Sunday, October 3, 2010

 শালিকের মুখে মানুষের বোল

‘...মা..., ভাত আছে... ভাত আছে।’ ‘কালাম ভাত দেও।’ ‘আয়... ময়না আয় আয়।’
এ রকম আধো আধো আলতো কথা সাধারণত মানবশিশুর মুখেই শোনা যায়। কিন্তু এমন কথা ও ডাক যদি শোনা যায় কোনো বুনো পাখির মুখে, বিশেষ করে শালিকের মুখে, তাহলে তা অবিশ্বাস্য বলে মনে হবে।
‘অবিশ্বাস্য’ এ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লি তারতা গ্রামের ভ্যানচালক কালাম হোসেন।
কথা বলা পাখির অভাব এই দুনিয়ায় নেই। কাকাতুয়া বা ময়নাপাখির কথা বলার ব্যাপারটা সবাই জানেন। কিন্তু বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো শালিক কীভাবে কথা বলে!
কথা বলানোর উপায়টা জানেন কালাম। কালামের বাড়ি সান্তাহার শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে তারতা গ্রামে। বাড়িটি ওই কথা বলা শালিকের কারণে এখন দ্রষ্টব্য জায়গায় পরিণত হয়েছে। ভরদুপুরেও দেখা গেল কালামের কুঁড়েঘরের আঙিনায় শ-খানেক মানুষের ভিড় জমে আছে। সবাই পাখির কথা শুনতে চায়।
কিন্তু পাখি কথা বলছে না, শুধু শিস দিচ্ছে আর খাঁচার মধ্যে বাটিতে রাখা ভাত ও ভেজা চাল খাচ্ছে। সে যে কথা বলবে, কার সঙ্গে বলবে? তার শিক্ষক ও প্রতিপালক কালাম বাড়িতে নেই। ভ্যান চালানোর জন্য গেছেন চাঁপাপুর বাজারে। অবশ্য আরও একজনের সঙ্গে সে ভাব জমিয়ে কথা বলে। কিন্তু সেই গৃহবধূ হাসিনা বেগম দুপুরের খাবার রান্নায় ব্যস্ত। শেষ পর্যন্ত কালাম এসে হাজির।
কালাম আসার পরও শালিকটি মনে হলো একটু বিরক্ত হয়ে আছে। সেই সকাল অনেক মানুষের ভিড় দেখে সে বিরক্ত ও ক্লান্ত। কিন্তু কামালের ডাক শুনে আর চুপ করে থাকতে পারল না শালিক। সবাইকে অবাক করে দিয়ে আধো আধো বোলে কথা বলে উঠল—আয়, ময়না আয়।
এই শালিক কিভাবে কথা শিখল? গল্পটা শোনালেন কালাম।
প্রায় দুই বছর আগের কথা। ডিম থেকে সদ্য বেরিয়ে আসা এই শালিকটি পড়ে গিয়েছিল গাছ থেকে। বাচ্চাটা বাঁচবে কী করে? কালাম তাই দুই হাতে তাকে তুলে নিয়ে এসেছিলেন বাড়িতে। মাটির পাতিলে খড়কুটো দিয়ে বাসা তৈরি করে সেখানে রেখে পালতে শুরু করেন।
শুরুতে কলা আর পাউরুটি খেত শালিকটা। একপর্যায়ে ভাত ও ভেজা চাল খাওয়ানোর অভ্যাস করান। উড়তে শেখার পর বাঁশের খাঁচায় রাখেন পাখিটিকে। একসময় সে পোষ মানে। ছেড়ে দিলে উড়ে চলে যায়। সারা দিন পর আপন মনে ফিরে এসে একাই ঢোকে খাঁচার মধ্যে। এসব ঠিকই ছিল।
কিন্তু কালামের মাথায় চিন্তা ঢুকল, এই শালিককে কথা বলা শেখাতে হবে। যতক্ষণ বাড়িতে থাকেন ততক্ষণ পাখিকে কথা বলানোর চেষ্টা করতেন।
চেষ্টায় কাজ হয় না। হতাশ হয়ে পড়েছিলেন কালাম। তারপর একদিন কালামকে চমকে দিয়ে সে ‘কালাম, কালাম’ বলেই ডেকে ওঠে। সেই শুরু।
এখন শালিকের কথা বলার এ ঘটনা এক কান-দুই কান করে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা আদমদীঘি উপজেলায়। এখন কালামের বাড়ির আঙিনায় প্রতিদিন উত্সুক মানুষের ঢল।
শুধু উত্সুক মানুষ না, আছে ক্রেতারাও। কালামের শালিকটি কেনার জন্য ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকে তাঁর বাড়িতে এসেছেন। বর্তমানে পাখিটির দাম উঠেছে ১০ হাজার টাকা। তবে কালাম বললেন, ‘এই পাখি আমি কখনোই বিক্রি করব না।’
কেন করবেন! শালিকটি যে এখন তাঁর বন্ধুও। বন্ধুকে কেউ বিক্রি করে!
 সুত্র : প্রথম আলো
খায়রুল ইসলাম | তারিখ: ৩০-০৪-২০১০

No comments: