উইলিয়াম শেক্সপিয়ার
(২৩ এপ্রিল, ১৫৬৪—২৩ এপ্রিল, ১৬১৬)
উইলিয়াম শেক্সপিয়ার কে? কেউ বলেন, এ নামে কখনো কেউ ছিলেন না, ওটা কারও ছদ্মনাম। কেউ বলেন, না, নানা কবি-সাহিত্যিক বিভিন্ন সময়ে এই নামটিতে লিখেছেন। আমাদের এসব তর্কে কাজ নেই। আমরা শুধু জানি, উইলিয়াম শেক্সপিয়ার দুনিয়ার মহত্তম সাহিত্যিকদের একজন।
শেক্সপিয়ারের জন্মতারিখটা আনুমানিক। নথিতে পাওয়া যায়, তাঁর ব্যাপ্টিজম বা আকিকা হয়েছিল ২৬ এপ্রিল। শিশুর জন্মের তিন দিন পর আকিকা করা ছিল ইংল্যান্ডের রীতি। সে হিসাবে শেক্সপিয়ারের জন্মতারিখ ধরা হয় ২৩ এপ্রিল। বিচিত্র ব্যাপার এই যে, তিনি মারাও যান ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল।
জন শেক্সপিয়ার ও আর্ডেন শেক্সপিয়ারের চার ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে শেক্সপিয়ার ছিলেন তৃতীয় সন্তান এবং প্রথম ছেলে। শেক্সপিয়ারের বাবা ব্যবসা করতেন। রাজনীতি করতে গিয়ে স্ট্র্যাটফোর্ডের একজন অলডারম্যান বা পৌরজন নির্বাচিত হয়েছিলেন। এত কিছুর পরও তিনি প্রচুর ধার-দেনা করতেন। একবার দেউলিয়া হয়ে জেলও খেটেছিলেন।
শেক্সপিয়ার লেখাপড়া করেছিলেন স্থানীয় স্ট্র্যাটফোর্ড গ্রামার স্কুলে। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মতো শেক্সপিয়ারও স্কুলজীবনকে ভালোবাসতে পারেননি।
১৫৮২ সালে শেক্সপিয়ার বিয়ে করেন তাঁর প্রতিবেশী, তাঁর চেয়ে ছয় বছরের বড় অ্যান হ্যাথওয়েকে। বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে তাঁদের প্রথম কন্যা সুজানা জন্ম নেয়। এর তিন বছর পর যমজ বাচ্চা হয় অ্যানের। মেয়ে জুডিথা অনেক দিন বাঁচে, কিন্তু ছেলে হ্যামনেট (মতান্তরে হ্যামলেট) মাত্র ১১ বছর বয়সে মারা গেলে শেক্সপিয়ার বিরাট ধনসম্পদের মালিক হয়েও পুরুষ উত্তরাধিকারীবিহীন হয়ে পড়েন। শেক্সপিয়ারের এ নিয়ে উদ্বেগ ছিল। তাঁর ম্যাকবেথ নাটকে দেখা যায়, ম্যাকবেথ লেডি ম্যাকবেথকে বলছেন, ‘কেবল পুত্রসন্তানের জন্ম দাও।’
১৫৮৫ থেকে ১৫৯২ সাল পর্যন্ত সাতটি বছর শেক্সপিয়ারের জীবন সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। তাঁর জীবনীকার ও গবেষকেরা এই ‘হারানো বছরগুলো’ নিয়ে নানা তত্ত্ব বের করেছেন। ই এ জে হনিগম্যান দাবি করেছেন, শেক্সপিয়ার এ সময়ে কোনো ধনীর বাড়িতে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন।
১৫৯২ সাল থেকে শেক্সপিয়ার লন্ডনে ছিলেন।
সে সময়ের অন্যান্য জনপ্রিয় নাট্যকার, যেমন টমাস কিড বা ক্রিস্টোফার মার্লো ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত। এ জন্য তাঁদের ‘ইউনিভার্সিটি উইট’ বলা হতো। কিন্তু শেক্সপিয়ারের কোনো ডিগ্রি তো ছিলই না, উপরন্তু তিনি ছিলেন মফস্বল থেকে আসা এক সাহিত্যিক।
মনে করা হয়, প্রথমে ফিলিপস হেনসলোর অধীনে নাট্য প্রশিক্ষণ শুরু হয় তাঁর। প্রথম দিকে তিনি যুক্ত ছিলেন ‘দ্য রোজ থিয়েটার’-এ। এ দলে শক্তিশালী নাট্যকার ছিলেন ক্রিস্টোফার মার্লো এবং অভিনেতা ছিলেন এডওয়ার্ড এলেইন।
কিছুদিন পর শেক্সপিয়ার জেইমস বারবেজের অধীনে ‘দ্য থিয়েটার হলে’ অভিনয়কারী দল ‘লর্ড চেম্বারলেইনস মেন’ দলে যোগ দেন। ১৫৯৯ সালে শেক্সপিয়াররা কয়েকজন মিলে টেমস নদীর পারে ‘দ্য গ্লোব’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিসহ ১২ জন অভিনেতা ও নাট্যকার এর মালিক ছিলেন।
১৬০৩ সালে রানি এলিজাবেথ মারা গেলে পরবর্তী রাজা জেমস দ্য ফার্স্ট শেক্সপিয়ারের দলটিকে রাজার একান্ত দল হিসেবে গ্রহণ করেন। দলটির নাম বদলে হয় ‘দ্য কিংস মেন’।
শেক্সপিয়ার লিখেছেন মোট ৩৮টি নাটক, দুটি লম্বা কবিতা ও কিছু কবিতাসহ ১৫৪টি সনেট। ১৬১১ সালে লেখেন তাঁর শেষ নাটক দ্য টেম্পেস্ট । এরপর তিনি লন্ডন ছেড়ে স্ট্র্যাটফোর্ডে গিয়ে বসবাস করেন। পরে পেটের অসুখে মারা যান।
১৬২৩ সালে শেক্সপিয়ারের প্রথম সমগ্র সংগ্রহ বের হলে মুখবন্ধ-কবিতায় তাঁর সতীর্থ বেন জনসন লেখেন, ‘শেক্সপিয়ার সর্বকালের সর্বমানবতার।’ তাঁর সম্পর্কে এটাই বোধহয় চূড়ান্ত সত্য কথা।
তথ্যকণিকা
শেক্সপিয়ার তাঁর লেখায় ৩১,৫৩৪টি আলাদা শব্দ ব্যবহার করেছেন। এর মধ্যে ১৪,৩৭৬টি শব্দ ব্যবহার করেছেন শুধু একবার করে।
‘অ্যাসাসিনেশন’, ‘বেডরুম’ বা ‘অবসিন’-এর মতো ইংরেজির বহু শব্দ এবং ‘ব্যাগ অ্যান্ড ব্যাগেজ’, ‘ব্রেক দ্য আইস’ বা ‘নেকেড ট্রুথ’-এর মতো বাগধারা শেক্সপিয়ারের কলমে তৈরি হয়েছে। কেবল ‘দেয়ার ইজ ম্যানি থিং...’-এর মতো দীর্ঘ বাক্য নয়, ‘লাফ ইট অফ’-এর মতো ছোট বাক্য বললেও শেক্সপিয়ারকেই উদ্ধৃত করা হয়। কারণ, এটিও তাঁর মৌলিক সৃষ্টি!
শেক্সপিয়ারের বিভিন্ন লেখায় ১৩টি চরিত্র আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে রোমিও, জুলিয়েট, ওথেলোরাও।
মৃত্যুর শ দেড়েক বছর পর কেউ কেউ এমন সন্দেহ প্রকাশ করেন যে শেক্সপিয়ারের নামে আদৌ অন্য কেউ লেখাগুলো লিখেছেন কি না। সম্ভাব্য লেখক হিসেবে তোলা হয়েছে ফ্রান্সিস বেকন, ক্রিস্টোফার মার্লো বা এডওয়ার্ড ডি ভেরের নাম।
সুত্র: প্রথম আলো। মোহীত উল আলম | তারিখ: ০২-০৪-২০১০
No comments:
Post a Comment