নির্বাসিতের কুখ্যাত দ্বীপ

ভিন্ন মতাবলম্বী, রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক ও দাগি আসামিদের নির্বাসনের জন্য একসময় বিখ্যাত হয়েছিল এসব দ্বীপ। এখানে বন্দী করে রাখা হয়েছিল নেপোলিয়নকে, বন্দী করা হয়েছিল নেলসন ম্যান্ডেলাসহ আরও অনেককেই

রবিনসন ক্রুসো দ্বীপ
১৭০৪ সালে এক অস্ত্রবাহী জাহাজের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে ঝগড়া করার পর আলেকজান্ডার সেলকার্ককে প্রশান্ত মহাসাগরের ইসলা মিয়াস তিয়ারা নামের এক দ্বীপে ফেলে রেখে জাহাজের বাকি সবাই চলে যায়। প্রায় পাঁচ বছর সেই দ্বীপে একমাত্র মানুষ হিসেবে জীবন যাপন করেন সেলকার্ক। চিলির বালপারাইসো থেকে ৪৮ মাইল দূরের এই দ্বীপে তিনি শিকার আর ফলমূল খেয়ে বেঁচে টিকে ছিলেন। পরে ১৭০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপের কাছ দিয়ে যাওয়া এক জাহাজ তাঁকে উদ্ধার করে। ধারণা করা হয়, সেলকার্কের এই দুঃসাহসিক পাঁচ বছর নিয়েই ডেনিয়েল ডিফো রবিনসন ক্রুসো নামে উপন্যাস লিখেন। পরে চিলির সরকার ১৯৬৬ সালে এই দ্বীপের নামকরণ করে রবিনসন ক্রুসো দ্বীপ।
পাটমোস
এজিয়ান সাগরের মাঝখানে ১৩ বর্গমাইলের একটি পাহাড়ি দ্বীপ পাটমোস। ৯৫ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট জনকে এই দ্বীপে নির্বাসন দেয় রোমানরা। গসপেল বা নতুন বাইবেল আর নতুন টেস্টামেন্ট বলে পরিচিত রিভিলেশনস বই রচনা করেন তিনি এই দ্বীপে বসে। প্রায় ১০০ বছর পর সেন্ট জনের স্মরণে এক সন্ন্যাসী এখানে প্রতিষ্ঠা করেন এক আশ্রম, যা আজও ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে টিকে আছে। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো এ দ্বীপকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

ফ্রেঞ্চ গায়ানা
ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য এক স্থান এই দ্বীপ। ১৮৫৪ সালে নেপোলিয়ন-৩ এখানে বন্দিশালা প্রতিষ্ঠা করেন। মোট চারটি বন্দিশালা ছিল এ দ্বীপে। এখানে প্রায় ৮০ হাজার ফরাসি নাগরিককে অন্তরীণ রাখা হয়। এই দ্বীপকে শুকনো গিলোটিন বলা হতো। ১৯৩৮ সালে বন্দিশালাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় ৫০ হাজার বন্দীকে খুন করা হয় বন্দিশালাগুলোতে। এই দ্বীপে বন্দী ছিলেন হেনরি শ্যারিয়ার। ১৯৬৮ সালে লেখা তাঁর প্যাপিলন বইটি প্রকাশের পরপরই বিক্রির তালিকায় শীর্ষে স্থান করে নেয়। পরে এই বই থেকে সিনেমাও তৈরি হয়।

সেন্ট হেলেনা
দক্ষিণ আটলান্টিকের মাঝামাঝি এই দ্বীপের অবস্থান। অ্যাঙ্গোলা থেকে এক হাজার ২০০ মাইল এবং ব্রাজিল থেকে এক হাজার ৮০০ মাইল দূরের এই দ্বীপকে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম স্থান বলে বিবেচনা করা হয়। ১৮১৫ সালে ওয়াটারলুর যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর নেপোলিয়নকে এই দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। ১৮২১ সালে এই দ্বীপেই মৃত্যুবরণ করেন নেপোলিয়ন। এই দ্বীপে অন্তরীণ থাকাকালে তিনি বই পড়া, বাগান করা আর নিজের স্মৃতি রোমন্থন করে সময় কাটাতেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৫১ বছর।

রোবেন দ্বীপ
কেপটাউন থেকে সাত মাইল দূরের রোবেন দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয় নেলসন ম্যান্ডেলাকে। কালো মানুষদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে নির্বাসিত হন ম্যান্ডেলা। প্রায় ৪০০ বছর ধরে রোবেন দ্বীপ একই সঙ্গে ডাচ ও ব্রিটিশদের বন্দিশালা হিসেবেও ব্যবহূত হতো। এখানে কুষ্ঠরোগ নিরাময়কেন্দ্র ও মানসিক হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। ম্যান্ডেলা ছাড়াও এখানে অন্তরীণ ছিলেন রবার্ট সোবুকে এবং বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। এ সময় তাঁরা নানা রকম শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার সহ্য করেছেন। ১৯৯৭ সালে এক হাজার ৪৪৭ একর এলাকাজুড়ে অবস্থিত এই দ্বীপে জাদুঘর স্থাপন করা হয়।

সূত্র: স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন   ।। প্রথম আলো ১৩/০৮/১০