২৩ আগস্ট আন্তর্জাতিক দাস ব্যবসা বিলোপ দিবস স্মরণে
আদিম মানুষ নব্য প্রস্তরযুগে প্রবেশের সময় থেকেই অর্থাৎ কৃষিকাজ শুরুর সময় থেকেই দাসব্যবস্থার শুরু। ১৭৬০ সালে হাম্বুরাবি নামের ব্যাবিলনের এক শাসক আইন করে দাস প্রথা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই আইনে গৃহনির্মাণ, শস্য উত্পাদনসহ নানা কাজে জোর করে শ্রমিক নিয়োগের নিদর্শন পাওয়া যায়। এরপর বিশ্বের প্রায় প্রতিটি সভ্যতাতেই দাসব্যবস্থার প্রচলন ছিল। বিশেষত গ্রিক সভ্যতায় এর ভয়াবহতা ছিল ব্যাপক। অ্যারিস্টটলসহ অনেক বোদ্ধাই তখন বলেছিলেন, দাসত্ব একটি প্রাকৃতিক বিষয়। প্রকৃতিগতভাবেই কেউ কেউ দাস হয়ে জন্মগ্রহণ করে। ১৪৭২ সালে পর্তুগিজ বণিকেরা প্রথম দাস চুক্তি করে। ১৬৬৩ সালে ভার্জিনিয়ার আদালত রায় ঘোষণা করেন, যে মা যদি দাস হয় তাঁর সন্তানও দাস বলে বিবেচিত হবে। বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য ও মুসলিম সভ্যতার সময়েও দাসব্যবসা ব্যাপকতা লাভ করেছিল। আফ্রিকায় দাস ব্যবসা ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। ঘানা, মালিসহ এমন কিছু দেশের প্রায় ৩ শতাংশ জনগণই ছিল দাস। এশিয়াতেও দাসব্যবস্থার প্রচলন ছিল, তবে তা অনেক পরে এই মহাদেশে প্রবেশ করে। এক তথ্যে উল্লেখ আছে, ১৮৪১ সালে ভারত উপমহাদেশে প্রায় নয় মিলিয়ন মানুষ দাস হিসেবে চিহ্নিত ছিল। সোনা, হীরা বা অন্য মূল্যবান বস্তু দাসদের মূল্য হিসেবে বিবেচিত হতো। শরীরে বেশি শক্তি রাখে এমন দাসদের বিক্রি করা হতো উচ্চ মূল্যে। বেশির ভাগ দাস বিক্রি হতো নিলামে। মূলত ইউরোপীয়রা ক্যারিবীয় অঞ্চলে কালোদের আখ চাষসহ নানা কাজে দাস হিসেবে ব্যবহার করত। তবে দাসব্যবস্থার বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে বিক্ষোভ-বিদ্রোহ দানা বাঁধতে থাকে পরবর্তীতে। অষ্টাদশ শতকেই সংগঠিতভাবে দাসেরা বিদ্রোহ শুরু করে আমেরিকা ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে। দাস কিংবদন্তি হিসেবে স্পার্টাকাস যেমন কিংবদন্তি হয়ে আছেন, তেমনি অনেক নাম না-জানা দাসও বিদ্রোহ করে প্রাণ দিয়েছে। ব্রিটেন ১৮০৭ সালে এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৮০৮ সালে তার আফ্রিকান দাসদের মুক্তি দেয়। ১৮৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এন্টিস্লেভারি সোসাইটি, ব্রিটেন ১৮৩৩ সালে আইন করে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করে। যুক্তরাষ্ট্র ১৮৬৫ সালে, আর এর আগে ফ্রান্স ১৮৪৮ সালে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে দাস ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ঘটে ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ।
আখতারুজ্জামান | সূত্র: প্রথম আলো ২৭/০৮/২০১০
No comments:
Post a Comment