অধিকাংশ লোকের ধারণা, সিংহ শুধুই আফ্রিকার জীব। কিন্তু সিংহের অস্তিত্ব অনেক স্থানেই ছিল। তবে সেসব সিংহ মেরে ফেলা হয়েছে। ১০ হাজার বছর আগে পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই সিংহের বিচরণ ছিল অবাধ। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সংগঠিত হয়ে ওঠে আর খাদ্যের কারণে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাণীদের ওপর চাপের সৃষ্টি হয়।
এখন পুরোনো আবাসগুলোতে খুব অল্পসংখ্যক সিংহই তাদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পেরেছে। আফ্রিকার সিংহেরই একটা প্রজাতি হচ্ছে এশিয়ার সিংহ। সম্ভবত এক লাখ বছর আগে এ অঞ্চলে চলে আসে তারা। তাদের খুব কমসংখ্যকই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে।
ভারত হচ্ছে এ রকম ৩০০ সিংহের গর্বিত তত্ত্বাবধায়ক। ৫৬০ বর্গমাইলের একটা অভয়ারণ্যে তাদের বাস। এলাকাটি অবস্থিত গির বনাঞ্চলে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকার মাট্টিয়াম ক্লুমে প্রায় তিন মাস গির বনাঞ্চলে অবস্থান করে ওই সিংহদের জীবনযাত্রা প্রত্যক্ষ করেন। তাঁর ধারণা, ওই সিংহগুলোও বিলুপ্তির হুমকির মুখে। গিরে অনেক সিংহ আছে, আরও সিংহ সেখানে পালন করা সম্ভব। এলাকাটাতে খাদ্য সরবরাহের পরিমাণ কম থাকায় সিংহগুলো বনের এলাকা ছাড়িয়ে জনবসতিতে চলে যায় আর মানুষের সঙ্গে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়।
গির বনাঞ্চলে প্রায় দুই হাজার মাল্ডহারি জনগোষ্ঠী বাস করে। তাদের গবাদিপশু প্রায়ই সিংহের পেটে যায়, কারণ খাদ্যের সন্ধানে অনেক সময়ই তারা গ্রামে ঢোকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সিংহ তাদের ওপর হামলা করলেও সিংহকে তারা পছন্দই করে। তাদের পুরুষানুক্রমিক ঐতিহ্য আর সংগীতে সিংহের বন্দনা খুঁজে পাওয়া যায়। নিরাপত্তার কারণে গুজরাটের রাজ্য সরকার তাদের ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে; কিন্তু তারা ওখান থেকে সরে যেতে গড়িমসি করছে।
আফ্রিকার তুলনায় গির বনাঞ্চলে সিংহরা খুব ছোট আকারের শিকারের প্রাণী খুঁজে পায় আর খাদ্য হিসাবে এসব শিকারের দলও তুলনামূলকভাবে ছোট। এখানকার সিংহগুলো আকারে খুব একটা বড় নয়, তাদের কেশরগুলোও ছোট। তাদের নিচ দিকের চামড়ার ভাঁজ বড় বড়, যা আফ্রিকার সিংহের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না।
গিরের সিংহ গণনা করা হয় পাঁচ বছর পরপর। তখন গবাদিপশুকে প্রধান টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সাম্প্রতিক এক গণনায় দেখা গেছে, গির অঞ্চলে ৪০টি সিংহের অস্তিত্ব আছে, যার ফলে অভয়ারণ্যটিকে অতিমাত্রায় ভরা বলে মনে হয়েছে। কেননা, অভয়ারণ্যটিকে ঘিরে আছে খামার আর কারখানা। গিরের কিছু সিংহকে পাঁচ শ মাইল দূরে কুনো বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে স্থানান্তরের পরিকল্পনা আছে সরকারের। তবে অন্য কোনো ভালো জায়গা খুঁজে বের করা কঠিন হবে। জনবহুল ভারতে পর্যাপ্ত জমি আর সিংহদের শিকার পাওয়া যাবে—এমন জায়গা খুব কমই পাওয়া যাবে।
প্রাচীন ভারতে রাজরাজড়া বা নেতৃস্থানীয়দের প্রধান পরীক্ষা ছিল সিংহের সঙ্গে লড়াই। কিন্তু আধুনিক ভারতে এশিয়ার সিংহ যখন জাতীয় প্রতীকে পরিণত হয়েছে, তখন ওই নিষ্ঠুর ক্রীড়ার বদলে তাদের কী করে রক্ষা করা যায়, সেই চেষ্টাই এখন মূল বিষয়।
অনুভব মির্জা
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক
No comments:
Post a Comment