গাছের ওপর ঘরবাড়ি তৈরি নতুন কিছু নয়। অরণ্যচারী পর্যটকদের থাকা ও খাওয়ার জন্য অনেক দিন আগে থেকেই পৃথিবীর নানা দেশে এমনকি ডিজনিল্যান্ডেও গাছের ওপর ঘরবাড়ি বা ‘ট্রি হাউস’ তৈরি করা হয়েছে। গাছের ওপর আছে ১০ তলা বাড়িও। কিন্তু সুইডেনে সম্প্রতি এমন এক ধরনের ট্রি হাউস তৈরি করা হয়েছে, যা প্রায় দেখাই যায় না। এর আগে সুইডেনের থ্যাম ও ভিদেগার্ড নামে দুই ব্যক্তি প্রথম এমন এক বাড়ির নকশা করেছিলেন, বাড়িটি হবে প্রায় অদৃশ্য প্রকৃতির। তখন সেই নকশা দেখে অনেকেই বিদ্রূপ করেছিলেন, মন্তব্য করেছিলেন, ওই ডিজাইন আসলে কম্পিউটারের কারসাজি। এমন বাড়ি সত্যি সত্যি তৈরি করা হলে তা হবে পাখির জন্য মরণফাঁদ। বাড়ি হবে; যেখানে ঘর থাকবে বেশ কিছু, ঘরের ভেতর মানুষ বাস করবে, আসবাব থাকবে অথচ বাড়িটাই দেখা যাবে না—এমনটা হতেই পারে না। অনেকেই বাতিল করে দিয়েছে এই ধারণা। কিন্তু সত্যি সত্যি এখন এই বাড়ি তৈরি হয়েছে। ছয় কুঠরির এই বাড়িটা হলো একটি ‘ট্রি হোটেল’। বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে কাঠ দিয়ে, বেশ মজবুত করেই। সেই বাড়িটির কক্ষ থেকে টয়লেট পর্যন্ত সবই পরিবেশসম্মতভাবে তৈরি। সুইডেনে মেরুরেখা বা আর্কটিক সার্কেল থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে এই বাড়িটি সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে। বাড়িটি আসলে সব দিকে চার মিটার আকারের আয়নাঘেরা একটি কিউব ছাড়া আর কিছুই নয়। ছক্কার গুটির মতো সেটা ভূমি থেকে কিছুটা উঁচুতে গাছের ওপর এমনভাবে বসানো হয়েছে যে অরণ্য বা গাছগাছালির ছায়া তাতে পড়লে মনে হয়, ওখানেও আসলে অরণ্য রয়েছে। মেঘের ছায়া পড়লে মনে হয় আকাশ রয়েছে। বাড়িটির অন্যতম একজন মালিক কেন্ট লিন্ডভল বলেন, বাড়ির আয়না-দেয়ালটি গাছপালা, পাখি, মেঘ, সূর্য, রোদ সবকিছুই প্রতিফলিত করে। সে জন্য বনের মধ্যে বাড়িটিকে প্রায় অদৃশ্যই মনে হয়। পাখি মনে করবে, ওখানে কোনো বাড়ি নেই, রয়েছে খোলা আকাশ। আর তা মনে করে উড়তে গিয়েই তো পাখির বিপদ হতে পারে! এ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আয়না-দেয়ালে আসলে এমন এক ফিল্ম লাগানো হয়েছে, যা পাখি দেখতে পারে। আর মানুষ শুধু আয়নাই দেখে। তাই পাখির কাছে বাড়িটা একেবারে অদৃশ্য নয়। কেন এ রকম অদ্ভুত বাড়ি? এ প্রশ্নের জবাবে কেন্ট বলেন, ‘অরণ্যে নির্ভয়ে যেন সব জন্তু চলাচল করতে পারে, সে জন্যই এ রকম বাড়ির পরিকল্পনা। কোনোভাবেই আমরা অরণ্যের স্বাভাবিকত্ব নষ্ট করতে চাই না, আবার অরণ্যে ভ্রমণকারীদের বাসটাও যাতে আরামপ্রদ ও নিরাপদ হয়, সে জন্যই এমন একটা বাড়ির পরিকল্পনা।’
মৃত্যুঞ্জয় রায় । সুত্র: প্রথম আলো ২০/০৮/২০১০
No comments:
Post a Comment