দিনের সব লেনদেন না ফুরালেও সূর্য অস্ত যেতে না যেতেই এখন ঘরে ফিরছেন সবাই। দিন শেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত মানুষের মুখগুলোয় তবু যেন ক্লান্তির মেঘ নেই কোনো—ছুটন্ত মানুষের সবারই এখন একই তাড়া—বাড়ি ফিরে সবার সঙ্গে মিলেমিশে ইফতার। পবিত্র রমজানের চাঁদ দেখার পর থেকেই বদলে গেছে জীবনচিত্র। ঘড়ির কাঁটা পাঁচটার ঘর ছুঁতে না ছুঁতেই অফিসপাড়া ফাঁকা, রাস্তায় রাস্তায় ইফতার কেনাবেচার হল্লা...রোজার মাসে বাঙালির গতিময় ছুটেচলা জীবনের লেনদেন তো এভাবেই পাল্টে যায় খানিকটা। তবে আবাবিল পাখির ডানা ছড়ানো মরুভূমিঘেরা সেসব দেশে কেমনভাবে পালিত হয় সংযমের মাস রমজান? এই বাঙালি জীবনের সঙ্গে তার কতটাই বা ফারাক?
পিরামিডের দেশ মিসরে রমজান আসতেই রাস্তায় রাস্তায় ছোট ছোট কিশোরের হাতে দেখা যায় লেটুসপাতার গুচ্ছ। মিসরীয় ইফতারসামগ্রীর মধ্যে লেটুসপাতার রয়েছে বিশেষ সমাদর। প্রতি সন্ধ্যার ইফতার সাঙ্গ হলে কায়রো শহরের হামান কোয়ার্টারের লোকজন যেমন সান্ধ্যভোজ, অতিথি আপ্যায়ন আর পারিবারিক উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে সিয়াম সাধনার রজনীগুলো অতিবাহিত করেন, তেমনিভাবে দিনের বেলায় এ কোয়ার্টারের কফি শপগুলো বন্ধ থাকে—এটিই রোজার দিনে মিসরীয়দের রীতি।
অন্যদিকে জেরুজালেমের ঊষর মরুর দেশে দামেস্কুস্তরের ব্যবসায়ীরা যেভাবে ইফতারির এন্তেজাম সাজিয়ে বসেন, তার সঙ্গে বাঙাল মল্লুকের বেশ মিল রয়েছে। তবে এ দেশের মানুষের একটা প্রচেষ্টা থাকে, রোজার দিনে দরিদ্র মুসলমানদের বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য দিয়ে সহায়তা করার।
পুরোনো জেরুজালেমের বাসিন্দারা ইফতারের পর জনপ্রিয় পানীয় তামারিন জুস পান করেন তাঁদের চিরায়ত ঐতিহ্য অনুসারে।
রোজার সময় মধ্যরাতে আমাদের দেশে যেমন বিভিন্ন বাদ্য বাজিয়ে সবাইকে জাগানো হয়, একইভাবে মধ্যপ্রাচ্যের জেরুজালেমের প্রাচীন শহরেও ছেলেমেয়েদের কেউ কেউ ড্রাম বাজিয়ে এবং চিত্কার করে ঘুমকাতুরে মানুষকে জাগিয়ে দেন সেহিরর জন্য।
কি মিসর, কি জেরুজালেম বিশ্বের দেশে দেশে পবিত্র রমজান উদ্যাপনের গল্প যেন আর শেষ হয় না। ইফতার, সেহির, মসজিদের সুউচ্চ মিনার থেকে ভেসে আসা আজান—বাংলাদেশের রোজার চিত্রের সঙ্গে এসব দেশের অনেকটাই মিলে যায়।
আলতাফ শাহনেওয়াজ | তারিখ: ২০-০৮-২০১০ সুত্র : প্রথম আলো
No comments:
Post a Comment