা কিন্তু এতো সহজ নয়। তবুও মানুষ সে কাজ করে চলেছে খুব সহজে। কীভাবে বলো তো? এর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ডিনামাইট। ডিনামাইট হচ্ছে খুবই শক্তিশালী এক বিস্ফোরক। যেকোনো বড় সড় পাহাড় মুহূর্তে ধ্বংস করার জন্য ডিনামাইটের বিকল্প নেই। এর আবিষ্কারের আগে পাহাড় বা বড়ো পাথর সরিয়ে কাজ করার প্রয়োজন হলেও মানুষ সহজে তা করতে পারতো না। কিন্তু ডিনামাইট আবিষ্কার হওয়ার পর এরকম সব কাজ পানির মতো সহজ হয়ে গেল। কে তবে আবিষ্কার করেন এই ডিনামাইট? তার নাম আলফ্রেড নোবেল। একাধারে রসায়নবিদ, প্রকৌশলি আলফ্রেড নোবেলের মোট আবিষ্কারের সংখ্যা ৩৫৫, যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত আবিষ্কার ডিনামাইট। এতো বিশাল সংখ্যক আবিষ্কার করে প্রচুর টাকা রোজগার করেন সুইডেনে জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানী। সেই টাকা দিয়েই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক পুরষ্কার ‘নোবেল পুরষ্কার’।
নোবেল পুরষ্কার প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্পটা বেশ মজার। আলফ্রেড নোবেলের অধিকাংশ আবিষ্কারই ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। ডিনামাইট বা অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র যেমন মানুষের কল্যানের কাজে ব্যাবহৃত হয়, তেমনি ব্যবহৃত হয় ধ্বংসাত্বক কাজেও। সে কারনে অনেক নিন্দা জোটে আলফ্রেড নোবেলের কপালে। ১৮৮৮ সালে আলফ্রেডের ভাই লুডভিগ ফ্রান্সে ঘুরতে গিয়ে মারা যান। এক ফ্রেঞ্চ পত্রিকা ভুলে ধরে নেয় আলফ্রেড নোবেলই মারা গেছেন। সেই পত্রিকা তখন আলফ্রেডের মৃত্যুর সংবাদ ছাপে। সেখানে তারা আলফ্রেডেকে বর্ণনা করে ‘মৃত্যুর সওদাগর’ বলে। আলফ্রেড মানুষ হত্যার বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করে প্রচুর টাকা উপার্জন করেছেন, কিন্তু সেই টাকা পুরো মানব জাতির কল্যানের কোনো কাজে ব্যয় করেননি বলে তার প্রচন্ড নিন্দা করে। পত্রিকার এই লেখাটি আলফ্রেড নোবেল নিজে পড়েন। পড়া শেষে তিনি বেশ কষ্ট পান। অনেক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেন তাঁর উপার্জিত অর্থ মানব কল্যানের কাজে ব্যয় করবেন। এরপর ১৮৯৫ সালের নভেম্বর মাসে আলফ্রেড নোবেল তার মোট উপার্জনের ৯৪% (৩ কোটি সুইডিশ ক্রোনার) দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন নোবেল পুরষ্কার।
নোবেল পুরষ্কারের মূল লক্ষ্য মানব কল্যানের জন্য কোনো কাজকে উৎসাহিত করা। সেই উদ্দেশ্যে নোবেল তার রেখে যাওয়া সম্পদ হতে উপার্জিত অর্থ ৫ ভাগ করে পুরষ্কার হিসেবে দান করার কথা বলে যান তার উইলে। এই পাঁচ ভাগ পাবে সমান অংশে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা শাস্ত্র, সাহিত্য এবং শান্তিতে অসাধারন অবদান রাখা ব্যাক্তি বা ব্যক্তি বর্গ। পরবর্তীতে, ১৯৬৮ সালে সুইডিশ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক রিক্সব্যাঙ্কেন তাদের ৩০০ বছর পূর্তিতে আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতিকে স্মরণ করে অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখা ব্যাক্তিদের জন্যও নতুন একটি পুরষ্কার ঘোষনা করে। এই পুরষ্কারের দায়িত্বও দেওয়া হয় নোবেল ফাউন্ডেশনকে এবং এর বিজয়ী নির্বাচনের ভার থাকে রয়েল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস এর উপর। তখন থেকেই এই পুরষ্কারকে অর্থনীতির নোবেল পুরষ্কারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়; যদিও এই পুরষ্কারের অর্থের যোগান দেয় রিক্সব্যাঙ্কেন।
আলফ্রেড নোবেল উইলে সাক্ষর করেন ১৮৯৫ সালে, কিন্তু পুরষ্কার ঘোষণার সার্বিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর এই উইল বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পিত হয় রাগনার সোহলমান এবং রুডলফ লিলিযেকুইস্ট নামের দুই ভদ্রলোকের উপর। ১৮৯৭ সালে আইনসভায় নোবেলের উইল পাস হওয়ার পর এই দুই ভদ্রলোক গঠন করেন নোবেল ফাউন্ডেশন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, নোবেল ফাউন্ডেশন থেকে পুরষ্কার দেওয়া হলেও এই ফাউন্ডেশন নোবেল পুরষ্কারের বিজয়ী নির্বাচন করে না। এই ফাউন্ডেশনের মুল কাজ হলো নোবেলের রেখে যাওয়া অর্থের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করা এবং নোবেল পুরষ্কারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করা। পুরষ্কার ঘোষনার দায়িত্ব নোবেল ভাগ করে দিয়ে যান তার উইলে। পদার্থ বিজ্ঞান এবং রসায়ন এর পুরষ্কার ঘোষনা করার দায়িত্ব দেন রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সকে। চিকিৎসা শাস্ত্রের পুরষ্কার দেওয়ার দায়িত্ব দেন ক্যারোলিন্সকা ইন্সটিটিউটকে। সুইডিশ একাডেমি কে দায়িত্ব দেন সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী ঘোষনা করার দায়িত্ব। আর শান্তি পুরষ্কার ঘোষনার দায়িত্ব দেন নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিকে। এখানে আরেকটা মজার ব্যাপার আছে। তা হলো, যে সময় নোবেল পুরষ্কার প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন সুইডেন ও নরওয়ে ছিলো একসঙ্গে যা পরবর্তীতে ভেঙ্গে যায়। ফলে নোবেল পুরষ্কার ঘোষনার দায়িত্ব ভাগ হয়ে যায় দুই দেশের মধ্যে।
নোবেল ফাউন্ডেশন গঠনের পর পরই আলফ্রেড নোবেল পুরষ্কার ঘোষণার জন্য যেই প্রতিষ্ঠান গুলো ঠিক করে দিয়ে যান, সেই প্রতিষ্ঠান গুলো গঠন করে নোবেল কমিটি। এই নোবেল কমিটি গুলোই ঘোষণা করে পুরষ্কার। পুরষ্কার ঘোষণার জন্য প্রত্যেক বছর সেপ্টেম্বর মাসে নোবেল কমিটি গুলো মনোনয়ন আহবান করে। সেই মনোনয়ন পরের বছর জানুয়ারীর মধ্যে জমা করতে হয়। অতঃপর সেই মনোনয়ন থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকা গঠন করা হয়। সেই তালিকার উপর কমিটির সদস্যদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় নোবেল পুরষ্কার। প্রত্যেক বছর নোবেল পুরষ্কার ঘোষণা করা হয় অক্টোবর মাসে। অর্থাৎ এক বছরেও বেশী সময় ধরে চলে এই পুরষ্কারের বিজয়ী নির্বাচন করার প্রক্রিয়া।
১৯০০ সালের নোবেল পুরষ্কার ঘোষণার কিছু নিয়ম নির্ধারন করা হয়। সেই নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা, একটি গোল্ড মেডেল এবং একটি সার্টিফিকেট পেয়ে থাকে। এই অর্থের পরিমান নির্ভর করে নোবেল ফাউন্ডেশনের আয় এর উপর। যদি একাধিক ব্যাক্তি একই ক্ষেত্রে পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত হন, তাহলে তাদেরকে এই ভাগ করে দেয়া হয়। শুধু মাত্র শান্তি পুরষ্কারের জন্য কোনো ব্যাক্তির বাইরে কোন প্রতিষ্ঠানকেও নির্বাচন করা যায়।
এই সব নিয়ম কানুন ঠিক করে প্রথম পুরষ্কার ঘোষণা করা হয় ১৯০১ সালে- আলফ্রেড নোবেলের উইল স্বাক্ষরের ৫ বছর পর। পদার্থ বিজ্ঞানে পুরষ্কার পান জার্মান বিজ্ঞানী রন্টজেণ্ট। এক্স-রে আবিষ্কার করার স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরষ্কার পান তিনি। রসায়নে অনবদ্য অবদান রাখায় জ্যকব হান্ট হফ নোবেল পান সেই বছর। ডিপথেরিয়ার প্রতিষেধক আবিষ্কার করে চিকিৎসায় নোবেল পান এমিল বেরিং। সাহিত্যে নোবেল দেওয়া হয় সুলি ফরুডহোমকে। শান্তিতে যুগ্ম ভাবে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন ফরাসী নাগরিক ফেডেরিক পুসি এবং রেড ক্রসের প্রতিষ্ঠাতা জীন হেনরী ডুনান্ট। আর এভাবেই পথ চলা শুরু করে পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক পুরষ্কার- নোবেল পুরষ্কার।
সৌরভ ওয়াহেদ
বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম/সৌরভ/এসএ/সাগর/অক্টোবর ১৪/১০
মুল লেখা পড়ুন:
http://kidz.bdnews24.com/bishesh_rochona.php?bisheshrochonaid=125
পাহাড়ের বুকে স্বপ্নের গাঁ
পলাশ বড়ুয়া, দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি) | তারিখ: ১৫-১০-২০১০
সংঘাত, মারামারি, হানাহানি নেই সেখানে। মানুষগুলো একদম সাদাসিধে। সবাই একজোট হয়ে কাজ করেন। সে কাজও বেশ গোছালো। কেউ কাজে ফাঁকি দেন না। গাঁয়ের জন্য, নিজেদের জন্য নিরন্তর শ্রম দেন। ওঁদের আছে একটি সমিতি। পাহাড়ের বুকে ছোট্ট সেই গাঁয়ের মানুষগুলো সমিতির বেঁধে দেওয়া নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন। তাই তিন বছরের মাথায় দারিদ্র্যের চেনা রূপ বিদায় নিয়েছে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বৈদ্যপাড়া গ্রাম থেকে। বছর তিনেক আগেও অভাব ছিল গাঁয়ের ৯০টি পরিবারের নিত্যসঙ্গী। অশিক্ষা, ঝাড়ফুঁক, তুকতাকই যেন ছিল আদিবাসী মানুষগুলোর নিয়তি। দিন পাল্টেছে। প্রতিটি পরিবার এখন স্বাবলম্বী। গ্রামের শিশুরা সবাই দলবেঁধে স্কুলে যায়। নারী-পুরুষ দলে দলে ভাগ হয়ে মাছ চাষ করে, কেউ করে বাগান। সমঝদার নারীরা ঘরে ঘরে গিয়ে শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষার তদারক করেন। মেয়েদের বাল্যবিয়ে দিতে করেন মানা। গাঁয়ের লোকদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে কয়েকজন তরুণ নিচ্ছেন পল্লি চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ। এসবই সম্ভব হয়েছে একটি সমবায় সমিতির জন্য। আমাদের চেনা আর দশটা সমিতি থেকে যা একেবারেই ভিন্ন।
২০০৭ সালের শুরুর দিকে গাঁয়ের সবাই মিলে একটিমাত্র সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যে সিদ্ধান্ত গোটা গ্রামের মানুষের চালচিত্র পাল্টে দেয়। তাঁরা একজোট হয়ে সে দিন একটি সমিতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ওই বছরের ১ জুন গঠন করেছিলেন বৈদ্যপাড়া মৎস্য সমবায় সমিতি। সেই সমিতি একটু একটু করে ডালপালা মেলেছে। এককালের পশ্চাৎপদ গ্রামটিকে দেখিয়েছে উন্নতির পথ।
প্রতি মাসে সমিতির বৈঠক হয়। সবার কথা ও পরামর্শ সমান গুরুত্বের সঙ্গে শোনা হয়। এখানে নারী-পুরুষে নেই কোনো ভেদাভেদ। সমিতি গঠনের পর তহবিলের জন্য প্রতি পরিবার মাসে ১০ টাকা জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ক্ষুদ্র সেই সঞ্চয় আজ কয়েক লাখ টাকায় পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, লোকজন দলবদ্ধ হয়ে ১২ একরের একটি পুকুরে আবর্জনা পরিষ্কার করছেন। কয়েকজন হ্রদের বিভিন্ন স্থানে মাছের খাদ্য দিচ্ছেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে এগিয়ে আসেন বৈদ্যপাড়া মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চন্দ্র চাকমা। নিয়ে যান সমিতির কার্যালয়ে। রাহুল চন্দ্র চাকমা বলেন, ‘সমিতি গঠনের আগে গ্রামের কথা ভাবলে এখনো মনে হয় আমরা কত পিছিয়ে ছিলাম। আমাদের ১০ টাকার মাসিক সঞ্চয় ক্ষুদ্র হলেও আজ তা বড় আকার ধারণ করেছে।’
সমিতির সভাপতি সুমতি চাকমা বলেন, ‘আমাদের যে টাকা জমে ছিল, সেখানে মাত্র ৫০০ টাকা রেখে বাকি টাকা তুলে আমরা গ্রামের অনাবাদি জমিতে বাঁধ দিয়ে মৎস্য খামার গড়ে তুলি। রাত-দিন নারী-পুরুষ মিলে মাটি কেটে বাঁধ তৈরি করে ফেলি। সমিতির আওতায় রয়েছে ৩০ হাজার চারার একটি ফলদ বাগান।’
সমিতিতে নারীদের নিয়ে আছে একটি দল। নারী দলের দলনেত্রী কুয়াশা চাকমা, সাধারণ সম্পাদক দেশনা চাকমা। নারীরা পুকুরের পাড়ে গড়ে তুলছেন শাকসবজির বাগান। নারীদের নিয়ে আরেকটি রয়েছে মা দল। এ দলের সদস্যরা ঘরে ঘরে গিয়ে নারী ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতামূলক কথা বলেন। জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অন্য নারীদের ধারণা দেন। শিশুদের সময়মতো টিকা দেওয়া হয়েছে কি না, খোঁজ নেন।
কুয়াশা চাকমা বলেন, ‘এ সমিমিতে নারী-পুরুষ সবাই সমান। সবাই সমান পরিশ্রম করে। তবে সবাইকে কাজ ভাগ করে দেওয়া আছে। এটা শুধু একটা সমিতি নয়। আমাদের স্বপ্ন, সমিতির সব সদস্যকে একটি পরিবারে রূপান্তরিত করা। আমরা সবাই সবার সুখে সুখী, সবার দুঃখে দুঃখী।’ তিনি আরও জানান, পরিবারগুলোকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে কয়েকজন তরুণকে পল্লি চিকিৎসায় প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানো হয়েছে। পুকুরে মাছের খাবার দেওয়ার জন্য রয়েছে একটি যুব কমিটি। এই কমিটির কাজ হচ্ছে শুধু মাছের খাদ্য দেওয়া এবং গ্রামের পরিবারগুলোর কাছ থেকে মাসে ১০০ টাকা হারে চাঁদা তুলে মাছের খাবার কিনে আনা।
রাহুল চাকমা বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য, গ্রামের সব পরিবারকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলা। গ্রামের প্রতিটি পরিবারের জন্য শিশুকে স্কুলে পাঠানো বাধ্যতামূলক। প্রতিদিন আমরা খোঁজ নিই, কোনো শিশু স্কুল কামাই করছে কি না। গ্রামবাসীকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন করতে ২০১১ সালে একটি ‘রাইস-ব্যাংক’ চালু করার ইচ্ছা পোষণ করেন রাহুল চাকমা। গ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমিতি থেকে উপবৃত্তি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন তাঁরা। সমিতির মূলমন্ত্র হচ্ছে, মাসিক সভায় সব সদস্যের কথা বলার অধিকার ও তাঁদের পরামর্শ নেওয়া। তাঁদের সমিতিটি সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধনভুক্ত, জানালেন রাহুল চাকমা।
এমন একটি সমবায় সমিতির কথা শুনে ৩ অক্টোবর বৈদ্যপাড়া গিয়েছিলেন দীঘিনালার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান মিঞা। সঙ্গে ছিলেন উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান শতরুপা চাকমা, মৎস্য কর্মকর্তা অবর্ণা চাকমা ও দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা। সমিতির কার্যক্রম দেখে ইউএনও বলেন, ‘একটি পশ্চাৎপদ গ্রামে এ ধরনের সমিতি সত্যিই অবিশ্বাস্য। আমি নিজে ঘুরে না দেখলে গল্প বলে ভাবতাম। এখন দেখছি সত্যি এটি একটি সোনার গ্রাম।’
ইউপি চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘গ্রামে যত রাস্তা সবই গ্রামবাসীর করা। আমার ইউনিয়নের মধ্যে এ ধরনের একটি গ্রাম আছে, সেটাই আমার বড় অহংকার।’
২০০৭ সালের শুরুর দিকে গাঁয়ের সবাই মিলে একটিমাত্র সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যে সিদ্ধান্ত গোটা গ্রামের মানুষের চালচিত্র পাল্টে দেয়। তাঁরা একজোট হয়ে সে দিন একটি সমিতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ওই বছরের ১ জুন গঠন করেছিলেন বৈদ্যপাড়া মৎস্য সমবায় সমিতি। সেই সমিতি একটু একটু করে ডালপালা মেলেছে। এককালের পশ্চাৎপদ গ্রামটিকে দেখিয়েছে উন্নতির পথ।
প্রতি মাসে সমিতির বৈঠক হয়। সবার কথা ও পরামর্শ সমান গুরুত্বের সঙ্গে শোনা হয়। এখানে নারী-পুরুষে নেই কোনো ভেদাভেদ। সমিতি গঠনের পর তহবিলের জন্য প্রতি পরিবার মাসে ১০ টাকা জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ক্ষুদ্র সেই সঞ্চয় আজ কয়েক লাখ টাকায় পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, লোকজন দলবদ্ধ হয়ে ১২ একরের একটি পুকুরে আবর্জনা পরিষ্কার করছেন। কয়েকজন হ্রদের বিভিন্ন স্থানে মাছের খাদ্য দিচ্ছেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে এগিয়ে আসেন বৈদ্যপাড়া মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চন্দ্র চাকমা। নিয়ে যান সমিতির কার্যালয়ে। রাহুল চন্দ্র চাকমা বলেন, ‘সমিতি গঠনের আগে গ্রামের কথা ভাবলে এখনো মনে হয় আমরা কত পিছিয়ে ছিলাম। আমাদের ১০ টাকার মাসিক সঞ্চয় ক্ষুদ্র হলেও আজ তা বড় আকার ধারণ করেছে।’
সমিতির সভাপতি সুমতি চাকমা বলেন, ‘আমাদের যে টাকা জমে ছিল, সেখানে মাত্র ৫০০ টাকা রেখে বাকি টাকা তুলে আমরা গ্রামের অনাবাদি জমিতে বাঁধ দিয়ে মৎস্য খামার গড়ে তুলি। রাত-দিন নারী-পুরুষ মিলে মাটি কেটে বাঁধ তৈরি করে ফেলি। সমিতির আওতায় রয়েছে ৩০ হাজার চারার একটি ফলদ বাগান।’
সমিতিতে নারীদের নিয়ে আছে একটি দল। নারী দলের দলনেত্রী কুয়াশা চাকমা, সাধারণ সম্পাদক দেশনা চাকমা। নারীরা পুকুরের পাড়ে গড়ে তুলছেন শাকসবজির বাগান। নারীদের নিয়ে আরেকটি রয়েছে মা দল। এ দলের সদস্যরা ঘরে ঘরে গিয়ে নারী ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতামূলক কথা বলেন। জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অন্য নারীদের ধারণা দেন। শিশুদের সময়মতো টিকা দেওয়া হয়েছে কি না, খোঁজ নেন।
কুয়াশা চাকমা বলেন, ‘এ সমিমিতে নারী-পুরুষ সবাই সমান। সবাই সমান পরিশ্রম করে। তবে সবাইকে কাজ ভাগ করে দেওয়া আছে। এটা শুধু একটা সমিতি নয়। আমাদের স্বপ্ন, সমিতির সব সদস্যকে একটি পরিবারে রূপান্তরিত করা। আমরা সবাই সবার সুখে সুখী, সবার দুঃখে দুঃখী।’ তিনি আরও জানান, পরিবারগুলোকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে কয়েকজন তরুণকে পল্লি চিকিৎসায় প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানো হয়েছে। পুকুরে মাছের খাবার দেওয়ার জন্য রয়েছে একটি যুব কমিটি। এই কমিটির কাজ হচ্ছে শুধু মাছের খাদ্য দেওয়া এবং গ্রামের পরিবারগুলোর কাছ থেকে মাসে ১০০ টাকা হারে চাঁদা তুলে মাছের খাবার কিনে আনা।
রাহুল চাকমা বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য, গ্রামের সব পরিবারকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলা। গ্রামের প্রতিটি পরিবারের জন্য শিশুকে স্কুলে পাঠানো বাধ্যতামূলক। প্রতিদিন আমরা খোঁজ নিই, কোনো শিশু স্কুল কামাই করছে কি না। গ্রামবাসীকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন করতে ২০১১ সালে একটি ‘রাইস-ব্যাংক’ চালু করার ইচ্ছা পোষণ করেন রাহুল চাকমা। গ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমিতি থেকে উপবৃত্তি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন তাঁরা। সমিতির মূলমন্ত্র হচ্ছে, মাসিক সভায় সব সদস্যের কথা বলার অধিকার ও তাঁদের পরামর্শ নেওয়া। তাঁদের সমিতিটি সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধনভুক্ত, জানালেন রাহুল চাকমা।
এমন একটি সমবায় সমিতির কথা শুনে ৩ অক্টোবর বৈদ্যপাড়া গিয়েছিলেন দীঘিনালার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান মিঞা। সঙ্গে ছিলেন উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান শতরুপা চাকমা, মৎস্য কর্মকর্তা অবর্ণা চাকমা ও দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা। সমিতির কার্যক্রম দেখে ইউএনও বলেন, ‘একটি পশ্চাৎপদ গ্রামে এ ধরনের সমিতি সত্যিই অবিশ্বাস্য। আমি নিজে ঘুরে না দেখলে গল্প বলে ভাবতাম। এখন দেখছি সত্যি এটি একটি সোনার গ্রাম।’
ইউপি চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘গ্রামে যত রাস্তা সবই গ্রামবাসীর করা। আমার ইউনিয়নের মধ্যে এ ধরনের একটি গ্রাম আছে, সেটাই আমার বড় অহংকার।’
পাখিরা বাতাসের উল্টা দিকে ওড়ে কেন?
আব্দুল কাইয়ুম | তারিখ: ১৬-১০-২০১০
জলে-জঙ্গলে
সংগ্রহ: দৈনিক প্রথম আলো | তারিখ: ১৬-১০-২০১০
পানিকাটা পাখি
আলোকচিত্র: রেজা খান
কাঁকড়াভুক
জুলাই মাসে বৃষ্টিবাদল মাথায় করে শখে কেউ সুন্দরবনে যায় না। কিন্তু গত বছর কয়েকজন শখের বিজ্ঞানী, সাংবাদিক, লেখক, শিল্পী, সংস্কৃতিবিদ ও ছবিধারকের এক জগাখিচুড়ি দলে যোগ দিয়ে সুন্দরবনে যাই মধ্য মাসে। মুহুর্মুহু বৃষ্টি, মেঘে ভরা আকাশ আর ঝোড়ো বাতাস ছিল আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। নলিয়ান রেঞ্জের কাছে পৌঁছাতে অনির্ধারিতভাবে জাহাজ নোঙর করল। মাস্টার জানালেন, ইঞ্জিনচালিত জলযানটি বিকল হয়েছে। এটি সারাতে ঘণ্টা খানেক সময় নেবে। সুযোগ বুঝে বিকল নৌকায় উঠে পড়লাম। মাঝিরা দাঁড়ের সাহায্যে পাড়ে নাও ভেড়াল। তাঁরা যন্ত্র সারাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে আমি নেমে পড়লাম নদীর পাড় ধরে মাটির তৈরি বেড়িবাঁধের ওপর।
প্রথমে খুঁজে বের করলাম বন বিভাগীয় অফিস। দেখলাম, সিডরের আঘাতে বিশাল বিশাল পুকুরে ঢুকে পড়েছে নদীর লোনা ও পচা পানি। খাওয়ার পানির তীব্র অভাব। মানুষসহ গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি আশ্রয় নিয়েছে বেড়িবাঁধে।
হাঁটতে শুরু করলাম বাঁধ ধরে। দৃষ্টি নদীর পাড়ে। আশা চিংড়ি বা কাঁকড়ার বাহারি প্রজাতির ছবি তোলা। ঝোড়ো হাওয়ার ফলে বেশির ভাগ মাছধরা নৌকা পাড়ে ভিড়ে আছে। হঠাৎ চোখে পড়ল এত সব ভিড়ভাট্টার মধ্যেও কাদার রঙে রং, অনেকটা কোলাব্যাঙ-সদৃশ একটি কাদায় মাখানো ব্যাঙ ঘাপটি মেরে বসে আছে বাঁধের নদীর দিকে মুখ করা পাড়ের শক্ত মাটিতে।
ব্যাপারটি অবাক করার মতো। কারণ, কুনোব্যাঙ ছাড়া বাকি সব ব্যাঙ মানুষ কাছে গেলেই পানিতে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। আর ব্যাঙটি কিনা জলকেলি করা বালক ও বাঁধের ওপর দিয়ে চলাচলকারী অনেক লোকের মধ্যেও চুপটি করে বসে আছে!
ওখান থেকে আরেকটু দূরে পানির ওপর মাচা করে বানানো একটি ছোট গোলাঘরের নিচের মাটির মেঝেতে, নদীমুখী পাড়ের দিকে দেখি আরও একটি এমন ব্যাঙ। এটির গায়ে কাদা কম ছিল, কিন্তু সে-ও প্রায় ভয়শূন্যভাবে অনড় বসেছিল আমার কয়েক ডজন ছবি তোলা পর্যন্ত।
দুটি ব্যাঙই ছিল সচরাচর দেখা সব ব্যাঙ থেকে আলাদা। ঢাকায় ফিরে প্রথমে দেশে ছাপানো সব বই ঘাঁটলাম। তারপর চাপলাম ইন্টারনেটের ওপর। একসময় পেয়ে গেলাম ক্রাব-ইটিং ফ্রগ নামের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ম্যানগ্রোভ বনে বাস করা একটি ব্যাঙের নাম, পরিচয় ও ছবি। এরপর পেলাম ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের ব্যাঙবিষয়ক এক গবেষকের লেখা গবেষণাপত্র, যাতে তিনি বলেছেন, উড়িষ্যাতে তিনি এ ব্যাঙের প্রথম নমুনা পান বছর খানেক আগে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল হক খান তাঁর বইটিতে (২০০৮ সালে প্রকাশিত) সুন্দরবন থেকে আমার তোলা ছবিসদৃশ নাম ও প্রজাতি চিহ্নিতকরণ ছাড়া অন্য একটি ব্যাঙের ছবি ছাপেন। ইন্টারনেটে আরও দেখি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বিজ্ঞানী বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ দিকে এশীয় অঞ্চলের কিছু ঝিঁঝি ও ক্রাব-ইটিং ফ্রগের ওপর জেনেটিক বা ডিএনএ স্যাম্পলিং করেন।
অতএব, ক্রাব-ইটিং বা ম্যানগ্রোভ ফ্রগটি বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত কোনো বইয়ে তখনো ঠাঁই পায়নি। এটি আমাদের দেশের বন্য প্রাণীর নামের তালিকায় সংযোজিত একটি নতুন প্রজাতি, যার বাংলা নাম আমি রাখি কাঁকড়াভুক ব্যাঙ। কারণ, এরা ব্যাপকভাবে কাঁকড়া খায় এবং লোনা পানিতে বসবাসের উপযুক্ততা রাখে। আমার লেখা ওয়াইল্ড লাইফ অব বাংলাদেশ বইতে এর বাংলা, ইংরেজি ও লাতিন নাম এবং ছবি প্রথমবারের মতো সংযুক্তি পায়।
পানিকাটা পাখির দল
সম্ভবত ১৯৯৫ সালের প্রথম দিকের ঘটনা। পরিযায়ী পাখি শুমারের জন্য একটি ছোট মাছ ধরার ট্রলার ভাড়া করে নোয়াখালীর দক্ষিণের হাতিয়া যাওয়ার লঞ্চঘাট থেকে যাত্রা শুরু করি নিঝুম দ্বীপের উদ্দেশে। সঙ্গে অনুজ আনিস, প্রাক্তন ছাত্র ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফরীদ আহসান ও উইং কমান্ডার (অবসরপ্রাপ্ত) ইনাম আল হক। ইনাম ভাই তখন ছিলেন শাকাহারি আর তাই সঙ্গে নিয়েছিলেন অনেক আলু, শসা, কলা এবং বিভিন্ন ধরনের কিছু সবজি ও ফল। ওই সময় জানুয়ারির ভরা শীতেও যার যার গায়ে যে গরম কাপড় ছিল, তা পরেই ঘুমাতাম কাঠের পাটাতন করে ইঞ্জিনের চারপাশ ঘিরে বানানো তাকের ওপর। বালিশের কাজ চালিয়েছি ক্যামেরা বা দুরবিনের ব্যাগ দিয়ে।
তিন দিন ধরে পাখি দেখার কাজ শেষ করে যখন ফিরছিলাম, তখনকার হাতিয়া দ্বীপ ছিল আমাদের ডান হাতে এবং বাঁয়ে অনেক দূরে ঢালচর ও মৌলভীর চর। হাতিয়ার উত্তর-পশ্চিম কোণে তখন যে ছোট দ্বীপমতো অংশ ছিল, যার নাম কচ্ছপিয়া দ্বীপ, তা এখন নদীগর্ভে। ওখানে রাখাল বালকেরা গরু-মোষ চড়াচ্ছিল। এদের পালের ফাঁক থেকে প্রায় হঠাৎই গাঙচিলসদৃশ্য একঝাঁক পাখি উড়াল দিল। এরপর তারা এসে বসল চরের কিনারে। সে সময় স্থিরচিত্র ধারণের জন্য যে ফিল্ম ও ক্যামেরা ছিল, তার ৩০০ মিলিমিটার লেন্সের সাহায্যে যে ছবি তুললাম, তা দিয়ে কেবল প্রমাণিত হলো, পাখির দলটি ছিল পানিকাটা পাখির প্রজাতির বা ইন্ডিয়ান স্কিমারের। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সম্ভবত আমরাই এদের দলকে প্রথম দেখি দেশের চৌহদ্দির মধ্যে। কিন্তু সে ছবি বইয়ে ছাপার মতো মানের ছিল না।
এ বছর জানুয়ারি মাসে তাই ছুটেছিলাম হাতিয়ার উদ্দেশে। ১৯৯৪ এবং এখনকার হাতিয়ার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। মনে হয় পুরো হচ্ছপিয়া দ্বীপ হাতিয়া থেকে ভেঙে এসে নোয়াখালীর দক্ষিণে যোগ হয়ে মূল ভূখণ্ডকে চার-পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে বাড়িয়ে নিয়ে গেছে। প্রমাদ গুনলাম এই বলে যে, পানিকাটা পাখিদের সম্ভবত আর দেখা যাবে না।
কিন্তু দ্বীপের জাহাজমারা এলাকায় পৌঁছার পর জানলাম, মুখতারিয়া খাল বা মুখতারিয়াচরে গাঙচিলের একটি বড় দল বাস করে। তবে সমস্যা হলো ওই এলাকায় একটি ডাকাতদল বিচরণ করছে, যাদের সঙ্গে এক পক্ষকাল আগে বন বিভাগ ও পুলিশের সম্মিলিত লোকবলের বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। তাদের কয়েকজন ডাকাত ধরাও পড়েছে। কাজেই আমাকে সবাই সতর্ক করে দিল।
অবস্থা বেগতিক বুঝে বাজারে ঢুকে স্থানীয় লোকজনের পোশাকের মতো লুঙ্গি, গেঞ্জি, শার্ট, চাদর পরে নিলাম। পায়ে চাপালাম বুটের জায়গায় প্লাস্টিকের স্যান্ডেল।
কপাল ভালো, বন বিভাগ তাদের পরিচিত একটি নৌকা ভাড়া করে দেয়। সে নৌকায় বসে কনকনে উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশা মাথায় করে ঠোঁট কাঁপাতে কাঁপাতে যখন মুখতারিয়া খালে, মানে বেশ প্রশস্ত নদীতে ঢুকলাম, তখন একটু চাপা ভয় ছিল—কখন না ডাকাতের দল বলে, ‘এই, নাও থামাও।’
সম্ভবত কুয়াশাঘেরা এবং হাড়কাঁপানো শীতের কারণে অত ভোরে কোনো জেলে বা অন্য কোনো লোক নদীতে ছিল না। আমাদের কপাল খুব ভালো ছিল, কারণ, প্রথম আধা কিলোমিটার যাওয়ার পরই দেখি, একঝাঁক পাখি আমাদের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। এর পরই দেখি ৪০০-৫০০ গাঙচিলের মতো পাখি দক্ষিণের মোহনাঞ্চল থেকে আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। ডিজিটাল ক্যামেরা তাক করে শতাধিক ছবি তুলে তা যখন ক্যামেরার মিনি এলসিডি পর্দায় দেখলাম, তখন আমার আনন্দ যেন আর ধরে না। ওরা সবাই ছিল পানিকাটা পাখি।
এরপর দেখলাম, পুরো দলটি গিয়ে নামল ২০০-৩০০ মিটার দূরের সামান্য পানিময় কাদা বেলায়। পরের ১৫ মিনিটের মধ্যে আরও একটি দল এল আগে নামা দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য। সূর্যহীন আকাশের সাহায্যে বেশ কিছু ছবি তুললাম এবং মাঝিকে বললাম, ফিরে চলো। ওই ছবিরই একটি ব্যবহূত হয়েছে আমার এবারের ওয়াইল্ড লাইফ অব বাংলাদেশ বইয়ে।
‘দড়াবাজিকর’ উল্লুক
আশির দশকে বই লেখার সময় বাংলাদেশে যে উল্লুকের প্রজাতি পাওয়া যায়, তার বাংলা নাম দিই ‘দড়াবাজিকর’ উল্লুক। কারণ, বনবাদাড়ে এর মতো সার্কাস দেখানোর যোগ্য আমাদের দেশে দ্বিতীয় আর কোনো বন্য প্রাণী নেই। কিন্তু বনের চাঁদোয়ায়, মানে ক্যানোপিতে ঘুরে বেড়ানো এবং অতীব চঞ্চলমতি এ উল্লুকের নাগাল ক্যামেরার লেন্সে পাওয়া বেশ দুঃসাধ্য। যাঁরা খুব ধৈর্য ধরে বনে বনে দিন কাটিয়েছেন, তাঁদের পক্ষে এদের ক্যামেরাবন্দী করা তেমন কঠিন কাজ হয়নি। কিন্তু আমার মতো যারা স্বল্প সময়ের জন্য বনে ঢুকে সব ধরনের বন্য প্রাণী দেখা ও ছবি তোলার প্রচেষ্টা নেয়, তাদের পক্ষে উল্লুকের ছবি তোলা কঠিন বৈকি।
মজার ব্যাপার হলো, যুবক উল্লুক এবং সোমত্ত পুরুষের রং সব সময় কালো হয় এবং ভ্রু থাকে সাদা। স্ত্রী উল্লুকের সচরাচর থাকে সাদা ভ্রু বাদে ফিকে শিয়ালে-বাদামি। এরা যখন বনের লতাপাতার মধ্যে চুপটি করে বসে থাকে, তখন তাদের চোখ দুটি ক্যামেরায় ধরা প্রায় অসম্ভব।
সেবার শ্রীমঙ্গলের পাশের জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়ায় যখন পৌঁছালাম, তখন বেলা বেশি হয়নি। উল্লুক ভোরবেলা মুহুর্মুহু গগনবিদারি এবং ছন্দময় ডাক হাঁকিয়ে দুলতে দুলতে গাছের এক মগডাল থেকে অন্য ডালে যায়, তখন মনে হবে বনের ভেতর হাজারটা প্রাণী তারস্বরে চিৎকার করছে। এ শব্দ আরও বিকট হয় যেহেতু পুরুষ-স্ত্রী মিলে ‘দ্বৈত সংগীত’-এর মতো শব্দ করে প্রজাতি আপেক্ষিক ডাক ছাড়ে বা গান গায়, যা বনের গাছপালার মোটা মোটা কাণ্ডের সঙ্গে বাড়ি খেয়ে শব্দের চেয়ে প্রতিশব্দের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত করে। নতুন যেকোনো মানুষের কাছে এ শব্দ ভীতিপ্রদ ঠেকতে পারে।
বনের কাছে পৌঁছাতেই এদের হুহা-হুহা-হুহা-হুহা শব্দ কানে তালা লাগিয়ে দিল। কিন্তু বনের কোথাও এদের টিকিটি পর্যন্ত দেখতে পেলাম না।
সিরাজুল হোসেন মনে হয় দেশে সবচেয়ে ভালো ছবি তুলেছেন উল্লুকের। তিনি তখন পাশের জঙ্গলে গাইড শ্যামলকে নিয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন এবং ধরে নিয়েছিলেন আমার পক্ষে উল্লুকের দেখা পাওয়া সহজ হবে না। আর তাই তিনি শ্যামলকে পাঠান আমাকে খুঁজে বের করে তাঁর কাছে নিয়ে যেতে।
শ্যামলের সঙ্গে অতি সন্তর্পণে পাহাড়ের খাড়া গা বেয়ে ওপরে উঠে প্রায় এক কিলোমিটার চলার পর শ্যামল চাপালিশ গাছের চাঁদোয়ার দিকে তাক করে বলল, দেখুন, দলপতি পুরুষটি কেমন করে গাছের কাণ্ডের সঙ্গে নিজের দেহটাকে খাপ খাইয়ে বসে আমাদেরই যেন দেখছে। একটু দূরে বড় বড় ক্যামেরা ট্রাইপডে বসিয়ে উল্লুকের দিকে তাক করে আছেন সিরাজুল হোসেন।
প্রায় দৈবাতই পুরুষটি একটি ভূ-সমান্তরাল ডালে এসে দোল খেল আর আমি সুযোগ পেয়ে ডিজিটাল ক্যামেরার ৩০০ মিমি ফিক্সড লেন্সের ভেতর দিয়ে দেখে কয়েক ডজন ছবি তুললাম এবং মনে মনে দারুণ খুশি হলাম। ধন্যবাদ শ্যামল ও সিরাজ ভাইকে।
এক টুকরো জীবন
রেজা খানের জন্ম ঢাকার ধামরাইয়ে। সময়টা জানুয়ারি ১৯৪৭। স্কুল আর কলেজ-জীবনের লেখাপড়া মানিকগঞ্জে। ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে বিএসসি। এমএসসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে। পরে বম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি। প্রভাষক হিসেবে ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার আগে বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন নটর ডেম কলেজ ও আইডিয়াল কলেজে। ১৯৮৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল-আইন চিড়িয়াখানার কিউরেটর হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৯ সাল থেকে টানা ২০ বছর পালন করছেন দুবাই চিড়িয়াখানার প্রধানের দায়িত্ব। এখন দায়িত্বরত আছেন দুবাই সরকারের বন্য প্রাণী ও চিড়িয়াখানা বিশেষজ্ঞ হিসেবে।
জীবজগৎ ও প্রাণিবৈচিত্র্য নিয়ে সুদীর্ঘ চার দশকের গবেষণার ফসল হিসেবে বেরিয়েছে তাঁর ১৬টি বই। এর মধ্যে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা সাত। এ ছাড়া দেশ-বিদেশে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যবিষয়ক বেশ কিছু গবেষণামূলক রচনা।
১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বই ওয়াইল্ড লাইফ অব বাংলাদেশ। ১৭২ পৃষ্ঠার এই বই বাংলাদেশে জীবজগৎ নিয়ে গবেষণায় নতুন দিগন্তের সূচনা করে। সম্প্রতি বেরিয়েছে বইটির পরিবর্তিত ও খুদে সংস্করণ।
পটকা ব্যাঙের প্রথম ছবি
সেটা সম্ভবত ১৯৮০ বা ৮১ সালের জুন মাস। অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছিল কয়েক দিন ধরে। এ সময় ঢাকায় এল ভারতীয় সর্পম্যান হিসেবে খ্যাত বন্ধুবর রমুলাস হুইটেকার। সে এসেছিল এফএওর অর্থানুকূল্যে বাংলাদেশের গুইসাপের ওপর একটি ত্বরিত সমীক্ষা চালানোর জন্য। সঙ্গে নিল আমাকে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘোরার পর যখন মধুপুর শালবনে পৌঁছালাম, তখন বৃষ্টি যেন তুঙ্গে উঠেছে।
টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের সঙ্গে যোগাযোগকারী বন রেঞ্জ অফিস থেকে তাঁদের রেস্ট হাউস এলাকা রসুলপুরের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী সড়কটি তলিয়ে গেছে।
এফএওর গাড়িচালক বলল, সে ওই রাস্তা দিয়ে রসুলপুর যেতে পারবে। মোটামুটি হাঁটুপানি ছিল রাস্তার ওপর। মাঝপথে পৌঁছার পর জিপগাড়ি ও তার পানি মাড়ানোর শব্দ ছাপিয়ে কোনো একটা প্রাণীর ডাক শুনতে পাচ্ছিলাম। আওয়াজটা বেশ জোরেশোরেই চলছিল। রাস্তার পাশে বেশ কিছুটা ডুবো জায়গা ফাঁকা ছিল। সেখানে পানির পরিমাণও বেশি মনে হলো। মনে হচ্ছিল, প্রাণীটা পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। ঔৎসুক্যের বশে ফুলপ্যান্ট না গুটিয়েই পানিতে নেমে পড়লাম। কাছে গিয়ে দেখলাম, এক জোড়া অচেনা-অজানা ব্যাঙ।
ব্যাঙ দুটিকে জোড়বাঁধা অবস্থায় রাস্তার ওপর নিয়ে এসে শুকনো মাটির অভাবে নিজেরই এক হাতের তালুর ওপর রেখে চটপট কয়েকটি রঙিন ছবি তুললাম। কারণ, আমার মনে হয়েছিল, এটি কোনো নতুন ধরনের প্রজাতি, যা দেশে এর আগে দেখিনি বা অন্য কেউ রেকর্ড করেনি।
রমুলাস ব্যাঙটি দেখেই বলল, বেলুন ফ্রগ। ব্যাঙ দুটিকে ফের যেখান থেকে তুলে এনেছিলাম, সেখানে ছেড়ে দিয়ে আমরা আমাদের বাকি কাজে ব্যস্ত হলাম।
ঢাকায় ফিরে ছবির দোকান থেকে স্লাইড ওয়াশ করি। প্রজেক্টারের সাহায্যে দেয়ালে ছবি ফেলি আর বইয়ের সহায়তায় এর প্রজাতি চিহ্নিতকরণের কাজ করি। আমি প্রজাতিটির বাংলা নাম দিই পটকা ব্যাঙ। কারণ, এটাকে হাতে ধরার সঙ্গে সঙ্গে পেটের ভেতর বাতাস ঢুকিয়ে সে পটকা মাছের মতো ফুলে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ১৯৮২ সালে প্রকাশিত আমার লেখা বাংলাদেশের বন্য প্রাণী বইয়ের তালিকায় এ প্রজাতি বাংলাদেশে পাওয়া যাওয়ার প্রথম তথ্য দিই এবং একটি সাদা-কালো ছবি ব্যবহার করি। এবারের বইয়ে আছে এই ব্যাঙের রঙিন ছবি।
Subscribe to:
Posts (Atom)