Friday, October 1, 2010

যশোর রোড: আন্দোলনের অনন্ত প্রেরণা (লে খক: অ্যালেন গিনসবার্গ | তারিখ: ০১-১০-২০১০)

আমার ইচ্ছা ছিল, বব ডিলানকে চমকে দিয়ে একটা গান লিখব। অনেকটা উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়ামসের ‘স্যাড-আইড লেডি অব দ্য লো ল্যান্ডস’-এর মতো লম্বা কোনো গান, যা প্রকৃতির সৌন্দর্য আর মানবিক আকুতি জাগাবে, যা ডিলানকে ভাবাবে, কাঁদাবে। আমি তা-ই লিখতে চেষ্টা কলাম। সম্প্রতি কলকাতা ঘুরে লাখ লাখ মানুষের সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট দেখে আমার যে অনুভূতি তৈরি হয়েছে, তা-ই লিখলাম। কলকাতার ভাষা আর সংগীতের মিশ্রণে সেটাকে গানে রূপ দিলাম ভারতীয় হারমোনিয়াম সহযোগে। সে সময়ে দেখা মানুষগুলোর অন্তহীন যাতনা আমাকে নির্বাক করেছিল। সব বয়সের মানুষের বেঁচে থাকার কষ্ট আমার বুকে চেপে বসে ছিল। সেই যাতনা হূদয়ে নিয়েই আমি লিখেছিলাম ‘যশোর রোড’ কবিতা। আমি মূলত ভারতীয় বজ্র গুরু মন্ত্র নামের বৌদ্ধ সুরের সঙ্গে ‘ব্ল্যাক’-এর গাওয়া ‘ওয়ান অ্যানাদারস সরো’র অন্ত্যমিলের সমন্বয়ে যশোর গাওয়ার চেষ্টা করলাম। ডিলান আমার এই লেখা পড়ে দেখার জন্য নিলেন। পরদিন তিনি যখন সেটি ফেরত দিলেন তখন বললেন, ‘আমি না কেঁদে পারিনি।’ আমরা পরে এ গানের সুর ও সংগীত প্রযোজনার উদ্যোগ নিলাম। কিন্তু বব প্রথম দিকে কিছুতেই পাশ্চাত্যের হারমোনিয়ামের সঙ্গে গিটারের সমন্বয় করতে পারছিলেন না। আমি অবশ্য তাঁকে বলেছিলাম, এ গান বোধহয় ব্লুজের সুরে হবে, যদিও তাঁর কাছ থেকে ব্লুজ সম্পর্কে তখনো আমি শিখছিলাম। বব বারবার তাঁর গিটার টিউন করছিলেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। অনেকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন, আর এদিকে আমি একটানা গানটি গেয়েই যাচ্ছিলাম। বব একটানা গিটারে সুর তোলার চেষ্টা করেই গেলেন যতক্ষণ না তাঁর হাত ব্যথা হয়। পরে ডিলান অন্য একটি গিটার আনলেন, পিয়ানো বাদ দিলেন এবং গানের বিভিন্ন অন্তরায় ড্রাম বাজাতে শুরু করলেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ছিল দশ আঙুলে ডিলানের জাদুকরী গিটার বাজানো। সময় সময় তিনি থামছিলেন ঠিক যেখানে থামা উচিত; আবার শুরু করছিলেন। শেষমেশ গানটি দাঁড়াল। পরে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে ডেট্রয়েটে আমরা কবি ‘জন সিনক্লেয়ারের মুক্তি চাই’—এ দাবিতে আয়োজিত শোভাযাত্রায় যশোর রোড গানটি গাই। জন সিনক্লেয়ার ছিলেন মার্কিন কবি ও সাংবাদিক। বিকল্প রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন তিনি। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এ শোভাযাত্রার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন জন লেনন ও তাঁর স্ত্রী ইয়োকো ওনো। আমরা শোভাযাত্রায় পুরো গানটিই গাই এবং আমাদের সঙ্গে সেদিন গিটার বাজিয়েছিলেন গ্রে গেটজ। আমাদের গান গাওয়ার সময়ে লেনন ছিলেন ড্রেসিং রুমে। এ কারণে তিনি গানটি শুনতে পারেননি। পরে যখন আমরা তাঁর সঙ্গে হোটেলে দেখা করি, তখন গ্রেটজ ও আমি তাঁকে গানটি গেয়ে শোনাই। লেনন মুগ্ধ হয়েছিলেন।
পরে যখন আমরা তাঁর সঙ্গে হোটেলে দেখা করি, তখন গ্রেটজ ও আমি তাঁকে গানটি গেয়ে শোনাই। লেনন মুগ্ধ হয়েছিলেন।

সূত্র: ডিলান ১০, বসন্ত সংখ্যা (কবিতা ও গানের খবরাখবর নিয়ে বব ডিলানের প্রকাশনা)

1 comment:

DIGITAL VILLAGE said...
This comment has been removed by the author.