মুখ হাঁ করে খোলা। মাড়িও পচে গেছে। শরীরের অবয়ব বলতে শুধু কঙ্কালটাকেই বোঝা যাচ্ছে। বিশাল ভূগর্ভস্থ সমাধিতে দুই হাজারের মতো এমন মমি আছে; তাদের কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে, কেউ বা শুয়ে। নিজের সব থেকে সুন্দর পোশাকটি পরে আছে সবাই। পর্যটকেরা আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে দেখছে তাদের। মৃত বলেই এসব চাহনি তারা সহ্য করে যাচ্ছে। সিসিলির মতো শহরে যেখানে খুনের বদলে খুন করা হতো, সেখানে তাদের দিকে এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকবে, বেঁচে থাকলে তারা হয়তো এ অপরাধকেও মাফ করত না।
মৃতদেহ সংরক্ষণের প্রক্রিয়া অনেক পুরোনো। ইতালির কিছু শহরে মৃত ব্যক্তিদের শরীর সংরক্ষণের উদাহরণ দেখা যায়। কিন্তু সেই শহরগুলোর মধ্যে সব থেকে এগিয়ে সিসিলি প্রদেশটি। সবকটি মমি ১৯ শতকের। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ—সব বয়সের হদিসই পাওয়া যাবে মৃত ব্যক্তি সংরক্ষণের বিভিন্ন ঘরে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ প্রথা দেখে সহজেই বোঝা যায়, এ শহরে মৃত আর জীবিতের সম্পর্কের বন্ধন কতটা অটুট।
আপনি রোসালিয়া লোমবারডোকে দেখেছেন? সিসিলিতে আসা প্রায় প্রত্যেক পর্যটকই বোধহয় এ প্রশ্নটি শুনে থাকবেন। রোসালিয়া মারা গেছে দুই বছর বয়সে, ১৯২০ সালে, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। হিসাবমতে, রোসালিয়াই সর্বশেষ, যাকে সিসিলির কাপুচিনস ভূগর্ভস্থ সমাধিতে এনে রাখা হয়েছে। তার চোখ দুটো বন্ধ। চোখ দেখলে মনে হয় ঘুমিয়ে আছে নিশ্চিন্তে। বড় হলুদ রঙের সিল্কের ফিতাটি খুব যত্ন করে বেঁধে রেখেছে সোনালি চুলগুলোকে। সিসিলির ঐতিহাসিক শহর পালেরমোতে রোসালিয়াকে ছোট্ট ফেরেশতা বলেই অভিহিত করা হয়। ডসলভেসট্রো ডা গুবিও ১৫৯৯ সাল থেকে কালের সাক্ষী হয়েই যেন দাঁড়িয়ে আছে। তিনি ছিলেন খ্রিষ্টান ভিক্ষু।
মৃৃতদেহ সংরক্ষণের এ প্রক্রিয়া কবে শুরু হয়েছে বলা মুশকিল। যথার্থ ঠান্ডা পরিবেশ ও বিশোষক লাইমস্টোনের কারণেই পচে না গিয়ে শরীর শুকিয়ে গিয়েছিল। এর পরই কিছু নতুন নিয়ম করা হয় এ প্রক্রিয়ার জন্য। টেরাকোটার তৈরি শ্লেট বানিয়ে মৃতদেহটি তার ওপর রাখা হতো। আট মাস থেকে এক বছরে মৃতদেহটি এ প্রক্রিয়ায় শুকিয়ে যেত।
বছরের পর বছর সিসিলির কয়েক হাজার মানুষকে এভাবে ধরে রাখতে চেয়েছে তাদের ভালোবাসার মানুষেরা। কিছু কিছু মমি এখনো পুরোপুরি সজীব আছে। দেখে মনে হয় ঘুমোচ্ছে। সাজিয়ে রাখা মমিগুলোর সামনে দাঁড়ালে অতীতের ঘটনা কল্পনা করা ছাড়া আর কিছুই হয়তো করার থাকে না।
—রয়া মুনতাসীর
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
প্রথম আলো তারিখ: ২৩-০৭-২০১০
No comments:
Post a Comment